তেলেঙ্গানা আর অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য উড়িষ্যা আর ছত্তিসগড়ের তরুণ শ্রমিকরা জমি থেকে লংকা তোলার কাজ করতে আসে। তারা মজুরি বাবদ টাকা উপার্জন করতে আসে না, আসে পরিবারের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় খোরাকি লংকা সংগ্রহ করতে। রান্নায় ব্যবহৃত এই ঝাল উপাদানটি সংগ্রহের তাগিদে বহু ছোটো ছেলেমেয়ে স্কুলের পড়াশোনা ফেলে রেখে শ্রমিক দলগুলির সঙ্গে লংকা তোলার কাজে যোগ দেয়। নিত্যব্যবহার্য অত্যাবশ্যক এই উপকরণটা সংগ্রহ করে ঘরে নিয়ে আসার সুযোগ বছরে এই একবারই আসে।

শিশুরা পরিবারে প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের তুলনায় লংকা অনেক কম খায়, আর বড়োদের জন্য এটি আহারের আবশ্যিক অঙ্গ। অথচ শিশুরাই সারাবছরের লংকার জোগানের কাজে সবার আগে থাকে - শ্রমিকদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক শিশু। পরের বছর আবার ফসল ওঠা পর্যন্ত যথেষ্ট মরিচ শ্রম দিয়ে “উপার্জন” করে। ১২০ টাকার দৈনিক মজুরির পরিবর্তে সমমূল্যের লংকা নিতে তারা অধিক উৎসাহী। অনেক পরিবার আধ কুইন্টাল, এমনকি এক কুইন্টাল লংকাও সংগ্রহ করে থাকে, এই লংকা সংগ্রহের পরিমাণ নির্ভর করে কে কতটা কাজ করতে পেরেছে তার উপর। ১০০ টাকা কিলো দরে এক কুইন্টাল লংকার দাম দাঁড়ায় ১০,০০০ টাকা।

উপার্জনের এই বন্দোবস্তটা মন্দ নয়, পরিবারগুলোর জন্যও তা বেশ সুবিধেজনক। সারা বছরে পরিবার পিছু  ১২-২০ কেজি লংকা দরকার হয়। অর্থাৎ বাকিটা বাজারে বিক্রি করে দিলে অতিরিক্ত কিছু টাকা আয় হয়। আর নিজের ঘরেও সারাবছর ব্যবহার করার জন্য খেত থেকে তোলা অতি উত্তম প্রজাতির একেবারে টাটকা লংকাটাও মজুত থাকে।

উড়িষ্যার মালকানগিরি জেলার গুতুমুডা গ্রামের উমাশংকর পোদিয়ামি বলছেন “আমাদের গ্রাম থেকে আমরা কুড়িজন এসেছি, তিন সপ্তাহ এখানে থাকব। এই দলের সকলেই মজুরি বাবদ টাকার বদলে লংকা নিতে চায়।”

PHOTO • Purusottam Thakur

মালকানগিরি জেলা থেকে এসেছেন উমাশংকর পরিবারের জন্য লংকা মজুত করে নিয়ে যেতে

তেলেঙ্গানা আর অন্ধ্রপ্রদেশের রাস্তার দু ধারে সবুজ লংকা খেতের গায়ে টকটকে লাল রঙের লংকার মস্ত বড়ো বড়ো ঢিপি। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই সময়ে লংকার ছড়াছড়ি। সংলগ্ন ছত্তিসগড় আর উড়িষ্যার আদিবাসী সম্প্রদায়ের শ্রমিকরাই প্রধানত লংকা তোলা, বাছা, বস্তায় ভরা, থরে থরে সাজিয়ে রাখা, গাড়িতে বোঝাই করার মতো যাবতীয় কাজগুলো করে থাকেন। পরবর্তীকালে এই লংকা বাজারে খুচরো বিক্রি তথা রপ্তানি হয়।

অতি উৎসাহী শিশুরা, যারা কিনা এই শ্রমিক দলের প্রায় অর্ধেক – লংকার ঢিপির চতুর্দিকে দৌড়াদৌড়ি করে লংকা বাছাই করে পাটের বস্তায় সেগুলোকে বন্দি করে। শিশুরা উৎসাহী বটে, কিন্তু তাদের পরিবারের চরম দারিদ্র্যই তাদের এই লংকা-খামারের কাজে টেনে এনেছে। অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবার থেকে এসেছে। নিজেদের এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাবের দরুণ তারা নিজ নিজ রাজ্যের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের সর্বাধিক লংকা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে উপস্থিত হয়।

PHOTO • Purusottam Thakur

ছত্তিসগড় এবং উড়িষ্যার আদিবাসী শ্রমিকেরা লংকা সংগ্রহের কাজ করছেন

তাছাড়া, পরিবারগুলিতে সকালের জলখাবার থেকে শুরু করে প্রতিটি আহারেই একমাত্র লংকাই নিয়মিত ব্যবহৃত উপাদান। রকমারি খাদ্যের জোগান জীবনযাত্রায় না থাকা সত্ত্বেও লংকাথেকে প্রাপ্ত খাদ্যগুণ এবং পুষ্টি তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করে। লংকা তাদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানেও লাগে বলে স্বাভাবিকভাবেই এর বিপুল চাহিদা।

এদের একজন ১৪ বছরের ভেট্টি মোয়ে - সে ছত্তিসগড়ের সীমা পেরিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের লংকা খেতে কাজ করতে এসেছে। সুকমা জেলার বাদেসিটি গ্রামের বাসিন্দা ভেট্টি মোয়ের বাবা দুই বছর আগে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সে স্কুল ছেড়ে সংসারের হাল ধরার জন্য পরিবারের এক চিলতে জমিতে চাষ করতে শুরু করে। কখনও কখনও সে নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে কাজ নেয়। নিজের জমিতে ফসল কাটার কাজ শেষ করে সে এখানে লংকা সংগ্রহ করতে এসেছিল।

মোয়ে তার গ্রামের আরও জনা পঁয়ত্রিশ শ্রমিকের সঙ্গে এসেছে। প্রত্যেকেই জানাচ্ছে যে টাকার বদলে তারা লংকাই নিতে চায় মজুরি বাবদ। মোয়ের কথায়, “লংকা তোলার দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা, কিন্তু মজুরি যদি টাকার বদলে লংকায় নিই, তাহলে প্রতি বারো ভাগ লংকার থেকে এক ভাগ আমরা পাই। এই মজুরিটাই আমাদের বেশি পছন্দ।”

মরশুমের শেষে রাজ্যগুলির সীমান্তবর্তী এলাকার যুবা শ্রমিকেরা সারা বছরের খোরাকি লংকা নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে আসে। লংকার গুণে তাদের সাদামাটা ভোজন একটু স্বাদু হয়ে ওঠে। ঘরে লংকা তোলার সময় হলে স্কুলের লেখাপড়া এবং অন্যান্য কাজকর্ম মাথায় ওঠে।

PHOTO • Purusottam Thakur

সারা বছরের খোরাকির জন্য বস্তা বোঝাই লংকা বাড়ি নিয়ে গিয়ে মজুত করা হবে

বাংলা অনুবাদ : স্মিতা খাটোর

Purusottam Thakur

پرشوتم ٹھاکر ۲۰۱۵ کے پاری فیلو ہیں۔ وہ ایک صحافی اور دستاویزی فلم ساز ہیں۔ فی الحال، وہ عظیم پریم جی فاؤنڈیشن کے ساتھ کام کر رہے ہیں اور سماجی تبدیلی پر اسٹوری لکھتے ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز پرشوتم ٹھاکر
Translator : Smita Khator

اسمِتا کھٹور، پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کی چیف ٹرانسلیشنز ایڈیٹر ہیں۔ ترجمہ، زبان اور آرکائیوز ان کے کام کرنے کے شعبے رہے ہیں۔ وہ خواتین کے مسائل اور محنت و مزدوری سے متعلق امور پر لکھتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز اسمیتا کھٹور