আষাঢ়ী একাদশীর পুণ্যতিথিতে ভক্তের দল বিট্ঠল দেবের উদ্দেশ্যে আরাধনা আর উপবাসে মাতেন। ফুলাবাই ভোঙ তাঁর গানের মধ্যে ফুটিয়ে তুলছেন সেই ভক্তিরসের অপূর্ব এক গাথা ক্তে বিশ্বাস - জীবন ও মৃত্যুর সংসারচক্রে আটকে থাকা আত্মার মোক্ষলাভের একমাত্র পন্থা এই পবিত্র উপবাস

এবছর আষাঢ়ী একাদশী পড়েছে জুলাই মাসের ২০ তারিখে, এদিন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা কয়েক ফোঁটা জল ব্যতীত আর কিছুই মুখে দেন না। তবে মহারাষ্ট্রের কথা আলাদা, এখানে যাঁরা সারাটা দিন অভুক্ত হয়ে থাকতে পারেন না তাঁদের জন্য রয়েছে রকমারি খাবারদাবার, যা সাদামাটা হলেও অত্যন্ত সুস্বাদু – এগুলিকে একত্রে কৌতুকের ছলে "মারাঠি ফাস্ট ফুড" বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ রয়েছে সাবু, আলু এবং বাদাম (এগুলি খেলে নাকি নিয়মভঙ্গ হয় না) দিয়ে বানানো উপাদেয় সাবুদানার খিচুড়ি।

জাঁতা পেষাইয়ের গান প্রকল্পের (জিএসপি) এই কিস্তিটিতে পুণের ইন্দাপুর তালুকের নিমগাঁও কেতকী গ্রামের ফুলাবাই ভোঙ আষাঢ়ী (যার আরেক নাম 'শয়নী') একাদশীর উপোসকে ঘিরে পাঁচটি ওভি গেয়েছেন। হিন্দু চান্দ্র পঞ্চাঙ্গ অনুযায়ী আষাঢ় মাসের একাদশতম দিনে উদযাপিত হয় এই ধর্মীয় পরবটি। ভক্তবৃন্দের বিশ্বাস জীবন ও মৃত্যুর সংসারচক্রে আটকে থাকা আত্মার মোক্ষলাভের একমাত্র পন্থা সারাদিন জুড়ে পালিত এই পবিত্র উপবাস।

এই দিনটিতে নাকি বিট্ঠল অথবা বিঠোবা দেব নিজেও উপোস করেন, ফুলাবাইয়ের গান থেকে একথা জানতে পারছি আমরা। সুউচ্চ ওয়াঘাটি লতায় (বাংলায় কণ্টকলতা বলে পরিচিত) ফলে আছে ছোট্ট ছোট্ট সবুজ গোবিন্দ ফল। এ ফল মহৌষধি রূপে স্বীকৃত গ্রামীণ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। ফুলাবাই গান গেয়ে জানাচ্ছেন রুক্মিণী দেবী কেমন করে মই বেঁধে রাখেন সেই লতার গোড়ায়। ধর্মীয় লোকাচার অনুযায়ী এই উপোস ভাঙার একমাত্র উপায় দ্বাদশীর দিন এই ফলগুলিকে রেঁধে খাওয়া।

The warkaris walk to Pandharpur for Ashadhi Ekadashi every year, but travel restrictions due to the pandemic has prevented the pilgrimage now
PHOTO • Namita Waikar
The warkaris walk to Pandharpur for Ashadhi Ekadashi every year, but travel restrictions due to the pandemic has prevented the pilgrimage now
PHOTO • Namita Waikar

একদা প্রত্যেক বছর আষাঢ়ী একাদশীর দিন ওয়ারকারির (বিট্ঠলের উপসক) দল পদব্রজে পৌঁছতেন পান্ধারপুরে, তবে অতিমারির কারণে এই তীর্থযাত্রাটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে

ওয়ারকারির দল, অর্থাৎ যাঁরা বিট্ঠল দেবের উপাসক, পরম ভক্তির সঙ্গে পালন করেন এই লোকাচারগুলি। ভক্তদের অধিকাংশই কৃষক কিংবা গ্রামীণ শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার পান্ধারপুর শহরে রয়েছে বিঠোবার প্রাচীন মন্দির, সেখানে পদব্রজে (ওয়ারি) এসে পৌঁছন ওয়ারকারিরা। তীর্থযাত্রা শেষ হয় এই আষাঢ়ী একাদশীর দিনে।

৮০০ বছর পথ চলার পর ২০২০ সালে এই লোকাচারটি মুখ থুবড়ে পড়ে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে। যাতায়াতে বিধিনিষেধ থাকার ফলে এবারও জুলাই মাসে স্থগিত রাখা হয়েছে এই ওয়ারি।

এই লোকাচারকে ঘিরে রচিত বেশ কিছু ওভি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে জিএসপির পুরনো কিছু প্রতিবেদনে। যেমন এই ওয়ারিকে নিয়ে রয়েছে ' তীর্থকের যাত্রা ' , বিট্ঠল দেবের প্রতি ভক্তিকে ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে ' ভক্তি ও ভিন্নমত ' , এবং জ্ঞানেশ্বর ও তুকারাম এই দুই ঐতিহাসিক কবি-সন্ন্যাসীর উপর রয়েছে ' প্রেমের যাতন বাঁধে লোককবি দ্বয় ' । এছাড়াও এক পরিবেশিকা কীভাবে তাঁর পরিবারের সব্বাইকে বিট্ঠল দেবের আলয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটাকে ঘিরে কিছু গান তোলা আছে ' পদব্রজে পন্ধরপুর : বয়ে চলে প্রেমরস ' এই প্রতিবেদনটিতে।

মূলত আষাঢ়ী একাদশীর উপোসকে ঘিরেই ফুলাবাইয়ের এই ওভিগুলি রচিত। যেহেতু এই দিনটিতে আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের ভক্তিরস সমর্পণ করেন বিট্ঠলের পায়ে, তাই একটি ওভিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি একাদশীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ দশমীর তিথিটি অপূর্ব কাব্যিক ছাঁদে বলছে যে: " শোন্ রে অচিন সখী , শয়নী সে একাদশী দেবতার বায়না ।" আরেকটি ওভিতে গায়িকা সযত্নে তাঁর সন্তানকে বোঝাচ্ছেন আষাঢ়ী একাদশীর মাহাত্ম্য। মোক্ষলাভের জন্য যতবার উপোস রাখা দরকার ততবার তিনি আদৌ করেছেন কিনা এই জবাবদিহি তাঁকে একদিন না একদিন বিধাতার কাছে করতেই হবে স্বর্গের দুয়ারে: " মোক্ষতি অধিকার , একাদশী কতবার রেখেছি ধরার কোলে বাঁধিয়া যতন ?"

ফুলাবাইয়ের কণ্ঠে পাঁচটি ওভি শুনুন


বিঠোবার একাদশী উপোসিয়া আষাঢ়ে,
রুক্মিণী বাঁধে মই কাঁটকি সে বাহারে।

দশমী বলিলো ডাকি, "শোন্ রে অচিন সখী, শয়নী সে একাদশী দেবতার বায়না,"
একমুঠো খিদে তার, কলাপাতা অবেলার, বঁধুয়া আমার ভাঙে উপোসের আয়না।

কলাবতী সই রে, একাদশী হই রে, আইলি আমার দোরে বাঁধিয়া ন'মাস,
শোনো শোনো ভ্রাতা মোর, বিট্ঠলে ভাঙে ঘোর, যতেক পুণ্য তিথি স্বর্গ সুহাস।

স্বর্গদুয়ার ভেদি, বিধাতা শুধায় যদি, হায় রে জবাবদিহি! হায় রে জীবন!
মোক্ষতি অধিকার, একাদশী কতবার রেখেছি ধরার কোলে বাঁধিয়া যতন?

স্বর্গতোরণ তলে দেওতা ডাকিয়া বলে "রোসো রোসো ফুলাবাই, কোথা তুমি যাও?"
শোন্ রে পাগল খোকা, বাইতে না পারি একা তুঁহুঁ বিনে উপোসের বানভাসি নাও।


PHOTO • Hema Rairkar

পরিবেশিকা/গায়িকা: ফুলাবাই ভোঙ

গ্রাম : নিমগাঁও কেতকী

তালুক : ইন্দাপুর

জেলা : পুণে

জাতি : ফুলমালী

তারিখ : ওভির এই গুচ্ছ এবং গায়িকার আলোকচিত্র, সবকিছুই নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৫ সালের ১২ই ডিসেম্বরে

পোস্টার: উর্জা
হেমা রাইরকর ও গি পইটভাঁ'র হাতে তৈরি জাঁতা পেষাইয়ের গানের আদি প্রকল্পটির সম্বন্ধে পড়ুন।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

نمیتا وائکر ایک مصنفہ، مترجم اور پاری کی منیجنگ ایڈیٹر ہیں۔ ان کا ناول، دی لانگ مارچ، ۲۰۱۸ میں شائع ہو چکا ہے۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز نمیتا وائکر
PARI GSP Team

پاری ’چکی کے گانے کا پروجیکٹ‘ کی ٹیم: آشا اوگالے (ترجمہ)؛ برنارڈ بیل (ڈجیٹائزیشن، ڈیٹا بیس ڈیزائن، ڈیولپمنٹ اور مینٹیننس)؛ جتیندر میڈ (ٹرانس کرپشن، ترجمہ میں تعاون)؛ نمیتا وائکر (پروجیکٹ لیڈ اور کیوریشن)؛ رجنی کھلدکر (ڈیٹا انٹری)

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز PARI GSP Team
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر نے جادوپور یونیورسٹی، کولکاتا سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک شاعر، ناقد اور مصنف، سماجی کارکن ہیں اور پاری کے لیے بطور مترجم کام کرتے ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra