“মানুষ আমাদের দেখে হেসেছিল কারণ তাদের মনে হয়েছিল যে এটা অত্যন্ত কঠিন, প্রায় অসাধ্য একটা প্রয়াস,” বলেন কে. ভি. জর্জকুট্টি।
এখন ফেব্রুয়ারি মাস, অর্থাৎ কেরালার নির্মম নিদারুণ গ্রীষ্ম দ্রুত এগিয়ে আসছে। কে. ভি. জর্জকুট্টি এবং বাবু উলাহান্নান তাঁদের অস্থায়ী কুটিরের বাইরে বিশ্রাম করছেন। ইতস্তত হাওয়া বইছে বটে, কিন্তু প্রকৃত আরাম এবং স্বস্তির কারণ সামনের দৃশ্য - কোট্টায়ম জেলার পাল্লম ব্লকের পনাচিক্কাডু তালুকের কোল্লাদ অঞ্চলের এই দিগন্ত বিস্তৃত, মাঝে মাঝে সরু সরু খালে বিভক্ত, ২৫০ একর টিয়ে-সবুজ ধানখেত। শ্বেতশুভ্র পাখি লম্বা ঘাসের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে, মাঠ জুড়ে তারের উপরে বসে আছে কালো পাখির দল।
আজকের এই ঘন সবুজ খেত কয়েক মাস আগে পর্যন্ত, ফাঁকা জমি বই কিছুই ছিল না - তিন দশক ধরে এই জমি পতিত অবস্থায় পড়ে ছিল। বাবু এবং জর্জকুট্টি, সুরেশ কুমার, শিবু কুমার ও ভার্গিস জোসেফের সাথে মিলে সেই পতিত জমির চেহারাই বদলে ফেলেছেন। বাবু জানান, “এই প্রক্রিয়ার কঠিনতম কাজটি ছিল চাষের জন্য এই জমি প্রস্তুত করে তোলা। যাবতীয় আগাছা পরিষ্কারের পর মাটির সংস্কার করা এবং খেতের চারপাশে সেচের জন্য খাল নির্মাণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। সাধারণ চাষের জমির তুলনায় পতিত জমি প্রস্তুত করার কাজটি দশগুণ বেশি পরিশ্রম দাবি করে [এবং এই কাজে ট্র্যাক্টর ও শ্রমিকদের প্রয়োজন হয়]।” তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা সকলেই এই খেত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চ্যাঙ্গানাস্সেরি শহরের অত্যন্ত অভিজ্ঞ ধান চাষি।
ধান চাষ করে এই কৃষকেরা কেরালার কৃষিক্ষেত্রের প্রচলিত স্রোতের বিরুদ্ধে হাঁটছেন। রাজ্য সরকারের কৃষি পরিসংখ্যান রিপোর্ট অনুযায়ী ধান চাষের জমির পরিমাণ ১৯৮০ সালে রাজ্যের মোট কর্ষিত জমির শতকরা ৩২ শতাংশ থেকে ২০১৬-১৭ সালে মাত্র শতকরা ৬.৬৩ শতাংশ জমিতে নেমে এসেছে। এবং রাজ্য যোজনা বোর্ডের ২০১৬ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ধান রোপণ করা জমির পরিমাণ ১৯৭৪-৭৫ সালে ৮.৮২ লক্ষ হেক্টর থেকে ২০১৫-১৬ সালে ১.৯৬ লক্ষ হেক্টরে এসে ঠেকেছে।
অপেক্ষাকৃত অধিকতর লাভজনক অর্থকরী ফসল চাষের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে ধানের আর্থিক উপযোগিতার দিকটি ক্রমশ ধাক্কা খেয়েছে। রাজ্যের বহু ধান চাষের জমি নির্মাণ শিল্পের প্লটে রূপান্তরিত হয়েছে, এর ফলে ধান চাষে দক্ষ কৃষকেরা কর্মদিবস হারিয়েছেন। চারদিকে অর্থকরী ফসলের রমরমা - ২০১৬ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনু্যায়ী, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে কেরালার মোট কর্ষিত এলাকার শতকরা ৬২ শতাংশ জমিতে রবার, গোলমরিচ, নারকেল, এলাচ, চা এবং কফির মতো অর্থকরী শস্য উৎপাদিত হয়েছে। একই সময়কালে মোট কর্ষিত এলাকার মাত্র ১০.২১ শতাংশ জমিতে চাল, ট্যাপিওকা (কাসাভা মূল থেকে প্রাপ্ত সাগু জাতীয় শস্য) এবং ডাল ইত্যাদি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে।
“কেরালায় অর্থকরী ফসল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ঘিরে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, এক্ষেত্রে ধান একটি অত্যন্ত দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী। একজন কৃষকের জন্য, ধান বাদ দিয়ে অন্যান্য ফসল চাষের পন্থা নেওয়াটাই কাজের হয়ে দাঁড়ায়,” বলে মত পোষণ করেন লরি বেকার সেন্টার ফর হবিট্যাট স্টাডিজের চেয়ারম্যান এবং সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (সিডিএস)-এর প্রাক্তন অধিকর্তা কে.পি. কান্নান, উভয় সংস্থাই থিরুভানান্থাপুরমে অবস্থিত।
‘এই প্রক্রিয়ার কঠিনতম কাজটি ছিল চাষের জন্য এই জমি প্রস্তুত করে তোলা। যাবতীয় আগাছা পরিষ্কারের পর মাটি সংস্কার করা এবং খেতের চারপাশে সেচের জন্য খাল নির্মাণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য কাজ’
“ফলস্বরূপ, চালের বর্তমান উত্পাদন এতটাই অপর্যাপ্ত হয়ে পড়েছে যে, এটি রাজ্যের মোট প্রয়োজনের এক-পঞ্চমাংশও পূরণ করতে পারছে না,” সিডিএস-এর গবেষণা কর্মী কে. কে. ঈশ্বরণ জানাচ্ছেন। ১৯৭২-৭৩ সালে সর্ব্বোচ্চ ১৩.৭৬ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে ২০১৫-১৬ সালে উত্পাদন কমে ৫.৪৯ লক্ষ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যাচ্ছে অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে।
দশ বছর আগে, সরকার - জলাভূমি ও জলসম্পদ রক্ষা করার জন্য রাজ্য জুড়ে চলতে থাকা বিভিন্ন গণ আন্দোলন এবং সমাজ কর্মীদের আন্দোলনে সাড়া দিয়ে ২০০৮ সালের কেরালার ধানি জমি এবং জলাভূমি সংরক্ষণ আইন বলবৎ করে। এই আইন অনুসারে, ধানি জমি এবং জলাভূমি দখল বা রূপান্তর একটি জামিন-অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হয়। ২০১০ সালে সরকার বন্ধ্যা জমি চাষে কৃষকদের উৎসাহ প্রদানের জন্য ‘পতিতজমিমুক্ত পঞ্চায়েত’ তৈরির প্রয়াসটিকে আরও ত্বরান্বিত করে।
“প্রথম বছরে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি হেক্টর জমি বাবদ ৩০,০০০ টাকা ভরতুকি প্রদান করা হয়, এই অর্থের মধ্যে মধ্যে ২৫,০০০ টাকা কৃষককে এবং ৫০০০ টাকা জমির মালিককে ইজারা মূল্য হিসাবে দেওয়া হয়,” জর্জকুট্টি বলেন। প্রধান কাজটি ছিল চাষের জন্য এই জমি প্রস্তুত করে তোলা যা প্রথম বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়, এই সহায়তা “কমে গিয়ে পরের বছরে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫,৮০০ এবং ১,২০০ টাকায়।”
“কোন বিকল্প অর্থকরী ফসল চাষ করে তাঁদের যে উপার্জন হত সেই পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ আপনাকে প্রদান করতেই হবে। পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখার সামাজিক দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্ব বাবদ খরচের ভার – এসব একজন কৃষক একা একা কেন বহন করবেন?” পরিবেশের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ ধান চাষ প্রক্রিয়াটির প্রসঙ্গে কে.পি. কান্নান একথা সংযোজন করেন।
সরকারের এই নীতিটি অন্যায়ভাবে জমি অধিগৃহীত হওয়ার ভয়ের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে, কৃষকদের এবং পতিত জমির মালিকদের একত্রিত করে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলিকে উত্সাহ প্রদান করে। স্থানীয় কৃষি আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে এই কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
“ভূমি সংস্কারের ফলে [ঐতিহাসিক কেরালা ভূমি সংস্কার (সংশোধনী) আইন, ১৯৬৯, যা বর্গাদারদের জমির অধিকার সুনিশ্চিত করে] রাজ্যে জমির ইজারা অবৈধ হয়ে গেছে, কিন্তু [পঞ্চায়েতের মধ্যস্থতার মাধ্যমে] চাষের জন্য ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে মানুষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে,” বলেন কোল্লাদের (পানাচিক্কাদু) পঞ্চায়েত সদস্য শেবিন জেকব, যিনি কোট্টায়ামের এই অঞ্চলে পতিত জমিতে ধান চাষকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। তিনি জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জমির মালিকদের কাছে গিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, “চাষিরা এই জমিতে চাষ করলেও, জমির মালিক আপনিই থাকবেন।”
এই মুহূর্তে, অবশ্য, সাফল্য এসেছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। “আরাকুলাম, ইডুক্কি এবং কায়াল ভূমি [কুট্টানাডের আলাপ্পুঝা ও কোট্টায়ামের বিভিন্ন অংশে ধান জমি অঞ্চলে সমুদ্রতলের নিচে চাষের কাজের জন্য ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইটের মর্যাদায় ভূষিত স্থান] ইত্যাদি নানান স্থানে ধান চাষের এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগ দেখা গেছে – বহু মানুষ এটা অর্জন করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন বলেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে,” ঈশ্বরণ বলেন।
একই ভাবে তা সম্ভব হয়েছে কোল্লাদের জমিতেও - স্থানীয় সরকার, গ্রামীণ সমাজ, কৃষি আধিকারিক এবং কৃষকদের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে। সমগ্র জেলা জুড়ে, ২০১৭-১৮ সালে, কোল্লাদের ২৫০ একর জমিসহ প্রায় ৮৩০ হেক্টর পতিত জমি এখন ধান-জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে, কোট্টায়ামের কৃষি অফিসের মার্চ মাসের অগ্রগতির রিপোর্ট থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে।
“আমরা নভেম্বর [২০১৭] মাসে বীজ বপন করতে শুরু করি এবং ১২০ দিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর আজ আমরা এই অবস্থায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি,” ভাল্লাম (ডিঙি নৌকো) বেয়ে খেতের মধ্যে দিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে যেতে বাবু বলেছিলেন। “যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আমরা [প্রতি একর] জমি থেকে মোটামুটি ২২ কুইন্টাল চাল এবং প্রতি একর জমির ফলন থেকে ২৫,০০০ টাকার মুনাফা করতে পারব।”
তিনি এবং চ্যাঙ্গানাস্সেরি শহরের তাঁর সহকর্মী কৃষকরা জমিতে চাষাবাদের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া মাত্র, তাঁরা সঙ্গে একদল পরিচিত শ্রমিকদের নিয়ে এসেছিলেন। পতিত জমিতে চাষাবাদের সরকারি উদ্যোগ কৃষিক্ষেত্রে কেরালার একটি বড় সমস্যা তথা তার সমাধানের বিষয়ে আলোকপাত করে না – সমস্যাটি হল, চাষের কাজে শ্রমিকের অভাব।
“শ্রমিকের অভাব খুব বড় একটি বড় সমস্যা,” বলেন কোট্টায়ামের মীনাচিল তালুকের কালাথুকাডাভু গ্রামের কৃষক জোস জর্জ; তিনি দশ একর জমিতে অপর এক সহকর্মী কৃষকের সঙ্গে ধান চাষ করছেন। স্থানীয় শ্রমিকদের প্রতিদিনের মজুরি বাবদ দেওয়া হয় দৈনিক ৮৫০ টাকা (মজুরির এই হার আলোচনার সাপেক্ষে জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিবর্তিত হয়); অভিবাসী শ্রমিকরা, যাঁদের বেশিরভাগই আসেন বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে, তাঁরা পান দৈনিক ৬৫০ টাকা। তিনি আরও বলেন, “এছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগ করলে স্থানীয় শ্রমিকদের তরফ থেকে প্রতিরোধের সমস্যাটিও রয়েছে।”
শ্রমিকের চাহিদা মেটানোর জন্য, পঞ্চায়েত বেশিরভাগ সময় কেরালার ভেতর থেকেই এমজিএনরেগা কর্মীদের [মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুরক্ষা আইন] পতিত জমি চাষের কাজে নিয়োগ করে, দৈনিক ২৬০ টাকা মজুরিতে। “এমজিএনরেগা কর্মীরা জমির প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজে কৃষকদের ভীষণভাবে সাহায্য করেন এবং মাঠের চারপাশে ছোট ছোট সেচের খাল নির্মাণ করেন। এর ফলে চাষের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে,” বলেন কোট্টায়ামের কৃষি আধিকারিক, রাসিয়া এ. সালাম। “আগে, পঞ্চায়েত ৩০ দিনের কাজও দিতে ব্যর্থ হচ্ছিল, কিন্তু এখন ধান চাষের এই নতুন উদ্যোগের কারণে কর্মীরা ৫০ থেকে ৬০ দিনের কাজ পাচ্ছেন।”
ধান চাষ বিস্তারের বিষয়ে সরকারি নীতি প্রবর্তিত হওয়ার আগেই এই বিষয়ে কুদুম্বশ্রী গোষ্ঠী ধান চাষের প্রচারে অনেক কাজ করেছে। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া এই গোষ্ঠী বর্তমানে ৪৩ লক্ষ মহিলার মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে (গোষ্ঠীর ওয়েবসাইট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী)। তাঁদের অধিকাংশই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন এবং অনেকেই ধান বোনা এবং ফসল কাটায় দক্ষ কৃষি শ্রমিক। কুদুম্বশ্রী তাঁদের দলবদ্ধ হতে সাহায্য করে। ফলে, সংগঠিতভাবে তাঁরা কৃষক এবং জমির মালিকের কাছে কাজের প্রয়োজনে দরবার করেন। মহিলারা জমিতে নিজেরাই কাজ করেন এবং কদুম্বশ্রী থেকে এই চাষের কাজের জন্য হেক্টর প্রতি ৯,০০০ টাকা অনুদান লাভ করেন। সমগ্র কেরালায় ৮,৩০০ হেক্টর জমিতে এই গোষ্ঠী ধানের চাষ করে, প্রধানত রাজ্যের মধ্যবর্তী অঞ্চলের মালাপ্পুরম, ত্রিসুর, আলাপ্পুঝা এবং কোট্টায়াম জেলায়। ধানের প্রক্রিয়াকরণ তাঁদের হাতেই সম্পন্ন হয় এবং মহিলারা নিজ নিজ অঞ্চলের নামের ব্র্যান্ডে এই ধান বিক্রি করেন, এবং কিছু কিছু খুচরো দোকানের সঙ্গেও তাঁরা ব্যবসা করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। “এর ফলে তাঁদের উপার্জন বাড়ে,” বলেন কুদুম্বশ্রীর কৃষিভিত্তিক জীবিকা বিষয়ের উপদেষ্টা রাহুল কৃষ্ণাণ।
এদিকে, ১৬ই ফেব্রুয়ারি কোট্টায়ামের ভৈকম ব্লকের কাল্লারা গ্রামে ধান কাটার উৎসবে, গ্রামের ৪০ জন কৃষক তথা তাঁদের পরিবারবর্গ, কৃষি আধিকারিক, পঞ্চায়েত সদস্য এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সমবেত হয়ে ১০০ একর পতিত জমি সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় সোনালি ধানি জমিতে রূপান্তরের প্রয়াসটি উদযাপন করেছেন। চারদিক আনন্দে উদ্ভাসিত, ড্রামের শব্দে মুখরিত। কৃষকদের উত্তরীয় এবং উপহার প্রদান করে সম্বর্ধনা জানানো হয়।
এই চল্লিশ কৃষকের মধ্যে আছেন শ্রীধরন আম্বাট্টুমুকিল, মনের আনন্দে তিনি কাটা ফসলের প্রথম গোছাটা তুলে ধরেন; বিগত কয়েক মাসে তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফলে এই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল শস্যের উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কাল্লারার অন্যান্য কৃষকদের মতো, তিনিও এই ফসল সরকার দ্বারা সংগ্রহের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। “তারা [যে সকল বেসরকারি ঠিকাদাররা রাজ্য সরকারের পক্ষে শস্য সংগ্রহ করেন] যদি ১০০ কেজি শস্য সংগ্রহ করে, তাহলে তার মধ্যে ১৭ কেজি শস্যের জন্য অর্থ প্রদান করবে না। গত বছর যদিও তারা মাত্র চার কেজি শস্যের দাম কেটেছিল।” ঠিকাদাররা সব ফসলের ব্যাপারেই এটা করে থাকেন, এমনটা নয় যে শুধু পতিত জমিতে চাষ করা ধানের ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে; এই শস্য সংগ্রহের বিষয়টিকে ঘিরেই কৃষকদের মধ্যে সংঘাত, বিরোধ তৈরি হয়।
কিছু কিছু স্থানে, চাষি এবং কারখানার মালিকদের প্রতিনিধিদের মধ্যে উৎপাদিত ফসলের গুণগত মান নিয়ে মতবিরোধের ফলে ফসল কাটা থেকে শুরু করে ফসল ক্রয়ের পর্বটি বিলম্বিত হয়েছে। ঈশ্বরণের মতে, “কৃষকদের জন্য এটা খুবই লোকসানজনক ব্যাপার।”
এত অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, কৃষকেরা কেমন করে চালিয়ে যাচ্ছেন? “কৃষিকাজ আমাদের জন্য প্রাণাধিক প্রিয়, এ শুধু কাজ নয়, আমাদের কাছে এই কাজ হল এক আবেগ। আমরা হাজার ক্ষতির মধ্যে পড়লেও এই কাজ করেই যাব,” বলেন শ্রীধরন। “এই দেশে কোনওকালেই কৃষকের সমৃদ্ধি হবে না, তবে, আমাদের কেউ ধ্বংসও করতে পারবে না।”
বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর