ফ্যালফ্যালে চোখে নিজের বাড়ির ভাঙা দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে ছিলেন দেবাশিস মণ্ডল। ৩৫ বছর আগে যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন আজ তার অবশিষ্ট বলতে পড়ে আছে ভাঙা ইট, সিমেন্টের টুকরো আর ছিন্নভিন্ন ছাদ।

উত্তর কলকাতার টালা ব্রিজের নিচে যে কলোনিতে তিনি থাকতেন, যা ছিল প্রায় ৬০টি পরিবারের ঠিকানা, নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সেই কলোনি। আঞ্চলিক পুরসভার আধিকারিক এবং পাবলিক ওয়ার্ক্‌স বিভাগের (পিডাব্লিউডি) কিছু কর্মী সঙ্গে পুলিশ নিয়ে সেদিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বস্তিতে পৌঁছান। ভাঙার কাজ করবেন এমন কয়েকজন ঠিকে শ্রমিককেও সঙ্গে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং দু’দিন পরে সিমেন্টের কিছু বাড়ি ভাঙার জন্য আনা হয়েছিল বুলডোজারও। বস্তিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে লেগেছিল মোটে এক সপ্তাহ। দুটি বাড়ি এখনও অর্ধেক ভাঙা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এখনও (ডিসেম্বর মাস) দিনমজুররা জমি সমান করার কাজ করে চলেছেন, পরিষ্কার করে চলেছেন বস্তির ভগ্নাবশেষ।

টালা ব্রিজের ঠিকানা বি টি রোডের নজরুল পল্লি লেন। এই জমির মালিকানা পাবলিক ওয়ার্ক্‌স বিভাগের। এখানকার বাসিন্দাদের মতে এই বস্তির বয়স সত্তর বছরেরও বেশি।

“ঘটনাটা ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত,” জানালেন দেবাশিস, অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে যিনি মাসে ৯০০০ টাকা রোজগার করেন। স্থানীয় মহাজন এবং বন্ধুদের থেকে আন্দাজ দেড় লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন দেবাশিস। ভেবেছিলেন তাঁর বাবা যে কাঁচা ঘরে জন্মেছিলেন তার জায়গায় পাকা ঘর তুলবেন। বহু দশক আগে তাঁর ঠাকুরদা-ঠাকুমা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবনের সন্দেশখালি ব্লক টু-এর দাউদপুর গ্রাম থেকে কাজের খোঁজে কলকাতা এসেছিলেন।

দেবাশিস যে পাকা ঘরখানি তুলেছিলেন, সেটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। থেকে গেছে চড়া সুদে নেওয়া ধারের অনেকখানি।

টালা কলোনির বাসিন্দাদের বিপদের শুরু সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখ। সেদিন পিডাব্লুডি এবং পুরসভার আধিকারিকরা মৌখিকভাবে জানান যে ব্রিজ সারানো হবে। বাসিন্দাদের জানানো হয় যে তাঁদের অল্পবিস্তর কিছু জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র গিয়ে থাকতে হবে, ব্রিজ সারানোর কাজ শেষ হয়ে গেলে তাঁরা আবার ফিরে আসতে পারবেন। পরের দিন, ২৫ তারিখ সন্ধেবেলা ৬০টি পরিবারকে নিকটবর্তী দুটি অস্থায়ী ট্রান্সিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় – একটি রেলের জমিতে, অন্যটি একটি টালা ক্যানালের কাছে খাল-পাড়ের রাজ্য সেচ দপ্তরের জমিতে।

PHOTO • Smita Khator

ভগ্নদশা : ভেঙে দেওয়া টালা ব্রিজের নিচের বস্তি এবং আর নিজের গুঁড়িয়ে যাওয়া ভিটের সামনে দেবাশিস মণ্ডল (ওপরে, ডানদিকে)। এই বাড়ি বানানোর জন্য তিনি তিল তিল করে সঞ্চয় করেছিলেন, টাকা ধারও নিয়েছিলেন

টালা বস্তির এক বর্ধিত অংশে, সরু রাস্তার উল্টো দিকে, পুনর্বাসনের অপেক্ষায় থেকে যায় আন্দাজ ১০টি পরিবার। এই দশটি পরিবারের মধ্যে রয়েছে পারুল করনের পরিবারও। এখন সত্তর বছর বয়স, আগে গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ব্রিজের দিকে আঙুল তুলে ইশারা করে তিনি বললেন, “এটা প্রথমে কাঠের ব্রিজ ছিল। বহু বছর আগে একটা দো-তলা বাস ব্রিজ থেকে পড়ে যায়। যখন কাঠের ব্রিজ ভেঙে কংক্রিটের ব্রিজ হল, তখন কিন্তু কাউকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি।” পারুল স্বামীহারা। ডায়েবিটিস রোগে ভুগছেন। তাঁর মেয়ে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান।

পারুলের পরিবারও আন্দাজ ৫০ বছর আগে কলকাতা এসেছিল। তাঁর যত দূর মনে পড়ে, তাঁরা এসেছিলেন দাউদপুর গ্রাম থেকে। তাঁর কথায়, “সুন্দরবনে কাদা, জল, সাপ ব্যাঙ নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। আমরা যখন গ্রাম থেকে এলাম, তখন এই জায়গাটা ঝোপঝাড়ে ভর্তি, গুন্ডা-বদমাইশদের আখড়া ছিল। বাবুদের বাড়ি কাজ সেরে দুপুরের মধ্যেই আমাদের ঘরে ফিরতে হত।”

পারুলের পড়শিদের যে ট্রান্সিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলি লম্বা বাঁশের ওপর কালো ত্রিপল খাটিয়ে তৈরি করে দিয়েছে পৌরসভা। অনেকগুলি খুপরিতে ভাগ করা হয়েছে – একেকটি খুপরির মাপ ১০০ বর্গ ফুট। বিকেল পাঁচটা থেকে সকাল পাঁচটা অবধি বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে। কালো ত্রিপলের কারণে দিনের বেলাতেও ঘরে আঁধার ঘনিয়ে থাকে। রেলের জমিটা নিচু। নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ সাইক্লোন বুলবুল-এর কারণে এই জমি জলে ডুবে যায়।

দশ বছরের শ্রেয়া মণ্ডল নিকটবর্তী সরকারি ইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। সে জানাচ্ছে, “যেদিন ঝড় এল, সেদিন এই গোটা জায়গাটা জল থইথই করছিল।” আমি যখন তাদের ক্যাম্পে যাই, তখন শ্রেয়া বস্তির অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে রেলের চত্বরের পাশের মাঠে খেলা করছিল। “আমাদের ঘরের ভেতর হাঁটু জল জমে গেছিল। খুব কষ্টে আমরা বইগুলো বাঁচাতে পেরেছি। আমাদের খেলনা, লাফ-দড়ি, পুতুল আরও কতকিছু বস্তি ভাঙার সময় নষ্ট হয়ে গেছিল...”

PHOTO • Smita Khator

ওপরে বাঁদিকে: পারুল করন, পারুল মণ্ডল (মাঝখানে) এবং তাঁর বৌদি। তাঁরা বলছেন যে ৫০ বছর আগে তাঁরা এই ব্রিজের নিচে বসতি স্থাপন করেন। ওপরে ডানদিকে: পারুল করন ও তাঁর মেয়ে – তাঁরা এখনও এখান থেকে যাননি। তাঁরা যে এখানকার বৈধ বাসিন্দা, তার প্রমাণস্বরূপ ইলেকট্রিকের বিল দেখালেন। নিচে: অস্থায়ী ‘ট্রান্সিট ক্যাম্প’ – (বাঁদিকে) রেলের জমিতে, আর (ডানদিকে) চিৎপুর ক্যানালের পাশে

দুই ক্যাম্পের বাসিন্দারা এখনও ব্রিজ বস্তিতে বানানো বাথরুমগুলো (সেগুলো এখনো অক্ষত আছে) ব্যবহার করেন। কিন্তু যাঁরা ক্যানালের পাশের ক্যাম্পে থাকেন, টালা ব্রিজ থেকে বেশ কিছুটা দূরে, তাঁরা ওখানকার সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করতে বাধ্য হন, সেটিও আবার রাত আটটা নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তাঁদের পুরনো আস্তানা ভাঙা বস্তি অবধি হেঁটে আসতে হয়। মহিলাদের অভিযোগ – রাতে হেঁটে আসাটা মোটেই নিরাপদ নয়।

ক্যানাল সংলগ্ন ক্যাম্পে আমার সঙ্গে দেখা হল নীলম মেহতার। বয়স ৩২ বছর। তাঁর স্বামী আদতে বিহারের জামুই জেলার মানুষ। তিনি রাস্তায় ছাতু বিক্রি করেন। নীলম পেশায় গৃহশ্রমিক। “কোথায় যাব আমরা?” জিজ্ঞেস করেন তিনি। আমরা কোনোমতে বেঁচে আছি। এতবছর ধরে এভাবেই তো বেঁচে আছি। আমি চাই আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্তত অন্যরকম হোক, চাই না ও লোকের বাড়িতে কাজ করুক। আমার ছেলেও পড়াশোনা করছে। বলুন, এই অবস্থায় আমরা বাঁচব কী করে?”

নীলম জানালেন যে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ক্যানালের কাছে একটি শৌচালয় বানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে এবং তাঁর মতো অন্যান্য ভুক্তভোগীদের সাধারণ শৌচালয় ব্যবহার করার জন্য প্রত্যেক বার দু’টাকা করে দিতে হচ্ছে। “বাথরুমের জন্য পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের কোথা থেকে আসবে? মহিলারা আর ছোটো ছোটো মেয়েরা রাতে কোথায় যাবে? কিছু হয়ে গেলে দায়িত্ব কে নেবে?” প্রশ্ন নীলমের।

তাঁর পঞ্চদশী কন্যা নেহা ট্র্যান্সিট ক্যাম্পের ঘরে মায়ের ঠিক পাশে বসে লেখাপড়া করছে। সে বলছিল, “এইভাবে পড়তে খুব অসুবিধে হয়। সারাদিন আলো থাকে না। লেখাপড়া শেষ করব কী করে?”

Left: 'Where will we go?' asks Neelam Mehta, while her daughter Neha struggles to study. Right: Dhiren Mondo asks, 'Tell me, where should we go?'
PHOTO • Smita Khator
Left: 'Where will we go?' asks Neelam Mehta, while her daughter Neha struggles to study. Right: Dhiren Mondo asks, 'Tell me, where should we go?'
PHOTO • Smita Khator

বাঁদিকে: “আমরা কোথায় যাব” জিজ্ঞেস করলেন নীলম মেহতা। তাঁর মেয়ে নেহার লেখাপড়া করতে অসুবিধে হচ্ছে। ডানদিকে: ধীরেন মণ্ডলের প্রশ্ন, “বলুন, কোথায় যাব আমরা?”

রেলের জমির শেল্টারে যাওয়ার রাস্তায় একটা দুর্গা মন্দির আছে। এখানে সন্ধ্যা আরতি করেন আশি বছরের ধীরেন মণ্ডল, এই মুহূর্তে যাঁর ঠাঁই হয়েছে রেলের জমির ট্র্যান্সিট ক্যাম্পটিতে। তিনি বললেন, “আমি এখানে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। থাকতাম সুন্দরবনের সন্দেশখালি অঞ্চলে। সব ফেলে আমরা কাজের খোঁজে এখানে এসেছিলাম। নদী আমাদের গ্রামকে গিলে খেয়েছিল।” সারাদিন হাতে টানা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে তিনি টালা বস্তির বাঁশের বেড়ার ঘরে তিন সন্তানকে বড়ো করেছেন। তারপর বহু কষ্টে সেই ঘর একদিন বাঁধানো হয়েছিল।

তাঁর কথায়, “[পুরসভার] কাউন্সিলর আমাদের জিজ্ঞেস করলেন আমাদের ঘর বানানোর জন্য তাঁর অনুমতি আমরা নিয়েছি কিনা! আমি তাঁকে বললাম, আমরা পঞ্চাশ বছরেরও বেশি এখানে রয়েছি, অন্য কোনও বন্দোবস্ত ছাড়া উনি কী করে আমাদের এখান থেকে চলে যেতে বলছেন? এভাবে কী করে মানুষকে উচ্ছেদ করা যায়? আমাকে বলুন, কোথায় যাব আমরা?”

২২ বছর বয়সী টুম্পা মণ্ডলের মতে, ২৫শে সেপ্টেম্বর সকালে যখন পুলিশ এসে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করতে শুরু করল তখন, “ওরা আমার শাশুড়িকে গালাগাল দিচ্ছিল। আমার দেওরকে ঘাড় ধরে থানায় নিয়ে গেল। আমি যখন ওদের আটকাতে গেলাম, আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হল। আমার পেটে বাচ্চা, কিন্তু ওরা রেয়াত করল না। মেয়েদের চুল ধরে টানল। একজনও মহিলা পুলিশ ছিল না। খারাপ ভাষায় কথা বলছিল ওরা।”

(টালা বস্তি থেকে চিৎপুর থানার দূরত্ব ২.৫ কিলোমিটার। সেখানকার অফিসার ইন চার্জ অয়ন গোস্বামী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বা কারও ওপর জোর খাটানো হয়নি। তিনি জানান যে পরিবারগুলির প্রতি তাঁর সহানুভূতি রয়েছে, কিন্তু উচ্ছেদ ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না কারণ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে ব্রিজের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তাঁর মতে, ব্রিজ ধ্বসে পড়লে, প্রথম ঝাপ্টা বস্তিবাসীদের গায়ে এসেই লাগত।)

PHOTO • Smita Khator

ভেঙ্গে দেওয়া টালা বস্তির মধ্যেই ছাউনির ছায়ায় বসে রান্না করছেন সুলেখা মণ্ডল। ওপরে ডানদিকে: ‘গরিব মানুষ তো চিরকাল সরকারি জমিতেই থাকে, নইলে তারা কোথায় যাবে?’ প্রশ্ন লক্ষ্মী দাসের। নিচে: ট্রান্সিট ক্যাম্প থেকে বেশ কিছুটা দূরে পুরনো বস্তির বাথরুমে যেতে বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণ অসুবিধে হচ্ছে

অঞ্চলের পৌরপিতা, তৃণমূল কংগ্রেস পার্টির তরুণ সাহা ফোনে আমাকে জানান, “ওরা ওই জায়গাটা জবরদখল করে থাকছিল। ওখানে থাকার কোনও আইনি অনুমতি ওদের নেই। আগে ঝুপড়ি বানিয়ে থাকত। মানবিকতার খাতিরে আমরা জল আর শৌচালয়ের ব্যবস্থা করেছি [টালা বস্তির জন্য]। আস্তে আস্তে ওই বস্তির ঝুপড়িগুলোর জায়গায় পাকা ঘর তোলা হয়।” তিনি আরও বললেন যে টালা ব্রিজের অবস্থা এখন বিপজ্জনক। “এই মুহূর্তেই সেতুর সংস্কার করা প্রয়োজন। না সারালে কেউ মারা যেতে পারে। ওদের না সরিয়ে কোনও উপায় ছিল না।”

তরুণ সাহা জানাচ্ছেন যে সরকার এখনও টালা বস্তির পরিবারগুলির পাকাপাকি পুনর্বাসন নিয়ে কিছু ভাবেনি। “আপাতত আমরা ওদের অস্থায়ী শিবিরে থাকতে দিচ্ছি। পরবর্তীকালে ছাদগুলো টিন দিয়ে ঢাকা দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু কোনও কংক্রিটের বাড়ি তৈরি করতে আমরা দেব না।” এই বাসিন্দাদের গ্রামের দিকে এবং কারও কারও নিজের কেনা জমির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বললেন যে “ওদের অন্যত্র বাড়িঘর আছে। ওরা কাজের সুবিধের জন্য এই জায়গাটা দখল করে বসে আছে। বহু বছর ধরেই ওরা এখানে আছে। পরিবারকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে। অনেকের অবস্থাই এখন বেশ সচ্ছল।”

“গরিব মানুষ চিরকালই সরকারের জমিতে থাকে, নইলে তারা থাকবেটা কোথায়?” প্রশ্ন লক্ষ্মী দাসের, তাঁর বয়স ২৩, বাড়িতে থেকে সংসারের যাবতীয় বন্দোবস্ত দেখেন তিনি। তাঁর স্বামী কোনও দপ্তরে সহায়কের কাজ করেন। তাঁদের দুই মেয়ে। সবাইকেই টালা বস্তি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মী বলে চলেন, “আমরা গরিব মানুষ। গতরে খেটে রোজগার করি। আমি এত সব ঝামেলা শুধু আমার মেয়েদের মুখ চেয়ে সহ্য করছি।”

ভেঙে দেওয়া বস্তির বাসিন্দাদের দাবি পৌরপিতা তাঁদের লিখিত আশ্বাস দিন যে ব্রিজ সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে গেলে তাঁদের এখানে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে। এখনও অবধি এমন কোনও আশ্বাস তাঁরা পাননি।

Left: The eviction notice, pasted on November 6. A poster calling for a meeting on November 18 to demand proper and permanent rehabilitation of evicted families. Right: The Tallah basti residents at a protest march on November 11
PHOTO • Soumya
Left: The eviction notice, pasted on November 6. A poster calling for a meeting on November 18 to demand proper and permanent rehabilitation of evicted families. Right: The Tallah basti residents at a protest march on November 11
PHOTO • Smita Khator
Left: The eviction notice, pasted on November 6. A poster calling for a meeting on November 18 to demand proper and permanent rehabilitation of evicted families. Right: The Tallah basti residents at a protest march on November 11
PHOTO • Soumya

বাঁদিকে: উচ্ছেদ নোটিশ, নভেম্বরের ৬ তারিখ লাগানো হয়েছিল। ন্যায্য ও স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে ১৮ই নভেম্বর একটি মিটিং-এর ডাক দিয়ে পোস্টার। ডানদিকে: নভেম্বরের ১১ তারিখ একটি প্রতিবাদ মিছিলে টালা বস্তির বাসিন্দারা

ছোটো ছোটো প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা জারি আছে। সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ, যখন তাঁদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়, তখন টালা কলোনির বাসিন্দারা রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা ব্রিজ অবরোধ করেন। নভেম্বরের ১১ তারিখ তাঁরা একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। সেই মাসেরই ১৮ তারিখ তাঁরা একটি জনসভায় তাঁদের দাবির কথা জানান। বস্তিবাসী শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটি তৈরি করেছেন তাঁরা। এই কমিটির মাধ্যমে তাঁরা শৌচালয় এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানাচ্ছেন। একটি যৌথ রান্নাঘর বা কমিউনিটি কিচেন তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন যাতে পরিবার পিছু খরচ কিছুটা কমে।

রাজা হাজরা রাস্তায় জিনিসপত্র বিক্রি করেন। তাঁর পরিবারটিও বস্তি থেকে উৎপাটিত হয়েছে। উচ্ছেদের ফলে ভিটেহারা বস্তিবাসী সমস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে নভেম্বরের ২৫ তারিখ কলকাতা হাইকোর্টে রাজা হাজরা একটি পিটিশান দায়ের করেছেন। তাঁদের প্রধান দাবি – ন্যায্য পুনর্বাসন – এমন একটা জায়গা যেখান থেকে তাঁদের আর উচ্ছেদ করা হবে না, জায়গাটি যেন তাঁদের পুরনো বস্তি থেকে বেশি দূরে না হয় (বস্তিটি তাঁদের কাজের জায়গা আর বাচ্চাদের ইস্কুলের কাছে), আর সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ, জল, এবং শৌচালয়ের মতো কিছু বুনিয়াদি পরিষেবার দাবিও তাঁরা জানিয়েছেন।

রেলজমির ট্রান্সিট ক্যাম্পে ফিরে গিয়ে দেখি ইতিমধ্যে সেখানে সুলেখা মণ্ডল মাটির উনুন ধরিয়েছেন। এখন দুপুর আড়াইটে। কাছের কয়েকটি বাড়িতে কাজ সেরে ফিরেছেন সুলেখা – আবার বিকেলে কাজে বেরোবেন। কড়াইয়ের তেলে আলু, বেগুন আর ফুলকপি নাড়তে নাড়তে তিনি বললেন, “কাউন্সিলার আমাদের বললেন গ্রামে ফিরে যেতে! চার পুরুষ আগে আমরা দাউদপুর ছেড়ে এসেছি। এখন আমাদের ফিরে যেতে বলা হচ্ছে? সেখানে যতটুকু সম্বল মানুষের ছিল, [সাইক্লোন] আইলাতে তাও গেছে। সুন্দরবনের অবস্থা সবাই জানে। আমরাও চাই যে ব্রিজ সারানো হোক। কিন্তু সরকারকে আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেই হবে।”

সহায়তার জন্য রায়া, সৌম্য এবং অর্ককে প্রতিবেদক ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।

অনুবাদ : সর্বজয়া ভট্টাচার্য

Smita Khator

اسمِتا کھٹور، پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے لیے ’ٹرانسلیشنز ایڈیٹر‘ کے طور پر کام کرتی ہیں۔ وہ مترجم (بنگالی) بھی ہیں، اور زبان اور آرکائیو کی دنیا میں طویل عرصے سے سرگرم ہیں۔ وہ بنیادی طور پر مغربی بنگال کے مرشد آباد ضلع سے تعلق رکھتی ہیں اور فی الحال کولکاتا میں رہتی ہیں، اور خواتین اور محنت و مزدوری سے متعلق امور پر لکھتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز اسمیتا کھٹور
Translator : Sarbajaya Bhattacharya

سربجیہ بھٹاچاریہ، پاری کی سینئر اسسٹنٹ ایڈیٹر ہیں۔ وہ ایک تجربہ کار بنگالی مترجم ہیں۔ وہ کولکاتا میں رہتی ہیں اور شہر کی تاریخ اور سیاحتی ادب میں دلچسپی رکھتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Sarbajaya Bhattacharya