“রেলগাড়িটা মোটে পাঁচ মিনিটের জন্য দাঁড়ায়, ভিড়ভাট্টা হুড়োহুড়ি সামলে কোনওমতে উঠতে হয়। একেকদিন তারই মাঝে ট্রেন ছেড়ে দেয়, খানকতক বোঁচকা প্ল্যাটফর্মেই পড়ে থেকে যায়।” সারঙ্গা রাজভোই একজন দড়ি-নির্মাতা, ফেলে আসা যে বোঁচকাগুলির কথা তিনি বলছেন, সেগুলো বিভিন্ন কাপড়কলের বাতিল আঁইশে (ফাইবার বা তন্তু) ভরা — ওঁর মতো মহিলারা সেই আঁইশগুলো দিয়ে দড়িদড়া বানিয়ে বেচেন। এই দড়ি দিয়ে যেমন গরু-মোষ বাঁধা হয়, তেমন লরি বা ট্র্যাক্টরের উপর মালপত্তর বাঁধতেও কাজে লাগে, আবার কাপড় কাচার পর শুকোতেও দেওয়া যায়।

“হামারা খানদানি হ্যায় [এটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা],” জানালেন সন্তরা রাজভোই। আহমেদাবাদের ওয়টভা পৌর-আবাসনে থাকেন তিনি। ঘরের কাছেই একখান খোলা চাতালে বসে, কৃত্রিম তন্তুর গিঁট ছাড়াতে ছাড়াতে কথা বলছিলেন ব্যস্ত এই কারিগর।

সারঙ্গাবেন ও সন্তরাবেন দুজনেই গুজরাতের রাজভোই যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষ। পথের ধারে যতগুলো কাপড়কল পড়ে, সেখান থেকে ছাঁট আঁইশ কিনতে কিনতে আহমেদাবাদ থেকে সুরাট পর্যন্ত পাড়ি দেন তাঁরা। এগুলো দিয়ে দড়ি বানানো হয়। কাজের তাগিদে রাত ১১টা নাগাদ ঘর ছাড়েন, ফিরতে ফিরতে পরদিন সন্ধ্যা ৭টা বেজে যায়। বাচ্চাদের রেখে যান আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-পড়শির জিম্মায়।

রাতের ট্রেন ধরে গন্তব্যে পৌঁছতে পৌঁছতে ভোররাত ১টা-২টো বেজে যায়, ফলত রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই ঘুমোতে বাধ্য হন মহিলা দড়ি-নির্মাতারা। হামেশাই হেনস্থার শিকার হন। “ধরপাকড় করে থানায় নিয়ে যায়, জেরা চলে কোত্থেকে এসেছি। হাবিলদাররা তো গরিব ইনসান দেখলেই পাকড়াও করে,” করুণাবেন বললেন, “আটক করার মর্জি হলে আটকে রাখে।”

করুণা, সন্তরা ও সারঙ্গা রাজভোই প্রতিবেশী, থাকেন ওয়টভা শহরের চার মালিয়া পৌর-আবাসনে। ঘরে নিয়মিত পানি আসে না, বর্জ্যনিকাশী ব্যবস্থার অভাব। বিদ্যুৎ সংযোগটাও যে বহুদিন লড়াই করে হাসিল করেছেন, সেকথা তিনজনেই জানালেন।

Santra Rajbhoi (left) belongs to the Rajbhoi nomadic community in Gujarat. Women in this community – including Saranga (seated) and Saalu – practice the traditional occupation of rope-making
PHOTO • Umesh Solanki
Santra Rajbhoi (left) belongs to the Rajbhoi nomadic community in Gujarat. Women in this community – including Saranga (seated) and Saalu – practice the traditional occupation of rope-making
PHOTO • Umesh Solanki

সন্তরা রাজভোই (বাঁদিকে) গুজরাতের রাজভোই যাযাবর জনজাতির সদস্য। এ সম্প্রদায়ের মহিলারা — যেমন সারঙ্গা (বসে আছেন) ও সালু রাজভোই — দড়ি বানান, এটাই তাঁদের প্রথাগত পেশা

Left: Karuna Rajbhoi and others twist strands of fibre into a rope.
PHOTO • Umesh Solanki
Right: Char Maliya building complex in Vatva, Ahmedabad, where the women live
PHOTO • Umesh Solanki

বাঁদিকে: অন্যদের সঙ্গে তন্তু পাকিয়ে পাকিয়ে দড়ি বানাচ্ছেন করুণা রাজভোই। ডানদিকে: মহিলারা সকলেই আহমেদাবাদের ওয়টভার চার মালিয়া আবাসনে থাকেন

রাজভোই জনগোষ্ঠীর মহিলারা দড়ি বানান, পুরুষরা কানের ময়লা সাফ করেন। বহু সংগ্রাম সত্ত্বেও স্বীকৃতি পায়নি এই সম্প্রদায়টি, ফলত সরকারি সুযোগ-সুবিধা আজও তাঁদের অধরা, জীবনযাত্রার মানে উন্নতিও হচ্ছে না। রাজভোইরা যাযাবর, অথচ, “নিগমের [গুজরাত যাযাবর ও বিমুক্ত জনজাতি কল্যাণ সমিতি] খাতায় আমাদের জনজাতির নাম নেই,” জানাচ্ছেন মুখিয়া অর্থাৎ গোষ্ঠীপতি রাজেশ রাজভোই।

যাযাবর সম্প্রদায়সমূহের জন্য যে কামকাজের সুযোগ তথা নানান যোজনা বরাদ্দ করা আছে, সেগুলো পেতে তাঁদের বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়, কারণ, “খাতায় কলমে আমাদের নাম ‘রাজভোই’ না করে ‘ভোইরাজ’ করা আছে, তাই সরকারি কাজ পাওয়াটা খুবই মুশকিলের।”

উপরন্তু গুজরাত সরকারের ওয়েবসাইটে যে ২৮টি যাযাবর জনজাতি ও ১২টি বিমুক্ত জনগোষ্ঠীর নাম রয়েছে, তাতে রাজভোই বা ভোইরাজের কোনও চিহ্ন নেই। গুজরাতের ‘ভোই’ জাতির নাম ভারতের বিমুক্ত জনজাতি, যাযাবর সম্প্রদায় তথা আধা - যাযাবর জনগোষ্ঠীর খসড়া তালিকায় থাকলেও এ রাজ্যে ভোইরাজরা অন্যান্য অনগ্রসর জাতির তালিকায় নিবন্ধিত। “গুজরাতের বাইরে লোকে আমাদের সলাড-ঘেরা বলেও ডাকে, আমাদের বেরাদরির সদস্যরা ওখানে পাষাণভার (মিলস্টোন) আর জাঁতাকল বানিয়ে পেট চালান,” রাজেশ ভাই জানালেন। প্রসঙ্গত, সলাড-ঘেরা জনজাতিটিও যাযাবর, এবং ওয়েবসাইটে তাঁদের ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করা আছে।

*****

দড়ি বানানোর তন্তুর খোঁজে কারিগর মহিলারা সুরাটের এক কারখানা থেকে অন্য কারখানায় পাড়ি দেন। “ওয়টভা থেকে মণিনগর, মণিনগর থেকে ওয়টভা। কুড়ি টাকা কিলো দরে [কাঁচা] মাল কিনি,” পান চিবোতে চিবোতে বলে উঠলেন সারঙ্গা রাজভোই, হাতদুটো ওদিকে একটানা আঁইশ ছাড়িয়ে চলেছিল।

আহমেদাবাদের মণিনগর থেকে সুরাট জেলার কিমের দূরত্ব প্রায় ২৩০ কিলোমিটার। রেলগাড়ি ছাড়া গতি নেই; টিকিটের দাম বেশ চড়া, তবে গাল বেয়ে গড়িয়ে নামতে থাকা পানের কষ মুছে সহাস্যে জানালেন সারঙ্গাবেন, “আমরা থোড়াই না টিকিট কাটি!” কিম রেলস্টেশনে নেমে, রিকশা ধরে সে অঞ্চলের বিভিন্ন কাপড়কলে হাজিরা দেন দড়ি-নির্মাতা মহিলারা।

“সমস্ত কাটাছেঁড়া ফাইবার সরিয়ে রাখা হয়। মজুররা সেগুলো হয় সরাসরি আমাদের, কিংবা কাবাড়িদের বেচেন, তারপর ওঁদের থেকে আমরা কিনে নিই,” গুরুগম্ভীর স্বরে জানালেন গীতা রাজভোই (৪৭)। তবে যেমন তেমন তন্তু দিয়ে এ কাজ হয় না, করুণাবেন বোঝালেন আমাদের, “সুতি আমাদের কোনও কম্মে লাগে না। আমরা কেবল [কৃত্রিম] রেশম কিনি, আর কিমের বাইরে কোনও কারখানায় রেশমের কাজ হয় না।”

Left: Saranga (left) and Karuna (right) on a train from Maninagar to Nadiad.
PHOTO • Umesh Solanki
Right: Women take a night train to Nadiad forcing them to sleep on the railway platform from 12:30 a.m. until dawn
PHOTO • Umesh Solanki

বাঁদিকে: মণিনগর থেকে রেলগাড়ি চেপে নড়িয়াদ যাচ্ছেন সারঙ্গা (বাঁদিকে) ও করুণা রাজভোই (ডানদিকে)। ডানদিকে: মহিলারা রাতের ট্রেন ধরে নড়িয়াদে পৌঁছন ১২.৩০টায়, ফলত ভোরের আলো ফোটা অবধি প্ল্যাটফর্মেই ঘুমোতে বাধ্য হন

Left: The women have tea and snacks outside the railway station early next morning.
PHOTO • Umesh Solanki
Right: Karuna hauls up the bundles of rope she hopes to sell the following day
PHOTO • Umesh Solanki

বাঁদিকে: সক্কাল সক্কাল রেলস্টেশনের বাইরে চা-জলখাবার খাচ্ছেন মহিলারা। ডানদিকে: টেনেহিঁচড়ে গাঁটরি-গাঁটরি দড়ি তুলছেন করুণাবেন। উমিদ একটাই, পরদিন এগুলো বেচতে পারবেন

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কাঁচামালে (তন্তু) গিঁট ভর্তি, তাই দাম কম, জানাচ্ছেন গীতা। ১৫-২৭ টাকা কিলোর মধ্যে ঘোরাফেরা করে দর। তবে সোফা, লেপ-তোশক আর বালিশে যে সাদা আঁইশ ইস্তেমাল হয় তার দাম বেশি — কিলো-পিছু ৪০ টাকা।

“একা একটা মেয়ে ১০০ কেজি আনতে পারে বটে। কিন্তু বাস্তবে কখনও ২৫, কখনও বা ১০ কেজি আনে,” সন্তরা বললেন। একসঙ্গে অতখানি তন্তু পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই — কেনার মানুষ প্রচুর, অথচ বেচার মতো মাল বড্ড কম।

কিম থেকে মাল বয়ে আহমেদাবাদে আসার আগে “কিমে [বিভিন্ন কাপড়কলে] ঘুরে ঘুরে মাল কিনে শেষে স্টেশনে বয়ে আনতে হয়,” সারঙ্গা রাজভোই বোঝালেন।

স্টেশনে পা রাখতেই রেলকর্মীদের নজর কাড়ে তাঁদের বিশালবপু বোঁচকাগুলি। “ওঁরা আমাদের ধরলে, বোঝানোর চেষ্টা করি যে আমরা গরিব, তখন অনেকসময় আমাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু হয়তো কোনও একগুঁয়ে অফিসার বাবু এসে হাজির হল, তখন ১০০-২০০ টাকার মাশুল দিতে হয়,” করুণা রাজভোই জানালেন, “যখন হাজার টাকার কাঁচামাল কিনেছি, শ-তিনেক টাকা খসেছে [যাতায়াতে]।” প্রয়োজনীয় আঁইশ হাতে আসুক বা না আসুক, ৩০০ টাকা গচ্চা যাবেই।

বানানো হয়ে গেলে ৩০ হাত লম্বা একগাছি দড়ি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়, আর ৫০ হাত লম্বা হলে তার দাম দাঁড়ায় ১০০।

দড়ি-নির্মাতা মহিলারা একেক দফায় ৪০-৫০ গাছি দড়ি বেচতে বেরোন। একেকদিন সবকটাই বিক্রি হয়ে যায়, অন্যদিন মাহেমদাবাদ, আনন্দ, লিম্বাচি, তারাপুর, কঠলাল, খেড়া, গোভিন্দপুরা, মাতর, চাঙ্গা, পাল্লা ও গোমতিপুরের মতো অসংখ্য গঞ্জ শহর নগর বা মফস্বলে ঘুরেও খান কুড়ির বেশি বিক্রি হয় না।

Left: Using one of the ropes, Karuna demonstrates how to tie a loop used to tether animals.
PHOTO • Umesh Solanki
Right: The women begin the day setting shop near a dairy; they hope to sell their ropes to cattle owners
PHOTO • Umesh Solanki

বাঁদিকে: গরু-মোষ বাঁধতে কেমনভাবে দড়িতে ফাঁস লাগানো হয়, তা হাতেনাতে প্রদর্শন করে দেখাচ্ছেন করুণা রাজভোই। ডানদিকে: পশুপালকদের খানিক দড়ি বেচার আশায় ডেয়ারিকেন্দ্রের কাছে পসরা সাজিয়ে দিন শুরু করেন মহিলারা

Left: As the day progresses, Karuna and Saranga move on to look for customers in a market in Kheda district.
PHOTO • Umesh Solanki
Right: At Mahemdabad railway station in the evening, the women begin their journey back home
PHOTO • Umesh Solanki

বাঁদিকে: বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খেড়া জেলার একটি বাজারে খদ্দের খোঁজা আরম্ভ করেন করুণাবেন ও সারঙ্গাবেন। ডানদিকে: মাহেমদাবাদ রেলস্টেশনে সন্ধ্যা নেমেছে, এবার বাড়ির পানে রওনা দেবেন রাজভোই মহিলারা

“বিস্তর খাটাখাটনি করে দড়িদড়া বানাই, উপরি খরচা করে নড়িয়াদ বা খেড়ার মতো গাঁয়ে-গঞ্জে বেচতে যাই, শেষে দেখি লোকে দরাদরি করে ১০০ থেকে ৫০-৬০ টাকায় নামিয়ে দিচ্ছে,” সারঙ্গাবেন জানালেন। একে তো নামমাত্র রোজগার, তার উপর যাতায়াত আর জরিমানার ভারে সেটা আরও কমে যায়।

দড়ি নির্মাণের কাজটা খুবই শ্রমসাধ্য, দেহমন নিংড়ে নেয়, ঘরকন্না সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে এ কাজ করে থাকেন মহিলারা। অরুণা রাজভোইয়ের কথায়, “জব্ নল আতা হ্যায় তব্ উঠ যাতে হ্যাঁয়। [কলে পানি এলেই আমরা তড়িঘড়ি উঠে পড়ি]।”

ঘরদোর অপরিসর, দড়ি বানানো সম্ভব নয়। তাই খোলা আসমানের নিচে বসে কাজ করতে বাধ্য হন মহিলারা, রোদ্দুর এড়ানোর কোনও উপায় থাকে না। “সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত খাটি, দ্বিতীয় দফায় দুটো থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত,” অরুণা রাজভোই জানাচ্ছেন। “গরমকালে বেলা বড়ো হয়, তাই বেশি বেশি করে দড়ি বানাতে পারি — দিন গেলে ২০-২৫টা। তবে শীত পড়লে সেটা কমতে কমতে ১০-১৫ খানায় এসে ঠেকে,” যোগ করলেন রূপা।

হাতে ধরা একটি ছোটো লাটাই, আর বড়ো একখান ঘুরন্ত চাকা — দড়ি-নির্মাণের কাজে এই যন্ত্রদুটো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

একজন মহিলা চরকা ঘোরান, আরেকজন তন্তুর গোছা ধরে থাকেন, যাতে আঁইশগুলো জড়িয়ে না যায়। দড়ির শেষপ্রান্তটি থাকে তৃতীয়জনের হাতে। একসঙ্গে তিন-চারজন মিলে কাজটা করতে হয়, সাধারণত বাড়ির সব মেয়েরা তাই একজোটে দড়ি পাকান।

সর্ভিলা রাজভোইয়ের কথায়, “চরকাটা ঘোরাতে থাকি, ফাইবার পাক খেয়ে সুতো তৈরি হয়। তারপর তিনগাছি সুতো একসঙ্গে পেঁচিয়ে দড়ি বানাই আমরা,” তারপর একথাটাও জানালেন যে ১৫-২০ হাতের একেকটা দড়ি নির্মাণে অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট লাগে। গড় হিসেবে একদল দড়ি-কারিগর দৈনিক ৮-১০টা দড়ি পাকাতে সক্ষম, তবে কোনও কোনওদিন ২০টা পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেন। উপরন্তু বরাত পেলে ৫০ কি ১০০ হাত লম্বা দড়িও বানান তাঁরা।

The Rajbhoi women buy a variety of discarded resam (synthetic) fibre from textile factories in Surat district and carry it back to Ahmedabad via train. The coloured fibre is cheaper and costs around Rs. 15 to 27 a kilo
PHOTO • Umesh Solanki
The Rajbhoi women buy a variety of discarded resam (synthetic) fibre from textile factories in Surat district and carry it back to Ahmedabad via train. The coloured fibre is cheaper and costs around Rs. 15 to 27 a kilo
PHOTO • Umesh Solanki

সুরাট জেলার বিভিন্ন কাপড়কল থেকে হরেক কিসিমের বাতিল রেশম (কৃত্রিম) কিনে রেলগাড়ি চেপে আহমেদাবাদে ফেরেন রাজভোই জনগোষ্ঠীর মহিলারা। রংচঙে তন্তু অপেক্ষাকৃত সস্তা, কিলো-পিছু ১৫-২৭ টাকা

এ রাজ্যে ভোই জনগোষ্ঠীর মানুষ মূলত সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে থাকেন। ১৯৪০-এর দশকে ভগবদগোমণ্ডল নামক যে গুজরাতি অভিধানটি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে লেখা আছে যে ভোই সম্প্রদায়টি শূদ্রবর্ণের অন্তর্গত, তাঁরা অনগ্রসর এবং এককালে চামড়া ট্যানিংয়ের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জৈন সমাজের পক্ষ থেকে পশুহত্যার উপর সহিংস প্রতিরোধ নেমে আসে, ফলত ভোই জাতির অনেকেই বাধ্য হন চাষবাস তথা মজুরি শুরু করতে। ভোইরা ছোটো ছোটো ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন, অচিরে এই গোষ্ঠীগুলির জাতিগত নামও পাল্টে যায়। কে জানে, রাজভোইরা হয়ত বা পাল্কিবাহক (কাহার) ছিলেন।

রাজভোই মহিলাদের উদ্যোগ ও হাড়ভাঙা খাটনি এককথায় উড়িয়েই দিলেন এ সম্প্রদায়ের পুরুষ সদস্যরা। যেমন ভানু রাজভোই। কান-সাফাইকারি ভানুভাইয়ের কথায় এসকল মহিলারা যেটুকু উপার্জন করেন, সেটা “তেমন কিছু কম্মের নয়। ওই আর কি ঘরকন্নার খরচ সামলাতে একটুখানি কাজে আসে।” তা হবে না-ই বা কেন? বর্ণপ্রথা অনুসারে যে পেশা বিরাসতে জোটে, তা থেকে “থোড়া বহোত ঘর কা খর্চ” বই আর কিছুই তো হওয়ার নয়।

অথচ গীতা রাজভোইয়ের কাছে এ কাজ মাসমাইনের চাকরি খোঁজার চেয়ে হাজারগুণ ভালো। সেটা তাঁর জবানে বেশ স্পষ্ট হয়ে গেল: “দশভিঁ কে বাদ বারভিঁ, উসকে বাদ কলেজ, তব্ যাকে নৌকরি মিলতি হ্যায়। ইস্সে আচ্ছা আপনা ধান্দা সাম্হালো! [দশম শ্রেণির পর ক্লাস টেন, তারপর কলেজ, এসব করে তবেই চাকরি পাওয়া যায়। তার চাইতে নিজস্ব কারবার ঢের ভালো!]”

Kajal (seated) and Rupa Rajbhoi untangle the collected fibre. Making ropes is exhausting work that the women do in between household chores
PHOTO • Umesh Solanki

সংগৃহীত তন্তুর গিঁট ছাড়াচ্ছেন কাজল (বসে আছেন) ও রূপা রাজভোই। দড়ি নির্মাণ বড্ড খাটাখাটনির কাজ, ঘরসংসার সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে এটা করে থাকেন মহিলারা

The process requires collective effort. One woman spins the wheel while another keeps the strands from getting tangled
PHOTO • Umesh Solanki

যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এ কারবার চালানো সম্ভব নয়। একজন মহিলা চরকা ঘোরান, আরেকজন জট ছাড়াতে থাকেন

A small hand wheel and a large fixed spinning wheel are two important tools of their trade
PHOTO • Umesh Solanki
A small hand wheel and a large fixed spinning wheel are two important tools of their trade
PHOTO • Umesh Solanki

এ কারিগরির দুটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম — হাতে ঘোরানো একটি ছোটো চাকা, এবং বড়ো একখান চরকা

Rupa Rajbhoi attaches a length of twisted fibre to the larger spinning wheel
PHOTO • Umesh Solanki

বৃহত্তর চরকায় একগাছি পাকানো আঁইশ আটকাচ্ছেন রূপা রাজভোই

As their homes are too small to accommodate the work, the women work in the open with no protection from the sun
PHOTO • Umesh Solanki

ঘরদোর অপরিসর, দড়ি বানানো সম্ভব নয়। তাই খোলা আসমানের নিচে বসে কাজ করতে বাধ্য হন মহিলারা, রোদ্দুর এড়ানোর কোনও উপায় থাকে না

The women work from seven in the morning to five-thirty in the afternoon with a short break in between. They manage to make anywhere from 10-25 ropes in a day depending on the season
PHOTO • Umesh Solanki

সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫.৩০ অবধি গতর খাটিয়ে চলেন মহিলারা, মাঝে স্বল্প বিরতি। দৈনিক ১০-২৫টার দড়ি নির্মাণ করেন তাঁরা, সঠিক সংখ্যাটা মরসুমের উপর নির্ভরশীল

(From left to right) Saalu, Baby, Saranga and Bharti at work
PHOTO • Umesh Solanki

(বাঁদিক থেকে) কর্মরত সালু, বেবি, সারঙ্গা ও ভারতী রাজভোই

The women’s hard work is often brushed off by male members of the community saying, ‘It just helps a little with their household expenses’
PHOTO • Umesh Solanki

‘ঘরকন্নার খরচ সামলাতে একটুখানি কাজে আসে,’ বলে রাজভোই মহিলাদের উদ্যোগ ও হাড়ভাঙা খাটনি উড়িয়ে দিলেন এ সম্প্রদায়ের পুরুষেরা

Although it doesn’t earn them a lot of money, some women consider having their own business easier than trying to look for a salaried job
PHOTO • Umesh Solanki

আয়-ইনকাম খুব একটা নয়, তবে মাসমাইনের চাকরি খোঁজার চেয়ে এ কাজ হাজারগুণ ভালো বলে মনে করেন কিছু মহিলা

আতিশ ইন্দ্রেকর ছারার প্রতি এই প্রতিবেদনটির লেখক কৃতজ্ঞ।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Umesh Solanki

Umesh Solanki is an Ahmedabad-based photographer, documentary filmmaker and writer, with a master’s in Journalism. He loves a nomadic existence. He has three published collections of poetry, one novel-in-verse, a novel and a collection of creative non-fiction to his credit.

Other stories by Umesh Solanki
Editor : PARI Desk

PARI Desk is the nerve centre of our editorial work. The team works with reporters, researchers, photographers, filmmakers and translators located across the country. The Desk supports and manages the production and publication of text, video, audio and research reports published by PARI.

Other stories by PARI Desk
Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata. He is a translator for PARI, and a poet, art-writer, art-critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra