যে কোনো দিন বিয়ে হয়ে যাবে মীনার। মাস কয়েক আগে, তার কথায়, "হঠাৎ রাতারাতি আমি একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ালাম।" তার ছোটোবোন সোনুরও বিয়ের ঘন্টা বেজে গেছে, কারণ দিদি 'বোঝা' হয়ে দাঁড়ানোর কয়েক সপ্তাহ পরই বোনের কপালেও জুটেছে সেই একই কলঙ্ক। আসলে এখানে মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্র শুরু হতে না হতেই উড়ে এসে জুড়ে বসে এই তকমা।

নিজেদের বাড়িতে দড়ির খাটিয়ায় পাশাপাশি বসেছিল দুই বোন, মীনা (১৪) ও সোনু (১৩)। কথা বলতে বলতে দুয়েকবার চোখাচোখি হচ্ছিল বটে, তবে বেশিরভাগ সময়ই তারা একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল বালিভরা মেঝের দিকে – আসলে অচেনা কারও সঙ্গে ওরকম হুট করে মাসিক নিয়ে কি আর কথা বলা যায়? ঘরের পিছনদিকে ছোট্টো একটা ছাগলছানা বেঁধে রাখা ছিল খুঁটিতে। উত্তরপ্রদেশের কোরাঁও ব্লকের এই যে বৈঠকবা জনপদ, এখানে হিংস্র জন্তু জানোয়ারের অভাব নেই, তাই গবাদি পশুদের বাইরে ছেড়ে রাখা যায় না। ফলত ঘেঁষাঘেঁষি করে জটলা বেঁধে থাকা এই বাড়িগুলোয় মানুষের সঙ্গে আটকে থাকে পশুরাও।

ঋতুচক্র বিষয়ে হালে জানতে পেরেছে এই দুই কিশোরী, এবং তাদের মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে ব্যাপারটা খুবই লজ্জার। এছাড়াও মা-বাবার থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে তারা পেয়েছে ভয়। একদিকে মেয়েদের নিরাপত্তা, অন্যদিকে মেয়েরা সেয়ানি (রজঃস্বলা) হলে পাছে কুমারী অবস্থায় না গর্ভবতী হয়ে পড়ে এই ভয়ে প্রয়াগরাজ (পূর্বতন এলাহাবাদ) জেলার এই জনপদটির পরিবারগুলি সাততাড়াতাড়ি তাদের বিয়ে দিয়ে দেয় – হামেশাই দেখা যায় যে মেয়েরা সবে ১২ বছরে পা দিয়েছে।

"পোয়াতি হওয়ার মতো বয়স হয়ে গেলে মেয়েগুলোকে কেমন করে আগলে রাখি বলুন তো?" জিজ্ঞেস করলেন মীনার মা রানী (২৭), ১৫ বছর বয়েসে বিয়ে হয়েছিল তাঁর, মা হতেও বেশিদিন লাগেনি। সোনুর মা চম্পার বয়সও বছর ২৭ হবে, তাঁর মেয়ের আজ যা বয়স, সে বয়সে বিয়ে হয়েছিল তাঁরও। যে ছ'জন মহিলা জড়ো হয়েছিলেন আমাদের চারিধারে, তাঁরা সমবেত কণ্ঠে জানালেন যে ১৩-১৪ বছর বয়েসে মেয়েদের বিয়ে হওয়াটা মোটেও কোন ব্যতিক্রম নয় এখানে, বরং এমনটাই তাঁদের রেওয়াজ। "হামারা গাঁও এক দুসরে জামানা মেঁ রেহতা হ্যায় [মান্ধাতার আমলেই পড়ে আছে আমাদের গাঁ]। এছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আমরা যে বড্ডো অসহায়,” জানালেন রানী।

উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার এবং ছত্তিশগড়ের উত্তর-মধ্য বলয়ের একাধিক জেলায় আজও রমরমিয়ে চলছে বাল্যবিবাহ। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী গবেষণা কেন্দ্র (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রিসার্চ অন উইমেন) এবং ইউনিসেফ একত্রে একটি জেলাভিত্তিক গবেষণা করেছিল, সেখানে বলা আছে: "এই রাজ্যগুলির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জেলায় দেখা গেছে যে আইনানুগ বয়সের আগেই ৫০ শতাংশেরও বেশি মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।"

বাল্যবিবাহ নিবারণ আইন ২০০৬-এ বলা আছে যে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর বয়সের আগে বিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ। অনুরূপ বিবাহের অনুমতি কিংবা প্রচারের ক্ষেত্রে ২ বছর অবধি সশ্রম কারাবাস তথা ১ লাখ টাকা অবধি জরিমানা ধার্য করা হতে পারে।

PHOTO • Priti David

মাসিক ঋতুচক্র বিষয়ে হালেই জানতে পেরেছে মীনা ও সোনু, এবং তাদের মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক

এই গ্রামে কর্মরত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নির্মলা দেবী (৪৭) জানালেন, "বেআইনি কিছুর জন্য হাতকড়া পড়বে, এমনটা হওয়া অসম্ভব, কারণ জন্মতারিখ জানার জন্য যে শংসাপত্র লাগে, সেসব কারও কাছেই নেই।" ঠিক কথাই বলছিলেন তিনি। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার (এনএফএইচএস-৪, ২০১৫-১৬) তথ্য অনুযায়ী গ্রামীণ উত্তরপ্রদেশের ৪২ শতাংশ শিশুর জন্ম সংক্রান্ত তথ্যাদি নথিভুক্ত করাই হয় না। অবশ্য এ ব্যাপারে প্রয়াগরাজ জেলার অবস্থা আরোই শোচনীয়, উক্ত পরিসংখ্যানটি এখানে বেড়ে গিয়ে ৫৭ শতাংশ অবধি পৌঁছেছে।

"এখানকার লোকজন হাসপাতাল অবধি পৌঁছতেই পারে না," বলছিলেন তিনি, "আগে আগে দরকার পড়লে একটা ফোন করলেই ৩০ কিলোমিটার দূরের কোরাঁও কম্যুনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র [সিএইচসি] থেকে অ্যাম্বুল্যান্স চলে আসত। এখন আর ওসব হয় না, ১০৮ নামের একখান মোবাইল অ্যাপ আছে, সেটার মাধ্যমেই করতে হয় এসব। কিন্তু এটার জন্য ৪জি কানেকশন লাগে, আর এই অঞ্চলের মোবাইল নেটওয়ার্কের যা হাঁড়ির হাল, তাতে প্রসবের জন্য সিএইচসি অবধি গিয়ে ওঠাই মুশকিল।" অর্থাৎ যে অবস্থাটা ইতিপূর্বে এমনিতেও বেশ খারাপ ছিল, সেটা একখানা মোবাইলে অ্যাপের কারণে আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

যে দেশে প্রতি বছর সোনু কিংবা মীনার মতো ১৫ লাখ শিশু ও কিশোরীদের বিয়ে হয়ে যায়, সে দেশে কেবলমাত্র আইন দিয়ে বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলিকে আটকানো অসম্ভব। এনএফএইচএস-৪ বলছে যে উত্তরপ্রদেশে প্রতি পাঁচজন মহিলার মধ্যে একজন বাল্যবিবাহের শিকার।

"ভাগা দেতে হ্যাঁয় [ওরা ভাগিয়ে দেয়]," জানালেন ৩০ বছর বয়সী সুনীতা দেবী প্যাটেল। ইনি বৈঠকবা তথা আশেপাশের জনপদগুলিতে কর্মরত একজন আশা-কর্মী (অ্যাক্রেডিটেড সোশ্যাল হেল্থ অ্যাক্টিভিস্ট)। মা-বাবাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে, সে কথাই বলছিলেন তিনি: "হাতেপায়ে ধরি তাঁদের, বারবার বলি যে আর কটা দিন অপেক্ষা করুন, মেয়েরা বড়ো হোক আগে। ওরকম কমবয়সে গর্ভবতী হয়ে পড়াটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভয়ানক ক্ষতিকর। কেউ পাত্তাই দিতে চান না, আমাকে বিদেয় করতে পারলেই বাঁচেন যেন। মাসখানেক পর গিয়ে দেখি যে সেই কিশোরীর বিয়েথা সবই হয়ে গেছে।"

তবে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ যে মা-বাবাদের নেই, এমনটা মোটেও নয়, "বাড়িতে একখানা শৌচাগারও নেই," মীনার মা রানীর গলায় ছিল নালিশের সুর, "বাথরুম-টাথরুম পেলে কিংবা গরুছাগল চরাতে হলে বাইরে মাঠে যেতে হয়, সে প্রায় ৫০-১০০ মিটার দূরে, তখন ভয় হয় পাছে ওদের সঙ্গে উল্টোপাল্টা কিছু একটা না হয়ে যায়।" সেপ্টেম্বর ২০২০, উচ্চবর্ণের কয়েকজন পুরুষের হাতে উত্তরপ্রদেশের হাথরাস জেলায় দলিত সম্প্রদায়ের এক ১৯ বছরের তরুণী যে বীভৎস গণধর্ষণ এবং খুনের শিকার হয়েছিল, সেই স্মৃতি আজও দগদগে হয়ে ফুটে আছে রানীর মনে। "হামেঁ হাথরাস কা ডর হামেশা হ্যায় [পাছে হাথরাসের মতো ওরকম কিছু একটা না হয়ে যায়, আমরা সেই ভয়েই সিঁটিয়ে থাকি সারাটাক্ষণ]।"

কোরাঁও জেলাসদর থেকে ৩০ কিলোমিটার রুখাশুখা বনাঞ্চল আর মাঠঘাট ঠেঙিয়ে তবেই বৈঠকবায় পৌঁছনো যায়। এই রাস্তার মাঝে কিলোমিটার পাঁচেক জুড়ে রয়েছে ঘন পাহাড়ি বন, জনমানবহীন এই জায়গাটি বিশেষরকম বিপজ্জনক। স্থানীয় মানুষজন জানালেন, মাঝেসাঝেই গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ ঝোপেঝাড়ে লটকে থাকতে দেখা যায়। তাঁরা একথাও জানালেন যে একটা পুলিশ চৌকি এবং পাকা রাস্তা না বানালে এখানকার অবস্থায় কোনও উন্নতি হবে না। বর্ষাকাল এলেই বৈঠকবা তথা আশেপাশের প্রায় ৩০টি গ্রামের সঙ্গে বাইরের দুনিয়ার সবরকম যোগাযোগ সপ্তাহের পর সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন থাকে।

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

বৈঠকবা জনপদ: উপস্থিত মহিলারা সমবেত কণ্ঠে জানালেন যে ১৩-১৪ বছর বয়েসে মেয়েদের বিয়ে হওয়াটা কোন ব্যতিক্রম নয়, বরং রেওয়াজ

জনপদের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে কাঁটাঝোপে ঢাকা সারি সারি টিলা – বিন্ধ্যাচল, দিকচক্রবাল ঘিরে থাকা এই পাহাড়ের শ্রেণি টপকালেই পড়শি রাজ্য মধ্যপ্রদেশ। মোটে একখানা কাঁচাপাকা রাস্তা আছে যার দুইধারে জড়াজড়ি করে রয়েছে কোল সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের কুঁড়েঘর, তবে চাষের জমিগুলোর মালিক কিন্তু অধিকাংশই ওবিসি সম্প্রদায়ের হাতে (দলিত পরিবারের হাতে আছে খুব কম সংখ্যক জোতের মালিকানা)।

২০টি ওবিসি পরিবার এবং ৫০০ কোল তফশিলি জাতির পরিবার বাস করে এই জনপদটিতে। আকাশ বাতাস সবই যেন ভয়ে থমথমে হয়ে আছে সারাটাক্ষণ। "এই তো মাসকয়েক আগে, আমাদের গাঁয়ের একটা মেয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল, হঠাৎই কয়েকটা [উচ্চবর্ণের] ছোকরা এসে ওকে টেনেহিঁচড়ে জোরজবরদস্তি মোটরসাইকেলে তুলে নেয়, বলে যে ওকে নাকি বাইকে করে ঘুরিয়ে আনবে। না জানি কীভাবে মেয়েটা ঝাঁপাতে পেরেছিল বাইক থেকে, তারপর কোনওরকমে নিজেকে সামলে ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফিরে আসে," কাঁপা কাঁপা গলায় জানালেন রানী।

২০২১ সালের ১২ই জুন, ১৪ বছরের এক কোল কিশোরী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, আজ অবধি তার হদিশ মেলেনি। পরিবারের লোকজন বলছিলেন বটে যে তাঁরা এফআইআর দায়ের করেছেন, কিন্তু সেটা আমাদের দেখাতে চাইছিলেন না। পাছে জানাজানি হয়ে যায় আর পুলিশের কুনজর এসে পড়ে। পড়শিদের থেকে জানা গেল ঘটনাটির দীর্ঘ দুই সপ্তাহ পরে পুলিশ এসেছিল খোঁজখবর নিতে।

"একে তো আমরা গরিব, তার উপর ছোটো জাত [তফশিলি]। এবার বলুন তো দেখি, পুলিশ কেনই বা মাথা ঘামাবে আমাদের ব্যাপারে? আমাদের চিন্তা আদৌ কি কারোর আছে? সারাক্ষণ ভয় আর লজ্জা [পাছে কেউ তুলে নিয়ে যায় বা ধর্ষণ করে] নিয়ে বেঁচে আছি," গলার স্বর নামিয়ে বললেন নির্মলা দেবী।

নির্মলা দেবী নিজেও কোল সমাজের মানুষ, কৃষক মুরারিলালের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর বিএ ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করেছেন তিনি, এমনটা হাজার ঢুঁড়লেও এই জনপদে খুব একটা বেশি মিলবে না। তাঁর চার-চারটি ছেলের প্রত্যেকেই শিক্ষিত, কাছেই মির্জাপুর জেলার দ্রমণ্ডগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়তেন তাঁরা। পড়াশোনার যাবতীয় খরচাপাতি নির্মলা একাহাতেই সামলাতেন। "তৃতীয়বার গর্ভবতী হওয়ার আগে বাড়ির চৌহদ্দির ভিতরেই আটকা পড়েছিলাম," আলতো হেসে জানালেন নির্মলা দেবী, খানিকটা যেন বিচলিত দেখাচ্ছিল তাঁকে, "খোকাদের যেন শিক্ষিত করে তুলতে পারি, এই তাড়নাটাই শক্তি জুগিয়েছিল আমায়।" এখন তিনি তাঁর পুত্রবধু শ্রীদেবীর পড়াশোনার দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। প্রয়াগরাজ শহর থেকে সহকারী নার্স ও ধাত্রীর (এএনএম) প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শ্রীদেবী। তবে আঠারো বছর হওয়ার পরেই কিন্তু নির্মলা দেবী তার সঙ্গে নিজের ছেলের বিয়ে দেন।

গ্রামের অন্যান্য অভিভাবকরা কিন্তু এতটাও সাহসী নন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস্ ব্যুরো জানাচ্ছে যে ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের মহিলাদের উপর নেমে আসা অপরাধের সংখ্যা ৫৯,৮৫৩ । অর্থাৎ গড় হিসেবে প্রতিদিন ১৬৪টি করে। উক্ত অপরাধের মধ্যে রয়েছে নাবালিকা তথা প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ধর্ষণ, অপহরণ এবং নারীপাচার।

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

অঙ্গনওয়াড়ি (বাঁদিকে) কর্মী নির্মলা দেবী (ডানদিকে) জানালেন, যেহেতু জন্ম সনদ বা বার্থ সারটিফিকেট এখানে ডুমুরের ফুল, তাই বাল্যবিবাহের জন্য কাউকে গ্রেফতার করার প্রশ্নই ওঠে না

"একবার যদি ছোকরাগুলোর নজর পড়ে যায় আমাদের মেয়েদের উপর, ওদের আগলে আগলে রাখাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়," জানালেন সোনু ও মীনার দূর সম্পর্কের ভাই মিথিলেশ। "দলিতদের একটাই চাহিদা: নাম আর ইজ্জতটুকু যেন রক্ষে পায়। তাই তো এমন অল্প বয়েসেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিই আমরা।"

৯ বছরের ছেলে আর ৮ বছরের মেয়েকে গ্রামে ফেলে রেখে কাজের খোঁজে বাইরে পাড়ি দিতে মন চায় না তাঁর, তবু যখন যেখানে ইটভাটা কিংবা বালির খাদানে দিনমজুরি মেলে সেখানে যেতে হয় বই কি।

মাস গেলে হাজার পাঁচেক টাকা আসে হাতে। স্ত্রীর রোজগার বলতে জ্বালানির কাঠ বেচা এবং পরের জমিতে মজুরি, দুইয়ে মিলে কোনওরকমে চলে যায়। তবে তাঁদের নিজেদের জনপদে চাষবাসের কোনও বালাই নেই। "কিচ্ছুটি চাষ করার জো নেই, জংলি জানোয়ার এসে সব খেয়ে চলে যায়। বুনো শুয়োরগুলোর তো এত্ত আস্পর্ধা যে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়ে, আসলে জঙ্গলের ঠিক পাশেই থাকি তো," জানালেন মিথিলেশ।

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী দেওঘাটের (বৈঠকবা জনপদটি যে গ্রামটির অংশবিশেষ) ৬১ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজ, কুটির শিল্প তথা অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। "ঘরপিছু একজন মরদকে তো কাজের খোঁজে বাইরে যেতেই হয়," বলেছিলেন মিথিলেশ। ইটভাটা কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে দৈনিক ২০০ টাকা দিনমজুরির আশায় তাঁরা পাড়ি দেন সুদূর এলাহাবাদ, সুরাত এবং মুম্বইয়ে।

"প্রয়াগরাজ জেলার ২১টা ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে কোরাঁও," জানালেন প্রয়াগরাজের স্যাম হিগিনবোথাম কৃষি, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিজ্ঞানী ডঃ যোগেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তব। আজ ২৫ বছর হতে চলল এই অঞ্চলে কাজ করছেন তিনি। "সমগ্র জেলার পরিসংখ্যানের নিরিখে বিচার করতে গেলে এখানকার বেহাল অবস্থাটা ধরতে পারবেন না। সে কৃষি উৎপাদন হোক বা স্কুলছুট বাচ্চাদের সংখ্যা, পরিযান হোক কিংবা স্বল্প মজুরির কাজ, বাল্যবিবাহ অথবা শিশুমৃত্যু – মাপকাঠি সে যা-ই হোক না কেন, সবদিক থেকেই মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছে কোরাঁও।"

সোনু বলছিল বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে চলে যেতে হবে সোনু আর মীনাকে, বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূর। "এখনও ওর [হবু বর] সঙ্গে দেখা হয়নি একবারও, তবে কাকার ফোনে ওর ছবি দেখেছি। মাঝেমাঝেই কথাটথা হয় আমাদের। আমার চেয়ে বছরখানেকের বড়ো, বছর ১৫ হবে, সুরাতের একটা জায়গায় রান্নায় সহকারীর কাজ করে।"

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

বাঁদিকে: 'একবার যদি ছোকরাগুলোর নজর পড়ে যায় আমাদের মেয়েদের উপর, ওদের আগলে আগলে রাখাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,' জানালেন মিথিলেশ। ডানদিকে: ডঃ যোগেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তবের কথায়, 'মাপকাঠি সে যা-ই হোক না কেন, মারাত্মক রকম পিছিয়ে আছে কোরাঁও'

এবছর জানুয়ারি মাসে বৈঠকবার সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড, সাবান, তোয়ালে এবং মাসিক ঋতুস্রাব চলাকালীন যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাঞ্ছনীয় সেই বিষয়ে একটি ভিডিও দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল একটি বেসরকারি সংগঠন। এছাড়াও কেন্দ্র সরকারের কিশোরী সুরক্ষা যোজনার আওতায় ৬-১২ শ্রেণির মেয়েরা চাইলেই বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন পেতে পারে। ২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশে এই যোজনাটি চালু করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।

সোনু বা মীনা - দুজনের কেউই স্কুলে যায় না আর। "ইস্কুলে তো যাই-ই না। গেলে তবেই তো এসব জানতে পারব," সোনু বলেছিল। তবে এটা ঠিক যে বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাডগুলি পেলে খুবই সুবিধা হত দুই বোনের, কাপড় দিয়ে কাজ চালাতে বড্ডো অসুবিধা হয় যে।

আজ বাদে কাল বিয়ে, অথচ যৌনতা, গর্ভাবস্থা কিংবা ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে একরত্তিও ধারণা নেই এই কিশোরীদের। "মা বলল, 'যা, গিয়ে বৌদিকে জিজ্ঞেস কর এসব।' বৌদি বলল যে এবার থেকে [পরিবারের] কোনও পুরুষের পাশে গিয়ে না শুতে, নইলে ফালতু ঝামেলা খাড়া হবে একটা," গলা নামিয়ে জানায় সোনু। তিনবোনের মাঝে সবচেয়ে বড়ো এই মেয়েটি ক্লাস ২ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছিল, ছোটো বোনদের দেখভাল করতে গিয়ে ৭ বছর বয়েসেই পড়াশোনার পাট চুকে যায় তার।

তারপর পালা আসে মায়ের (চম্পা) পিছুপিছু চাষের খেতে গিয়ে হাতে হাতে কাজ করার। সেই সঙ্গে তাদের ঘরের পিছনের পাহাড়ি বনবাদাড় থেকে জ্বালানি কাঠ আনার কাজও সোনু করে থাকে। কাঠের খানিকটা বাড়ির কাজে লাগে, বাকিটা বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখানকার মহিলারা একটানা দু'দিন ধরে এভাবে কাঠ জোগাড় করে ২০০ টাকা আয় করেন। "যা পাই তাতে ক'দিনের তেল-নুনের খরচ উঠে যায়," জানালেন মীনার মা রানী। এছাড়াও ৮-১০টা ছাগল আছে, তাদের চরাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও সোনুরই। তবে সবার আগে যে কাজটা থাকে, সেটা হল রান্নাবান্না তথা গেরস্থালির হাজার একটা কাজে মাকে সাহায্য করা।

সোনু আর মীনা দুজনের মা-বাবাই খেতমজুরের কাজ করেন। এই অঞ্চলে মহিলাদের দৈনিক মজুরি ১৫০ টাকা, আর পুরুষদের ২০০। টাকাটা আবার তখনই হাতে আসে যখন কাজকর্ম কিছু একটা জোটে, আর সেটা মাসে দিন ১০-১২র বেশি কখনই হয় না। ২০২০ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত কাজের খোঁজে সোনুর বাবা রামস্বরূপ কাছেপিঠের গ্রামেগঞ্জে, এমনকি প্রয়াগরাজ অবধি পাড়ি দিতেন।

"চিকিৎসা বাবদ ২০,০০০ টাকা ধার করেছিলাম – আত্মীয়স্বজন থেকে বন্ধুবান্ধব, সব্বার কাছে হাত পেতেছিলাম। তাও যেন দিনকে দিন শুকিয়ে যাচ্ছিল মানুষটা, এদিকে টাকাপয়সাও শেষ হয়ে আসছিল, হাজার দুই-আড়াই টাকার বদলে একটা একটা করে ছাগলগুলো বেচতে লাগলাম। শুধু এইটাই পড়ে আছে আজ," ঘরের পিছনে বেঁধে রাখা ছাগলছানাটিকে দেখিয়ে বললেন চম্পা।

"বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই বিয়ের কথা বলতে শুরু করে মা," তালুর উল্টোপিঠে ফিকে হয়ে মেহেন্দির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল সোনু।

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

মীনা আর সোনুর একান্নবর্তী পরিবারের ভিটে। 'বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই বিয়ের কথা বলতে শুরু করে মা,' তালুর উল্টোপিঠে ফিকে হয়ে মেহেন্দির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল সোনু

সোনু আর মীনার মায়েরা (চম্পা ও রানী) দুই বোন, তাঁরা বিয়েও করেছিলেন দুই ভাইকে। যৌথ পরিবারটির সদস্য সংখ্যা ২৫। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে ইটসর্বস্ব একটি দুই-কামরার ঘর বানিয়ে দিয়েছিল, পরিবারটি সেখানেই থাকে গাদাগাদি করে। তবে মাথার উপর সিমেন্টের ছাদ আছে একখানা, এটাই রক্ষে। বাড়িটির পিছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে খড়ে ছাওয়া একটি মাটির কুঁড়েঘর, এককালে এটিই ছিল পরিবারটির একমাত্র আশ্রয়। এখানে রান্নাবান্না হয়, পরিবারের কয়েকজন রাতও কাটান।

দুই বোনের মধ্যে মীনারই ঋতুচক্র শুরু হয় প্রথমে, ওদিকে তার সঙ্গে যে ছেলেটির সম্বন্ধ পাকা হয়েছিল তার একটি বিবাহযোগ্য ভাইও ছিল। চটজলদি ব্যবস্থা হয়ে যায় যাতে তার গলায় সোনু মালা পরাতে পারে। এই যে একই পরিবারে যেতে চলেছে দুই বোন, এতে তাদের মায়েদের উতলা মন শান্ত হয়েছে অনেকটাই।

এই বাড়ির ছেলেমেয়েদের মধ্যে মীনাই সবার বড়ো, দুটি বোন এবং একটি ভাই আছে তার। ৭ম শ্রেণিতেই পড়াশোনায় ইতি হয় তার, সে আজ প্রায় বছরটাক আগের কথা। "মাঝে মাঝেই পেটে ব্যথা হত। প্রায় সারাদিনই বিছানায় পড়ে থাকতাম। মা যেত খেতের কাজে, বাবা ওদিকে মজুরি খাটতে কোরাঁওয়ে। জোর করে ইস্কুলে পাঠানোর কেউই ছিল না বাড়িতে, তাই আমিও দিব্যি বাড়িতেই থাকতাম," জানায় সে। পরে জানা যায় যে তার কিডনিতে পাথর হয়েছে, কিন্তু একে তো এসবের চিকিৎসা খুবই খরচসাপেক্ষ, তার উপর সেটা করতে ৩০ কিমি দূরে জেলাসদরে বারবার যাতায়াত করতে হবে। ফলত চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে তার পড়ুয়াজীবনেও ঢ্যাঁড়া পড়ে যায়।

তলপেটে সেই ব্যথাটা অবশ্য আজও চাগাড় দিয়ে ওঠে মাঝেমধ্যে।

নুন আনতে পান্তা ফুরোলেও কোল পরিবারগুলি মেয়ের বিয়েশাদির জন্য কষ্টেসৃষ্টে খানিকটা করে টাকা জমিয়ে রাখে। "ওদের বিয়ের জন্য হাজার দশেক টাকা তুলে রেখেছি। শ'দেড়েক লোককে পাত পেড়ে খাওয়াতে তো হবেই – পুরী, সবজি, মণ্ডামিঠাই, এসব," জানালেন রানী। দুই বোনের সঙ্গে বিয়ে হবে দুই ভাইয়ের, একই বাসরে, একই ছাঁদনাতলায় – এসবই ভেবে রেখেছেন তাঁরা।

মা-বাবার দৃঢ় বিশ্বাস যে এমনটা করলে মেয়েদের শৈশবের পাশাপাশি তাঁদের সকল দায়দ্বায়িত্বও মিটে যাবে একেবারে। ওদিকে সামাজিক শিক্ষা ও জীবনের টানাপোড়েন মীনা ও সোনুর মনে জন্ম দিয়েছে এক বিচিত্র আবেগের, নিজেদের মতন করে মানিয়ে নিয়েছে তারা: "খানা কম বনানা পড়েগা, হম তো এক সমস্যা হ্যায় অব (বাড়ির খাইখরচা/রান্না কমে যাবে, আমরা দুজন তো এখন বোঝা বই কিছু না)।"

PHOTO • Priti David

দুই বোনের মধ্যে মীনারই ঋতুচক্র শুরু হয় প্রথমে, ওদিকে তার সঙ্গে যে ছেলেটির সম্বন্ধ পাকা হয়েছিল তার একটি বিবাহযোগ্য ভাইও ছিল। চটজলদি ব্যবস্থা হয়ে যায় যাতে তার গলায় সোনু মালা পরাতে পারে

ইউনিসেফ বলছে যে বাল্যবিবাহের কারণে গর্ভাবস্থায় তথা সন্তান প্রসবের সময় দেখা দেয় একাধিক জটিলতা, ফলত বৃদ্ধি পায় মেয়েদের অকালমৃত্যুর হার। এখানে এমনই অল্প বয়েসে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় যে, "ওদের রক্তে আয়রনের মাত্রা পরীক্ষা করা বা ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ানোর সুযোগটুকুও মেলে না" – হবু মায়েদের স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ে পালনীয় বিধি বিষয়ে বলছিলেন আশাকর্মী সুনীতা দেবী। এ তো কিছুই নয়, গ্রামীণ উত্তরপ্রদেশে যেসব অল্পবয়সী মায়েরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মোটে ২২ শতাংশ পোয়াতি অবস্থায় নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যান – এ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির অবস্থা এতটাও খারাপ নয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে সাম্প্রতিককালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল, উপরোক্ত পরিসংখ্যানটি সেখানেই রয়েছে। রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে যে উত্তরপ্রদেশে ১৫-২৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ৫২ শতাংশই রক্তাল্পতার শিকার। ফলত গর্ভাবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকি থাকে, রেহাই পায় না নবজাতকেরাও। গ্রামীণ উত্তরপ্রদেশের ৫ অনূর্ধ্ব বাচ্চাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত, এবং ৬২ শতাংশ রক্তাল্পতার শিকার – তাই অসুস্থতা এবং জীবনহানির এই বিষাক্ত চক্রটি চিরন্তন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

"মেয়েদের পুষ্টি নিয়ে কারোরই তেমন মাথাব্যাথা নেই। বিয়ের কথা পাকা হতে না হতেই মেয়েদের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়, ভাবে যে মেয়ে যখন বিদেয় হচ্ছেই, তখন আর এতকিছু খাইয়ে কী লাভ – এসব দেখে দেখে চোখ পচে গেছে। আসলে দুটো পয়সা বাঁচানোর চেষ্টাতেই মানুষজন ফেঁসে আছে, এমনই পোড়া জীবন," জানালেন সুনীতা।

রানী আর চম্পার মনে অবশ্য অন্য চিন্তা ভিড় করে আছে আপাতত।

রানী বলছিলেন, "ভয়টা কী জানেন? এত কষ্ট করে যে টাকাটুকু জমিয়েছি, বিয়ের আগেই সেটা চুরি না হয়ে যায়। এতটা কাঁচা টাকা যে রয়েছে আমাদের হাতে, সেটা গাঁয়ের সব্বাই জানে বই কি, এছাড়াও হাজার পঞ্চাশেকের মতো ধার করতে হবে।" তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস যে এই টাকাটুকু জোগাড় করলেই পরিবারের ঘাড় থেকে "বোঝা"-টা চিরকালের মতো নেমে যাবে।

অপরিসীম সাহায্য তথা মূল্যবান তথ্য প্রদান করার জন্য প্রতিবেদক আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছেন এলাহাবাদের এসএইচইউএটিএসের ডিরেক্টর অফ এক্সটেনশন্ সার্ভিসেসের অধ্যাপক আরিফ এ. ব্রডওয়েকে।

পরিচয় গোপন রাখতে এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত কয়েকজন ব্যক্তি ও কিছু জায়গার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

পারি এবং কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্টের গ্রামীণ ভারতের কিশোরী এবং তরুণীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দেশব্যাপী রিপোর্টিং প্রকল্পটি পপুলেশন ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য প্রান্তবাসী এই মেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের স্বর এবং যাপিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই অত্যন্ত জরুরি বিষয়টিকে ঘিরে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] – এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] – এই আইডিতে।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Priti David

Priti David is the Executive Editor of PARI. She writes on forests, Adivasis and livelihoods. Priti also leads the Education section of PARI and works with schools and colleges to bring rural issues into the classroom and curriculum.

Other stories by Priti David
Illustration : Priyanka Borar

Priyanka Borar is a new media artist experimenting with technology to discover new forms of meaning and expression. She likes to design experiences for learning and play. As much as she enjoys juggling with interactive media she feels at home with the traditional pen and paper.

Other stories by Priyanka Borar

P. Sainath is Founder Editor, People's Archive of Rural India. He has been a rural reporter for decades and is the author of 'Everybody Loves a Good Drought' and 'The Last Heroes: Foot Soldiers of Indian Freedom'.

Other stories by P. Sainath
Series Editor : Sharmila Joshi

Sharmila Joshi is former Executive Editor, People's Archive of Rural India, and a writer and occasional teacher.

Other stories by Sharmila Joshi
Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata. He is a translator for PARI, and a poet, art-writer, art-critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra