যশোদা উম্বরে গাইছেন কেমন করে তিনি সাতসকালে জাঁতাকলে শস্য পেষাই করেন যাতে বাচ্চা দের সময় মতো উদরপূর্তি হয়

জাঁতা পেষাইয়ের গানের দল যখন ১৯৯৭ সালে যশোদা উম্বরের সঙ্গে দেখা করতে যায় তখন তিনি এবং তাঁর পরিবার পুণে জেলার মাওয়াল তালুকের রাজমাচি গ্রামে থাকতেন। ভূমিহীন কৃষক সবাই। কিন্তু তাঁরা কৃষিশ্রমিক ছিলেন নাকি ভাগচাষি, সেটা খুব একটা স্পষ্ট ছিল না। তবে হ্যাঁ, তাঁর বাড়িটা বেশ বড়োসড়ো ছিল। যশোদা বলেছিলেন, "আমার শাশুড়িমা আমাকে আর আমার স্বামীকে আমাদের পৈতৃক বাড়ি (তাঁদের একান্নবর্তী পরিবারের ভিটে বাড়িটি) থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই বাড়িটা (এখন যেখানে আমরা বসবাস করি) আমি আর স্বামী দুজন মিলে গতর খেটে বানিয়েছি।"

রাজমাচি গ্রামে একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক দুর্গ থাকার কারণে ৯০এর দশক নাগাদ সেখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে। পর্যটকদের থাকার জন্য গ্রামের মানুষজন ইমারতি ও কাঠের কাজে নিজেদের দক্ষতার জোরে বিশাল বিশাল হলিডে-হোম বানাতে শুরু করেন। যশোদা তাঁর স্বামীর সঙ্গে নিজেদের বাড়ির লাগোয়া পাকাপোক্ত দরজা সমেত একটি শৌচালয় বানান পর্যটকদের সুবিধার্থে। নিজেদের এই শৌচালয় ও প্রকাণ্ড বাড়িখানার জন্য তাঁর স্বাভাবিকভাবেই গর্ববোধ ছিল। তাঁর এক ছেলে আমাদের একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিল।

যশোদার জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন। বাকি তিন ছেলের প্রত্যেকেই তখন শিক্ষার্থী। মেজো ছেলে মুম্বইয়ে একটি কলেজে পড়তো, আর ছোটো দুই ছেলে গ্রামেরই ইস্কুলে পড়াশোনা করছিল।

তখন যশোদার বয়স ৪৬। তাঁর মা থাকতেন মাওয়াল তালুকের দুধিভারে গ্রামে, তিনি মায়ের কাছেই জাঁতা পেষাইয়ের গান শিখেছিলেন। তবে আমরা যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই, যশোদা প্রথমটায় গাইতে রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি বললেন যে তাঁর ভাইঝিকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিষ খাইয়ে খুন করেছে – এবং প্রচলিত লোকাচার অনুযায়ী অশৌচ চলাকালীন মহিলাদের একবছর কোনও গান গাওয়া চলে না।

জাঁতা পেষাইয়ে ব্যস্ত দুই মহিলা

এখানে দুটি অডিও ক্লিপে চারটি করে, অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৮টি ওভি আছে। গানগুলিতে যশোদার সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন সুভদ্রা উম্বরে।

অডিও ১: প্রথম অডিওটিতে যশোদা উম্বরে গাইছেন কেমন করে তিনি সাতসকালে জাঁতাকলে শস্য পেষাই করেন যাতে বাচ্চারা সময়মত প্রাতঃরাশ করতে পারে। তিনি গাইছেন কেমন করে তিনি তাঁর ছেলের 'রানি' – অর্থাৎ নিজের বৌমার ঘুম ভাঙাচ্ছেন।

ওভি ১

কাকভোরে ওই... মোরগ লুকোয়... বৌমা আমার ভাঙে আড়মোড়া তিন।
ঘুমজড়া চোখ... রজসী নোলক... পাই পাই ভাঙি তাই ধানের সাকিন।

বিঃ দ্রঃ পাই (পায়ালি) একটি প্রচলিত মাপকাঠি যা এক কিলোগ্রামের থেকে একটুখানি কম। চার সেরে এক পাই– উল্টোদিকে ১২ পাইয়ে এক মণ আর এক মণ সমান ৩৭ কিলোগ্রাম।

ওভি ২

বলদ বারো, হেঁইশা মারো, পথকে আমার গাঁ,
একঝুড়ি তাই উড়কি আটায় বাঁচবে আমার ছা।

ওভি ৩

একঝুড়ি ধান, সাঁঝনি পরাণ, নিয়তি হে জাঁতাকল...
একঝুড়ি গম ভাঙছে জনম কুলকুলানির ঢল।

ওভি ৪

কুলকুলানির গানের শেষে ধানভাঙানির পাই,
বাদশা রাজার বৌমা আমার, ঝগড়ুটে আমি তাই।

অডিও ২: দ্বিতীয় অডিও ক্লিপটিতে যশোদা ও সুভদ্রা এক অলস যুবতীকে নিয়ে একটি ওভি গাইছেন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে জাঁতা পেষাইয়ের কায়িক পরিশ্রম করতে হবে বলে এই যুবতীটি রেগে আছে। অন্য আরেকটি ওভিতে বলা হচ্ছে যে মা ও মেয়ের একসঙ্গে জাঁতা পেষাইয়ের কাজ করাটাই উপযুক্ত।

ওভি ৫

রাত পোহালো, ওঠরে ও লো, হদ্দ কুঁড়ের ঝি...
রাগিস ক্যানে? গতর জানে হুই ঊষানির টি।

ওভি ৬

একডালি গম করছে হজম, কোন সে রাজার গোঁ?
বাঁধলো গোকুল খুশির দুকূল, ধন্যি আমার পো।

বিঃ দ্রঃ কৃষ্ণের ছোটবেলা কেটেছিল গোকুলে। এখানে গোয়ালা সম্প্রদায়ের সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকত।

ওভি ৭

সাতসকালে চরকি চলে রাতবিরেতের ধানে,
মায়ে-ঝিয়ে তাই বাজরা গুঁড়ায় সাতমহলার শানে।

বিঃ দ্রঃ মূল মারাঠি ওভিতে “মহলা”-র স্থানে “খণ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল৷ খণ বলতে দেশজ স্থাপত্যে পরিমাপের একটি নির্দিষ্ট একককে বোঝায়। আদতে খণ হল দুটি কাঠের স্তম্ভের মাঝখানে সাধারণত ৪X৫ বা ১০X১২ ফুট দূরত্ব। এই পরিমাপ অনুযায়ী, সাত খণের একটি বাড়ি আকারে বিরাট হবে। ঠিক যেমন পেল্লায় হবে সাতমহলা বাড়ি৷

ওভি ৮

শুধায় সখী, বল্ তো দেখি আবাদুলা বাজে কোথা?
বিটির সাথে আম্মি খাটে, একতারে দোঁহে গাঁথা।

বিঃ দ্রঃ প্রভাতের প্রাক্কাল মুখরিত হয় চারণ ও ভিক্ষু সন্ন্যাসীর বাঁশির সুরে। 'আবাদুলা' শব্দটি এখানে সেই বাঁশির শব্দকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে ('আব্দুল' নামটির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই)। এটি মারাঠি গ্রামীণ ছড়া 'আবাদুলা-গাবাদুলা'-তে অন্ত্যমিলের নিরিখেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে – বাতাসে ধ্বনিত যে সুর গায়িকা শুনতে পাচ্ছেন এটি তার-ই ইঙ্গিতবাহী।
PHOTO • Bernard Bel

পরিবেশিকা/গায়িকা: যশোদা উম্বরে

গ্রাম: রাজমাচি

তালুক: মাওয়াল

জেলা: পুণে

লিঙ্গ: নারী

জাতি: মহাদেব কোলি

বয়স: ৪৫/৪৬

সন্তান: ৪ ছেলে

পেশা: ভূমিহীন কৃষক

তারিখ: মার্চ ১৫-১৬, ১৯৯৭

পোস্টার: শ্রেয়া কাত্যায়নী এবং সিঞ্চিতা মাজি

হেমা রাইরকর ও গি পইটভাঁর হাতে তৈরি জাঁতা পেষাইয়ের গানের আদি প্রকল্পটির সম্বন্ধে পড়ুন।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

PARI GSP Team

پاری ’چکی کے گانے کا پروجیکٹ‘ کی ٹیم: آشا اوگالے (ترجمہ)؛ برنارڈ بیل (ڈجیٹائزیشن، ڈیٹا بیس ڈیزائن، ڈیولپمنٹ اور مینٹیننس)؛ جتیندر میڈ (ٹرانس کرپشن، ترجمہ میں تعاون)؛ نمیتا وائکر (پروجیکٹ لیڈ اور کیوریشن)؛ رجنی کھلدکر (ڈیٹا انٹری)

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز PARI GSP Team
Editor and Series Editor : Sharmila Joshi

شرمیلا جوشی پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا کی سابق ایڈیٹوریل چیف ہیں، ساتھ ہی وہ ایک قلم کار، محقق اور عارضی ٹیچر بھی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز شرمیلا جوشی
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کے کانٹینٹ مینیجر ہیں۔ انہوں نے کولکاتا کی جادوپور یونیورسٹی سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک کثیر لسانی شاعر، ترجمہ نگار، فن کے ناقد اور سماجی کارکن ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra