রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা বাজতেই হানি কাজের যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সাবধানে লাল লিপস্টিক লাগান। তিনি বলেন, “এটা আমার জামার সঙ্গে ভালো ম্যাচ করছে”, বলেই ছুটে যান তাঁর সাত বছরের মেয়েকে খাওয়াতে। ড্রেসিং টেবিলের উপর ঝুলছে কয়েকটি মাস্ক এবং একজোড়া ইয়ারফোন। প্রসাধনী আর সাজগোজের জিনিসগুলি টেবিলের উপর ইতস্তত ছড়ানো, আর আয়নায় দেখা যাচ্ছে ঘরের কোণে ঝুলন্ত দেব-দেবী এবং আত্মীয়দের ছবির প্রতিবিম্ব।

হানি (নাম পরিবর্তিত) তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার দূরে একটি হোটেলে এক খদ্দেরের সঙ্গে দেখা করার জন্য তৈরি হচ্ছেন – তাঁর বাড়ি বলতে নয়া দিল্লির মাঙ্গোলপুরি এলাকার বস্তিতে একটা এক কামরার ঘর। হানির বয়স বত্রিশের ধারে কাছে এবং তিনি পেশায় একজন যৌনকর্মী, কাজ করেন রাজধানীর নিকটবর্তী নাঙ্গলোই জাট এলাকায়। আসল বাড়ি হরিয়ানার এক গ্রামে। “আমি দশ বছর আগে এখানে আসি, এখন এখানকারই লোক হয়ে গেছি। তবে দিল্লি আসার পর থেকেই আমার জীবনে একটার পর একটা বিপদ এসেছে।”

কী ধরনের বিপদ?

“চারটে গর্ভপাত তো বহুত ব ড়ি বাত হ্যায় [খুব বড় বিষয়]! অন্তত আমার জন্য তো বটেই, তখন আমাকে খাওয়ানোর লোক ছিল না, আমার দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কেউ ছিল না”, মুচকি হেসে হানি ইঙ্গিত দেন যে তারপর অনেকটা পথ তিনি একাই পেরিয়ে এসেছেন।

“এই কাজ করার এটাই কারণ ছিল। আমার কাছে নিজের খাবার পয়সা ছিল না, আমার বাচ্চা, যে তখনও আমার পেটে, তাকে খাওয়ানোর উপায় ছিল না। তখন আমি আমি পঞ্চমবারের জন্য গর্ভবতী। আমি যখন দু’মাসের পোয়াতি তখন আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমি যে কারখানায় কাজ করতাম, ওখানে প্লাস্টিকের কৌটো তৈরি হত, পরপর কয়েকবার অসুস্থতার কারণে নানান ঘটনার পরে, আমার মালিক আমাকে তাড়িয়ে দিল। আমি ওখানে মাসে ১০,০০০ টাকা উপার্জন করতাম”, হানি জানান।

হানির বাবা-মা হরিয়ানায় ষোল বছর বয়সে ওর বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। নিজের স্বামীর সঙ্গে বেশ কিছুদিন ওখানেই ছিল- ওখানে তিনি ড্রাইভারের কাজ করতেন। তাঁরা যখন দিল্লি আসেন, হানির বয়স তখন বছর বাইশ। কিন্তু এখানে আসার পর, মদের নেশায় আসক্ত স্বামী মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যেত। “ও মাসের পর মাস গায়েব থাকত। কোথায়? আমি জানি না। ও তো এখনও এসব করে আর কখনও কিছু বলে না। অন্য মহিলার সঙ্গে অন্য জায়গায় যায় আর যখন টাকা ফুরিয়ে যায় শুধু তখনই ফেরত আসে। ও খাবার ডেলিভারি দেওয়ার কাজ করে আর প্রায় সব টাকাই নিজের পেছনে খরচা করে। আমার চারটে গর্ভপাতের এটাই তো আসল কারণ ছিল। ও না আনত জন্য কোনও দরকারি ওষুধ, না কোনও পুষ্টিকর খাবার। আমার খুব দুর্বল লাগত,” হানি জানান।

'I was five months pregnant and around 25 when I began this [sex] work', says Honey
PHOTO • Jigyasa Mishra

‘আমি তখন পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলাম, ২৫ বছর বয়সে যখন আমি এই [ যৌনকর্মীর] কাজ শুরু করি’, জানান হানি

হানি এখন তার মেয়েকে নিয়ে মাঙ্গোলপুরিতে তাঁদের বাড়িতে থাকেন, তিনি প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ দেন ৩৫০০ টাকা। তাঁর স্বামী তাঁদের সঙ্গেই থাকেন, তবে এখনও কয়েক মাস পর পর তাঁর উধাও হয়ে যাওয়া যথারীতি বজায় আছে। “আমার চাকরি চলে যাওয়ার পরেও আমি পেট চালানোর অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। তারপরে গীতা দিদি আমাকে যৌনকর্মের কথা বলেছিল এবং আমার প্রথম খদ্দেরও এনে দিয়েছিল। আমি তখন পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলাম, ২৫ বছর বয়সে যখন আমি এই কাজ শুরু করি।” আমরা কথা বলার ফাঁকেই তিনি মেয়েকে খাবার খাওয়াতে থাকেন। হানির মেয়ে একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে, প্রতিমাসে মাইনে দিতে হয় ৬০০ টাকা। এই লকডাউনের সময়ে মেয়ে তার পড়াশোনা অনলাইনে করছে, হানির ফোনে। হানির খদ্দেররা তাঁর সঙ্গে ওই একই ফোনে যোগাযোগ করে থাকেন।

“যৌনকর্মীর কাজ করে যা উপার্জন ছিল সেটা বাড়ি ভাড়া দেওয়া এবং খাবার ও ওষুধ কেনার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। আমি প্রথমদিকে মাসে প্রায় ৫০,০০০ টাকা আয় করতাম। আমি তখন আমার বয়স কম ছিল, আর দেখতেও সুন্দর ছিলাম। এখন আমার ওজন বেড়ে গেছে”, হাসিতে ফেটে পড়েন। “আমি ভেবেছিলাম যে প্রসবের পরে আমি এই কাজ ছেড়ে দেব এবং অন্য কোন কাজ খুঁজব, এমনকি কামওয়ালি (গৃহকর্মী) বা ঝাড়ুদারনি হিসাবেও কাজ করতে রাজি ছিলাম। তবে নিয়তি আমার কপালে অন্য কিছু লিখে রেখেছিল।”

“আমি আমার গর্ভাবস্থায়ও উপার্জন করতে চেয়েছিলাম কারণ আমি পঞ্চমবার আর গর্ভপাত চাইনি। যে বাচ্চা আসছে তাকে আমি সবথেকে ভালো ওষুধ এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে চেয়েছিলাম, তারজন্য আমি আমার নবম মাসেও খদ্দেরকে হ্যাঁ বলেছি। খুব কষ্ট হত কিন্তু আমার কাছে অন্য কোনও উপায় ছিল না।” হানি বলছিলেন, “আমি কি তখন জানতাম এসবের ফলে আমার প্রসবে নতুন জটিলতা তৈরি হবে।”

লখনউয়ের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নীলম সিংহ পারিকে জানান, “গর্ভাবস্থার শেষ তিনমাসে যৌন সংসর্গ নানান বিপদ ডেকে আনতে পারে। এতে গর্ভের পর্দা ফেটে যেতে পারে এবং মা যৌন সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। গর্ভবতী মহিলার অকাল প্রসব হতে পারে এবং গর্ভস্থ শিশুরও যৌনসংক্রমণ ঘটতে পারে। আর গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে যদি ক্রমাগত যৌনসংগম ঘটে তাহলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ সময়ে যৌনকর্মের সঙ্গে যুক্ত মহিলারা গর্ভবতী না হওয়ারই চেষ্টা করেন। কিন্তু যদি সেটা ঘটে, এবং সেই অবস্থাতেও তিনি যদি কাজ করতে বাধ্য হন, তাহলে বহুক্ষেত্রেই সেটি বিলম্বিত ও বিপজ্জনক গর্ভপাতের দিকেও এগোতে পারে, যার ফলে তাঁদের প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্যেরও হানি ঘটতে পারে।”

“একবার যখন আমার অসহ্য চুলকানি এবং ব্যথা হল তখন আমি সোনোগ্রাফি করাতে গিয়েছিলাম”, হানি বলছিলেন, “আমি জানতে পেরেছিলাম যে আমার উরু আর তলপেটে অস্বাভাবিক অ্যালার্জি ও যোনিতে ফোলা ভাব আছে। এসবের যন্ত্রণা আর খরচের কথা ভেবে আমার মনে হয়েছিল নিজেকে শেষ করে ফেলি।” চিকিত্সক তাঁকে বলেছিলেন যে এটি একধরনের যৌন সংক্রমণ। “তবে তখন আমার এক খদ্দের মানসিকভাবে আমার সঙ্গে থাকার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন। আমি কখনই ডাক্তারকে আমার পেশা সম্পর্কে বলিনি। তাতে অন্য সমস্যা ডেকে আনা হত। উনি আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আমি আমার খদ্দেরদের মধ্যে একজনকে তাঁর কাছে নিয়ে যেতাম।”

“ওই মানুষটির দৌলতেই আজ আমি আর আমার মেয়ে বেঁচে আছি। আমার চিকিত্সার অর্ধেক খরচ তিনিই মিটিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি এই কাজ চালিয়ে যেতে পারি,” হানি বলছেন।

'I felt like killing myself with all that pain and the expenses I knew would follow,' says Honey, who had contracted an STD during her pregnancy
PHOTO • Jigyasa Mishra
'I felt like killing myself with all that pain and the expenses I knew would follow,' says Honey, who had contracted an STD during her pregnancy
PHOTO • Jigyasa Mishra

গর্ভাবস্থায় হানির যৌনরোগ ধরা পড়েছিল তিনি জানান , ‘ যন্ত্রণা আর খরচের কথা ভেবে আমার মনে হয়েছিল যে নিজেকে শেষ করে ফেলি

যৌনকর্মীদের জাতীয় নেটওয়ার্কের (এনএনএসডাব্লু) সমন্বয়কারী কিরণ দেশমুখ জানাচ্ছেন, “বহু সংস্থা তাঁদের কনডোম ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝায়, তবে মহিলা যৌনকর্মীদের মধ্যে আকস্মিক গর্ভপাতের চেয়ে স্বেচ্ছায় গর্ভপাতের ঘটনাই বেশি দেখা যায়। সাধারণত তাঁরা সরকারি হাসপাতালেই যান যেখানে চিকিৎসকরা একবার তাঁদের পেশা সম্পর্কে জানতে পারলে তাঁদের অবহেলা করেন।”

চিকিত্সকরা কেমন করে জানতে পারেন?

“তাঁরা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ,” দেশমুখ বলেন, যিনি মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলিতে অবস্থিত বেশ্যা অন্যায় মুক্তি পরিষদের (ভিএএমপি) সভাপতিও। “চিকিৎসকেরা একবার তাঁদের ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে এবং মহিলারা কোন এলাকা থেকে এসেছেন তা জানতে পারলেই বুঝতে পেরে যাবেন। তারপরে ওই মহিলাদের [গর্ভপাতের জন্য] যে তারিখ দেওয়া হয় যা প্রায়শই পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং অনেক সময় চিকিত্সক শেষকালে জানান গর্ভপাত আর সম্ভব নয় এই বলে যে, “আপনি চার মাস [গর্ভাবস্থার] পেরিয়ে গিয়েছেন এবং এখন গর্ভপাত করা অবৈধ।”

এঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মহিলাই সরকারি হাসপাতালে যে কোনও ধরনের চিকিৎসার সুবিধা এড়িয়ে যান। রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির ট্র্যাফিকিং এবং এইচআইভি / এইডস প্রকল্পের ২০০৭ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় “৫০ শতাংশ যৌনকর্মী [নয়টি রাজ্যে করা সমীক্ষার ভিত্তিতে] জনস্বাস্থ্য সুবিধা, যেমন প্রসবকালীন যত্ন এবং হাসপাতালে প্রসবের মতো পরিষেবা নিতে চান না।” সামাজিক কলঙ্কের ভয়, দুর্ব্যবহার এবং প্রসবে তাড়াহুড়ো এর অন্যতম কারণ বলে মনে হয়।

“এই পেশা সরাসরি প্রজনন স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত,” জানাচ্ছেন অজিত সিং, যিনি পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যৌন পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকা বারাণসীর গুড়িয়া সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। সিং, যিনি দিল্লির জি.বি রোড অঞ্চলের মহিলাদের যেসব সংস্থাগুলি সাহায্য করে, তাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে জানান, “৭৫-৮০ শতাংশ মহিলা যৌনকর্মীর কোনও না কোনও প্রজনন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে।”

হানি বলেছিলেন এই নাঙ্গলোই জাটে “আমাদের সবরকম খদ্দের আছে। এমবিবিএস ডাক্তার থেকে পুলিশের লোক, শিক্ষার্থী থেকে রিকশা চালক, সবাই আমাদের কাছে আসে। আমাদের যখন বয়স কম থাকে, আমরা শুধু তাদের সঙ্গেই যাই যারা ভাল টাকা দেয়, কিন্তু যখন বয়স বাড়ে, তখন আর অত বাছবিচার চলে না। সত্যি কথা বলতে, এই ডাক্তার এবং পুলিশওলাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতেই হয়। আপনার কখন কাকে দরকার হবে কেউ বলতে পারে না।”

এখন এক মাসে তিনি কত আয় করেন?

“এই লকডাউনের সময়টুকু বাদ দিলে, আমি মাসে প্রায় ২৫০০০ টাকা আয় করতাম। তবে এটা একটা মোটামুটি আন্দাজ। টাকার পরিমাণটা এক-এক জন খদ্দেরের কাছ থেকে এক-এক রকম হয়, ওটা নির্ভর করে ওদের কাজের উপর। এছাড়া নির্ভর করে আমরা পুরো রাত কাটিয়েছি না, কয়েক ঘন্টা (খদ্দেরদের সঙ্গে), জানাচ্ছেন হানি।  “যদি আমাদের খদ্দেরের উপর কোনওরকম সন্দেহ হয় তাহলে আমরা হোটেলে যাই না, তার বদলে নিজেদের বাড়িতে ডেকে নিই। তবে আমার ক্ষেত্রে, আমি ওদের নাঙ্গলোই জাটে গীতা দিদির বাড়িতে ডাকি। মাসে কয়েক রাত আর দিন আমি এখানে কাটাই। আমায় খদ্দের যা দেয়, তার অর্ধেক ও নেয়। এটাই ওর কমিশন।” টাকার পরিমাণ স্থির না থাকলেও পুরো একটি রাতের জন্য ন্যূনতম মূল্য ১০০০ টাকা।

Geeta (in orange) is the overseer of sex workers in her area; she earns by offering her place for the women to meet clients
PHOTO • Jigyasa Mishra
Geeta (in orange) is the overseer of sex workers in her area; she earns by offering her place for the women to meet clients
PHOTO • Jigyasa Mishra

গীতা (কমলা রঙে র জামা পরিহিত ) তাঁর এলাকার যৌনকর্মীদের তদার কি করেন ; তিনি খদ্দের দের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর বাড়ি যৌনকর্মীদের দিয়ে তার থেকে আয় করেন

গীতা, বয়স চল্লিশের কোঠায়, উনি নিজের এলাকার যৌনকর্মীদের তদারকি করেন। উনিও এই দেহ ব্যাপারের (দেহব্যবসা) সঙ্গে যুক্ত তবে ওনার মূল আয় নিজের বাড়ি অন্যান্য মহিলাকে দিয়ে তার থেকে কমিশন বাবদ আসে। “আমি অভাবী মহিলাদের এই কাজে নিয়ে আসি এবং যখন তাদের কাজ করার জায়গা থাকে না, তখন আমি নিজের বাড়ি ছেড়ে দিই।” গীতা সহজভাবে জানান, “আমি ওদের উপার্জনের ৫০ শতাংশ নিই।”

“আমি জীবনে অনেক কিছু দেখেছি,” হানি বলেন। “প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করা থেকে শুরু করে, আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বলে সেখান থেকে আমায় তাড়িয়ে দিল, আর এখন এই ছত্রাক আর যোনির সংক্রমণ নিয়ে বেঁচে আছি এবং তার জন্য এখনও আমাকে ওষুধ খেতে হয়। আমার মনে হয় কপালে লেখা আছে যে এটা সারাজীবন থাকবে।” আজকাল, তাঁর স্বামীও হানি এবং তাঁদের মেয়ের সঙ্গেই থাকছেন।

তিনি কি হানির পেশা সম্পর্কে জানেন?

“খুব ভালো করেই,” হানি জানান। “ও সব জানে। এখন আমার উপর আর্থিকভাবে নির্ভর করার একটা অজুহাত পেয়ে গেছে। এই তো, ওই আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আসবে। তবে আমার বাবা-মা [তাঁরা কৃষক] এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। আর ওঁরা কোনোদিন জানুন সেটাও আমি চাই না। ওঁদের বয়স হয়েছে, হরিয়ানায় থাকেন।”

“অনৈতিক পাচার (প্রতিরোধক) আইন, ১৯৫৬, অনুযায়ী ১৮ বছরের চেয়ে বেশি বয়সের যে কোনও ব্যক্তির যৌনকর্মীর উপার্জনের উপর নির্ভরশীল হওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ”, জানাচ্ছেন পুণে নিবাসী আইনজীবী আরথি পাই, যিনি ভিএএমপি এবং এনএনএসডাব্লু উভয়কেই আইনি পরামর্শ দেন। “এর আওতায় পড়েন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান, সঙ্গী/ স্বামী এবং মা-বাবা, যাঁরা কোনো মহিলা যৌনকর্মীর সঙ্গে থাকেন এবং আর্থিকভাবে তাঁর উপার্জনের উপর নির্ভরশীল। এরকম ব্যক্তির সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।” তবে স্বামীর বিরুদ্ধে হানি অভিযোগ করবেন, এমন সম্ভাবনা নেই।

“লকডাউন শেষ হওয়ার পরে এই প্রথম আমি কোনও খদ্দেরের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। “আজকাল খুব কমই আসে, প্রায় নেই বললেই চলে,” তিনি বলেছেন। “এই অতিমারি চলাকালীন যারা এখন আমাদের কাছে আসে, তাদের বেশিরভাগকেই বিশ্বাস করা যায় না। এর আগে, কেবলমাত্র এইচআইভি এবং অন্যান্য [যৌন সংক্রমণ] রোগ থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সাবধান থাকতে হত। এখন, করোনাও যোগ হয়েছে। এই পুরো লকডাউন আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও উপার্জন নেই - এবং আমাদের সমস্ত সঞ্চয়ও ফুরিয়ে গেছে। এমনকি দুমাস ধরে আমি আমার ওষুধ [অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ক্রিম এবং লোশন] কিনতে পারিনি কারণ কোনওরকমে পেট চালানোর মতো টাকাটুকুই ছিল,” হানি বলেন,  বলতে বলতে স্বামীকে ডাকেন মোটরবাইক বের করে তাঁকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আসার জন্য।

প্রচ্ছদচিত্র এঁকেছেন অন্তরা রামন। তিনি বেঙ্গালুরুর সৃষ্টি ইন্সটিটিউট অফ ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজির ভিজুয়াল কম্যুনিকেশন বিভাগ থেকে সদ্য উত্তীর্ণ একজন স্নাতক। অন্তরার শিল্পচর্চা ও অলংকরণের মূল মন্ত্র হিসেবে উঠে আসে কন্সেপচুয়াল আর্ট এবং কথকতা।

পারি এবং কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্টের গ্রামীণ ভারতের কিশোরী এবং তরুণীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দেশব্যাপী রিপোর্টিং প্রকল্পটি পপুলেশন ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য প্রান্তবাসী এই মেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের স্বর এবং যাপিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই অত্যন্ত জরুরি বিষয়টিকে ঘিরে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] এই আইডিতে।

ঠাকুর ফ্যামিলি ফাউন্ডেশান থেকে প্রাপ্ত একটি স্বতন্ত্র সাংবাদিকতা অনুদানের সাহায্যে জিজ্ঞাসা মিশ্র জনস্বাস্থ্য এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে লেখালিখি করেন। এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর ওপর ঠাকুর ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন কোনওরকম সম্পাদকীয় হস্তক্ষেপ করেনি।

বাংলা অনুবাদ: শুচিস্মিতা ঘোষ

Jigyasa Mishra

جِگیاسا مشرا اترپردیش کے چترکوٹ میں مقیم ایک آزاد صحافی ہیں۔ وہ بنیادی طور سے دیہی امور، فن و ثقافت پر مبنی رپورٹنگ کرتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Jigyasa Mishra
Illustration : Antara Raman

انترا رمن سماجی عمل اور اساطیری خیال آرائی میں دلچسپی رکھنے والی ایک خاکہ نگار اور ویب سائٹ ڈیزائنر ہیں۔ انہوں نے سرشٹی انسٹی ٹیوٹ آف آرٹ، ڈیزائن اینڈ ٹکنالوجی، بنگلورو سے گریجویشن کیا ہے اور ان کا ماننا ہے کہ کہانی اور خاکہ نگاری ایک دوسرے سے مربوط ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Antara Raman

پی سائی ناتھ ’پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا‘ کے بانی ایڈیٹر ہیں۔ وہ کئی دہائیوں تک دیہی ہندوستان کے رپورٹر رہے اور Everybody Loves a Good Drought اور The Last Heroes: Foot Soldiers of Indian Freedom کے مصنف ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز پی۔ سائی ناتھ
Series Editor : Sharmila Joshi

شرمیلا جوشی پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا کی سابق ایڈیٹوریل چیف ہیں، ساتھ ہی وہ ایک قلم کار، محقق اور عارضی ٹیچر بھی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز شرمیلا جوشی
Translator : Suchismita Ghosh

Suchismita Ghosh works at the School of Cultural Texts and Records at Jadavpur University. She is a freelance editor and translator.

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Suchismita Ghosh