কাস্তের দিন গেল, পেটে পড়ল হাতুড়ির ঘা

পারির স্বেচ্ছাকর্মী সংকেত জৈন স্থির করেছেন সমগ্র ভারতবর্ষের অন্তত তিনশটি গ্রামে ঘুরে ঘুরে তিনি গ্রামভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি করবেন এবং সেই সঙ্গে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করবেন: গ্রামীণ জীবনের যে কোনও ঘটনা বা দৃশ্যকে ঘিরে একটি আলোকচিত্র তুলবেন এবং তারপর সেই আলোকচিত্রটি থেকে একটি স্কেচ তৈরি করবেন। পারির উপর এই সিরিজের এটি চতুর্থ প্রয়াস। স্লাইডারটি কোনও একটি দিকে টানলে আলোকচিত্রটি অথবা স্কেচটি সম্পূর্ণ দেখতে পাওয়া যাবে

বিরল প্রতিভার অধিকারী হয়েও রামলিং চবন যৎসামান্য উপার্জন করতে সক্ষম হন। কৃষি শ্রমিকরা ক্ষেতে কাজ করার জন্য যে কাস্তে ব্যবহার করেন, তা রামলিং তৈরি করেন। এছাড়া তিনি এই কাস্তে মেরামতির কাজও করে থাকেন, আমরা আন্দাজও করে উঠতে পারব না যে এই কাস্তে কৃষি শ্রমিকরা কত দশক জুড়ে ব্যবহার করেন – তাঁর বছর দশেক বয়সে পিতার মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে আজ পাঁচ দশকের উপর হয়ে গেল তিনি এই পেশায় নিযুক্ত আছেন। রামলিঙের কথায়, “সারা দিনে কুড়িয়ে বাড়িয়ে আমার সাকুল্যে ৫০-১০০ টাকা আয় হয়।”

মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদ জেলা তথা ব্লকের করজখেড়া গ্রামের মানুষ তিনি। তবে তাঁর এই ফটোগ্রাফটি আমি তুলেছিলাম কোলহাপুর জেলার ইয়ালগুড় গ্রামে। বছর ছয়েক আগে কোলহাপুর-হুপারি সড়কের ঠিক পাশেই তিনি তাঁবু খাটিয়ে তাঁর কর্মশালা শুরু করেন। ৬৭ বছর বয়সে তিনি এবং তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষ আজও মরশুমের সময় অন্তত ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন চাষের যন্ত্রপাতি তৈরি তথা বিক্রি করার অভিপ্রায়ে। রবি এবং খারিফ শস্যের মরশুমগুলিতে তাঁরা সাধারণত এই যাত্রা করে থাকেন। অবস্থা বিশেষে বছরের অন্যান্য সময়েও তাঁদের উপার্জনের তাগিদে বেরিয়ে পড়তে হয়।

রামলিং ঘিসাডি সম্প্রদায়ের মানুষ, এটি একটি যাযাবর জনগোষ্ঠী। স্মরণাতীত কাল থেকে তাঁরা যন্ত্রে নয়, হাতে করে তৈরি করেছেন – বেলচা, কোদাল, কাস্তে, নিড়ানি ইত্যাদি চাষের রকমারি যন্ত্রপাতি। কিন্তু মেশিনে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ক্রমশ বাজারের দখল নিতে থাকায় এবং কৃষিকাজে ক্রমবর্ধমান যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহারের ফলে তাঁদের কাজ কোনঠাসা হয়ে পড়ছে।

ফটোগ্রাফ এবং স্কেচটিতে রামলিঙের হাত দেখা যাচ্ছে, ছোট্ট অস্থায়ী ‘চুল্লির’ গনগনে আঁচে কাস্তেটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোড় খাওয়াচ্ছেন তিনি। “আমাদের না আছে থাকার জায়গা, না আছে দুবেলা পেট ভরে খাওয়ার সামর্থ্য, এই কাজ থেকে যা উপার্জন হয় তাতে দুবেলার খাওয়া জোটানো যায় না। সমাজ আমাদের নিচু চোখে দেখে। আমার হাল এতটাই করুণ যে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে গেছে।”

ছবি এবং স্কেচ: সংকেত জৈন

বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

Sanket Jain

संकेत जैन हे कोल्हापूर स्थित ग्रामीण पत्रकार आणि ‘पारी’चे स्वयंसेवक आहेत.

यांचे इतर लिखाण Sanket Jain
Translator : Smita Khator

स्मिता खटोर कोलकात्यात असतात. त्या पारीच्या अनुवाद समन्वयक आणि बांग्ला अनुवादक आहेत.

यांचे इतर लिखाण स्मिता खटोर