“স্কুলে যাওয়ার আগে এই সব কাজ করেই বেরোতে হবে, নয়তো আর কে করবে?” বাছুরের দড়ি খুলে মায়ের দুধ খাওয়াতে নিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন করে ১৫ বছরের কিরণ। এখন সময় ভোর ৫টা। তাদের এক কামরার ঘরে অসুস্থ মা আর ছোটো ভাই রবি তখনও ঘুমে মগ্ন। ঘর পরিষ্কার করার আগে বাছুরটাকে গোয়ালের ভিতর বেঁধে দিয়ে যেতে হবে। তারপর ঠাকুরদা এসে গরুর দুধ দোয়াবেন।

রোজকার মতোই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে কিরণ, কিন্তু আজ তার কাজ বা স্কুল কোনওকিছুর দিকেই মন নেই। আজ ওই দিনগুলোর একটা, ওর ঋতুচত্রের প্রথম দিন, যখন শরীর জুড়ে ক্লান্তি গ্রাস করে। তাছাড়া অতিমারির পর থেকে ওর ঋতুকালীন পেটে খিঁচ ধরা বা ক্র্যাম্প আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তবুও ভোর ৬:৩০-এর আগে বাড়ির কাজগুলো ওকে শেষ করে ফেলতে হবে। “সকালের প্রার্থনা শুরু হয় ৭টায়, আর এখান থেকে হেঁটে স্কুল যেতে ২০-২৫ মিনিট মতো লাগে,” জানাচ্ছে সে।

যে সরকারি স্কুলটির একাদশ শ্রেণিতে কিরণ দেবী পড়ে, তা উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট জেলার কারবি তহসিলে তার বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। বাড়িতে আর আছেন মা পুনম দেবী, ৪০, ভাই রবি, এবং ঠাকুরদা খুশিরাম, ৬৭। বাড়ির পিছনে ৮০০ বর্গফুটের জমিটির দেখভাল করেন ঠাকুরদা। গম, ছোলা, আর মাঝেসাঝে মরসুমি সবজির চাষ হয় সেখানে। পুনমের হাঁটু ও কবজিতে প্রবল ব্যথা, তাই ঘরের কাজ ততটা করতে পারেন না, আর সেই বাড়তি কাজের দায়িত্ব এসে পড়ে কিরণের ঘাড়ে।

কিরণের কাছে যা রোজকার নিয়মমাফিক কাজ, এখন তা এক ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে। “এই ছোটখাটো কাজগুলো করতে আমার অসুবিধা নেই, কিন্তু যখন পিরিয়ডের সময় পেটে ভীষণ খিঁচ ধরে তখন ব্যাপারটা সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়।”

Kiran Devi, 15, gets up long before dawn to tend to the calves in the shed
PHOTO • Jigyasa Mishra
Kiran Devi, 15, gets up long before dawn to tend to the calves in the shed
PHOTO • Jigyasa Mishra

সকাল হওয়ার অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে গোয়ালের বাছুরদের দেখভাল করতে যায় ১৫ বছরের কিরণ দেবী

কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে কিশোরী সুরক্ষা যোজনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উত্তরপ্রদেশের বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনের হকদার এক কোটিরও বেশি যে সব কিশোরী বিপদে পড়েছে, কিরণ তাদেরই একজন। উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই যোজনা এমন একটি উদ্যোগ যার আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের হাতে উদ্বোধন হওয়া রাজ্য স্তরের যোজনাটির অধীনে প্রতিটি মেয়ের ১০টি করে স্যানিটারি প্যাড সম্বলিত ন্যাপকিনের একটি প্যাকেট পাওয়ার কথা।

উত্তরপ্রদেশের কতজন মেয়ে আদতে এই যোজনার অধীনে নিয়মিত প্যাড পেয়েছে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সংখ্যাটা লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও হয়ে থাকে তার মানে দাঁড়ায় যে অতিমারির সময় থেকে বিনামূল্যের স্যানিটারি ন্যাপকিন হাতে পায়নি ১০ লক্ষেরও বেশি গরিব বাড়ির মেয়ে।

যোজনা আবার সফলভাবে চালু হয়ে গেছে বলে যে সব দাবি করা হচ্ছে, সেগুলির সত্যতাও প্রশ্নাতীত নয়। কিছু শহুরে এলাকায় পুনর্বার চালু হলেও কিরণ এখনও বিনামূল্যের স্যানিটারি প্যাড পাচ্ছে না। বাজারি ব্র্যান্ডের ন্যাপকিন কেনার তার সামর্থ্যও নেই। এমন সামর্থ্যহীন হাজার হাজার মেয়ে আছে যাদের মধ্যে কিরণ একজন মাত্র।

এতক্ষণে গোটা বাড়ি, গোয়ালঘর, আর বাড়ি থেকে বড়ো রাস্তা পর্যন্ত পুরো জমিটা ঝাঁট দিয়ে ফেলেছে কিরণ। ছুট্টে ভিতরে চলে গেল তাকে রাখা পুরোনো দেওয়াল ঘড়িটা দেখতে। “ওহ্‌, ৬:১০ বেজে গেছে!” ত্রস্ত হয়ে বলে ওঠে সে। “মাম্মি, ঝটপট আমার বিনুনিটা করে দিতে হবে, আমি এক্ষুনি আসছি,” চেঁচিয়ে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রায় রাস্তার উপরে একটা খোলা জায়গায় রাখা প্লাস্টিক ট্যাংকে চান করতে যায় সে।

বাথরুম নিয়ে প্রশ্ন করায় হেসে ফেলে সে। “আবার বাথরুম? টয়লেটেই যথেষ্ট জল থাকে না, গোটা বাথরুম কোত্থেকে পাব? আমি টয়লেট ব্যবহার করি নোংরা কাপড় বদলানোর জন্য,” সে জানায়। কিরণের বলতে একটু বাধো বাধো ঠেকে যে কোভিড-১৯-এর কারণে প্রথমবারের লকডাউনের সময় সেই যে স্কুল থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া বন্ধ হল, তারপর থেকে সুতির কাপড়ই ব্যবহার করে সে। অতিমারির পর দুই বছর কেটে গেলেও উত্তরপ্রদেশের একাধিক জেলায় সরকারি স্কুলগুলি স্যানিটারি ন্যাপকিন বণ্টন প্রকল্প ফের চালু করে উঠতে পারেনি।

No matter what, Kiran has to clean the house and cow shed by 6:30 every morning and get to school by 7 a.m.
PHOTO • Jigyasa Mishra
No matter what, Kiran has to clean the house and cow shed by 6:30 every morning and get to school by 7 a.m.
PHOTO • Jigyasa Mishra

পৃথিবী উল্টে গেলেও, রোজ সকাল ৬:৩০-এর মধ্যে বাড়ি আর গোয়াল পরিষ্কার করে ৭টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে হবে

“কিছুদিন আগে আমার এক সহপাঠী ক্লাসের মধ্যে রক্তপাত শুরু হওয়ায় শিক্ষিকার কাছে একটা চেয়েছিল, তখন ওকে বলা হয় যে এখনও স্টক আসেনি। তখন আমাদের আর এক বন্ধু ওকে একটা রুমাল দেয় ব্যবহার করার জন্য,” জানায় কিরণ। “আগে যখনই আমাদের প্যাডের দরকার হত আমরা শিক্ষিকাদেরই বলতাম। তারপর লকডাউন হল, স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। তারপর যখন আবার স্কুল খুলল, তখন আর প্যাড পাওয়া যেত না। আমাদের বলা হয়েছিল যে স্কুলে আর জোগান নেই,” জানাচ্ছে সে।

কিরণের ঋতুচক্র ক্রমশ আরও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে। অতিমারির পর থেকে গত দুই বছরে প্রথম দিনে ভীষণ পেট ব্যথা হচ্ছে। ওর পরিবারে কেউ কোভিড পজিটিভ না থাকলেও, গোটা চিত্রকূট জেলার ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল। তার একাধিক প্রতিবেশীর সংক্রমণ দেয় দেয়। কয়েকজনকে তো ৩ কিলোমিটার দূরের জেলা হাসপাতালে ভর্তিও করতে হয়েছিল।

কোভিড-১৯-এর সরাসরি সংক্রমণের কারণে অত্যধিক ঋতুস্রাব বা যন্ত্রণা বেশি হতে তো পারেই, ইউনিসেফ-এর একটি ব্রিফ এও জানাচ্ছে যে “মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অপুষ্টি, এবং ঘুম ও শারীরিক কাজকর্মের ধারায় পরিবর্তন হলে প্রজনন স্বাস্থ্য তথা ঋতুচক্রে তার প্রভাব পড়তে পারে।” ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘মিটিগেটিং দ্য ইমপ্যাক্টস্‌ অফ কোভিড-১৯ অন মেনস্ট্রুয়াল হেল্‌থ অ্যান্ড হাইজিন’ শিরোনামের পেপারটিতে বলা হচ্ছে যে “ঋতুচক্র-কেন্দ্রিক অস্বাভাবিকতা অতিমারির আগে যতটা ছিল তার তুলনায় পরে অনেক বেশি সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

কিরণের বাড়ি থেকে কিলোমিটার চারেক দূরে থাকে ফুলবতিয়া, স্কুল থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে তারও। “[অতিমারির জেরে] স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই আমি আবার কাপড় ব্যবহার করছি, এবং সেই কাপড় কেচে বাড়ির ভিতরেই শুকোতে শুরু করেছি,” ২০২০ সালে পারি-কে জানিয়েছিল সে। সে এবং গ্রামীণ চিত্রকূটের হাজার হাজার মেয়ে সেই সময়ে অনুদান হিসেবে প্রচুর স্যানিটারি ন্যাপকিন পেয়েওছিল, যাতে তাদের ৩-৪ মাস অন্তত চলে গেছিল। তারপর বছর দুই কেটে গেছে, আর এখন সে আবার কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। তার বক্তব্য, “স্কুল থেকে আর প্যাড দেয় না বলেই আমি কাপড় ব্যবহার করি, মনে হয় আমাদের এই সুবিধাটা এবার শেষ হয়ে গেছে।”

Kiran preparing the cow feed.
PHOTO • Jigyasa Mishra
Her grandfather, Khushiram, milks the cow in the morning. Her mother, Poonam Devi (in the blue saree), suffers from pain in her wrist and knees, which limits her ability to work around the house
PHOTO • Jigyasa Mishra

বাঁদিকে: গরুর জাব তৈরি করছে কিরণ। ডানদিকে: ঠাকুরদা খুশিরাম সকালে গরুর দুধ দোয়ান। মা পুনম দেবী (নীল শাড়িতে) হাঁটু ও কবজির ব্যথায় কাবু, তাই বাড়ির কাজকর্মে খুব একটা হাত লাগাতে পারেন না

তবে রাজ্যের রাজধানীতে নাকি পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো, দাবি করছেন শ্বেতা শুক্লা, লখনউ জেলার কাকোরি ব্লকভুক্ত সারোসা ভরোসার কম্পোজিট স্কুলের এক শিক্ষিকা। “আমাদের স্কুলে ছাত্রীরা প্রতিমাসে নিয়মিত প্যাড পায়। আমরা যে প্যাডগুলো পাই তার একটা রেজিস্টার রাখা এবং সেগুলোকে ঠিকমতো বণ্টন করা উচিত আমাদের,” বলছেন তিনি। তবে গ্রামীণ উত্তরপ্রদেশের কথা শুনে তিনিও খুব একটা অবাক নন। “জানেন তো, এরকম পরিস্থিতি সরকারি স্কুলে খুবই সাধারণ, এবং আমরা কিছু করতেও পারি না, বিশেষ করে যখন আমাদের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর এবং আর একটু উন্নত পরিবেশ দেওয়ার সামর্থ্য নেই,” বলছেন তিনি।

পুনম দেবী ও তাঁর স্বামীর চিরকালের স্বপ্ন ছিল দুই সন্তান কিরণ আর রবিকে বেসরকারি স্কুলে পাঠানোর। “আমার ছেলেমেয়ে পড়াশোনায় ভালো। ওদের যে একটু কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের মতো কোনও স্কুলে পাঠাব, তার বুঝি কোনও উপায় নেই?” প্রশ্ন তাঁর। “যদিও আমাদের বেশি টাকাপয়সা নেই, ওদের বাবা সবসময়ে চেয়েছিল আমাদের বাচ্চারা যেন একটা ভালো স্কুলে যায় — যাতে ওরাও শহরে গিয়ে কাজ করতে পারে, আরামে থাকতে পারে,” বলছেন তিনি। কিন্তু বছর দশেক আগে, কিরণ যখন মোটে পাঁচ বছরের, কাজে গিয়ে প্রাণ হারান তার বিদ্যুৎকর্মী বাবা। পুনমের অসুস্থতার কারণে অবস্থা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। বাড়ির চাষজমি থেকে যেটুকু রোজগার হয় তাতে কখনোই কুলোয় না। এই পরিস্থিতিতে ওর ঋতুকালীন স্বাস্থ্যের দেখভাল স্কুলেই হয়ে যাওয়াটা ওদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল।

কিন্তু এখন আবার অস্বাস্থ্যকর নিয়মে ফেরত যাচ্ছে কিরণের মতো হাজার হাজার মেয়ে। ২০১৬-১৭ সালে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডিমিনিস্ট্রেশন-এর স্কুল এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া রিপোর্ট অনুসারে উত্তরপ্রদেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মধ্যে পড়াশোনা করে মোট ১ কোটি ৮৬ হাজার মেয়ে। স্যানিটারি ন্যাপকিন বণ্টনের যোজনাটি আনা হয়েছিল প্রতিমাসে ঋতুচক্রের কারণে স্কুলে না আসতে পারা ছাত্রীদের সাহায্যকল্পে। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ২৮ লক্ষ। এখন এই যোজনা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর উত্তরপ্রদেশে মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়।

এই পরিস্থিতি বিষয়ে চিত্রকূটের জেলাশাসক শুভ্রন্ত কুমার শর্মার বক্তব্য তুলনায় অনেক সরল। “আমার মনে হয় অতিমারির পরে হয়তো জোগানে কিছু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে,” বলছেন তিনি, “নাহলে তো মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়ার কথা। তবে এক্ষুনি সমাধান চাইলে যে মেয়েদের প্রয়োজন হচ্ছে তারা তাদের সবচেয়ে কাছাকাছি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে তাদের থেকে স্যানিটারি প্যাড নিতে পারে। ওখানে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টও পাওয়া যায়।” কিরণ আর তার পাড়ার বন্ধুদের অবশ্য এই বিষয়ে কোনও ধারণাই নেই। তাছাড়া, চিত্রকূটের অঙ্গনওয়াড়িগুলিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের জোগান থাকলেও, সীতাপুর ব্লকের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী জানাচ্ছেন সেগুলি সাধারণত নতুন মায়েদের জন্য রাখা হয়।

After finishing all her chores, Kiran gets ready for school.
PHOTO • Jigyasa Mishra
She says bye to the calf before heading to school
PHOTO • Jigyasa Mishra

বাঁদিকে: সমস্ত কাজকর্ম সেরে স্কুলের জন্য প্রস্তত হয় কিরণ। ডানদিকে: স্কুলে যাওয়ার আগে বাছুরটাকে টাটা বলে যায় সে

২০২০ সালে লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে তাঁর সরকার “জনৌষধি কেন্দ্রগুলিতে ১ টাকা করে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার লক্ষ্যে বিশাল বড়ো কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছে।” তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই “৬০০০ জনৌষধি কেন্দ্রে ৫ কোটিরও বেশি স্যানিটারি প্যাড এই গরিব মহিলাদের দেওয়া হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনৌষধি পরিযোজনার অধীনে এই জনৌষধি কেন্দ্রগুলিতে স্বল্পমূল্যে জেনেরিক ওষুধ পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় সার ও রাসায়নিক মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, অগস্ট ২০২১ পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৮০১২টি জনৌষধি কেন্দ্র চালু আছে যেগুলিতে মোট ১৬১৬ রকমের ওষুধ এবং ২৫০ রকমের শল্যচিকিৎসার যন্ত্রাদি পাওয়া যায়।

কিন্তু কিরণের বাড়ির ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও কোনও জনৌষধি কেন্দ্র নেই। একমাত্র যেখান থেকে ও স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারে সেটা একটা ওষুধের দোকান, ওর বাড়ি থেকে কিলোমিটার দুয়েক দূরে, যেখানে এক প্যাকেটের দাম ন্যূনতম ৪৫ টাকা। এই দাম দেওয়ার অবস্থা ওর নেই।

স্যানিটারি ন্যাপকিনের অপ্রতুলতা ছাড়াও, স্কুলে ঋতুমতী বাচ্চা মেয়েদের জন্য বন্দোবস্তও একেবারেই অপর্যাপ্ত। “আর যখন স্কুলে থাকি,” কিরণ জানাচ্ছে, “[প্যাড] বদলানোর জন্য আমায় বাড়ি ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কারণ ঠিকঠাক কোনও ডাস্টবিন নেই। স্কুলে থাকাকালীন মাঝে মাঝে প্যাড ভরে গিয়ে আমার ইউনিফর্মে দাগ লেগে যায়, কিন্তু স্কুল শেষ হওয়ার আগে আমার কিছু করার উপায় থাকে না।” স্কুলের শৌচাগারগুলিও পরিষ্কার থাকে না। “ওগুলো পরিষ্কার করা হয় শুধু রবিবার, তাই শুধু সোমবার দিনটা আমরা পরিষ্কার শৌচাগার পাই, তার যত দিন যায় আরও নোংরা হতে থাকে,” জানাচ্ছে সে।

Poonam Devi braids Kiran’s hair before she goes to school in the morning.
PHOTO • Jigyasa Mishra
Kiran and her friend Reena walk to school together
PHOTO • Jigyasa Mishra

বাঁদিকে: সকালে কিরণ বেরিয়ে যাওয়ার আগে তার চুলে বিনুনি করে দিচ্ছেন পুনম দেবী। ডানদিকে: হেঁটে হেঁটে স্কুল যাচ্ছে কিরণ ও তার বন্ধু রিনা

লখনউ শহরের বস্তিবাসী মেয়েদের ঋতুকালীন নানা সমস্যা বিষয়ে এক জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ বলছে, এই সমস্যাগুলি আসলে বহুস্তরীয়— ব্যক্তিগত, সামাজিক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক। “ব্যক্তিগত স্তরে, অল্পবয়সি মেয়েদের কাছে তথ্য পৌঁছয় না। সামাজিক স্তরে, ঋতুচক্র ঘিরে মেয়েদের লজ্জার একটা বাতাবরণ থাকে, এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ তাঁরা পান না, এবং ঋতুচক্র চলাকালীন চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা এবং আরও নানারকমের বাধার তাঁরা সম্মুখীন হন। প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে, যেমন ধরা যাক স্কুলে, ঋতুমতী ছোটো মেয়েদের সহায়তার জন্য ব্যবস্থাপনা খুবই অপ্রতুল, কারণ শৌচাগারগুলি সাধারণত নোংরা থাকে, দরজাও ভাঙা থাকে সেগুলোর,” জানাচ্ছে গবেষণাপত্রটি।

লখিমপুর খেরি জেলার রাজাপুর গ্রামের এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ঋতু অবস্থীর আবার দাবি যে আসল সমস্যা হল সাফাইকর্মীরা, উত্তরপ্রদেশের স্কুলগুলিতে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা নয়। “এখানে মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়, শৌচাগারে ইনসিনেটরও আছে, কিন্তু সাফাইকর্মীদের কারণেই বন্দোবস্ত ভালো থাকে না। সরকারের নিয়োগ করা ঝাড়ুদারেরা গ্রাম প্রধানের অধীনে কাজ করে, আর তাঁর কথাই শোনে। স্কুলে রোজ সাফাই হওয়া দরকার, কিন্তু এখন তা শুধুমাত্র সপ্তাহে দুইবার হয়,” বলছেন তিনি।

ঘরের ভিতরে রাখা তিনটি কাঠের চৌকি পেরিয়ে সূর্যের প্রথম কয়েকটা রশ্মি কিরণদের ভিটেয় এসে ঢুকেছে যতক্ষণে, কিরণ তার আগেই কাজকর্ম সেরে প্রস্তুত। পুনম মেয়ের চুলে রঙিন ফিতেয় বেঁধে মিষ্টি দুটো বিনুনি করে দিয়েছেন। “কিরণ, জলদি আ যা ম্যায় ইয়েহি রুকি হুঁ [কিরণ, চলে আয়, আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি], বাইরে থেকে হাঁক পাড়ে রিনা সিং। সে কিরণের সহপাঠী, ওরা একসঙ্গে স্কুলে যায়। ছুটে ঘরের বাইরে বেরোয় কিরণ, আর দুই বন্ধু চটপট হাঁটা লাগায় স্কুলের পথে।

ঠাকুর ফ্যামিলি ফাউন্ডেশান থেকে প্রাপ্ত একটি স্বতন্ত্র সাংবাদিকতা অনুদানের সাহায্যে জিজ্ঞাসা মিশ্র জনস্বাস্থ্য এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে লেখালিখি করেন। এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর ওপর ঠাকুর ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন কোনওরকম সম্পাদকীয় হস্তক্ষেপ করেনি।

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Jigyasa Mishra

Jigyasa Mishra is an independent journalist based in Chitrakoot, Uttar Pradesh.

Other stories by Jigyasa Mishra
Editor : Pratishtha Pandya

Pratishtha Pandya is a Senior Editor at PARI where she leads PARI's creative writing section. She is also a member of the PARIBhasha team and translates and edits stories in Gujarati. Pratishtha is a published poet working in Gujarati and English.

Other stories by Pratishtha Pandya
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

Other stories by Dyuti Mukherjee