“সরকার বাহাদুরকে অনুরোধ করছি ঘুম ভেঙে এবার জেগে উঠুন…”

এই হলেন আমাদের অনন্য হৌসাবাঈ পাটিল - অসম সাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামী, দাপুটে নেত্রী, দেশের কৃষিজীবী, দরিদ্র এবং প্রান্তবাসী মানুষের অধিকারের অদম্য সমর্থক। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কৃষি সংকট বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ২১ দিনের বিশেষ সংসদীয় অধিবেশনের দাবিতে দিল্লিতে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের কিষান মুক্তি যাত্রার সমর্থনে হৌসাবাঈ যে বার্তা দিয়েছিলেন, এই ভিডিও মেসেজেই তাঁর উপরোক্ত কথাগুলি আছে।

এই ভিডিওটিতে হৌসাবাঈ জোর দিয়ে বলেছেন, “কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রদান করতেই হবে। আর এই ন্যায্য অধিকারের দাবিতে আমিও শামিল হব” এই মিছিলে, তা সে হোক না ৯৩ বছর বয়স, হোক না শরীর হাজার কমজোর, হৌসাবাঈকে কে রুখবে! সরকারের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি: “আর ঘুমিয়ে কাজ নেই! জেগে উঠে সরকার যেন অবিলম্বে দেশের গরিবদের জন্য কাজ করে।”

২০২১-এর ২৩শে সেপ্টেম্বর সাংলীতে ৯৫ বছর বয়সে হৌসাবাঈ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। কী ভীষণ মনে পড়ছে তাঁর কথা…

১৯৪৩-৪৬ - এই সময়কালের মধ্যে যে বিপ্লবী বাহিনীর নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় ইংরেজ ট্রেন, কোষাগার আক্রমণ তথা লুণ্ঠন এবং ডাক বাংলোয় অগ্নি সংযোগ কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছিল, হৌসাবাঈ পাটিল ছিলেন সেই দলেরই অন্যতম সক্রিয় সদস্য (তিনি হৌসাতাঈ নামেই অধিক পরিচিত; মারাঠি ভাষায় ‘তাঈ’ হল দিদির জন্য সশ্রদ্ধ, সস্নেহ ডাক)। ডাকবাংলোগুলিকে ব্রিটিশ সরকার প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করত, কখনও কখনও আবার সেগুলিতে আদালতও বসত। ১৯৪৩ সালে মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে যে সমান্তরাল, আন্ডারগ্রাউন্ড প্রতি সরকার স্থাপিত হয়েছিল, তার সশস্ত্র বাহিনী ছিল তুফান সেনা (ঝঞ্ঝা বাহিনী বা টাইফুন বাহিনী)। এই বিপ্লবী তুফান সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হৌসাবাঈ।

১৯৪৪ সালে তৎকালীন পর্তুগিজ শাসনের অধীনস্থ গোয়ায় এক আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মসূচিতে হৌসাবাঈ অংশগ্রহণ করেন, মধ্যরাতে একটি ভাসমান কাঠের বাক্সের উপর চেপে মান্ডোভী নদী পার করেন, তাঁর কমরেডরা পাশে পাশে সাঁতার কেটে নদী পার হয়েছিলেন। অথচ তিনি মনে করেন, “আমি দেশের স্বাধীনতার জন্য খুব সামান্যই কিছু করতে পেরেছি… মোটেই বিশাল কিছু বা কোনও মহৎ কাজ আমি করিনি।” তাঁর কথা পড়তে পারেন এই কাহিনিটিতে, আমার খুব প্রিয় এই গল্পটি: হৌসাবাঈয়ের বীরত্বের অজানা কাহিনি

যে বিপ্লবী বাহিনীর নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় ইংরেজদের ট্রেন, পুলিশের অস্ত্রাগার আক্রমণ তথা লুণ্ঠন এবং ডাক বাংলোয় অগ্নি সংযোগ ইত্যদি কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছিল, হৌসাবাঈ ছিলেন সেই দলের সদস্য

ভিডিও দেখুন: 'সরকার বাহাদুরকে অনুরোধ করছি ঘুম ভেঙে এবার জেগে উঠু ক…'

সমাপতন এমনই যে যেদিন হৌসাবাঈ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সেদিনই আমি সাংবাদিকতার ছাত্রদের তাঁর কথা বলছিলাম। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত বীরদের জীবন একটা গোটা প্রজন্মের অজ্ঞাত রয়ে গেল। দেশপ্রেম এবং ভারতের জাতীয়তাবাদ বিষয়ে কথা বলার আসল হকদার তো এই বীর যোদ্ধারাই, আর আজ কিনা এই মঞ্চগুলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কতিপয় ভেকধারী দেশপ্রেমিক! এই বীর মানুষদের দেশপ্রেম চালিত হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মুক্তির সংগ্রামে ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করে তোলার মধ্যে দিয়ে, তাদেরকে ধর্ম বা জাতের ভিত্তিতে লড়িয়ে দিয়ে নয়। মতাদর্শ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা জন্ম দিয়েছিল আশার, সেখানে ছিল না ঘৃণার স্থান। তাঁরা ছিলেন মুক্তির দিশারী, ধর্মান্ধতা তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি।

পারি’র সঙ্গে তাঁর ইন্টারভিউয়ের দিনটা আমি কোনও দিন ভুলব না। কাজ শেষে পারি’র সদস্যদের বেরোনোর তোড়জোড় করতে দেখে জ্বলজ্বলে চোখে, হৌসাবাঈ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন: “তাহলে এবার তোমরা আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে তো?”

“কোথায়, হৌসাবাঈ?”

“কোথায় আবার! তোমাদের সবার সঙ্গে পারি’র কাজে!” হাসতে হাসতে হৌসাবাঈ বলে উঠলেন।

বিগত বেশ কিছু সময় ধরে আমি একটা বইয়ের কাজ করছি, ‘মুক্তিযুদ্ধের পদাতিক সিপাইয়েরা: স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ জীবিত যোদ্ধাদের কথা’ ('Foot-soldiers of Freedom: the last heroes of India’s struggle for independence')। হৌসাবাঈ, যাঁর চমকপ্রদ জীবন কাহিনি এই বইয়ের মূল অধ্যায় জুড়ে থাকবে, তিনি নিজে আর তা পড়তে পারবেন না - এই আক্ষেপ চিরদিন থেকে যাবে আমার।

অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

پی سائی ناتھ ’پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا‘ کے بانی ایڈیٹر ہیں۔ وہ کئی دہائیوں تک دیہی ہندوستان کے رپورٹر رہے اور Everybody Loves a Good Drought اور The Last Heroes: Foot Soldiers of Indian Freedom کے مصنف ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز پی۔ سائی ناتھ
Translator : Smita Khator

اسمِتا کھٹور، پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے لیے ’ٹرانسلیشنز ایڈیٹر‘ کے طور پر کام کرتی ہیں۔ وہ مترجم (بنگالی) بھی ہیں، اور زبان اور آرکائیو کی دنیا میں طویل عرصے سے سرگرم ہیں۔ وہ بنیادی طور پر مغربی بنگال کے مرشد آباد ضلع سے تعلق رکھتی ہیں اور فی الحال کولکاتا میں رہتی ہیں، اور خواتین اور محنت و مزدوری سے متعلق امور پر لکھتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز اسمیتا کھٹور