দক্ষিণ কন্নড় জেলার বেলতঙ্গড়ি তালুক, এবড়ো-খেবড়ো পাহাড়িয়া এ দেশের বাতাসে কান পাতলে আর আগের মতো গো-ঘণ্টার টাঁই-টাঁই-টাঁই শোনা যায় না। হুকরাপ্পা বলেন, "আজকাল আর কেউই এ ধরনের ঘণ্টা বানায় না।" তবে সচরাচর যে ধরনের গো-ঘণ্টা দেখতে পাওয়া যায়, উনি কিন্তু মোটেই সেগুলোর কথা বলছেন না। শিবাজে গ্রামের মানুষ ইনি, এবং এখানে যে ঘণ্টাগুলি গরুর গলায় বাঁধা থাকে, সেগুলি ধাতব নয়, বরং বাঁশ কেটে হাতে বানানো। ৭০ ছুঁই ছুঁই হুকরাপ্পা পেশায় সুপারি-চাষি, এরই পাশাপাশি তিনি আজ বহুযুগ ধরে এই অনন্য বস্তুটি বানিয়ে চলেছেন।

তাঁর কথায়, "আমি তো গরু চরাতাম আগে, গরুগুলো মাঝেসাঝেই বেপাত্তা হয়ে যেত, তাই বাঁশ কেটে গো-ঘণ্টা বানানোর ফন্দিটা মাথায় এল।" পথ ভুলে কোনও গরু যদি পাহাড়ে উঠে যায় বা অন্য লোকের খেতে ঢুকে পড়ে, তাহলে এই ঘণ্টার শব্দে তাদের খুঁজে পাওয়াটা সহজ হয়ে যায়। গাঁয়ের এক প্রবীণ ব্যক্তি এ শিল্পে তাঁকে হাতেখড়ি দিতে রাজি হন, প্রথমে খানকতক ঘণ্টা বানিয়ে হাত পাকান হুকরাপ্পা। সময়ের সঙ্গে বাড়ে দক্ষতা, আজ তিনি বিভিন্ন আয়তনের গো-ঘণ্টা বানাতে ওস্তাদ। হাতের নাগালে বাঁশঝাড় না থাকলে ব্যাপারটা হয়ত এতটাও সহজ হতো না ঠিকই, তবে তাঁর গ্রামটি কুদরেমুখ জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত অরণ্যমাঝে স্থিত, এবং এটি কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অংশ হওয়ায় তিন-তিনটি প্রজাতির বাঁশগাছ মেলে এখানে।

হুকরাপ্পার মাতৃভাষা তুলু ভাষায় এ জাতীয় বাঁশ-নির্মিত গো-ঘণ্টার নাম 'বোমকা', যেটা কিনা কন্নড় ভাষায় 'মোন্টে'। শিবাজের সাংস্কৃতিক জীবনে এর স্থান অনুপম, এ গাঁয়ের দুর্গা পরমেশ্বরী মন্দিরে দেবীমূর্তির পায়ে অর্ঘ্যরূপে দান করা হয় মোন্টে। এমনকি মন্দির চত্বরের নামটাই তো 'মোন্টেতড়কা'। স্বপ্নপূরণের আর্তির পাশাপাশি নিজ নিজ গরুছাগলের সুরক্ষার কথাও প্রার্থনার দ্বারা জানান ভক্তের দল। এঁদের অনেকের থেকেই গো-ঘণ্টার বরাত পান হুকরাপ্পা। তাঁর জবানে: "লোকে এটা হরকের [মানসিক অর্ঘ্য] জন্য কেনে। ধরুন [উদাহরণস্বরূপ] কোনও একটা গরুর বাচ্চা হচ্ছে না, তখন দেবীর কাছে এগুলো চড়ানো হয়। একেকটা ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা দেয় আমায়, বড়োগুলোর দাম তো ৭০ অবধি ওঠে।"

ভিডিও দেখুন: শিবাজে গ্রামের গো-ঘণ্টা কারিগর

কৃষিকাজ ও হস্তশিল্পের দুনিয়ায় পা রাখার আগে অবধি পশুপালন করেই পেট চালাতেন হুকরাপ্পা। তাঁর বড়োদাদার সঙ্গে গাঁয়ের এক গেরস্থবাড়ির গরু চরাতে যেতেন তিনি। "নিজের বলতে একচিলতে জমিও ছিল না আমাদের। বাড়িতে মোট ১০টি প্রাণী, নুন আনতে পান্তা ফুরোত। মজুরির কাজ করতেন আমার বাবা, রুজিরুটির তাগিদে বেরোত দিদিরাও," জানালেন তিনি। তারপর, ভাগচাষের জন্য একদিন তাঁরা একটুকরো ফাঁকা জমি পান স্থানীয় এক জোতদারের থেকে। শুরু হয় আরিকা নাট বা সুপারির চাষ। হুকরাপ্পার কথায়: "যেটুকু ফসল হত, ভাগস্বরূপ তার খানিকটা পেতেন বাবা। ১০টা বছর এভাবেই কাটল। তারপর ইন্দিরা গান্ধী যখন ভূমি সংস্কার করলেন [৭০রের দশকে], জমিটুকুর মালিকানা পেলাম।"

তবে গো-ঘণ্টা থেকে যে বিশাল পরিমাণে রোজগার করেন, তা কিন্তু নয়। "এই এলাকায় এসব জিনিস আর কেউ বানাতে পারে না। আমার ছেলেমেয়েদের একজনও এটা শিখল না," বলছিলেন তিনি। উপরন্তু বাঁশ, যেটা কিনা এককালে বেশ সহজলভ্য একটি বনজ বস্তু ছিল, সেটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ। হুকরাপ্পার জবানে: "এখন তো ৭-৮ মাইল [১১-১৩ কিলোমিটার] না হাঁটলে বাঁশ-টাশ কিছু পাওয়াই যায় না। তবে ওখানেও আর বছরকয়েক পর এসব মিলবে না।"

তবে হুকরাপ্পার দুটি হাতের জোরে আজও শিবাজে গ্রামে জিন্দা আছে বাঁশনির্মিত গো-ঘণ্টা। নাছোড়বান্দা এই ঘাস-জাতীয় উদ্ভিদটি দিব্যি বশ মানে তাঁর দক্ষতার কাছে, কেটেকুটে ছাঁটাই করে মন-পসন্দ গড়ন নেয় – দমকে দমকে তার সুর খেলে বেলতঙ্গড়ির জঙ্গলে।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Reporter : Vittala Malekudiya

وٹھل مالیکوڑیا ایک صحافی ہیں اور سال ۲۰۱۷ کے پاری فیلو ہیں۔ دکشن کنڑ ضلع کے بیلتانگڑی تعلقہ کے کُدرے مُکھ نیشنل پارک میں واقع کُتلور گاؤں کے رہنے والے وٹھل، مالیکوڑیا برادری سے تعلق رکھتے ہیں، جو جنگل میں رہنے والا قبیلہ ہے۔ انہوں نے منگلورو یونیورسٹی سے جرنلزم اور ماس کمیونی کیشن میں ایم اے کیا ہے، اور فی الحال کنڑ اخبار ’پرجا وانی‘ کے بنگلورو دفتر میں کام کرتے ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Vittala Malekudiya
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر نے جادوپور یونیورسٹی، کولکاتا سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک شاعر، ناقد اور مصنف، سماجی کارکن ہیں اور پاری کے لیے بطور مترجم کام کرتے ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra