উত্তর তামিলনাড়ুর উপকূল বরাবর গ্রামগুলির সীমান্ত পাহারা দেন কান্নিসামি। জেলে সম্প্রদায়ের রক্ষক এই দেবতাকে দেখতেও তাঁর পালিত ভক্তবৃন্দের মতোই: উজ্জ্বল রঙের জামা গায়ে দেন তিনি, পরণে থাকে স্থানীয় খাটো ধুতি ভেটি, আর মাথায় টুপি। সাগরে যাওয়ার আগে তাঁর কাছে পুজো দিয়ে যান জেলেরা, যাতে নিরাপদে ফিরে আসতে পারেন।

মৎস্যজীবীরা কান্নিসামিকে নানা রূপে পুজো করেন; উত্তর চেন্নাই থেকে পাঢ়াভেরকাদু (পুলিকট নামে বেশি পরিচিত) পর্যন্ত সর্বত্র ধুমধাম করে অর্চনা হয় তাঁর।

এন্নুর কুপ্পাম গ্রামের জেলেরা প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে আথিপাত্তু যান কান্নিসামি মূর্তি কিনতে। সাধারণত জুন মাসে হয় কান্নিসামির পূজা, উৎসব চলে এক সপ্তাহ ধরে। ২০১৯ সালে এই গ্রামের জেলেরা মূর্তি কিনতে যাওয়ার সময় দলে ভিড়ে গিয়েছিলাম আমিও। কোসস্তালাইয়ার নদী বেয়ে উত্তর চেন্নাইয়ের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে নৌকা বেঁধে আথিপাত্তু গ্রাম পর্যন্ত হেঁটে গেছিলাম আমরা।

একটা দোতলা বাড়িতে পৌঁছলাম, যেখানে মাটিতে সার দিয়ে অনেকগুলি কান্নিসামি মূর্তি রাখা আছে। মূর্তিগুলি সব সাদা কাপড়ে মোড়া। সাদা ডোরাকাটা শার্ট আর ভেটি পরণে, কপালে তিরুনির [পূত ভস্ম] মাখা মধ্য চল্লিশের এক পুরুষ মূর্তিগুলির সামনে দাঁড়িয়ে কর্পূর জ্বালাচ্ছেন। পুজাই [বরণ] করে প্রত্যেক জেলের কাঁধে একটি করে জ্বলন্ত কর্পূর রাখেন তিনি।

Dilli anna makes idols of Kannisamy, the deity worshipped by fishing communities along the coastline of north Tamil Nadu.
PHOTO • M. Palani Kumar

উত্তর তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবীদের উপাস্য দেবতা কান্নিসামির মূর্তি গড়েন দিল্লি আন্না

দিল্লি আন্নার সঙ্গে এই আমার প্রথম দেখা, কিন্তু ঘটনাচক্রে সেদিন তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। মূর্তি কাঁধে নিয়ে জেলেরা ফিরছেন যখন আমিও তাঁদের সঙ্গেই ফিরলাম। কোসস্তালাইয়ার নদী পর্যন্ত চার কিলোমিটার হাঁটাপথ, তারপর নৌকায় আরও তিন কিলোমিটার গিয়ে এন্নুর কুপ্পাম।

গ্রামে ফিরে জেলেরা একটি মন্দিরের কাছে সার দিয়ে মূর্তিগুলি রাখেন। পুজোপাঠের জন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী এনে মূর্তিদের সামনে রাখা হয়। আলো পড়ে এলে দিল্লি আন্না কুপ্পামে আসেন, গ্রামবাসীরা সবাই জড়ো হন মূর্তিগুলোর চারপাশে। সাদা কাপড় সরিয়ে কান্নিসামির চোখে মাই [কাজল] দিয়ে চোখের তারা আঁকেন দিল্লি আন্না, মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। তারপর একটা মোরগের গলা কামড়ে ছিঁড়ে বলি চড়ান, অশুভকে দূরে রাখার প্রাচীন প্রথা অনুসারে।

এরপর কান্নিসামির মূর্তিগুলি নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের সীমান্তে।

এন্নোরের উপকূলবর্তী ম্যানগ্রোভ অরণ্য-সমাজ আমায় অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে, তাঁদের মধ্যে দিল্লি আন্না একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। নিজের গোটা জীবন তিনি উৎসর্গ করে দিয়েছেন কান্নিসামি মূর্তি গড়ার কাজে। মে [২০২৩] মাসে যখন দিল্লি আন্নার আথিপত্তুর বাড়িতে যাই, কোনও রোজকার ব্যবহারের জিনিস, আলমারিতে সাজানো কোনও শোপিস ইত্যাদি কিছুই দেখিনি। শুধু মাটির ঢিপি, খড়ের গাদা আর সার সার মূর্তি; সোঁদা মাটির সুগন্ধে সারা বাড়ি ম ম করছে।

কান্নিসামি মূর্তি বানাতে প্রথমে যে গ্রামের জন্য বানানো হচ্ছে তার সীমান্ত এলাকা থেকে একদলা কাদা নিয়ে সেটা মূর্তির মাটির সঙ্গে মেশাতে হয়। “বিশ্বাস আছে যে এটা করলে দেবতার শক্তি ওই গ্রামের উপর চলে আসবে,” জানালেন ৪৪ বছর বয়সি দিল্লি আন্না। “আমার পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে কান্নিসামি মূর্তি গড়ছে। আমার বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন এসবে আমি কোনও উৎসাহ দেখাইনি। ২০১১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তারপর সবাই আমায় বলতে শুরু করে যে বাবার কাজ আমায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে… সেইজন্যই এই কাজ করি। এই কাজ করার আর কেউ নেই।”

The fragrance of clay, a raw material used for making the idols, fills Dilli anna's home in Athipattu village of Thiruvallur district.
PHOTO • M. Palani Kumar

মূর্তি গড়ার মাটির সোঁদা গন্ধে ভরে থাকে তিরুভাল্লুর জেলার আথিপত্তু গ্রামে দিল্লি আন্নার গোটা বাড়িটি

Dilli anna uses clay (left) and husk (right) to make the Kannisamy idols. Both raw materials are available locally, but now difficult to procure with the changes around.
PHOTO • M. Palani Kumar
Dilli anna uses clay (left) and husk (right) to make the Kannisamy idols. Both raw materials are available locally, but now difficult to procure with the changes around.
PHOTO • M. Palani Kumar

মাটি (বাঁদিকে) আর খড় (ডানদিকে) ব্যবহার করে কান্নিসামি মূর্তি গড়েন দিল্লি আন্না। দুই উপাদানই স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়, কিন্তু সাম্প্রতিক নানা পরিবর্তনের ঠেলায় জোগাড় করা ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে

১০ দিনে টানা আট ঘণ্টা রোজ কাজ করে একইসঙ্গে ১০টা মূর্তি গড়তে পারেন দিল্লি আন্না। বছরে প্রায় ৯০টা মূর্তি গড়েন। “একটা মূর্তির জন্য ১০ দিনের কাজ লাগে। প্রথমে মাটি ভাঙতে হবে, তা থেকে কাঁকর ইত্যাদি বেছে সরিয়ে বালি আর খড়ের সঙ্গে মাখতে হবে,” ব্যাখ্যা করছেন দিল্লি আন্না। মূর্তির কাঠামো মজবুত করতে খড় ব্যবহার করা হয়, গড়নের স্তরে স্তরে দেওয়া থাকে।

“মূর্তি গড়ার শুরু থেকে শেষ অবধি আমায় একা কাজ করতে হয়। একটা যে সহকারী রাখব সে পয়সা নেই,” জানালেন তিনি। “গোটা কাজটা ছায়ায় করতে হয়, কারণ খোলা রোদে মাটি আটকাবে না, ভেঙে ভেঙে যাবে। মূর্তি গড়া শেষ হলে আগুনে পুড়িয়ে নিতে হবে। এই কাজ শেষ করতে প্রায় ১৮ দিন লাগে।”

আথিপত্তুর আশপাশের নানা গ্রাম, যেমন এন্নুর কুপ্পাম, মুগাতিভারা কুপ্পাম, থালাংকুপ্পাম, কাট্টুকুপ্পাম, মেট্টুকুপ্পাম, পালথোট্টিকুপ্পাম, চিন্নাকুপ্পাম, পেরিয়াকুলাম ইত্যাদি গ্রামে মূর্তি সরবরাহ করেন দিল্লি আন্না।

পালাপার্বণের সময়ে গ্রামবাসীরা গ্রামের সীমান্তে কান্নিসামির মূর্তি সাজিয়ে রাখেন অর্ঘ্য হিসেবে। কেউ কেউ পুরুষ কান্নিসামি মূর্তি দেন, কেউ আবার দেবীমূর্তি অর্ঘ্য দেন; তাদের নানান নাম: পাপতী আম্মান, বম্মাথি আম্মান, পিচাই আম্মান। গ্রামদেবতা ঘোড়া বা হাতিতে সওয়ার থাকেন, পাশে থাকে একটি কুকুরের মূর্তি। বিশ্বাস আছে যে রাতের বেলা দেবদেবীরা নেমে এসে লীলা করেন, আর পরদিন সকালে গ্রামদেবতার পায়ে একটি ফাটল দেখা যায়।

“কোথাও কোথাও প্রতি বছর [নতুন] কান্নিসামি মূর্তি আনে। কোথাও দু’বছরে একবার বদলায়, কোথাও আবার চার বছরে,” জানালেন দিল্লি আন্না।

Dilli anna preparing the clay to make idols. 'Generation after generation, it is my family who has been making Kannisamy idols'.
PHOTO • M. Palani Kumar

মূর্তি গড়ার মাটি ছানছেন দিল্লি আন্না। ‘আমার পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে কান্নিসামি মূর্তি গড়ছে’

The clay is shaped into the idol's legs using a pestle (left) which has been in the family for many generations. The clay legs are kept to dry in the shade (right)
PHOTO • M. Palani Kumar
The clay is shaped into the idol's legs using a pestle (left) which has been in the family for many generations. The clay legs are kept to dry in the shade (right)
PHOTO • M. Palani Kumar

যে নোড়া ব্যবহার করে (বাঁদিকে) মাটির তাল থেকে মূর্তির দুই পা তৈরি হয় সেটি তাঁর পরিবারে বহু প্রজন্ম ধরে আছে। গড়ার পর মাটির পাগুলি ছায়ায় শুকানো হয় (ডানদিকে)

জেলে গ্রাম থেকে মূর্তির চাহিদা বন্ধ হয়নি বা কমেও যায়নি, কিন্তু দিল্লি আন্নার মাথায় তাও অনিশ্চয়তা খেলা করে। তাঁর বাপ-ঠাকুর্দার কাজ যা তিনি গত তিন দশক ধরে করে আসছেন তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কে জানেন না তিনি। তাঁর নিজের খরচও ক্রমশ বাড়ছে: “আজকাল তো দাম এত বেড়ে গিয়েছে… সেসব হিসেব করে যদি মূর্তির দাম বলি তো ওরা [ক্রেতারা] বলবে এত দাম নিচ্ছি কেন। এতে যে কত কষ্ট সে আমরাই শুধু জানি।”

উত্তর চেন্নাই উপকূল বরাবর একের পর এক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণে ভৌমজল নোনা হয়ে গিয়েছে। তার জেরে এলাকায় চাষবাস কমে গিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে মাটির গুণমানেও। “আজকাল মাটি পাওয়াই দুষ্কর হয়ে গেছে,” অনুযোগ করছেন কাঁচামালের খোঁজে হয়রান দিল্লি আন্না।

বাজারে মাটি কেনা অনেক খরচের ব্যাপার, তাছাড়া, “আমি বাড়ির কাছে মাটি খুঁড়ে বার করে বালি দিয়ে গর্ত ভরে দিই।” মাটির চেয়ে বালি অনেক কম দাম, বুঝিয়ে বললেন দিল্লি আন্না।

আথিপত্তুতে তিনি একাই মূর্তিকর, তাই সাধারণ জায়গা থেকে মাটি কাটার জন্য পঞ্চায়েতের সঙ্গে দর কষাকষির কঠিন কাজটা একাই করতে হয় তাঁকে। “আজ ১০-২০টা পরিবার যদি মূর্তি গড়ত, তাহলে পুকুর-জলার পাশ থেকে মাটি তোলার জন্য তদবির করতে পারতাম। পঞ্চায়েত বিনামূল্যেই মাটি দিয়ে দিত। কিন্তু এখন আমি একাই মূর্তি গড়ি, তাই একজনের জন্য মাটি চাওয়া কঠিন। তাই আমি বাড়ির আশপাশ থেকেই মাটি নিয়ে আসি।”

মূর্তি গড়ার খড় জোগাড় করা আর এক সমস্যা। খড়ের জোগান কমছে কারণ হাতে করে ধান কাটার চলও কমে আসছে ক্রমশ। “যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে খুব বেশি খড় পাওয়া যায় না। খড় থাকলে তবেই কাজ থাকে, না থাকলে নেই,” বলছেন তিনি। “এদিক-ওদিক খুঁজে যারা হাতে [ধান] কাটে তাদের থেকে খড় জোগাড় করে আনি। ফুলের টব আর উনুন বানানো তো ছেড়েই দিয়েছি… ওগুলোর চাহিদা আছে প্রচুর, কিন্তু আমার বানানোর উপায় নেই।”

The base of the idol must be firm and strong and Dilli anna uses a mix of hay, sand and clay to achieve the strength. He gets the clay from around his house, 'first, we have to break the clay, then remove the stones and clean it, then mix sand and husk with clay'.
PHOTO • M. Palani Kumar

মূর্তির গোড়া মজবুত আর শক্তপোক্ত হওয়া চাই, খড়, বালি আর মাটি মিশিয়ে সেই মজবুতি আনেন দিল্লি আন্না। বাড়ির কাছ থেকেই মাটি নিয়ে আসেন তিনি, ‘প্রথমে মাটি ভাঙতে হবে, তা থেকে কাঁকর ইত্যাদি বেছে সরিয়ে বালি আর খড়ের সঙ্গে মাখতে হবে’

The idol maker applying another layer of the clay, hay and husk mixture to the base of the idols. ' This entire work has to be done in the shade as in in direct sunlight, the clay won’t stick, and will break away. When the idols are ready, I have to bake then in fire to get it ready'
PHOTO • M. Palani Kumar
The idol maker applying another layer of the clay, hay and husk mixture to the base of the idols. ' This entire work has to be done in the shade as in in direct sunlight, the clay won’t stick, and will break away. When the idols are ready, I have to bake then in fire to get it ready'
PHOTO • M. Palani Kumar

মূর্তির বেদীতে আরও এক আস্তর খড়-মাটি-তুষের মিশ্রণ চড়াচ্ছেন মূর্তিকর। ‘গোটা কাজটা ছায়ায় করতে হয়, কারণ খোলা রোদে মাটি আটকাবে না, ভেঙে ভেঙে যাবে। মূর্তি গড়া শেষ হলে আগুনে পুড়িয়ে নিতে হবে’

আয়ব্যয়ের হিসেবটা বুঝিয়ে বললেন তিনি: “একটা গ্রাম থেকে একটা মূর্তির জন্য ২০,০০০ টাকা পাই, কিন্তু খরচাখরচ বাদ দিয়ে মুনাফা পড়ে থাকে ৪,০০০ টাকা। চারটে গ্রামের মূর্তি বানালে ১৬,০০০ টাকা হয়।”

ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই, গরমকালটাতেই শুধু মূর্তি গড়তে পারেন আন্না। আদি [জুলাই] মাসে পালাপার্বণ শুরু হলে লোকে মূর্তি কিনতে আসতে শুরু করে। “ছয়-সাত মাস ধরে খেটেখুটে যা বানিয়েছি, এক মাসের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। পরের পাঁচ মাস আর কোনও আয় নেই। মূর্তি বিক্রি হলে তবেই টাকা আসে।” দিল্লি আন্না আরও জানালেন, অন্য কোনও কাজ তিনি করেন না।

সকাল ৭টায় দিন শুরু হয় তাঁর, চলে আগামী আট ঘণ্টা। শুকোতে দেওয়া মূর্তিগুলোকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হয়, নয়তো যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। কাজে তাঁর নিষ্ঠা কতটা বোঝাতে একটা ছোট্ট গল্প বললেন আন্না: “একবার রাতে খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, প্রবল ব্যথা। রাত একটায় সাইকেল চালিয়ে হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তার আমায় গ্লুকোজ [ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড] দিল। সকালে আমার ভাই আমায় নিয়ে আর একটা হাসপাতালে গেল স্ক্যান করাতে, কিন্তু সেখানে বলল রাত ১১টার আগে হবে না।” দিল্লি আন্না স্ক্যান না করিয়েই ফেরত চলে এলেন কারণ, “মূর্তিগুলোকে পাহারা দিতে হত না?”

৩০ বছর আগে কাট্টুপাল্লি গ্রামের চেপক্কম এলাকায় দিল্লি আন্নার পরিবারের চার একর জমি ছিল। “তখন আমাদের বাড়ি ছিল চেপক্কম সিমেন্ট কারখানার কাছে, একটা গণেশ মন্দিরের পাশে। জমির কাছাকাছি বাড়ি করেছিলাম যাতে চাষ করতে সুবিধে হয়,” বলছেন তিনি। কিন্তু ভৌমজল নোনা হয়ে যাওয়ার পর চাষ করা বন্ধ করে দিতে হয় তাঁদের। পরে বাড়িটা বেচে দিয়ে আথিপত্তুতে চলে আসেন তাঁরা।

A mixture of clay, sand and husk. I t has become difficult to get clay and husk as the increase in thermal power plants along the north Chennai coastline had turned ground water saline. This has reduced agricultural activities here and so there is less husk available.
PHOTO • M. Palani Kumar

মাটি, বালি ও খড়ের মিশ্রণ। মাটি আর খড় জোগাড় করা ক্রমশ দুষ্কর হয়ে উঠছে কারণ উত্তর চেন্নাই উপকূল বরাবর একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠায় ভৌমজল নোনা হয়ে গেছে। তার জেরে এলাকায় চাষবাস কমে গিয়েছে, আর সেইসঙ্গে কমেছে খড়ের জোগানও

Dilli anna applies an extra layer of the mixture to join the legs of the idol. His work travels to Ennur Kuppam, Mugathivara Kuppam, Thazhankuppam, Kattukuppam, Mettukuppam, Palthottikuppam, Chinnakuppam, Periyakulam villages.
PHOTO • M. Palani Kumar

মূর্তির পাগুলো জুড়তে মিশ্রণের একটা অতিরিক্ত আস্তর লাগাচ্ছেন দিল্লি আন্না। তাঁর গড়া মূর্তি যায় এন্নুর কুপ্পাম, মুগাতিভারা কুপ্পাম, থালাংকুপ্পাম, কাট্টুকুপ্পাম, মেট্টুকুপ্পাম, পালথোট্টিকুপ্পাম, চিন্নাকুপ্পাম, পেরিয়াকুলাম ইত্যাদি গ্রামে

“আমরা চারজন [ভাইবোন] আর শুধু আমিই এই প্রথাগত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমি বিয়ে করিনি। এই টাকা দিয়ে পরিবার বা বাচ্চা পালন করব কেমন করে?” বলছেন তিনি। দিল্লি আন্নার আশঙ্কা, তিনি যদি অন্য কাজ করা শুরু করেন তবে জেলেদের এই মূর্তি বানানোর জন্য আর কেউ থাকবে না। “আমার পূর্বপুরুষদের থেকে এই কাজ আমার হাতে এসেছে, কেমন করে ছাড়ব। ওরা [জেলেরা] যদি এই মূর্তিগুলো না পায়, বড়ো বিপদে পড়বে।”

দিল্লি আন্নার কাছে মূর্তি গড়া শুধু কাজ নয়, এ এক উদ্‌যাপন। তাঁর মনে পড়ে, বাবার সময়ে তাঁরা ৮০০-৯০০ টাকায় মূর্তি বেচতেন। মূর্তি কিনতে যেই আসত তাকে খাইয়ে পাঠানো হত। “মনে হত যেন বিয়েবাড়ি লেগেছে,” মনে করছেন তিনি।

না ভেঙে একটা মূর্তি পুড়িয়ে ফেলতে পারলেই মনটা খুশি হয়ে যায় দিল্লি আন্নার। মাটির পুতুলগুলো তাঁর সঙ্গী হয়ে গেছে। “মূর্তি যখন গড়ি মনে হয় আমার সঙ্গে কেউ আছে। মনে হয় ওদের সঙ্গে কথা বলছি। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোতে এই মূর্তিগুলো আমার সঙ্গে থেকেছে। [কিন্তু] চিন্তা হয়… আমার পর কে এই মূর্তি বানাবে?” প্রশ্ন আন্নার।

‘This entire work has to be done in the shade as in direct sunlight, the clay won’t stick and will break away,' says Dilli anna.
PHOTO • M. Palani Kumar

‘গোটা কাজটা ছায়ায় করতে হয়, কারণ খোলা রোদে মাটি আটকাবে না, ভেঙে ভেঙে যাবে’, বলছেন দিল্লি আন্না

Left: Athipattu's idol maker carrying water which will be used to smoothen the edges of the idols; his cat (right)
PHOTO • M. Palani Kumar
Left: Athipattu's idol maker carrying water which will be used to smoothen the edges of the idols; his cat (right)
PHOTO • M. Palani Kumar

বাঁদিকে: মূর্তির ডৌল মসৃণ করার জন্য জল বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আথিপত্তুর মূর্তিকর; আন্নার বেড়াল (ডানদিকে)

The elephant and horses are the base for the idols; they are covered to protect them from harsh sunlight.
PHOTO • M. Palani Kumar

হাতি আর ঘোড়াগুলো মূর্তির বেদী; চড়া রোদ থেকে বাঁচাতে ঢেকে রাখা আছে

Dilli anna gives shape to the Kannisamy idol's face and says, 'from the time I start making the idol till it is ready, I have to work alone. I do not have money to pay for an assistant'
PHOTO • M. Palani Kumar
Dilli anna gives shape to the Kannisamy idol's face and says, 'from the time I start making the idol till it is ready, I have to work alone. I do not have money to pay for an assistant'
PHOTO • M. Palani Kumar

কান্নিসামি মূর্তির মুখ গড়তে গড়তে দিল্লি আন্না বলেন, ‘মূর্তি গড়ার শুরু থেকে শেষ অবধি আমায় একা কাজ করতে হয়। একটা সহকারী রাখব সে পয়সাও নেই’

The idols have dried and are ready to be painted.
PHOTO • M. Palani Kumar

মূর্তি শুকিয়ে গেছে, এবার রং চড়ানো হবে

Left: The Kannisamy idols painted in white.
PHOTO • M. Palani Kumar
Right: Dilli anna displays his hard work. He is the only artisan who is making these idols for the fishing community around Athipattu
PHOTO • M. Palani Kumar

বাঁদিকে: সাদা রং করা কান্নিসামি মূর্তি। ডানদিকে: নিজের পরিশ্রমের ফসল দেখাচ্ছেন দিল্লি আন্না। আথিপত্তুর আশপাশের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়গুলির জন্য এই মূর্তি বানান তিনি একাই

Dilli anna makes five varieties of the Kannisamy idol
PHOTO • M. Palani Kumar

পাঁচ ধরনের কান্নিসামি মূর্তি গড়েন দিল্লি আন্না

The finished idols with their maker (right)
PHOTO • M. Palani Kumar
The finished idols with their maker (right)
PHOTO • M. Palani Kumar

মূর্তিকরের সঙ্গে সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে যাওয়া মূর্তি (ডানদিকে)

Dilli anna wrapping a white cloth around the idols prior to selling
PHOTO • M. Palani Kumar

বিক্রির আগে মূর্তির গায়ে সাদা কাপড় জড়িয়ে দেন দিল্লি আন্না

Fishermen taking the wrapped idols from Dilli anna at his house in Athipattu.
PHOTO • M. Palani Kumar

আথিপত্তুতে দিল্লি আন্নার বাড়ি থেকে কাপড় জড়ানো মূর্তি নিয়ে আসছেন জেলেরা

Fishermen carrying idols on their shoulders. From here they will go to their villages by boat. The Kosasthalaiyar river near north Chennai’s thermal power plant, in the background.
PHOTO • M. Palani Kumar

ঘাড়ে করে মূর্তি নিয়ে যাচ্ছেন জেলেরা। এখান থেকে নৌকা করে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাবেন তাঁরা। পিছনে উত্তর চেন্নাই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে বয়ে চলেছে কোসস্তালাইয়ার নদী

Crackers are burst as part of the ritual of returning with Kannisamy idols to their villages.
PHOTO • M. Palani Kumar

কান্নিসামি মূর্তি নিয়ে গ্রামে ফেরার সময়ে বাজি-পটকা ফাটানো হয়

Fishermen carrying the Kannisamy idols onto their boats.
PHOTO • M. Palani Kumar

নৌকায় কান্নিসামি মূর্তি তুলছেন জেলেরা

Kannisamy idols in a boat returning to the village.
PHOTO • M. Palani Kumar

নৌকা চেপে গ্রামের পথে কান্নিসামি মূর্তি

Fishermen shouting slogans as they carry the idols from the boats to their homes
PHOTO • M. Palani Kumar

নৌকা থেকে মূর্তি নামিয়ে ঘরে তোলার পথে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন জেলেরা

Dilli anna sacrifices a cock as part of the ritual in Ennur Kuppam festival.
PHOTO • M. Palani Kumar

এন্নুর কুপ্পামের পার্বণে প্রথামতো একটা মোরগ বলি দেন দিল্লি আন্না

Now the idols are ready to be placed at the borders of the village.
PHOTO • M. Palani Kumar

গ্রামের সীমান্তে রাখার জন্য মূর্তিগুলি সব প্রস্তুত


অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

M. Palani Kumar

एम. पलनी कुमार २०१९ सालचे पारी फेलो आणि वंचितांचं जिणं टिपणारे छायाचित्रकार आहेत. तमिळ नाडूतील हाताने मैला साफ करणाऱ्या कामगारांवरील 'काकूस' या दिव्या भारती दिग्दर्शित चित्रपटाचं छायांकन त्यांनी केलं आहे.

यांचे इतर लिखाण M. Palani Kumar
Editor : S. Senthalir

एस. सेन्थलीर चेन्नईस्थित मुक्त पत्रकार असून पारीची २०२० सालाची फेलो आहे. इंडियन इन्स्टिट्यूट ऑफ ह्यूमन सेटलमेंट्ससोबत ती सल्लागार आहे.

यांचे इतर लिखाण S. Senthalir
Photo Editor : Binaifer Bharucha

Binaifer Bharucha is a freelance photographer based in Mumbai, and Photo Editor at the People's Archive of Rural India.

यांचे इतर लिखाण बिनायफर भरुचा
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

यांचे इतर लिखाण Dyuti Mukherjee