জানুয়ারি মাস পড়তেই তামিলনাড়ুর হোসুর তালুকের মাঠগুলো ভরে উঠেছে শুকোনোর জন্য রাখা সংগৃহীত ফসলে। রাগি চাষিরা জানাচ্ছেন তাঁরা প্রায় এক সপ্তাহ শস্য মাঠে ফেলে রাখেন রোদে শুকানোর জন্য, যাতে সবুজ কাণ্ডের যাবতীয় পুষ্টি এসে জমা হয় রাগি দানাগুলোয়।

প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে ছোটো জরাজীর্ণ একটা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে কয়েকজন। তাঁদের মধ্যেই আছেন বছর বাহান্নর নারায়ণাপ্পা– পরনে নীল খাদি ধুতি, রোদ থেকে আড়াল পাওয়ার জন্য মাথায় পাতলা গামছা। তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরি জেলার পালাভানাপাল্লি জেলার বাসিন্দা নারায়ণাপ্পা দেড় একর জমি ইজারা নিয়েছেন। এই জমিতে মূলত তিনি বর্ষার পর রাগি শস্য আর হুরালি কালু বা কুলত্থ কলাইয়ের চাষ করেন। তাঁর বাড়ি থেকে এক ঘণ্টার হাঁটাপথ ব্যস্ত বাণিজ্য কেন্দ্র হোসুর।

*****

“আমার পরিবারের চিরকেলে পেশা এই চাষবাস। ছোটো থেকেই তাই এই কাজ ধরতে হয়েছিল আমায়। রাগি চাষের একটা সুবিধে হচ্ছে এ বৃষ্টির জলের ফসল, তাই বাইরে থেকে সেচের জল লাগে না। আর, পোকামাকড়ও ধরে না রাগিতে। এপ্রিল আর মে মাসের মধ্যে বীজ রুয়ে দিই, তাতে ফলন বেশি হয়। বোনার পাঁচ মাস পর ফসল তোলা যায়। ঝাড়াই এর কাজ হাতেই করা হয়। আমি নিজে একশো কিলোর বস্তার হিসেবে তেরো থেকে পনেরো বস্তা ফসল তুলতে পারি। তার মধ্যে খানিক রাখি নিজেদের জন্য, বাকিটা বিক্রি করে দিই তিরিশ টাকা কিলো দরে। ওতে যা পাই তার একশোয় আশি ভাগ টাকা আবার লাগাই পরের চাষের জন্য।

PHOTO • TVS Academy Hosur

নিজের জমি থেকে তোলা রাগি নিয়ে নারায়ণাপ্পা, তামিলনাড়ুর হোসুর তালুকের পালাভানাপল্লি গ্রামে

ফসল বাড়ার মরসুমে অনেককিছুর সঙ্গেই যুঝতে হয় আমাদের। ময়ূরের ঝাঁক আর বাঁদরের দল এসে ফসল নষ্ট করে। সাবধান না হলে রাতারাতি পুরো জমির শস্যই কাবার হয়ে যেতে পারে। বর্ষা, ঠান্ডা আবহাওয়া আর জাড় বাতাসের দয়ায় তো আমাদের বেঁচে থাকা, অসময়ের বৃষ্টি মাঝেমাঝেই ছিনিয়ে নেয় সবার এত খাটনির ফল।

পুরো সময় চাষবাসের কাজ করে যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে কি আর জীবন চলে! ৩৫,০০০ থেকে ৩৮,০০০ টাকা টাকা খরচ করে আয় হয় মোটে ৪৫,০০০ টাকা। এক মরসুমে সবমিলে হাজার দশেক মতো পাই। দিন গুজরান হয় না সেই দিয়ে, তাই টাকা কর্জ করি শেষমেশ।

পরবর্তী চাষের জমি তৈরি, জলকর দেওয়া আর ধারদেনা শোধ করতেই তো আমার সব টাকা বেরিয়ে যায়।

পরের পাঁচ মাসে সংসার চালানোর জন্য পড়ে থাকে মোটে হাজার পাঁচেক টাকা। বউ দিনমজুরির কাজ করে, আর ছেলে আমার সঙ্গে চাষের কাজে হাত লাগায়। পয়সার অভাবে আর পড়াতে পারিনি ছেলেটাকে। ফসল তোলা আর আগাছা নিড়নোর জন্য গ্রাম থেকে মজুর লাগাই, তাদেরকেও দিনে চারশো টাকা করে মজুরি দিতে হয়।

PHOTO • TVS Academy Hosur

শুকনো রাখার জন্য খড় দিয়ে রাগিগুলো ঢেকে দিচ্ছেন নারায়ণাপ্পা

দুটো দেশি গরুর জন্যে খানিকটা টাকা লাগিয়েছি আমি। দিনে প্রায় দশ লিটার করে দুধ দেয় গরুগুলো। তাই খাবারদাবার আর দেখভালের খরচার পরে দুধ বেচে হাজার দুয়েক টাকা পাই।

সব মিলিয়ে আয় হয় সামান্যই। সংসারের সাধারণ চাহিদাটুকুও মেতে না তাতে। গত কুড়ি বছর ধরে পঞ্চায়েতের কাছে সাহায্য চাইছি। আট-আটজন জন নেতা বদলে গেল, আমাদের জীবন আর বদলালো না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তার পরিমাণও বাড়ায় না সরকার।

তবু, এত কষ্ট সত্ত্বেও খেতঘেরা খোলা জায়গাটায় কাজ করতে ভালো লাগে। পাড়াপড়শিদের সঙ্গেও দিন কাটে বেশ।

এই প্রতিবেদনটির রচয়িতা তামিলনাড়ুর হোসুরের টিভিএস অ্যাকাডেমির কয়েকজন শিক্ষার্থী – সাহানা, প্রণব অক্ষয়, দিব্যা এবং ঊষা এম. আর.। পারি’র সঙ্গে একটি কর্মসূচিতে যোগদান করেছিলেন তাঁরা।

অনুবাদ: রম্যাণি ব্যানার্জী

Sahana
Pranav Akshay
Dhivya
Usha M.R.
Editor : PARI Education Team

ଆମେ ଗ୍ରାମୀଣ ଭାରତ ଏବଂ ବଞ୍ଚିତ ଲୋକମାନଙ୍କ କାହାଣୀକୁ ମୁଖ୍ୟସ୍ରୋତର ଶିକ୍ଷା ପାଠ୍ୟକ୍ରମ ମଧ୍ୟକୁ ଆଣିଥାଉ। ନିଜ ଆଖପାଖର ପ୍ରସଙ୍ଗ ଗୁଡ଼ିକ ଉପରେ ରିପୋର୍ଟ ପ୍ରସ୍ତୁତ କରିବା ଏବଂ ଲେଖିବାକୁ ଚାହୁଁଥିବା ଯୁବପିଢ଼ିଙ୍କ ସହିତ ମଧ୍ୟ ଆମେ କାର୍ଯ୍ୟ କରିଥାଉ, ସେମାନଙ୍କୁ ସାମ୍ବାଦିକତା ଶୈଳୀରେ ଲେଖିବା ପାଇଁ ମାର୍ଗଦର୍ଶନ କରୁ ଓ ତାଲିମ ଦେଇଥାଉ। ଛୋଟ ଛୋଟ ପାଠ୍ୟକ୍ରମ, ଅଧିବେଶନ ଏବଂ କର୍ମଶାଳା ମାଧ୍ୟମରେ ଆମେ ଏହା କରିଥାଉ। ଏଥିସହିତ ସାଧାରଣ ଲୋକଙ୍କ ଦୈନନ୍ଦିନ ଜୀବନକୁ ଭଲ ଭାବେ ବୁଝିବା ଲାଗି ଛାତ୍ରଛାତ୍ରୀଙ୍କୁ ସକ୍ଷମ କରିବା ନିମନ୍ତେ ଆମେ ପାଠ୍ୟଖସଡ଼ା ଡିଜାଇନ୍ କରିଥାଉ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ PARI Education Team
Translator : Ramyani Banerjee

Ramyani Banerjee is a first-year postgraduate student in the department of Comparative Literature at Jadavpur University, Kolkata. Her areas of interest include Gender and Women's Studies, Partition Studies, oral narratives, folk traditions, and culture and literature of the marginalised communities .

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Ramyani Banerjee