সারাটাজীবন আমি
বেয়ে চলি নৌকা আমার, নেই দিন নেই রাত,
তবু কূলের কিনার নাহি পাই।
হায়, দরিয়া সে এতটাই বড়ো,
তাহার উপরে ঝড়, নাও টলমল।
আদৌ পেরব ঢেউ
তার কোনও আঁচ নাহি পাই,
এ দাঁড় নামিয়ে রাখা
আমার নসিবে লেখা নাই।

নাহ্, দাঁড় তিনি নামিয়ে তো রাখেনইনি, বরং জীবনের শেষ লগ্নে ফুসফুসে জেঁকে বসা ক্যানসারে সঙ্গে অসম যুদ্ধে নেমেও হাল ছাড়েননি।

অশেষ যন্ত্রণা ছেয়ে ছিল। বহুকষ্টে টেনে টেনে শ্বাস নিতে হত। গাঁটে গাঁটে ব্যথা। রক্তাল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, আরও বহু উপসর্গ। একটুক্ষণ উঠে বসলেই মনে হত দম ফুরিয়ে যাচ্ছে। তবু হাসপাতালের কামরায় দেখা করে নিজের জীবন ও কবিতা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজি হয়েছিলেন।

আজন্মকাল জীবনের নিষ্ঠুরতা বয়েছেন ওয়াজেসিং পারগি, সেই ১৯৬৩ সালে থেকে — আধার কার্ড মোতাবেক যে বছর তাঁর জন্ম হল দাহোদ জেলার ইটাওয়া গাঁয়ের এক হতদরিদ্র ভিল আদিবাসী পরিবারে।

চিসকা ভাই ও চতুরা বেনের এই জ্যেষ্ঠপুত্রের বড়ো হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে মন্ত্রের মতো একটাই শব্দ আউড়ে যাচ্ছিলেন বারবার, “দারিদ্র্য...দারিদ্র্য...” দু’দণ্ড জিরিয়ে মুখখানি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলেন ওয়াজেসিং সাহেব, কোটরে তলিয়ে যাওয়া চোখদুটো হাজার কচলেও ছোট্টবেলার সেই দৃশ্যগুলো মুছতে পারলেন না। আঁখিপাতে একগুঁয়ে ধুলোর মতোই এদিক সেদিক ভেসে বেড়ায় তারা। “যথেষ্ট পরিমাণে খাবার কেনার মতো টাকাপয়সাটুকুও কক্ষনো থাকত না ঘরে।”

একদিন থেমে যাবে জীবনের গাড়ি
জীবনের জাঁতাকল থামবে না তবু।
রুটির ব্যাসার্ধ সে দুনিয়ার চেয়ে
অনেক অনেক বড়ো, এইটুকু জানি।
একটা রুটির দাম বুঝবে না তারা
খিদের জ্বালায় পেট ছেঁড়ে না যাদের,
বুঝবে তারাই শুধু রুটির ঠিকানা
যাদের পেটের ফাঁকে খিদে বাঁধে বাসা।

দাহোদের কাইজার মেডিক্যাল নার্সিংহোমে ক্যানসারের অন্তিম ধাপে উপশম প্রদানকারী চিকিৎসারত অবস্থায় ওয়াজেসিং পারগি তাঁর কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন আমাদের

আদিবাসী কবির কণ্ঠে তাঁর স্বরচিত কবিতা শুনুন

“এরকম বলা উচিত নয়, তবে মা-বাবাকে নিয়ে গর্ব করার মতো কিছুই ছিল না আমাদের,” এটা স্বীকার করতে গিয়ে দুঃখ-শরমের যৌথ ভারে আরওই যেন কুঁকড়ে গেল তাঁর শীর্ণ জিসমটা। “আমি জানি, মোটেও এসব বলা ঠিক নয়, কিন্তু বেরিয়ে গেল হঠাৎ।” দাহোদের কাইজার মেডিক্যাল নার্সিংহোমের এই ছোট্ট কামরাটার এককোণে একটি টিনের চৌকি পেতে বসেছিলেন তাঁর বৃদ্ধা মা, বয়স ৮৫-এর আশপাশে, কানে শোনেন না ঠিকমতন। “বাবা-মায়ের লড়াইটাই দেখেছি শুধু। দুজনেই মাঠেঘাটে মজুরি করতেন।” দুই বোন, চার ভাই ও মা-বাবার সঙ্গে গাঁয়ে এক-কামরার একটি গারার ঝুপড়িতে থাকতেন কবি, মাটি দিয়ে গাঁথা ইটের দেওয়াল। ইটাওয়া ছেড়ে কাজের সন্ধানে আহমেদাবাদে এসে ঠাঁই মিলেছিল তালতেজ চউলের একটি ভাড়াঘরে — ঘর তো নয়, বরং কুঠুরি বলাই ভালো। জিগরি ইয়ার-দোস্তরাও সেভাবে আসেনি এই বাড়িটায়।

সোজা হয়ে দাঁড়ালে
ছাদে খাব গুঁতো,
হাত-পা ছড়াই যদি
ঠুকে যাবে দেওয়ালে।
না জানি কী করে আমি খাঁচার ভিতর
কাটিয়ে দিয়েছি ওগো পুরোটা জীবন,
একটা জিনিসই কাজে বড্ড লেগেছে —
মায়ের জঠর মাঝে গুটিসুটি মেরে
গোল্লা পাকানো প্রায় একটা বছর।

বঞ্চনার এই দাস্তান কিন্তু পারগি সাহেবের একার নয়। কবির পরিবার যেখানে থাকে, সে অঞ্চলে এই গল্পটা আদতে বহুযুগের বহুল প্রচলিত ব্যাপার। দাহোদ জেলার প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ তফসিলি জনজাতির সদস্য, আনুমানিক ৯০ শতাংশই কৃষিজীবী। কিন্তু মাথা-পিছু একফালি বই জমি নেই কারও, উপরন্তু মাটি তেমন উর্বরও নয়। মোটের উপর রুখাশুখা খরাপ্রবণ এই জমিন এতগুলো ইনসানের রুজিরুটির ভার সইতে অক্ষম। সাম্প্রতিকতম দারিদ্র্য বহুমাত্রিক সমীক্ষা অনুসারে ৩৮.২৭ শতাংশ গরিবী নিয়ে ধুঁকছে দাহোদ, যেটা কিনা এ রাজ্যের জেলাসমূহের মধ্যে সর্বাধিক।

“ঘনি তাকলি করি নে মোটা করিয়ে সে ই লোকোনে ধান্দা করি করি নে,” একজন মা হিসেবে তাঁর জীবনের বর্ণনা দিলেন চতুরাবেন। “মঝুরি করিনে, ঘের্নু করিনে, বিঝানু করিনে খাভাদ্যু ছ [বিস্তর খাটাখাটনি করেছি। ঘরকন্নার কাজ, অন্যের বাড়িতে কাজ, কোনও না কোনও ভাবে ওদের চাট্টি খাবারের বন্দোবস্ত করেছি]।” একেক সময় কেবল জোয়ারের জাউ খেয়ে দিন কেটেছে, বাকি দিন পেটে কিল মেরেই স্কুলে গেছে বাচ্চারা। সন্তান বড়ো করা যে মোটেও মুখের কথা ছিল না, আমাদের সেটাই জানালেন তিনি।

নির্ধর নামক পত্রিকাটি গুজরাতের বঞ্চিত সম্প্রদায়ের মুখপত্র। তাদের ২০০৯ সালের সংখ্যায় দুই পর্বে নিজের আত্মজীবনী প্রকাশ করেছিলেন ওয়াজেসিং পারগি। সে গাথা এক দিলদরিয়া আদিবাসী পরিবারের। একদিন সন্ধ্যায় তাঁর ভাইদের সঙ্গে জোখো ডামোরের ভিটেয় আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। পাঁচটি তরতাজা আদিবাসী বালক, স্কুল থেকে ফেরার পথে মূষলধারে বৃষ্টি নেমেছিল। পরিবার সমেত নিজে ভুখা থেকে বাচ্চাগুলির খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন জোখো জী। কবির কথায়, “আমাদের জন্য ভাদর্ভ তো বরাবরই অনশনের মহিনা।” গুজরাতে প্রচলিত হিন্দু বিক্রম সম্বত বর্ষপঞ্জি অনুসারে ভাদর্ভ একাদশতম মাস — গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে যেটা সাধারণত সেপ্টেম্বরে পড়ে।

“বাড়িতে মজুত করে রাখা আনাজ ফুরিয়ে যেত; খেতের শস্য তখনও পাকেনি, তাই মাঠঘাট সবুজ-শ্যামল থাকা সত্ত্বেও একপেট খিদে নিয়ে বেঁচে থাকাটা আমাদের কপাল। হাতে গোনা জনাকয় বাড়ি বাদে ওই মাসগুলোয় কারও ঘরেই দিনে দুবার উনুন জ্বলত না। আর তার আগের বছর যদি খরা হয়ে থাকে, তাহলে অসংখ্য গেরস্থালি কেবল সেদ্ধ বা ঝলসানো মহুয়া খেয়েই দিন গুজরান করত। দারিদ্র্যের অভিশাপ নিয়েই জন্মেছে আমার বেরাদরি।”

Left: The poet’s house in his village Itawa, Dahod.
PHOTO • Umesh Solanki
Right: The poet in Kaizar Medical Nursing Home with his mother.
PHOTO • Umesh Solanki

বাঁদিকে: দাহোদের ইটাওয়া গ্রামে কবির ভিটে। ডানদিকে: কাইজার মেডিক্যাল নার্সিংহোমে তাঁর মায়ের সঙ্গে ওয়াজেসিং পারগি

বর্তমান প্রজন্ম মজুরির সন্ধানে সুদূর খেড়া, বরোদা কিংবা আহমেদাবাদে পাড়ি দিচ্ছে ঠিকই, তবে ওয়াজেসিং সাহেব জানাচ্ছেন যে গত প্রজন্মের মানুষজন মরে গেলেও সেটা করতেন না, পেটে সে যতই খিদে থাকুক না কেন। এই জনগোষ্ঠীতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তেমন দাম নেই। “সে গবাদি পশু চরাই বা স্কুলে যাই, হরেদরে সবই এক। আমাদের বাপ-মা বা টিচাররা একটাই জিনিস চাইতেন — বাচ্চারা লিখতে-পড়তে শিখুক, তাহলেই হবে। একগাদা পড়াশোনা করে এই তল্লাটের আর কে-ই বা রাজা-রানি হতে চায়!”

অবশ্য পারগি সাহেবের খোয়াবনামা কিন্তু অন্যরকম — গাছগাছালির সঙ্গে ওড়া, পাখপাখালির সঙ্গে গপ্পো, পরীদের ডানায় চেপে সাত সমুদ্দুর পেরোনো। তাঁর আশা ছিল — দেবদেবীরা তাঁকে এই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্ত করবেন, সত্যের জয় ও মিথ্যের পরাজয় দেখবেন স্বচক্ষে, বিনম্র মানুষের পক্ষ নিয়ে দাঁড়াতে দেখবেন ঈশ্বরকে, গল্পের ছলে ঠিক যেমনটা তাঁর দাদামশাই বলতেন। জীবন অবশ্য এই রূপকথার উল্টোদিকেই মোড় নিয়েছে।

সেই যে আশার বীজ পুঁতেছিল দাদু,
ছেলেবেলা থেকে জানি হতে পারে সবই —
ভালো কিছু আলবাৎ মুমকিন হেথা —
সেইটা টিকিয়া আছে, আজও মজবুত।
তাই তো বাঁচিয়া আছি দিন প্রতিদিন,
কেটে যায় নিষ্ঠুর জিন্দেগি আজও,
নাছোড়বান্দা আশা — ভানুমতী খেল্ —
হঠাৎই দারুণ কিছু হতেই যে হবে!

এই আশায় সওয়ার হয়েই তো আজীবন শিক্ষার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে এসেছেন। লেখাপড়ার রাস্তায় একবার পা রাখার পর — সেটা খুব আকস্মিক হলেও — আর কক্ষনো পিছু ফিরে দেখেননি। ৬-৭ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ইস্কুলে যাওয়া, ছাত্রাবাসে থাকা, খিদে চেপে ঘুমোনো, দুমুঠো খাবারের জন্য দরজায় দরজায় হত্যে দেওয়া, কিংবা প্রিন্সিপালের জন্য বোতল বোতল মদ কিনে আনা — কিছুতেই দমেননি আমাদের কবি। না আছে গাঁয়ে কোনও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, না আছে রোজরোজ বাড়ি থেকে দাহোদ যাতায়াত করার ইন্তেজাম, না ছিল দাহোদে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার মতো ট্যাঁকের জোরটুকুও ছিল না। ছিল শুধু অনির্বাণ জেদ — নির্মাণক্ষেত্রে ইমারতি মজুরের কাজ করে যাবতীয় খরচা মিটিয়েছেন, রাত কেটেছে রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে, ঘুম ভেঙেছে খিদের তাড়নায়, বোর্ড পরীক্ষার আগে তৈরি হয়েছেন সর্বজনীন শৌচাগারে।

দাঁতে দাঁত চেপে জীবনযুদ্ধ না হারার কসম খেয়েছিলেন ওয়াজেসিং পারগি।

থাকতে থাকতে বেঁচে হামেশাই আমি
আচমকা মাথা ঘুরে ভেঙে পড়ি সিধে,
হৃদয়ের ধুকপুক থমকিয়া যায় —
তবুও ভিতর থেকে বারেবারে ডাকে
জীবন আঁকড়ে রাখা একগুঁয়ে জেদ,
হ্যাঁচকা টানের শেষে উঠে পড়ি ফের,
বাঁচব! বাঁচব আমি! আবার আবার!
জেদের বশেই বাঁচা, এ রাত কাবার।

পড়াশোনার যে ধাপটা তাঁর সবচেয়ে প্রিয়, সেটা আরম্ভ হয় নবজীবন আর্টস্ অ্যান্ড কমার্স কলেজে গুজরাতি সাহিত্যে স্নাতকস্তরে ভর্তি হওয়ার পর। দেখতে দেখতে গ্র্যাজুয়েট হয়ে যান, পালা আসে মাস্টার্সের। তবে স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষ চুকতে না চুকতেই বিএড করবেন বলে মনস্থির করেন তিনি। টাকাকড়ির বড্ড প্রয়োজন, ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু বিএড পাশ করতেই নেমে আসে ঘোর বিপদ। হঠাৎই একদিন মারামারির মাঝে পড়ে যান পারগি সাহেব, যুবা আদিবাসীটির চোয়াল ও ঘাড় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে যায় একটি কার্তুজ। এই দুর্ঘটনায় চিরতরে বদলে যায় তাঁর জীবন। কণ্ঠস্বরও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভীষণভাবে। টানা সাত বছর চিকিৎসা, চোদ্দবার অস্ত্রোপচার ও পাহাড়প্রমাণ কর্জের পরেও সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হতে পারেননি।

Born in a poor Adivasi family, Vajesinh lived a life of struggle, his battle with lung cancer in the last two years being the latest.
PHOTO • Umesh Solanki
Born in a poor Adivasi family, Vajesinh lived a life of struggle, his battle with lung cancer in the last two years being the latest.
PHOTO • Umesh Solanki

হতদরিদ্র এক আদিবাসী পরিবারে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে অবিরাম লড়াই করে গেছেন ওয়াজেসিং সাহেব, গত দু’বছর ধরে লড়ছেন ফুসফুসের ক্যানসারের সঙ্গে

এক ঘায়ে দুই ধাক্কা খেলেন মানুষটি। এমন এক সম্প্রদায়ে জন্ম, এমনিতেই যাঁদের কণ্ঠরুদ্ধ। কুদরতের দৌলতে তাঁর কণ্ঠ ভরা যে জোরটা ছিল, কালের গ্রাসে সেটাও ক্ষীণ হয়ে গেল। শিক্ষকতার স্বপ্ন ভুলে মজদুরির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হলেন। শুরুতে সর্দার প্যাটেল ইন্সটিটিউট অফ ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চে চুক্তিমাফিক কাজ, তারপর প্রুফরিডিং। এই প্রুফরিডিংয়ের কাজে ঢুকেই তাঁর মোলাকাত হয় ফেলে আসা প্রথম প্রেমের সঙ্গে — ভাষা। দুই দশক ধরে লেখা সাহিত্যের সান্নিধ্যে আসেন ওয়াজেসিং সাহেব, গোগ্রাসে পড়তে থাকেন সবকিছু।

কী তাঁর পর্যবেক্ষণ?

“তাহলে, ভাষা নিয়ে আমার যা যা মনে হয় তা খোলাখুলি ভাবে বলি আপনাকে,” দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন আমায়, “গুজরাতি কবি-সাহিত্যিকরা ভাষা নিয়ে বড়োই উদাসীন। শব্দের ব্যবহার নিয়ে কবিরা বিশেষ মাথা-টাথা ঘামান না, অধিকাংশ তো গজল লিখেই ক্ষান্ত থাকেন, তাঁদের কাছে আবেগ-অনুভূতিই সব, এর বাইরে কিস্যুটি নেই। শব্দ-টব্দ সব ঠিকই তো আছে; থাকলেই হল আর কি।” এই যে শব্দের সূক্ষ্ম সমঝদারি, তাদের সাজিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সর্বোপরি কবিতায় নিজ অভিজ্ঞতা থেকে তুলে আনা তেজ — ওয়াজেসিং পারগির দুই খণ্ডের কবিতায় তারই দেখা মেলে। অথচ মূলস্রোতের সাহিত্য না দিয়েছে তার দাম, না দিয়েছে এক আনা স্বীকৃতি।

“কে জানে, বোধহয় আরও নিয়মিত লিখতে হত আমায়,” তিনি যে আজ অবধি ওস্তাদ কবির শিরোপা পেলেন না, সেটাই যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টায় লেগেছিলেন, “একটা-দুটো কবিতা লিখলে কে-ই বা আর পাত্তা দেবে বলুন? সংকলন দুটো তো সবে সবে বেরিয়েছে। নামডাকের জন্য কলম ধরিনি। নিয়মিত লেখাও সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে। নিজের লেখাপত্তরকে খুব যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি, সেটাও মনে হয় না। খিদে আর আমাদের জীবন তো একই তাঁতে বোনা, তাই ওটা নিয়েই লিখেছি। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বেরিয়ে এসেছে, এটুকুই যা।” কথোপকথনের পুরোটা জুড়ে শুধু নিজেকেই দুষছিলেন মানুষটা — অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো, পুরোনো ক্ষত উন্মুক্ত করা, বা রোশনির নায্য ভাগের উপর দাবি জমানো — তিনটের একটাও করেননি। আর এ ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন…

আমাদের রোশনির ভাগ
কেউ না কেউ তো ব্যাটা খেয়েইছে গিলে,
শুধুই জ্বলছি মোরা তাই
সূর্যের সাথে ধুস্ রেষারেষি করে,
আঁধারে আঁধার মেখে
বেকার যাচ্ছে কেটে জিন্দেগিগুলো।

তাঁর পেশাগত জীবনটা ভরা ছিল পরিচিতি ঘিরে বস্তাপচা পূর্বসংস্কারে। প্রুফরিডার হিসেবে নিজের দক্ষতার মূল্য পাননি, তার বদলে জুটেছে কেবল বৈষম্যমূলক ব্যবহার। একবার একটা মিডিয়া হাউসের প্রবেশিকা পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড নিয়ে পাশ করেছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও কোম্পানি তাঁকে এমন একটা পদের প্রস্তাব দেয় যার বেতন ‘সি’ গ্রেডে পাশ করা লোকের চাইতেও কম। ভেঙে পড়েছিলেন তিনি — প্রশ্ন করেছিলেন সেই নীতিকে যে কিনা এমন একটা কুসিদ্ধান্তের জন্ম দেয়। স্বাভাবিকভাবেই শেষ অবধি চাকরিটা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

Ocean deep as to drown this world, and these poems are paper boats'.
PHOTO • Umesh Solanki

‘দুনিয়া তলিয়ে যায় সাগর এমন, কাগজের নাও মোর কবিতা তেমন’

স্বল্পমেয়াদি চুক্তির ভিত্তিতে আহমেদাবাদের বিভিন্ন মিডিয়া হাউসে কাজ করতেন, পারিশ্রমিক বলতে খোলামকুচি। পারগি সাহেবের সঙ্গে প্রথম আলাপের সময় অভিযানের হয়ে লেখালেখি করতেন কেতন পারমার। তাঁর কথায়: “২০০৮ সালে যখন অভিযানে যোগ দিই, ওয়াজেসিং সাহেব তখন সম্ভব মিডিয়া সংস্থায় কাজ করতেন। খাতায় কলমে তিনি প্রুফরিডার হলেও আমরা জানতাম যে তাঁকে কোনও প্রবন্ধ দিলে তিনি সম্পাদনা না করে ফেরত দেবেন না। কাঁচামাল হাতে পেলেই লেখার গড়ন আর কাঠামো খাড়া করে দিতেন। আর ভাষার ব্যবহারটাও লাজবাব। কিন্তু তিনি যোগ্য সম্মান পেলেন না, প্রাপ্য সুযোগটুকু অধরাই রয়ে গেল।”

সম্ভব সংস্থায় থাকাকালীন মোটে ৬,০০০ টাকা পেতেন মাসে। পরিবারের ভরণপোষণ, ভাইবোনের পড়াশোনা, আহমেদাবাদে খেয়েপরে বেঁচে থাকা — ওটুকু মাইনে দিয়ে যে কিছুই হত না। তাই ইমেজ পাবলিকেশনসে ফ্রিলান্স কাজ শুরু করেন তিনি, সারাটাদিন সম্ভবের দফতরে প্রাণপাত করার পর বাড়ি ফিরে শুরু হত আবার করে জাঁতা ঘোরানো।

“বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে উনিই আমার বাবা, দাদা নন। হাজার ঝড়ঝাপ্টা সামলেও বড়দা আমার লেখাপড়া খরচ জুগিয়েছেন। আমার মনে পড়ে, তালতেজের একটা ঘুপচি ভাঙাচোরা ঘরে থাকতেন। কামরার উপর টিনের ছাউনি, সারারাত শুনতে পেতাম কুকুর হল্লা করছে। ৫-৬ হাজার যেটুকু রোজগার করতেন, ও দিয়ে নিজের খাইখরচা মেটানোই চাপের, তাই উপরি কামকাজ করে আমাদের পড়াশোনার খরচ বইতেন। এটা আমি চাইলেও ভুলতে পারব না,” বলছিলেন কবির ছোটোভাই, ৩৭ বছর বয়সি মুকেশ পারগি।

শেষ পাঁচ-ছ’টা বছর আহমেদাবাদের একটা বেসরকারি প্রুফরিডিং সংস্থায় কাজ করতেন ওয়াজেসিং সাহেব। “জীবনের সিংহভাগটা তো চুক্তির কাজেই কাটিয়েছি। হালে এই সিগনেট ইনফোটেকে ঢুকেছি। গান্ধীজির নবজীবন প্রেসের সঙ্গে ওদের একটা চুক্তি ছিল, সেই সুবাদেই ওদের প্রকাশিত বইয়ের উপর কাজ আরম্ভ করি। নবজীবনের আগে অন্যান্য প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছি,” বলেছিলেন তিনি, “তবে গুজরাতে এমন একটাও প্রকাশনা সংস্থা নেই যারা স্থায়ী পদে প্রুফরিডার রাখে।”

দোস্ত ও লেখক কিরীট পারমারের সঙ্গে কথোপকথন চলাকালীন তিনি জানিয়েছিলেন, “গুজরাতে হাজার ঢুঁড়লেও যে ভালো প্রুফরিডার মেলে না, তার একটা কারণ এই নামমাত্র পারিশ্রমিক। প্রুফরিডার মানে অভিভাবক, ভাষার হয়ে ওকালতি করে যে। তাহলে তাঁদের আমরা যথাযোগ্য সম্মান আর সঠিক মজুরি দিই না কেন? আমরা দিনে দিনে বিলুপ্ত প্রজাতি হয়ে যাচ্ছি। তবে লোকসানটা আদতে কার জানেন? গুজরাতি ভাষার।” স্বচক্ষে গুজরাতি মিডিয়া সংস্থার বেহাল অবস্থা দেখেছেন ওয়াজেসিং সাহেব। ভাষাকে একফোঁটা সম্মান করে না তারা, উপরন্তু ভাবে লেখাপড়া জানা যে কোনও মানুষকেই দিব্যি প্রুফরিডারের আসনে বসিয়ে দেওয়া যায়।

“সাহিত্য জগতের এই ধারণাটাই আগাপাছতলা ভুল যে প্রুফরিডারের কোনও জ্ঞান, দক্ষতা বা সৃজনশীলতা নেই,” বললেন তিনি। আজীবন গুজরাতি ভাষার রক্ষক হয়েই রয়ে গিয়েছিলেন। “সার্থ জোড়ানি কোশের [একটি সুবিদিত অভিধান] নিমিত্তে একটি সংযোজনী তালিকা প্রকাশ করেছিল গুজরাত বিদ্যাপীঠ, কোশে যোগ করার জন্য ৫,০০০টা নতুন শব্দ ছিল তাতে,” কিরীট ভাই স্মৃতিচারণ করছিলেন, “বিচ্ছিরি সব ভুলে ভরা ছিল সেটা — শুধু বানান নয়, তথ্যগত ভুল, খুঁটিনাটি অনেক কিছুই গলদ ছিল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকটা লিখে রেখেছিলেন ওয়াজেসিং, জেরা করেছেন তাদের দায়িত্বহীনতাকে। তাঁর মতো কাজ করতে সক্ষম, আজ আর এমন কাউকেই দেখি না গুজরাতে। রাজ্য শিক্ষা পর্ষদের ৬, ৭ ও ৮ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে যা যা ভুলভ্রান্তি ছিল, সেসব নিয়েও লিখতেন তিনি।”

Vajesinh's relatives in mourning
PHOTO • Umesh Solanki

ওয়াজেসিং পারগির শোকরুদ্ধ আত্মীয়স্বজন

Vajesinh's youngest brother, Mukesh Bhai Pargi on the left and his mother Chatura Ben Pargi on the right
PHOTO • Umesh Solanki
Vajesinh's youngest brother, Mukesh Bhai Pargi on the left and his mother Chatura Ben Pargi on the right
PHOTO • Umesh Solanki

বাঁদিকে: কবির সবচেয়ে ছোটো ভাই মুকেশ পারগি। ডানদিকে: মা চতুরাবেন

এত প্রতিভা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও দুনিয়া তাঁকে প্রতিকূলতা বই আর কিছুই দেয়নি। তবুও আশা ও সহনশীলতার কথা ঝরেছে তাঁর কলম থেকে। নিজের যেটুকু আছে, সেটা নিয়েই যে বাঁচতে হবে, এই সম্যক উপলব্ধি তাঁর ছিল। আর ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে গিয়েছিল তাঁর ঢের আগেই।

এই হাতে খিদে নিয়ে,
ওই হাতে শ্রম,
জন্মেছি আমি — এতে নাহি কোনও ভ্রম।
বল্ খোদা বল্ তোর পুজোর উপায়,
আরেকটা হাত আমি কোত্থেকে পাই?

খোদার শূন্যস্থান প্রায়শই পূরণ করত কাব্য। গুজরাতি ভাষায় দুটি কাব্যগ্রন্থ আগিয়ানু আজওয়ালুন (জোনাকির আলো, ২০১৯) ও ঝকলনা মোতি (শিশিরের মুক্তো, ২০২২) ছাড়াও নিজের মাতৃভাষা পঞ্চমহলি ভিলিতেও বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছেন তিনি। অবিচার, শোষণ, বৈষম্য ও বঞ্চনায় ভরা জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও বিরক্তি বা রাগের নামগন্ধ নেই তাঁর লেখায়। নেই কোনও অভিযোগ। “কোথায়ই বা আর নালিশ ঠুকব? সমাজের দরবারে? উঁহু, সমাজের কাছে অভিযোগ করে লাভ নেই, ওরা আমাদের ঘাড় মটকে দেবে,” বলেছিলেন তিনি

ওয়াজেসিং পারগি তাঁর কবিতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিসর ছাপিয়ে সর্বজনীন বাস্তবের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। তাঁর মতে ব্যাপ্তির অভাবেই বর্তমান কালের আদিবাসী ও দলিত সাহিত্য সফল হতে পারছে না। “খানিক দলিত সাহিত্য পড়ে দেখেছি, বৃহত্তর মানব সংযোগ অমিল। আমাদের উপর নেমে আসা অত্যাচারের বিরুদ্ধে নালিশ ছাড়া আর কিচ্ছুটি নেই। কিন্তু এরপর এখান থেকে কোন রাস্তায় পা বাড়াব আমরা? আদিবাসীদের কণ্ঠ তো এই সদ্য সদ্য উঠে আসছে। তবে তাঁরাও দেখছি শুধু নিজেদের কথাই বলছেন। বৃহত্তর প্রশ্নগুলো তো কেউ ছুঁয়েও দেখছেন না।”

দাহোদ-নিবাসী কবি ও লেখক প্রবীণ ভাই যাদবের কথায়, “ছোট্টবেলায় বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে ভাবতাম, আমাদের বেরাদরি, আমাদের অঞ্চল থেকে কোনও কবির দেখা পাচ্ছি না কেন? তারপর এই ২০০৮ সালে একটা সংকলনে ওয়াজেসিং পারগির নাম পাই। তাঁর দেখা পেতে পেতে চারটে বছর কেটে যায়! মোলাকাতের জন্য রাজি করাতেও বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। উনি তো আর মুশায়রার শায়ের নন। তাঁর কাব্যে ঝরে আমাদের জ্বালাযন্ত্রণা, প্রান্তিক জীবন।”

কলেজে পড়তে পড়তেই কাব্যির পোকা নড়ে ওঠে ওয়াজেসিং সাহেবের মাথায়। প্রশিক্ষণ বা গুরুতর সাধনার কথা ভাবার সময়টুকুও ছিল না। “কবিতারা হরবখত আমার মগজে ঘুরপাক খেতে থাকে,” বুঝিয়ে বললেন তিনি, “ওরা আমার অস্তিত্বের বিরামহীন অভিব্যক্তি, কখনও আখরে ধরা পড়ে, কখনও বা দৌড়ে পালায়। অধিকাংশটাই অব্যক্ত হয়ে রয়ে গেছে। মাথার ভিতর তো অনন্তকাল ধরে ওদের ফেলে রাখা সম্ভব নয়, তাই ইচ্ছেমতন আকার দিই। তা সত্ত্বেও অসংখ্য কবিতা না-লেখাই রয়ে যায়।”

দু’বছর হতে চলল এক মারণব্যাধি, ফুসফুসের ক্যানসার এসে তাঁর না-লেখা কবিতার তালিকা আরও লম্বা করে দিয়েছে। তবে সত্যিই যে কত কত না-লেখা কবিতা রয়েছে, সেটা ওয়াজেসিং পারগির যন্ত্রণাময় জিন্দেগি ও লড়াইয়ের দিকে চোখ না ফেরালে ধরা না-মুমকিন। না-লেখা ‘জোনাকির মিটমিটে আলো’ শুধু নিজের জন্য নয়, বরং তাঁর সমগ্র সম্প্রদায়ের জন্য আঁকড়ে ধরা রেখেছেন। নিষ্ঠুর নির্মম এক পৃথিবীর চোখে চোখ রেখেও এক কণ্ঠ যে কোন জাদুবলে তার করুণা ও সহানুভূতি ধরে রাখতে পারে, সেও তো না-লেখা। গুজরাতি ভাষায় মহাফেজখানায় কত কবিই না এলো গেল, কিন্তু শ্রেষ্ঠজনের তালিকায় ওয়াজেসিং সাহেবের নাম যে আজও না-লেখা।

One of the finest proofreaders, and rather unappreciated Gujarati poets, Vajesinh fought his battles with life bravely and singlehandedly.
PHOTO • Umesh Solanki

গুজরাতি ভাষার অন্যতম প্রুফরিডার ও জীবনভর স্বীকৃত না পাওয়া কবি ওয়াজেসিং পারগি, একবুক সাহস নিয়ে একাই নেমেছিলেন জীবনের রণাঙ্গনে

তবে উনি কিন্তু ইনকিলাবের কবি হতে চাননি কখনও। তাঁর মতে শব্দরা তো আর আগুনের ফুলকি নয়।

এক দমকা হাওয়ার তরে —
অপেক্ষা মোর জিন্দগিভর হাজার বছর ধরে...
আমি এক ঢিপি ছাই, তাতে হবেটা কী ভাই?
একটা ঘাসের শিষও জ্বালাইতে নারি।
আমি আগুনের ফুলকি যে নই —
তবে একমুঠো ছাই ছুঁড়বোই
রাতকানা বাবু আর বিবিদের চোখে —
জ্বলবে বিছুটি যেন, অন্তত একটারও
চোখ যদি কচলিয়ে হয়ে যায় লাল।

প্রায় সত্তরটি অপ্রকাশিত কবিতা আজও আমাদের চোখ ও চেতনার বালি হয়ে রয়ে গিয়েছে, তাই আমরাও না হয় সেই দমকা হাওয়ার পথ চেয়েই বসে থাকি...

ঝুলড়ি*

ছোট্টবেলায় বাপটা আমায়
ঝুলড়ি দিলো কিনে,
কাচার পরে পয়লাবারেই রংটা হল ফিকে,
কুঁকড়ে গেল ছোট্ট হয়ে, আলগা হল সুতো,
ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না, বায়নাবেলার মতো।
হাত-পা ছুঁড়ে চিল্লিয়ে তাই শুনিয়েছিলাম আমি,
“পরব না ছাই ঝুলড়িখানা,
হোক সে যতই দামী!”
মাথায় আমার হাত বুলায়ে সান্ত্বনা দেয় মা,
“যদ্দিন না ছিঁড়ছে এটা থাক না, ফেলিস না,
ঝুলড়ি নতুন কিনব নাহয় এইটা ফেটে গেলে,
তদ্দিন তুই পরিস এটা,
তুই না সোনা ছেলে?”

আজকে আমার শরীরটা সেই ঝুলড়িখানার মতো,
এ ভাঁজ ও ভাঁজ, ভাঁজের সারি,
রোগযাপনের ক্ষত।
গাঁটগুলো আজ যাচ্ছে গলে, নিশ্বাসে প্রশ্বাসে
কাঁপতে থাকি, মনটা আজও বায়নাবেলায় হাসে —
চাই না রে ছাই জিসমটা আর,
দেবই ঝেড়ে ফেলে,
হঠাৎ আমার পড়ল মনে, আম্মা ডেকে বলে,
“যদ্দিন না ছিঁড়ছে এটা থাক না, ফেলিস না...
তদ্দিন তুই পরিস এটা,
তুই না সোনার ছা?”

ওয়াজেসিং পারগির অপ্রকাশিত গুজরাতি কবিতার তর্জমা।
*ঝুলড়ি: সুতোর কাজ-করা প্রথাগত জামা, এটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাচ্চারা পরে।


তাঁর প্রয়াণের দিনকয়েক আগে আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ওয়াজেসিং পারগির প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন লেখক। এছাড়াও মুকেশ পারগি, কবি ও সমাজকর্মী কাঞ্জি প্যাটেল, নির্ধরের সম্পাদক উমেশ সোলাঙ্কি, ওয়াজেসিং পারগির লেখক-বন্ধু কেতন পারমার ও গালালিয়াভাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সতীশ পারমারের প্রতি লেখকের ধন্যবাদ — তাঁদের ছাড়া এই প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণই রয়ে যেত।

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত প্রতিটি কবিতাই ওয়াজেসিং পারগির — মূল গুজরাতি থেকে সেগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন প্রতিষ্ঠা পান্ডিয়া, বাংলা তর্জমাগুলি তারই আধারে লেখা।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Pratishtha Pandya

Pratishtha Pandya is a Senior Editor at PARI where she leads PARI's creative writing section. She is also a member of the PARIBhasha team and translates and edits stories in Gujarati. Pratishtha is a published poet working in Gujarati and English.

Other stories by Pratishtha Pandya
Photos and Video : Umesh Solanki

Umesh Solanki is an Ahmedabad-based photographer, documentary filmmaker and writer, with a master’s in Journalism. He loves a nomadic existence. He has three published collections of poetry, one novel-in-verse, a novel and a collection of creative non-fiction to his credit.

Other stories by Umesh Solanki

P. Sainath is Founder Editor, People's Archive of Rural India. He has been a rural reporter for decades and is the author of 'Everybody Loves a Good Drought' and 'The Last Heroes: Foot Soldiers of Indian Freedom'.

Other stories by P. Sainath
Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata. He is a translator for PARI, and a poet, art-writer, art-critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra