ছায়া উভালের স্মৃতিচারণে উঠে এল তাঁর মায়ের গাওয়া জাঁতাপেষাইয়ের গান ও লোকগীতি — পারিবারিক সম্পর্কের মাধুর্য ও যাতনা, দুই-ই আছে তাতে

“মা আমার অনেক গান গাইত, কিন্তু সেসব যে মনে করা বড্ড কঠিন,” পুণের শিরুর তালুকে ছায়া উবালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি জানিয়েছিলেন আমাদের। জাঁতাপেষাইয়ের গানের প্রকল্পে যাঁরা যাঁরা অবদান রেখেছিলেন, সেসকল গায়কের সঙ্গে আমরা আবারও একে একে যোগাযোগ করছিলাম; আর সেই সুবাদেই ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সভিন্দানে গাঁয়ের পাওয়ার পরিবারের ভিটেয় গিয়ে কড়া নাড়ি। ছেলেমেয়ে, বউমা, নাতিনাতনি নিয়ে পুরো চাঁদের হাট বসেছে।

তবে গায়ক গীতা পাওয়ারের সঙ্গে আর মোলাকাত হল না, চারবছর আগেই যে তিনি দেহ রেখেছেন। তাই মায়ের গাওয়া গান আমাদের শোনানোর গুরুদায়িত্বটা মেয়ে ছায়া উবালের উপর গিয়ে পড়ল। ছায়া তাই আমাদের দেখালেন, গীতা পাওয়ারের বাঁধিয়ে রাখা ছবির পাশে কি যত্নেই না তিনি মায়ের রেখে যাওয়া রুপোর জোড়ওয়ে (আনোট বা আঙ্গোট, অর্থাৎ পায়ের আংটি) কটি গুছিয়ে রেখেছেন।

স্মৃতির মণিকোঠা হাতড়ে, মায়ের কাছে শোনা চারখানা ওভি শোনালেন আমাদের, সঙ্গে ছিল দুখানা ছোটো লোকগীতি — একটি দুঃখের, আরেকটি বেশ ফুর্তির। শুরুরটি ছিল কিংবদন্তির নায়িকা সাবিত্রীর গুণগান, ভদ্র রাজ্যের মহান রাজা অশ্বপতির কন্যা ছিলেন এই সাবিত্রী। প্রচলিত প্রথা মোতাবেক এই দোহাটি ছিল গালা (সুতান), এটা দিয়েই পরবর্তী গানমালার সুর-তাল বেঁধে দেওয়া হয়।

PHOTO • Samyukta Shastri
PHOTO • Samyukta Shastri

বাঁদিকে: ২০১৩ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গীতাবাই হরিভাউ পাওয়ার, হাতে তাঁরই আলোকচিত্র ধরে বসে আছেন মেয়ে ছায়া উবালে। ডানদিকে: মায়ের ছবির পাশাপাশি তাঁর রেখে যাওয়া রুপোর আঙ্গট দেখাচ্ছেন ছায়া উবালে

PHOTO • Samyukta Shastri

প্রয়াত গায়ক গীতাবাই পাওয়ারের পরিবার: (বাঁদিক থেকে ডানদিকে) বউমা নম্রতা, ছেলে শাহজি, নাতি যোগেশ উবালে, মেয়ে ছায়া উবালে, বোনপো অভিষেক মালাভে এবং ছোটো ছেলে নারায়ণ পাওয়ার

প্রথম লোকগীতিটায় এক অবাক করা তুলনা উঠে এল: একদিকে রয়েছে মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডব ও একশত কৌরবের যুদ্ধ, অপরদিকে রয়েছে একান্নবর্তী পরিবারে রোজ রোজ একাহাতে সংসারের হাঁড়ি ঠেলে যাওয়া একাকিনী এক নারী। একদিকে থাকল পন্ধরপুর দেউলের বিট্ঠল-রুক্মিনীর প্রতি ভক্তিভরা ইবাদত, অন্যদিকে রইল সে দেবদেবীর সঙ্গে আপন মা-বাবার তুলনা। বাবামায়ের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ছায়া উবালে আর কান্না চেপে রাখতে পারলেন না, গাল বেয়ে অঝোর ধারায় বইল আঁখিজল। প্রকৃতি যেন একপায়ে খাড়া হয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল হঠাৎ, বাড়ির টিনের চালে ঝমঝম শব্দ।

পরের স্তবকে নিজের ভাইয়ের উদ্দেশে গাইতে লাগলেন ছায়া তাই, চার ভাসুর ও চার জায়ের অহরহ দাবিদাওয়া মানতে মানতে কেমন নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন, সেকথা জানালেন গানের মাধ্যমে।

লোকগীতি ফুরোতেই পালা এল চারটি ওভি বা জাঁতাপেষাইয়ের গানের। মামা-মামির থেকে এক শিশু কেমন অপার স্নেহ ও উপহার পায়, সেসব ঘিরে গাইতে লাগলেন ছায়া উবালে। মামা এসে আদর করে একজোড়া লাল ফতুয়া আর টুপি দিয়েছেন বাচ্চাটিকে। শিশুটি হঠাৎই কঁকিয়ে কেঁদে উঠল, বোধহয় তার খিদে পেয়েছে, গায়ক তখন বাচ্চাটিকে দইভাত খাওয়ানোর কথা বললেন।

চোখ-টোখ মুছে, চকিতে বিষাদ কাটিয়ে হাস্যরসে পরিপূর্ণ একটি লোকগীতি গেয়ে আজকের এ আসর ভেঙে দিলেন ছায়া তাই। এক বউমার দ্বারা তার দজ্জাল শাশুড়িকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভবের সামিল, শাশুড়ি মা যে উচ্ছে-করলার মতন। সে যতই কায়দা করে রাঁধুন না কেন, উচ্ছে তেতোই থাকবে; তাকে মিষ্টি করে তোলা না-মুমকিন। ছায়া উবালের সঙ্গে আমরাও হেসে উঠলাম।

ভিডিওটি দেখুন: উচ্ছে তিতা ক্যামনে বানাই মিঠে?

লোকগীতিটি শুনুন: গিরিজার চোখের পানি

লোকগীতি:

गिरीजा आसू गाळिते

भद्र देशाचा अश्वपती राजा पुण्यवान किती
पोटी सावित्री कन्या सती केली जगामध्ये किर्ती

एकशेएक कौरव आणि पाची पांडव
साळीका डाळीका गिरीजा कांडण कांडती
गिरीजा कांडण कांडती, गिरीजा हलक्यानं पुसती
तुमी कोण्या देशीचं? तुमी कोण्या घरचं?
आमी पंढरपूर देशाचं, काय विठ्ठलं घरचं
विठ्ठल माझा पिता, रुक्मिनी माझी माता
एवढा निरोप काय, सांगावा त्या दोघा
पंचमी सणाला काय ये बंधवा न्यायाला

ए बंधवा, ए बंधवा, तुझं पाऊल धुईते
गिरीजा पाऊल धुईते, गिरीजा आसू जी गाळिते
तुला कुणी बाई नि भुलीलं, तुला कुणी बाई गांजिलं
मला कुणी नाही भुलीलं, मला कुणी नाही गांजिलं
मला चौघे जण दीर, चौघे जण जावा
एवढा तरास मी कसा काढू रे बंधवा

গিরিজার চোখের পানি

রাজ্যের নাম ভদ্র সেথায় অশ্বপতি রাজা, নসীবখানা বড্ড খাসা তাঁর।
কন্যে তাহার সাবিত্রী গো রাজকুমারী আহা, জগৎজোড়া সুনাম শুনি যার।

একশত-এক কৌরব, সঙ্গে পাণ্ডব পাঁচভাই,
গিরিজা সে দেখি চাল, ডাল, সব গুঁড়োচ্ছে একাই,
পেষাই পেষাই চলছে পেষাই, আলতো স্বরে প্রশ্নে করে সে,
কোথার থেকে আসছ বাছা? কাদের বাড়ি থেকে?
দেশগাঁ মোদের পনঢারপুর, বিট্ঠলেরই ভিটে,
বিট্ঠল রাজ আমার বাবা, রুক্মিণী মোর মা,
তাঁদের প্রতি বার্তা আমার পৌঁছে দিয়ে যা।
পঞ্চমীর ওই আসছে পরব, ভাইকে আমার পাঠিয়ে দে রে,
হেথায় এসে বিট্ঠল যেন আমারে যায় নিয়ে।

ভাই রে আমার, ভাই রে আমার, ধুইয়ে দেব পা
চোখের জলে গিরিজা তুঁহার ধুইয়ে দেবে পা
কেই বা গেছে তোমায় ভুলে, দিচ্ছে কে জন কষ্ট?
কেও ভোলেনি আমায় রে ভাই, দেয়নি যে কেউ কষ্ট —
দুইজোড়া মোর ভাসুর আছে, দুইজোড়া মোর জা,
এই ঝামেলা ক্যামনে কাটাই, ভাই রে বলে যা।

ওভি (জাঁতাপেষাইয়ের গান):

अंगण-टोपडं सीता घालिती बाळाला
कोणाची लागी दृष्ट, काळं लाविती गालाला

अंगण-टोपडं  हे बाळ कुणी नटविलं
माझ्या गं बाळाच्या मामानं पाठविलं
माझ्या गं योगेशच्या मामानं पाठविलं

अंगण-टोपडं गं बाळ दिसं लालं-लालं
माझ्या गं बाळाची मावशी आली कालं

रडतया बाळ त्याला रडू नको देऊ
वाटीत दहीभात त्याला खायला देऊ

বাছারে সই ফতুয়া-টুপি পরিয়ে দিলা সীতা
বদনজরের বিষ কাটাতে গালে কাজল ফোঁটা।

বাচ্চাটারে ফতুয়া-টুপি পরিয়ে দিলা কে?
খোকার মামা এসব জামা পাঠিয়ে দিয়েছে।
মোর যোগেশের মামাই এসব পাঠিয়ে দিয়েছে।

ফতুয়া-টুপি পরল বাছা, টুকটুকে হল লাল
খোকার মামি এসছে জানি এই তো রে গতকাল।

কাঁদছে আমার ছোট্ট সোনা, কাঁদতে দিবি না
একবাটি সই দইভাত ওকে খাইয়ে দিয়ে যা।

লোকগীতি:

सासू खट्याळ लई माझी

सासू खट्याळ लई माझी सदा तिची नाराजी
गोड करू कशी बाई कडू कारल्याची भाजी (२)

शेजारच्या गंगीनं लावली सासूला चुगली
गंगीच्या सांगण्यानं सासूही फुगली
पोरं करी आजी-आजी, नाही बोलायला ती राजी

गोड करू कशी बाई कडू कारल्याची भाजी
सासू खट्याळ लई माझी  सदा तिची नाराजी

শাশুড়ি আমার দজ্জাল বড়

শাশুড়ি আমার দজ্জাল বড়, মেজাজ অনাছিষ্টি।
বল্ রে তোরা উচ্ছে তিতা ক্যামনে বানাই মিষ্টি? (২)

গাঙ্গি নামের পড়শি তাহার কান করেছে ভারি
সেসব শুনে শাশুড়ি মায়ের মেজাজ বলিহারি।
বাচ্চাগুলো যায় ছুটে যায় 'ঠানদি-ঠানদি' বলে
কিন্তু আমার শাশুড়ি তেনার মুখটি নাহি খোলে।

বল্ রে তোরা উচ্ছে তিতা ক্যামনে বানাই মিষ্টি?
শাশুড়ি আমার দজ্জাল বড়, মেজাজ অনাছিষ্টি।

গায়ক/পরিবেশক : ছায়া উবালে

গ্রাম : সভিন্দানে

তালুক : শিরুর

জেলা : পুণে

তারিখ : ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে এই গানগুলি রেকর্ড করা হয়। ছবিগুলিও তখনই তোলা।

পোস্টার : সিঞ্চিতা পর্বত

হেমা রাইরকর ও গি পইটভাঁ'র হাতে তৈরি জাঁতা পেষাইয়ের গানের আদি প্রকল্পটির সম্বন্ধে পড়ুন

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

نمیتا وائکر ایک مصنفہ، مترجم اور پاری کی منیجنگ ایڈیٹر ہیں۔ ان کا ناول، دی لانگ مارچ، ۲۰۱۸ میں شائع ہو چکا ہے۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز نمیتا وائکر
PARI GSP Team

پاری ’چکی کے گانے کا پروجیکٹ‘ کی ٹیم: آشا اوگالے (ترجمہ)؛ برنارڈ بیل (ڈجیٹائزیشن، ڈیٹا بیس ڈیزائن، ڈیولپمنٹ اور مینٹیننس)؛ جتیندر میڈ (ٹرانس کرپشن، ترجمہ میں تعاون)؛ نمیتا وائکر (پروجیکٹ لیڈ اور کیوریشن)؛ رجنی کھلدکر (ڈیٹا انٹری)

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز PARI GSP Team
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کے کانٹینٹ مینیجر ہیں۔ انہوں نے کولکاتا کی جادوپور یونیورسٹی سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک کثیر لسانی شاعر، ترجمہ نگار، فن کے ناقد اور سماجی کارکن ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra