সিদ্দু গাওড়ে স্কুলে যাবেন বলে ঠিক করতেই মা-বাবা তাঁর ঘাড়ে ৫০টি ভেড়া চরানোর দায়িত্ব দিয়ে দেন। সব্বাই ধরে নিয়েছিল, আর পাঁচজন আত্মীয় ও ইয়ার-দোস্তদের মতো তিনিও এই উঠতি বয়সে পশুপালনের প্রজন্মবাহিত পেশাটাই ধরবেন। এই চক্করে স্কুলের চৌকাঠ আর ডিঙোতে পারেননি সিদ্দু দাদু।

ধাঙড় জনজাতির মানুষ তিনি, প্রথাগত ভাবে ছাগল-ভেড়া চরানো এই সম্প্রদায়টি মহারাষ্ট্রের যাযাবর গোষ্ঠী হিসেবে নিবন্ধিত। ঘরদোর ছেড়ে শত-শত কিলোমিটার দূরে পশু চরাতে যান এঁরা, একেক দফার যাত্রায় ছ’মাস অবধিও কেটে যায়।

একবার উত্তর কর্ণাটকের কারদগা গাঁয়ে তাঁর বাড়ি থেকে শতখানেক কিলোমিটার দূরে ভেড়া চরাতে গিয়ে দেখেন, তাঁরই মতো একজন রাখাল সুতো পাকিয়ে গোলাকার ফাঁস বানাচ্ছেন। “দেখে তাজ্জব বনে গেলাম।” বয়সে প্রবীণ সেই রাখাল কেমন নিপুণ হাতে সাদা সুতো বুনে জালি (গোলাকার ব্যাগ) বানাচ্ছিলেন, স্মৃতির কোঠা হাতড়ে সে কথা বলতে লাগলেন সিদ্দু দাদু। বুনন যত এগোচ্ছিল, ততই চিনেবাদামের রঙ নিচ্ছিল বটুয়াটি।

মোলাকাতটা আকস্মিক ছিল হলেও সেদিনের সেই মন্ত্রমুগ্ধ ছেলেটি আজ ৭৪ বছর পার করে ফেলেছে এই জালি কারিগরিতে।

জালি একপ্রকারের হাতে-বোনা প্রতিসম বুনটের থলি। সুতি-নির্মিত এই বটুয়াগুলি কাঁধে ঝোলানো হয়। “ধাঙড়দের প্রায় প্রত্যেকেই দূর-দূরান্তের যাত্রায় [পশুচারণ] এই জাতীয় বটুয়া নিয়ে বেরোন,” জানালেন সিদ্দু দাদু, “খান দশেক ভাকরি [স্যাঁকা রুটি] আর একজোড়া জামাকাপড় তো ধরেই এতে। অনেকে আবার পান, দোক্তা আর চুনাও [চুনের গুঁড়ি] ভরে রাখেন।

জালির বাঁধা মাপ, অথচ কোনও মাপকাঠি বা ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স ছাড়াই এগুলো বানিয়ে থাকেন পশুপালকেরা — সুতরাং কতখানি দক্ষ হতে হয়, সেটা বলাই বাহুল্য। “এক তালু আর চার আঙুল লম্বা না হলেই নয়,” সিদ্দু দাদু বললেন। তাঁর বোনা জালিগুলো ন্যূনতম ১০ বছর টেকে। “বৃষ্টিতে ভিজে গেলে চলবে না। উপরন্তু, হতচ্ছাড়া ইঁদুরগুলো জালি কাটতে পেলে আর কিছু চায় না, তাই বেশি বেশি করে যত্ন নিতে হয়।”

Siddu Gavade, a Dhangar shepherd, learnt to weave jalis by watching another, older Dhangar. These days Siddu spends time farming; he quit the ancestral occupation of rearing sheep and goats a while ago
PHOTO • Sanket Jain
Siddu Gavade, a Dhangar shepherd, learnt to weave jalis by watching another, older Dhangar. These days Siddu spends time farming; he quit the ancestral occupation of rearing sheep and goats a while ago
PHOTO • Sanket Jain

অভিজ্ঞ ধাঙড়দের দেখে দেখে জালি বোনার কারিগরি রপ্ত করেন তরুণ ধাঙড় রাখালরা। বেশ কিছুদিন হল, পরম্পরায় পাওয়া ছাগল-ভেড়া চরানোর কাজ ছেড়ে চাষবাসে সময় কাটাচ্ছেন সিদ্দু দাদু

Siddu shows how he measures the jali using his palm and four fingers (left); he doesn't need a measure to get the dimensions right. A bag (right) that has been chewed by rodents
PHOTO • Sanket Jain
Siddu shows how he measures the jali using his palm and four fingers (left); he doesn't need a measure to get the dimensions right. A bag (right) that has been chewed by rodents
PHOTO • Sanket Jain

এক তালু আর চার আঙুল দিয়ে জালি মেপে দেখাচ্ছেন সিদ্দু গাওড়ে (বাঁদিকে); কোনও মাপকাঠি ছাড়াই নিখুঁত আকারের বটুয়া বানাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ইঁদুরের পাল্লায় পড়ে এই ব্যাগটির (ডানদিকে) বারোটা বেজে গেছে

কার্পাস সুতো দিয়ে জালি বানাতে পারেন, এমন চাষি আজ কারদগায় আজ একমাত্র সিদ্দু দাদুই আছেন। “কন্নড় ভাষায় এটাকে জালগি বলে,” জানালেন তিনি। বেলাগাভি জেলার চিকোড়ি (ভিন্ন বানান চিক্কোড়ি) তালুকে অবস্থিত কারদগা, পাশেই মহারাষ্ট্র-কর্ণাটক সীমান্ত। এখানকার ৯,০০০ মানুষ মারাঠি ও কন্নড় উভয় ভাষাতেই কথা বলতে পারেন।

ছোটোবেলায় সুতি-বোঝাই ট্রাকের অপেক্ষায় বসে থাকতেন মানুষটি। “[জোরে] বাতাস দিলেই [চলন্ত] ট্রাক থেকে সুতি উড়ে এসে পড়ত আর আমি সেসব তুলে রাখতাম।” খেলাচ্ছলে সুতো পেঁচিয়ে গিঁট মারতেন সিদ্দু দাদু। “এই শিল্প আমায় হাতে ধরে কেউ শেখায়নি। একজন মহাতারা [বয়স্ক] ধাঙড়কে দেখে দেখে শিখেছি।”

প্রথম বছর তিনি শুধুই ফাঁস বানাতেন আর চেষ্টা করতেন বিভিন্ন ভাবে গিঁট বাঁধার। “শেষমেশ, কুকুর আর ভেড়া নিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ চলার পর এই জটিল শিল্পটা আয়ত্তে আসে,” তিনি বললেন, “কায়দাটা হল গোলাকার ছাঁদে সমান দূরত্ব ছাড়া ছাড়া ফাঁস মারা, এবং পুরো জালিটা না তৈরি হওয়া অবধি গড়নটা বজায় রাখা।” এই কারিগর কিন্তু কখনও বোনার কাঁটা ব্যবহারই করেন না।

সরু সুতোয় ঠিকমতন গিঁট মারা অসম্ভব, তাই সুতোগুলো মোটা করাটাই কাজের পহেলা ধাপ। এটার জন্য দশাসই একখান বাণ্ডিল থেকে আনুমানিক ২০ হাত সাদা সুতো ব্যবহার করেন সিদ্দু দাদু। মারাঠিতে যাকে টাকলি বা ভিঙড়ি বলে, একঝটকায় সুতোটা সেই সাবেক কাঠের যন্ত্রে পাকিয়ে নেন। ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা টাকলির একটা দিক ব্যাঙের ছাতার মতো, অন্য প্রান্তটি ছুঁচালো।

বাবুল (বাবলা) কাঠে নির্মিত ৫০ বছর পুরোনো টাকলিটি ডানপায়ে ধরে ক্ষিপ্র বেগে ঘোরাতে থাকেন যন্ত্রটা। ঘোরাতে ঘোরাতেই টাকলিটা বাঁহাতে তুলে নেন আর সুতো ছাড়াতে লাগেন। “সুতি মোটা করার এটাই প্রথাগত কায়দা,” জানালেন আমায়। ঘণ্টা দুই লাগে ২০ হাত সরু সুতো পাকাতে।

মোটা সুতোর দাম অনেক, তাই আজ পর্যন্ত এভাবেই সুতো পাকিয়ে যাচ্ছেন মানুষটি। তীন পাদর চা করাভা লাগতে [তিনটে খি পেঁচিয়ে সুতোটা তৈরি করতে হয়]।” তবে কি জানেন? ক্রমাগত টাকলির ঘষা খেয়ে কেটেছড়ে ফুলে যায় পা দুটি। “মাগ কাই হোতাই, দোন দিওস আরাম কারাইচা [তারপর আর কী? দুটো দিন আরাম করলেই হয়],” হাসতে হাসতে বলে উঠলেন।

Siddu uses cotton thread to make the jali . He wraps around 20 feet of thread around the wooden takli , which he rotates against his leg to effectively roll and thicken the thread. The repeated friction is abrasive and inflames the skin
PHOTO • Sanket Jain
Siddu uses cotton thread to make the jali . He wraps around 20 feet of thread around the wooden takli , which he rotates against his leg to effectively roll and thicken the thread. The repeated friction is abrasive and inflames the skin
PHOTO • Sanket Jain

কার্পাস সুতো পাকিয়ে জালি বানান সিদ্দু দাদু। কাঠের টাকলিতে প্রায় ২০ হাত সুতো পেঁচিয়ে সেটা পায়ে চেপে ধরে ঘোরান, যাতে সুতোটা পাক খেয়ে মোটা হয়ে যায়। বারবার ঘষা লেগে কেটেছড়ে ফুলে যায় ত্বক

There is a particular way to hold the takli and Siddu has mastered it over the years: 'In case it's not held properly, the thread doesn't become thick'
PHOTO • Sanket Jain

টাকলি বাগিয়ে ধরার বিশেষ একটি কৌশল আছে, বছরের পর বছর লেগে থেকে যেটা আয়ত্তে এনেছেন সিদ্দু দাদু: ‘ঠিকমতো না পাকড়ালে সুতোটা মোটা হবে না’

কিন্তু টাকলি পাওয়াটা দিনকে দিন চাপের হয়ে উঠেছে। “নবীন ছুতোরমিস্ত্রিরা এসব বানাতেই জানে না।” বিগত সাতের দশকের গোড়ার দিকে গাঁয়েরই এক ছুতোরের থেকে কিনতেন, মূল্য ছিল ৫০ টাকা। হ্যাঁ, যন্তরটা মহামূল্যবানই বটে, কারণ সে যুগে এক কিলো সরু চালের দাম ছিল মোটে এক টাকা।

একখান জালি বটুয়া বানাতে দু’কিলো কার্পাস সুতো কিনতে হয় তাঁকে, তারপর সেটার পাক খুলে বিছিয়ে রাখেন — সুতোটা কতখানি ঘন আর কতটা মোটা, তার উপর নির্ভর করছে। বছরকয়েক আগে পর্যন্ত বাড়ি থেকে নয় কিলোমিটার দূর, মহারাষ্ট্রের রেন্ডাল গ্রাম থেকে সুতো কিনতেন। “আজ গাঁয়ে বসেই সুতো পেয়ে যাই, এক কিলোর দাম ৮০-১০০ টাকা, নির্ভর করছে কত ভালো তার উপর।” তাঁর মনে পড়ে, নয়ের দশকের শেষের দিকে এই একই সুতো ২০ টাকা কিলোয় কিনতেন, এবং একবারে দুইকিলো কিনে নিতেন।

এটা ঠিকই যে জালি বানানোর পরম্পরাটি বরাবরই পুরুষের কুক্ষিগত হয়ে থেকেছে, তবে বেঁচে থাকতে থাকতে সুতো পাকিয়ে মোটা করার কাজে স্ত্রী মায়াভ্যা সাহায্য করতেন বলে জানালেন সিদ্দু দাদু। “বউ আমার ওস্তাদ শিল্পী ছিল বটে।” কিডনি বিকল হওয়ায় ২০১৬ সালে মারা যান মায়াভ্যা। “ভুলভাল চিকিৎসা হয়েছিল। হাঁপানির চিকিৎসা করাতে গিয়েছিল কিন্তু ওষুধগুলোর এমনই কড়া ছিল যে তার জেরে বেচারির কিডনিদুটো বিকল হয়ে গেল,” তিনি বললেন।

তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর মতো মহিলারা ভেড়ার লোম কেটে পশমের সুতো বানানোয় সুদক্ষ। তারপর সেই সুতো ধাঙড়দের থেকে সাঙ্গার জাতির হাতে আসে, যাঁরা পিট লুমের সাহায্যে ঘোঙ্গাড়ি (পশমের কম্বল) বোনেন। গর্তের ভিতর বসানো এই জাতীয় তাঁতযন্ত্র পেডালের সাহায্যে চালিত হয়।

চাহিদা আর সময়, এই দুটো জিনিসের উপর নির্ভর করছে সুতোটা কতখানি মোটা করে পাকানো হবে। এরপর শুরু হয় সবচাইতে কঠিন ধাপটি — আঙুল দিয়ে জালি বোনা। তড়িৎগতিতে সুতোর খি বুনে বুনে সৃষ্টি হতে থাকে একের পর এক স্লিপ নট্ বা ফাঁস, তারপর ফাঁসে ফাঁসে চলে গিঁট মারার পালা। একেকটা বটুয়ার জন্য এরকম ২৫টি ফাঁসের মালা তৈরি করেন এই ওস্তাদ কারিগর, তারপর সম দূরত্ব পেতে রাখেন সেগুলি।

PHOTO • Sanket Jain
Right: Every knot Siddu makes is equal in size. Even a slight error means the jali won't look as good.
PHOTO • Sanket Jain

বাঁদিকে: ৫০ বছর আগে প্রথম যখন কিনেছিলেন, তখন বাবলাকাঠে নির্মিত একেকটি টাকলির দাম ছিল ৫০ কেজি চালের সমান। আজ এ যন্ত্র বানাতে পারেন এমন কোনও ছুতোরমিস্ত্রি আর বেঁচে নেই। ডানদিকে: সিদ্দু দাদুর প্রতিটি গিঁট আকারে সমান। একচুলও ভুলচুক হয়ে গেলে জালিটা বদখত হয়ে যাবে

“গোলাকার ধাঁচে ফাঁস পাকানোটাই সবচাইতে কঠিন ধাপ।” কারদগায় সিদ্দু দাদু বাদে জালি বানাতে জানেন এমন আরও ২-৩ জন ধাঙড় আছেন ঠিকই, তবে “গোলাকার যে সুতোর কাঠামোটা বটুয়ার বুনিয়াদ, সেটা বানাতে গিয়ে ওঁরা নাকাল হয়ে যান। তাই জালি বানানো ছেড়েই দিয়েছেন।”

গোলাকার কাঠামো বানাতে ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যায় তাঁর। “একটুখানি ভুলও যদি হয়, পুরোটা নতুন করে বুনতে হবে।” দিন গেলে ঘণ্টা তিনেক কাজ করার ফুরসৎ যদি পান, তাহলেই গিয়ে ২০ দিনে তৈরি হয় একেকটি জালি। ৬০ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ হাত সুতো বোনেন এই শিল্পীটি, প্রতিটা ফাঁস প্রতিটা গিঁট সমান সমান। অধিকাংশ বখত চাষবাসে ব্যস্ত থাকলেও জালি বোনার ঠিক সময় বার করে নেন মানুষটি। গত ৭ দশকে নিজ জাতির মানুষের জন্য শতাধিক জালি বানিয়েছেন, ব্যয় হয়েছে ৬,০০০ ঘণ্টা।

হররোজ ধবধবে সাদা একখান পাগড়ি পরেন সিদ্দু দাদু — লোকে তাই আদর করে তাঁকে পাটকার মহাতারা (পাগড়ি-পরা বুড়ো) বলে ডাকে।

এই বয়সেও বিগত নয় বছর ধরে বিখ্যাত ওয়ারি যাত্রায় বেরোচ্ছেন তিনি। হাঁটাপথে বাড়ি থেকে মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার পনঢরপুরের বিঠোবা মন্দিরে যেতে-আসতে ৩৫০ কিলোমিটার লাগে। আষাঢ় (জুন/জুলাই) আর কার্তিক (দীপাবলির পর, অক্টোবর/নভেম্বর) মাসে মহারাষ্ট্রের প্রতিটি প্রান্ত ও উত্তর কর্ণাটকের কয়েকটি জেলা থেকে এই তীর্থযাত্রায় সামিল হয় ভক্তের দল। সন্ত তুকারাম, জ্ঞানেশ্বর ও নামদেবের কবিতা ও ভক্তিমূলক অভঙ্গ গাইতে গাইতে হাঁটতে থাকেন তাঁরা।

“গাড়িঘোড়া করি না। বিঠোবা আহে মাঝ্যাসোবাত। কাহিহি হোত নাহি [আমি জানি বিঠোবা আমার সঙ্গে আছেন, কিচ্ছুটি হবে না আমার],” বললেন তিনি। পনঢরপুরের বিট্ঠল-রুক্মিণী দেউলে পৌঁছতে ১২ দিন লাগে সিদ্দু গাওড়ের। মাঝে অবশ্য জিরোতে বসলেই সুতো তুলে নেন হাতে, চলতে থাকে ফাঁস-গিঁটের পালা।

তাঁর বাবা, প্রয়াত বালু গাওড়েও জালি বানাতেন। বটুয়াশিল্পী আর নেই বললেই চলে, তাই ধাঙড় সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আজ কাপড়ের থলে কিনেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। “যে পরিমাণে সময় আর পয়সাকড়ি লাগে, তা দিয়ে এ কারিগরি বাঁচিয়ে রাখা না-মুমকিন,” সিদ্দু দাদু স্বীকার করলেন। ২০০ টাকার সুতো কিনে ২৫০-৩০০ টাকায় জালি বেচতে হয়। “কাহিহি উপিয়োগ নহি [এটা কোনও কম্মের নয়]।”

'The most difficult part is starting and making the loops in a circular form,' says Siddu. Making these loops requires a lot of patience and focus
PHOTO • Sanket Jain
'The most difficult part is starting and making the loops in a circular form,' says Siddu. Making these loops requires a lot of patience and focus
PHOTO • Sanket Jain

সিদ্দু দাদুর জবানে: ‘গোলাকার ধাঁচে ফাঁস পাকানোটাই এ কাজের সবচাইতে কঠিন ধাপ।’ অশেষ ধৈর্য্য ও মনোযোগ না থাকলে এ কাজ অসম্ভব

Left: After spending over seven decades mastering the art, Siddu is renowned for making symmetrical jalis and ensuring every loop and knot is of the same size.
PHOTO • Sanket Jain
Right: He shows the beginning stages of making a jali and the final object.
PHOTO • Sanket Jain

বাঁদিকে: এ কারিগরিতে সাতটা দশক পার করে তবেই না প্রতিসম জালি বানানোয় সিদ্দু গাওড়ের এত নামডাক। তাঁর হাতের প্রতিটা গিঁট প্রতিটা ফাঁস সমান আকারের হয়। ডানদিকে: জালি বানানোর প্রাথমিক ধাপ ও তৈরি করা একটি জালি প্রদর্শন করছেন তিনি

সিদ্দু গাওড়ের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বছর পঞ্চাশেকের মাল্লাপা ও বছর পঁয়ত্রিশের কাল্লাপা দুজনেই ভেড়া চরানো ছেড়ে এক-এক একর জমিতে চাষ করে খাচ্ছেন। মেজছেলে বালু অবশ্য চাষও করেন, আবার ৫০টি ভেড়া নিয়ে দূর-দূরান্তে চরেও বেড়ান। মেয়ে শানার বয়স বছর তিরিশ, তিনি একজন গৃহিণী।

তিনছেলের একজনও জালি বোনা শেখেননি। “শিকলি ভি নহি, ত্যানা জামাত পান নহি, আনি ত্যানি দোসকা পান ঘাটলা নহি [শিখলও না, চেষ্টাও করল না, এমনকি মনযোগও দিল না],” এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন সিদ্দু দাদু। তিনি বলেন যে লোকে তাঁর হাতের কাজ মন দিয়ে দেখে বটে, কিন্তু শেখার বেলায় অষ্টরম্ভা।

ফাঁস প্যাঁচানো দেখতে সোজা লাগলেও কাজটা কিন্তু মোটেই জলভাত নয়, একেকসময় তো বেশ শারীরিক কষ্ট হয় তাঁর। “হাতালা মুঙ্গ্যা ইয়েতাত [ছুঁচ ফোটার মতো ব্যথা হয়],” তিনি বললেন। এছাড়া অসহ্য পিঠব্যথা আর চোখের কষ্ট তো আছেই। বছরকয়েক আগে দুটো চোখেই ছানি পড়েছিল, অস্ত্রোপচার করানোর পর থেকে চশমা এঁটে থাকেন। কাজের গতি কিঞ্চিৎ কমেছে ঠিকই, তবে জালিশিল্প টিকিয়ে রাখার জেদ আজও তাঁর ষোল আনা।

গ্রাস অ্যান্ড ফোরেজ সায়েন্স পত্রিকায় ভারতের পশুখাদ্য উৎপাদনের উপর জানুয়ারি ২০২২-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র মোতাবেক: সবুজ পশুখাদ্য, পশুখাদ্যের উপাদান, এমনকি ফসল-কাটার পর পড়ে থাকা শুকনো খড়-বিচালিতেও বিশাল পরিমাণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ভারতবর্ষে।

কারদগা গ্রামে আজ জনাকয় ধাঙড় বাদে সব্বাই পশুপালন ছেড়ে দিয়েছেন, এর অন্যতম কারণ পশুখাদ্যে ঘাটতি। সিদ্দু দাদুর কথায়, “গত ৫-৭ বছরে বেশ কয়েকটা ভেড়া আর ছাগল মারা যাওয়ার ঘটনা জানিয়েছিলাম আমরা। এর কারণ চাষিরা ব্যাপক হারে আগাছানাশক ও কীটনাশক কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন,” জানালেন তিনি। কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের বক্তব্য অনুসারে ২০২২-২৩ সালে ১,৬৬৯ মেট্রিক টন অজৈব কীটনাশক ইস্তেমাল করেছিলেন কর্ণাটকের চাষিরা — ২০১৮-১৯ সালে যে সংখ্যাটা ছিল ১,৫২৪ মেট্রিক টন।

Left: Siddu's wife, the late Mayavva, had mastered the skill of shearing sheep and making woolen threads.
PHOTO • Sanket Jain
Right: Siddu spends time with his grandson in their house in Karadaga village, Belagavi.
PHOTO • Sanket Jain

বাঁদিকে: ভেড়ার পশম ছাড়িয়ে উলের সুতো বোনায় ওস্তাদ হয়ে উঠেছিলেন সিদ্দু দাদুর প্রয়াত স্ত্রী মায়াভ্যা দিদা। ডানদিকে: বেলাগাভির কাদরগা গাঁয়ের বাড়িতে নাতির সঙ্গে সময় কাটান সিদ্দু দাদু

The shepherd proudly shows us the jali which took him about 60 hours to make.
PHOTO • Sanket Jain

সগর্বে একখান জালি বার করে এনে আমাদের দেখালেন তিনি, ৬০ ঘণ্টা ঘাম ঝরানোর ফসল এটি

একথাটাও জানালেন যে পশুপালনের খরচা কেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে — চট করে দেখা যায় না বটে, কিন্তু বাড়তে থেকেছে চিকিৎসার খরচাও। “ভেড়া আর ছাগলগুলো থেকে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাই ফি বছর তাদের ওষুধপত্র আর ইঞ্জেকশনের পিছনে ২০,০০০ টাকা খরচা তো হয়ই।”

বছর গেলে ভেড়া-পিছু ছ’টা করে ইঞ্জেকশন (টিকা) দিতে হয়, “ভেড়াগুলো জানে বাঁচলে তবেই খানিক পয়সাকড়ি রোজগার হয় আমাদের,” বললেন তিনি। তাছাড়া এ তল্লাটে এক ইঞ্চি জমিনও বাকি নেই যেখানে আখ চাষ হচ্ছে না। ২০২১-২২ সালে ৫০ কোটি মেট্রিক টন আখ ফলিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম চিনি উৎপাদক ও ভোক্তার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল আমাদের দেশ।

দুই দশক আগেই পশুপালনে ইতি টেনেছেন সিদ্দু দাদু। খান পঞ্চাশেক যে ভেড়া আর ছাগল ছিল, তা ছেলেদের মধ্যে বিলিয়েও দিয়েছিলেন। মৌসুমী বৃষ্টি দেরি করে নামায় কৃষিচক্র কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, সে বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম তাঁর কাছে। “এবছর জুন থেকে জুলাই মাঝামাঝি অবধি আমার তিন একর জমিটা পানির অভাবে খাঁ-খাঁ করছিল। এক পড়শি খানিক সাহায্য করায় কোনওমতে চিনেবাদাম ফলিয়েছি।”

উষ্ণপ্রবাহের সংখ্যাবৃদ্ধি ও অতিবৃষ্টির বাড়বাড়ন্ত এসে চাষবাসের খাতে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেছে, জানালেন তিনি, “এককালে মা-বাবারা তাদের বাচ্চাদের হাতে খানকতন ছাগল-ভেড়া তুলে দিত। আর আজ এমনই এক অনামুখো সময় এসেছে, বিনেপয়সায় দিলেও কেউ আর পশুপ্রাণী রাখতে চাইছে না।”

মৃণালিনী মুখার্জি ফাউন্ডেশনের সহায়তায় লিখিত সংকেত জৈনের এই প্রতিবেদনটি গ্রামীণ কারিগরদের ঘিরে সৃষ্ট একটি সিরিজের অংশ।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Sanket Jain

ସାଙ୍କେତ ଜୈନ ମହାରାଷ୍ଟ୍ରର କୋହ୍ଲାପୁରରେ ଅବସ୍ଥାପିତ ଜଣେ ନିରପେକ୍ଷ ସାମ୍ବାଦିକ । ସେ ୨୦୨୨ର ଜଣେ ବରିଷ୍ଠ ପରୀ ସଦସ୍ୟ ଏବଂ ୨୦୧୯ର ଜଣେ ପରୀ ସଦସ୍ୟ ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Sanket Jain
Photo Editor : Binaifer Bharucha

ବିନଇଫର୍ ଭାରୁକା ମୁମ୍ବାଇ ଅଞ୍ଚଳର ଜଣେ ସ୍ୱାଧୀନ ଫଟୋଗ୍ରାଫର, ଏବଂ ପରୀର ଫଟୋ ଏଡିଟର୍

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ବିନାଇଫର୍ ଭାରୁଚ
Translator : Joshua Bodhinetra

ଯୋଶୁଆ ବୋଧିନେତ୍ର କୋଲକାତାର ଯାଦବପୁର ବିଶ୍ୱବିଦ୍ୟାଳୟରୁ ତୁଳନାତ୍ମକ ସାହିତ୍ୟରେ ଏମ୍.ଫିଲ୍ ଡିଗ୍ରୀ ହାସଲ କରିଛନ୍ତି । ସେ PARIର ଜଣେ ଅନୁବାଦକ, ଜଣେ କବି, କଳା ଲେଖକ, କଳା ସମୀକ୍ଷକ ଏବଂ ସାମାଜିକ କର୍ମୀ

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Joshua Bodhinetra