ঔপনিবেশিকতা এবং দেশভাগের সর্বনাশা ছায়া আসামে আজও আঁধার নিয়ে আসে নানান রূপে। এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে প্রকট রূপটি হল ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্‌স বা এনআরসি, এমন এক নাগরিকত্ব পঞ্জীকরণ প্রকল্প যা প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষকে রাষ্ট্রহীন করে দিতে পারে। এরই একটা রূপ হল সাম্প্রতিককালে ‘সন্দেহভাজন বা ডাউটফুল (ডি)-ভোটার’ নামে শ্রেণির সৃষ্টি এবং উক্ত শ্রেণিতে পড়া মানুষদের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি করার ঘটনা। নব্বই দশকের শেষভাগে আসাম জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হরেক ফরেনার ট্রাইবুনাল এবং ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (Citizenship Amendment Act বা CAA) পাস হয়ে যাওয়ার ঘটনা রাজ্যে নাগরিকত্বের সংকটকে তীব্রতর করে তুলেছে।

এই ঘটমান বিপর্যয়ের ফাঁদে আটকে পড়া ছয় জন মানুষের মৌখিক জবানবন্দি আমাদের দেখায় মানুষের ব্যক্তিজীবন তথা ইতিহাসে এর ভয়াবহ প্রভাব। আট বছর বয়সে নেলি গণহত্যার কোপ থেকে বেঁচে ফেরা রশিদা বেগম এনআরসির তালিকায় নিজের নাম খুঁজে পাননি, যদিও তাঁর পরিবারের বাকি সব সদস্যর সেখানে নাম আছে। নাম বাদ পড়েছে শাহজাহান আলি আহমেদেরও, এবং তাঁর পরিবারের বহু সদস্যের। বর্তমানে আসামে নাগরিকত্ব ঘিরে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তিনি।

আসামের নাগরিকত্ব সংকটের ইতিহাসে জড়িত আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নানান নীতি, তথা ১৯০৫ সালে বাংলা এবং ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজনের জেরে রাজ্যে আছড়ে পড়া শরণার্থীর উপর্যুপরি ঢেউ

পরিবারের বাকি সদস্যদের ভারতীয় নাগরিকত্ব এবং তাঁর নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও ‘বিদেশি’ ঘোষণা করা হয় উলোপি বিশ্বাসকে। তাঁকে ডি-ভোটার ঘোষণা করা হয় এবং ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বঙ্গাইগাঁও ফরেন ট্রাইবুনালে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হয় তাঁকে। ডিটেনশন সেন্টার থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়া কুলসুম নিস্‌সা আর সুফিয়া খাতুন বন্দি অবস্থায় তাঁদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। পাশাপাশি আছেন মর্জিনা বিবিও, প্রশাসনিক ভুলের জেরে যাঁকে কোকরাঝাড়ের ডিটেনশন সেন্টারে কাটাতে হয়েছে আট মাস ২০ দিন।

আসামের নাগরিকত্ব সংকটের ইতিহাস অতি জটিল। এর সঙ্গে জড়িত আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নানান আর্থ-সামাজিক নীতি, তথা ১৯০৫ সালে বাংলা এবং ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজনের জেরে রাজ্যে আছড়ে পড়া শরণার্থীর উপর্যুপরি ঢেউ। বহু বছর ধরে নানান প্রশাসনিক এবং আইনি সিদ্ধান্ত তথা ১৯৭৯-১৯৮৫ সময়কালে ঘটে যাওয়া আসাম বিক্ষোভের মতো সামাজিক দোলাচলের জেরে বাঙালি মুসলমান এবং হিন্দুরাও রাজ্যে ‘অপর’-এর তকমা ধারণ করেছেন।

ফেসিং হিস্টোরি অ্যান্ড আওয়ারসেল্‌ভস প্রকল্পটি কুলসুম নিস্‌সা, মর্জিনা বিবি, রশিদা বেগম, শাহজাহান আমি আহমেদ, সুফিয়া খাতুন এবং উলোপি বিশ্বাসের বয়ানসমূহ দৃশ্যমাধ্যমে নথিবদ্ধ করেছে। এটাই দেখাতে চাওয়া হয়েছে যে আসামে নাগরিকত্বের সংকট কিন্তু এখনও মেটেনি। এই ফেরে যাঁরা পড়েছেন তাঁদের ভবিষ্যতে কী লেখা আছে তা কেউ জানে না।

রশিদা বেগম আসামের মোরিগাঁও জেলার বাসিন্দা, এবং ১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নেলি গণহত্যার সময়ে তিনি আট বছরের ছিলেন। এখন ২০১৯ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্‌স-এর চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তাঁর নাম।


শাহজাহান আলি আহমেদ বক্সা জেলার একজন আন্দোলনকর্মী যিনি মূলত আসামে নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। শাহজাহান-সহ তাঁর পরিবারের মোট ৩৩ জন সদস্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্‌স থেকে বাদ পড়েছেন।


সুফিয়া খাতুন বরপেটা জেলার বাসিন্দা এবং দুইবছরেরও বেশি সময় কোকরাঝাড়ের ডিটেনশন সেন্টারে কাটিয়েছেন। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে জামিনে মুক্ত হয়েছেন তিনি।


কুলসুম নিস্‌সা বরপেটার বাসিন্দা, কোকরাঝাড় ডিটেনশন সেন্টারে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন। বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন কিন্তু প্রতি সপ্তাহে স্থানীয় পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হয়।


উলোপি বিশ্বাস চিরাং জেলার বাসিন্দা, ২০১৭ সাল থেকে বঙ্গাইগাঁও ফরেন ট্রাইবুনালে তাঁর মামলা চলেছে।


মর্জিনা বিবি গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা এবং কোকরাঝাড় ডিটেনশন সেন্টারে আট মাস ২০ দিন থেকেছেন। পুলিশ ভুল লোককে গ্রেপ্তার করেছিল আবিষ্কার হওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

‘ফেসিং হিস্ট্রি অ্যান্ড আওয়ারসেল্ভস্’- সুবশ্রী কৃষ্ণনের উদ্যোগে নির্মিত একটি ভিডিও প্রকল্প। প্রকল্পটি পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় আর্কাইভস্ অ্যান্ড মিউজিয়ামস্ প্রোগ্রামের আওতায় বাস্তবায়িত করেছে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ফর দি আর্টস্। নয়াদিল্লির গ্যোটে ইনস্টিটিউট/ম্যাক্স ম্যুলার ভবনের আংশিক সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভবপর হয়ে উঠত না। এছাড়াও শের-গিল সুন্দরম আর্টস্ ফাউন্ডেশনেরও সহায়তা পেয়েছে এই প্রকল্পটি।

ফিচার কোলাজ: শ্রেয়া কাত্যায়নী

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Subasri Krishnan

سُبشری کرشنن ایک فلم ساز ہیں، جو اپنے کام کے ذریعے شہریت سے متعلق سوالوں کو اٹھاتی ہیں اور اس کے لیے وہ لوگوں کی یادداشتوں، مہاجرت سے جڑی کہانیوں اور سرکاری پہچان سے متعلق دستاویزوں کی مدد لیتی ہیں۔ ان کا پروجیکٹ ’فیسنگ ہسٹری اینڈ اَورسیلوز‘ آسام میں اسی قسم کے مسائل کی پڑتال کرتا ہے۔ وہ فی الحال جامعہ ملیہ اسلامیہ، نئی دہلی کے اے جے کے ماس کمیونی کیشن ریسرچ سینٹر سے پی ایچ ڈی کر رہی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Subasri Krishnan
Editor : Vinutha Mallya

ونوتا مالیہ، پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا کے لیے بطور کنسلٹنگ ایڈیٹر کام کرتی ہیں۔ وہ جنوری سے دسمبر ۲۰۲۲ تک پاری کی ایڈیٹوریل چیف رہ چکی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Vinutha Mallya
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Dyuti Mukherjee