সেদিনটা আজও মনে পড়ে। কম্বল মুড়ি দিয়ে, মায়ের পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে গল্প শুনছিলাম – "তারপর তো সিদ্ধার্থ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন, জীবনসত্যের সন্ধানে..." অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়েছিল সারাটা রাত, ঘর জুড়ে ঘুরপাক খেয়েছিলো পৃথিবীর গর্ভগন্ধ, মোমবাতির কালচে শিখা কেঁপে কেঁপে ছুঁতে চেয়েছিল ছাদ।

"সিদ্ধার্থ যদি খাবারদাবার কিছু না পায়? তাহলে?" বোকার মতো জিজ্ঞেস করেছিলাম। আরে বাবা, সিদ্ধার্থ তো ভগবান!

তারপর একে একে কেটে গেছে ১৮টা বছর, আবারও হাজির হয়েছি সেই ঘরে। সেই একই বৃষ্টি, জানালার কাঁচ বেয়ে ছুটে চলেছে ফোঁটা ফোঁটা মেঘ। এবার আমার পাশে লেপের ভিতর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে মা, কানখাড়া করে খবর শুনছে: "ভারতে ২১ দিনের লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে শহর ছেড়ে নিজেদের দেশগাঁয়ের পথে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছে লাখ পাঁচেক পরিযায়ী মজুর।"

পাল্টায়নি বোধহয় শুধু প্রশ্নটাই: ওঁরা যদি খেতে না পান? কী হবে তাহলে?

সুধন্য দেশপাণ্ডের কণ্ঠে মূল কবিতাটি শুনুন

Both the paintings with this poem are an artist's view of the trek by migrant workers across the country. The artist, Labani Jangi, is a self-taught painter doing her PhD on labour migrations at the Centre for Studies in Social Sciences, Kolkata
PHOTO • Labani Jangi

কবিতার সঙ্গে যুক্ত দুটি ছবিতেই শিল্পীর চোখে ধরা পড়েছে দেশ জুড়ে হেঁটে যাওয়া পরিযায়ী মজুরের দল। স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী লাবনী জঙ্গী বর্তমানে কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্স থেকে শ্রমিকদের পরিযান বিষয়ে পিএইচডি করছেন

রক্তের ঠিকানা

জানালা পেরিয়ে চোখ যায় যতদূর
গুটিগুটি হেঁটে চলা মানুষের সারি –
পিঁপড়ে পিঁপড়ে যেন খিদের ব্যাপারী।
বাচ্চারা নিশ্চুপ, খেলা নেই ধূলা নেই,
ফুঁপিয়ে কাঁদছে নাকো দুধের জাতক –
ফেলে আসা রাস্তাতে লেগেছে মড়ক।
নাকি এ শুধুই খিদে?
জানালা পেরিয়ে চোখ যায় যতদূর
মাথায় বোঁচকা তুলে হাঁটছে মানুষ,
বুকে তার হাড়কাটা উপোসের ভয় –
খিদের নবান্নতে আধপেটা রয়।
মাইল পেরিয়ে যায় হাঁটি হাঁটি পায়ে
রক্ত গুনেছে জানি লাশকাটি ধুলো –
নাম-ধাম-গোত্রের হাতছানি ফেলে
ন্যাংটা পায়ের ছাপে লাল-সাদা-কালো।
সেই লালে লাল হয় ভিটেমাটি হাওয়া
জানালা পেরিয়ে চোখ যায় বহুদূর –
শুকনো বুকের দুধে
নব সে জাতক ভাবে
তাহারও জননী হবে আঁশটে দুপুর।
বাড়ি ফেরে কেউ কেউ,
কেউ বা হুমড়ি খেয়ে মোরাম সাজায় –
পোকামারা বিষ কারও দেহের নালিশ,
হায়!
গবাদি শিশুর ভিড়ে ট্রাক ভরে যায়।
কালো থেকে নীল হয় আসমানি পালা,
তবুও বসুধা রয় আলতাসি লাল –
শুকনো বুকের দুধ খুঁজেছিল যারা
রক্ত মাখানো পায়ে, ছাপ রেখে কে বা যায়?
রুখা সে বুকের ছায়ে নাচে মহাকাল।

অডিও: সুধন্য দেশপা ণ্ডে জন নাট্য মঞ্চের সাথে যুক্ত অভিনেতা ও পরিচালক , তিনি লেফ্টওয়ার্ল্ড বুকস্-এর একজন সম্পাদকও বটে।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Gokul G.K.

گوکل جی کیرالہ کے ترواننت پورم کے ایک آزاد صحافی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Gokul G.K.
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر نے جادوپور یونیورسٹی، کولکاتا سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک شاعر، ناقد اور مصنف، سماجی کارکن ہیں اور پاری کے لیے بطور مترجم کام کرتے ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra