“কোনও গোলমাল ছিল না। অস্বাভাবিক কিচ্ছু ঘটেনি। দিব্যি সব ঠিকঠাক চলছিল,” পরিবারের ফাইল আর রিপোর্টের স্তূপের মাঝে বসে স্মৃতি হাতড়ে, অভাবনীয় দুর্ঘটনাটির সময়ে তাঁদের পরিবারের একদিন-প্রতিদিনের কথা শোনাচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী দীনেশ চন্দ্র সুথার।

রাজস্থানের বনসী গ্রামে সুথারদের বাড়ির দেওয়ালে ঝুলছে তাঁর মৃত স্ত্রীর ছবি। ভাবনা দেবীর যে ছবিটি দীনেশের ফাইলে আছে তারই একটি কপি ঝুলছে দেওয়ালে। ২০১৫ সালে তাঁদের বিয়ের কয়েক মাস পর এই ছবি তোলা হয়েছিল কোনও এক সরকারি প্রকল্পে দরখাস্ত করার জন্য।

তাঁদের পাঁচ বছরের সংক্ষিপ্ত বিবাহিত জীবনের সাক্ষী এই কাগজপত্রগুলি আগলে দীনেশ বসে আছেন। তাঁর দুই ছেলে - তিন বছর বয়সী চিরাগ ও ছোট্ট দেবাংশ। বরি সাদরি পৌরসভা এলাকায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নির্বীজকরণের সময়ে অন্ত্রে খোঁচা লেগে ভাবনা মারা যাওয়ার সময় দেবাংশের বয়স ছিল মাত্র ২৯ দিন, তখনও অবধি তার নামকরণও হয়নি।

বিএড ডিগ্রিধারী দীনেশ বনসী থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে বদওয়ালে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে ১৫,০০০ টাকা আয় করেন। জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া এই ঘটনার টুকরোগুলো গেঁথে তুলে এর কারণ হিসাবে একটা সূত্র বার করার অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু শেষে দোষ দিয়েছেন সেই নিজেকেই।

“ডাক্তাররা ভরসা দিলেন আর আমি তাঁদের কথায় বিশ্বাস করে অপারেশনে রাজি হলাম বলেই কি এমনটা হল? আমার আরও খোঁজখবর নেওয়া উচিত ছিল। অপারেশনে রাজি হওয়া বা কারও কথা বিশ্বাস করাই উচিত হয়নি। এ আমারই দোষ,” ২০১৯ সালের ২৪শে জুলাই স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে বহু বার ঘটনার কাটাছেঁড়া করে অশেষ যন্ত্রণায় এই কথাগুলি বললেন দীনেশ।

২০১৯-এর ২৫শে জুন, মৃত্যুর মাস খানেক আগে ২৫ বছর বয়সী ভাবনা স্বাস্থ্যবান শিশুপুত্র দেবাংশের জন্ম দেন। প্রথমবারের মতোই দ্বিতীয়বারও তিনি নির্বিঘ্নে সন্তান প্রসব করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট এমনকি বনসী গ্রাম থেকে ৬০ কিলমিটার দূরে, চিত্তোরগড় জেলার বরি সদরি ব্লকের বরি সদরি সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁর প্রসব অবধি, সব স্বাভাবিক ছিল।

Bhavna Suthar underwent permanent sterilisation at the CHC in Bari Sadri on July 16, 2019; she died a week later
PHOTO • Anubha Bhonsle

বরি সদরির সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাবনা সুথা রে র স্থায়ী নির্বীজকরণ হয় ১৬ জুলাই ২০১৯-এ; এর এক সপ্তাহ পর তাঁর মৃত্যু হয়

প্রসবের দিন কুড়ি পর ভাবনা যখন ৩,৮৮৩ জনসংখ্যা সম্বলিত গ্রাম বনসীতেই নিজের মার বাড়িতে ছিলেন, তখন এক আশা-কর্মী বাড়ি এসে তাঁকে সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বলেন শারীরিক পরীক্ষার জন্য। তাঁর শরীরে কোনও দুর্বলতা না থাকলেও ভাবনা তাঁর সঙ্গে যাওয়াই মনস্থ করেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা। “আশা-কর্মীটি যখন আমাদের বাড়িতে আসে তখন অপারেশনের কোনও কথাই বলেনি,” ভাবনার মা দীনেশকে বলেছিলেন।

সমস্ত পরীক্ষার পর আশা-কর্মীটি এবং সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে নির্বীজকরণের জন্য অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

“তাঁর দুটি সন্তান আছে এবং যেহেতু তাঁরা পরিবার পরিকল্পনা বা জন্মনিয়ন্ত্রণের আর কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করেন না সেক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে নেওয়াই ভলো। ঝঞ্ঝাট শেষ,” আশা-কর্মী এবং চিকিৎসকটি ভাবনাকে তাঁর মার সামনে একথা বলেন।

দশম শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করা ভাবনা যখন বলেন যে তিনি বিষয়টি ভেবে দেখবেন বাড়ি ফিরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে নির্বীজকরণের কথা আলোচনা করে, তাঁকে বলা হয় যে কাজটি তখনই সেরে ফেলা ভালো হবে। “একটি নির্বীজকরণের ক্যাম্প সেদিনই সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলছিল। সেকারণে তাঁরা বলেন যে ভাবনা যেহেতু প্রসবের পর এখন সেরে উঠছেন ফলে এর সঙ্গেই যদি অপারেশন করিয়ে নেন তাহলে একইসাথে সব হয়ে যাবে, দ্বিতীয়বার আর কষ্ট করতে হবে না — এই কথা বলে ওরা সেদিনই আমাদের এই কাজটি সেরে ফেলতে জোর করেন,” চিকিৎসকের কথা মনে করে দীনেশ বলেন। স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ফোন পেয়ে দীনেশ নিজের বিদ্যালয় থেকে সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজির হন।

“সত্যি কথা বলতে কি একটু অদ্ভুত লেগেছিল বটে। আমরা নির্বীজকরণের কথা ভাবিনি তখনও। হয়তো পরে সেসব ভাবতাম কিন্তু সেদিন ওই সব আমি প্রথমবার শুনছিলাম। ফলে, আমি রাজি হয়ে যাই,” বললেন দীনেশ।

তারপর আরও বললেন, “তারপর থেকেই সব কেমন যেন বদলে গেল।”

The loss is palpable, but Dinesh is determined to to get whatever justice can look like in the face of this catastrophe
PHOTO • Anubha Bhonsle

তাঁদের অশেষ ক্ষতি হয়েছে একথা স্পষ্ট কিন্তু এই সর্বনাশের মুখোমু খি হয়ে দীনে এখন এর বিহিত চেয়ে যথাসম্ভব সুবিচার পেতে বদ্ধপরিকর

১৬ জুলাই ২০১৯ বরি সদরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রথম যে পাঁচজন মহিলার নির্বীজকরণ হয় ভাবনা ছিলেন তাঁদের একজন। মিনিল্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে এক এমবিবিএস চিকিৎসকের হাতে তাঁরই প্রথম টিউবাল লাইগেশন হয়। অন্য চারজনকে আস্ত্রপচারের ঘন্টা দুয়েক পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তিন ঘন্টা পর যখন ভাবনার জ্ঞান ফিরল তখন তিনি অসহ্য পেটের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁরা তখন ভাবনাকে একটা ইঞ্জেকশন দেন ও রাতটা সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই থেকে যেতে বলেন কারণ তাঁর রক্তচাপ বেশি ছিল। পরেরদিন তাঁর পেটের ব্যথা না কমা সত্ত্বেও তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দীনেশের মনে পড়ে, “সেই একই ডাক্তার আমাকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলেন যে অপারেশনের পর ব্যথা হওয়াই স্বাভাবিক; ওকে বাড়ি নিয়ে যান।”

রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাবনার পেট ফুলে ওঠে আর ব্যথার তীব্রতাও বাড়ে। সকালে, তাঁরা দুজনে আবার সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফেরত যান। একটি এক্স-রে ও সোনোগ্রাফির পরে ভাবনাকে আবার হাসপাতেলে ভর্তি করা হয়। কী হয়েছে সে বিষয়ে দীনেশদের কোনও ধারণাই ছিল না। পরবর্তী তিনদিন তাঁকে ছয় বোতল স্যালাইন দেওয়া হয়। দুদিন তাঁকে কোনও খাবার দেওয়া হয়নি। পেটের ফোলাটা প্রথমে কমে গেলেও আবার তা বাড়তে থাকে।

যে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছিলেন তিনি অস্ত্রোপচারের পাঁচ দিন পর প্রায় রাত ১০টার সময়ে দীনেশকে জানান যে ভাবনাকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার দূরে উদয়পুরের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে চিকিৎসার জন্য। “তিনি প্রাইভেট গাড়ির ব্যবস্থা করেন যেটির ভাড়ার টাকাও আমি দিই (১,৫০০ টাকা), এবং সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন কম্পাউন্ডারকেও সঙ্গে পাঠিয়েও দেন। কিন্তু সমস্যাটা কী ছিল? আমি আজও জানতে পারলাম না। অপারেশন সংক্রান্ত সমস্যা — এর বেশি আর কিছুই জানতে পারিনি।”

রাত ২টো নাগাদ তাঁরা উদয়পুরের মহারাণা ভূপাল সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছানোর পর নতুন করে ভাবনার এক্স-রে করার পর তাঁদের হাসপাতালের অন্যদিকে মহিলা ও শিশু বিভাগে যেতে বলা হয়। সেখানে ভাবনাকে আবারও ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

ভাবনার চিকিৎসা করতে অনিচ্ছুক চিকিৎসক যখন বললেন, “আমরা অন্য হাসপাতালের ভুল মেরামতির কাজ করি না,” তখনই প্রথম দীনেশ বুঝতে পারেন যে সাংঘাতিক কোনও গলদ ঘটে গেছে।

Dinesh is left with two sons, three-year-old Chirag (in the photo with relatives) and Devansh, who was just 29 days old when Bhavna, his mother, died of a punctured intestine
PHOTO • Anubha Bhonsle

দীনেশের দুই ছেলে - তিন বছর বয়সী-চিরাগ (ছবিতে যাকে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে) আর দেবাংশ , মা অন্ত্রে আঘাত পেয়ে মারা যাওয়ার সময় যার বয়স ছিল মাত্র ২৯ দিন

অবশেষে ২২শে জুলাই ভাবনাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সোনোগ্রাফি করার পর দীনেশকে জানানো হয় যে তৎক্ষণাৎ দুটি অস্ত্রোপচার করা হবে — প্রথমটি ভাবনার কোলোন সাফা করার জন্য আর অপরটি তাঁর অজস্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া অন্ত্রের মেরামতির জন্য! তাঁকে জানানো হয় যে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা খুব এক চূড়ান্ত সংকটকাল হতে চলেছে।

অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা দীনেশকে জানান যে নির্বীজকরণের সময়ে সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক নিজের স্ক্যালপেল দিয়ে ভাবনার অন্ত্রে অজস্র ছিদ্র করে ফেলেছে এবং সে কারণেই তাঁর মল পেটের চারদিকে ছড়িয়ে গিয়ে সারা শরীরে সংক্রমণ ঘটিয়েছে।

পরের ৪৮ ঘন্টা ভাবনা চিকিৎসকদের নজরদারিতে ছিলেন। তাঁদের দুই ছেলে ছিল তাদের দাদু দিদিমার কাছে। আর তাঁর স্বামী কেবল চা আর জল খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন অবস্থার উন্নতির জন্য। তেমন কোনও সুলক্ষণ ভাবনার মধ্যে আর ফুটে তো ওঠেইনি, বরং ২০১৯-এর ২৪শে জুলাই সন্ধে ৭.৩০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রয়াস নামক চিতোরগড় ভিত্তিক একটি বেসরকারি সংগঠন ও মানবাধিকার আইন নেটওয়ার্ক এই ঘটনাটিকে নিয়ে ডিসেম্বর ২০১৯ নাগাদ তথ্যানুসন্ধানের কাজ শুরু করে। তাঁরা দেখেন যে ভাবনার নির্বীজকরণ হয়েছে স্পষ্টত ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক দ্বারা নির্দিষ্ট, নারী ও পুরুষের নির্বীজকরণের মানদণ্ড (২০০৬) কে লঙ্ঘন করে।

তাঁদের রিপোর্ট অনুসারে ভাবনাকে সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফুসলে নিয়ে গিয়ে জোর করে স্থায়ী নির্বীজকরণ করা হয় কোনও পূর্ব পরামর্শ প্রক্রিয়া ছাড়াই। অস্ত্রোপচারের পরেও সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা ভাবনার পরিবারকে জানাননি যে তাঁদের অবহেলায় রোগীর অন্ত্রে ছিদ্র হয়েছে এবং সেই ক্ষত সারানোর জন্য কোনও অস্ত্রোপচারও তাঁরা করেনি। শুধু তাই নয়, সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা উদয়পুরের সরকারি হাসপাতালে কেউ তাঁদের জানায়নি যে ২০১৩ সালের পরিবার পরিকল্পনা ক্ষতিপূরণ প্রকল্প অনুসারে এই মৃত্যুর জন্য তাঁদের ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল টিউবাল লায়গেশন অপারেশনের ঠিক পরই।

প্রয়াস সংস্থার পরিচালক ছায়া পাচৌলি জানান যে সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করে এই নির্বীজকরণ শিবিরগুলিতে কেবল লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যা ঘটে, তার ফলে যেভাবে মহিলাদের স্বাস্থ্য ও অধিকার লঙ্ঘিত হয় তার হুবহু উদাহরণ হল ভাবনার ঘটনাটি।

এই অস্ত্রোপচার করাতে তাঁরা প্রস্তুত কি না তা একজন মহিলা এবং তাঁর জীবন সঙ্গীকে ভেবে দেখার যথেষ্ট সময় দেওয়া উচিত,” সরকারি নির্দেশিকার নিয়মের উল্লেখ করে বললেন পাচৌলি। “একটা শিবির হচ্ছে বা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে মেয়েদের জুটিয়ে আনার চাপ আছে বলে ভাবনার মতো মেয়েদের উপর অস্ত্রোপচার করাতে জোর করা হবে, এই কথা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। ‘লক্ষ্যমাত্রা’ পূরণকে মাথায় রেখে এখন আর কাজ হয় না বলে সরকার দাবি করতেই পারে কিন্তু আমরা জানি যে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চাপ দেওয়া হয় মহিলাদের নির্বীজকরণের জন্য রাজি করাতে, এবং নির্বীজকরণের সংখ্যার ভিত্তিতে জেলাকে (প্রশাসনকে) বিচার করা হয়, এমনকি পুরস্কৃতও করা হয়। এই ধরনের কাজ এখুনি বন্ধ হওয়া উচিত।

পাচৌলি আরও বললেন, “এই ধরনের শিবির করে কাজ করা আজই বন্ধ হওয়া উচিত কেবল নিরাপদ অস্ত্রোপচারের জন্যই নয়, এর আগে এবং পরে কোনও জটিলতা দেখা দিলে উন্নত মানের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্যও। বরং, নির্বীজকরণকে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবার অঙ্গ করে নেওয়া উচিত। তাছাড়াও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরামর্শ দানে পারদর্শী করে তোলা প্রয়োজন এবং এটিকে অস্ত্রোপচারের আগের প্রস্তুতির আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।”

Dinesh Suthar is holding on to papers and photographs that mark his brief married life with Bhavna
PHOTO • Anubha Bhonsle
Dinesh Suthar is holding on to papers and photographs that mark his brief married life with Bhavna
PHOTO • Anubha Bhonsle

ভাবনার সঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত বিবাহিত জীবনের ছবি ও কাগজপত্র আগলে বসে আছেন দীনেশ সুথার

রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে প্রয়াস জানতে পেরেছে যে সেখানে বহু মহিলা আছেন যাঁদের নির্বীজকরণ ঠিকভাবে হয়নি অথচ তাঁরা কোনও ক্ষতিপূরণ দাবি করেননি কারণ তাঁরা জানেনই না যে এই অধিকার তাঁদের আছে।

“তাঁদের জীবনসঙ্গী/পরিবারকে পুরো ব্যবস্থাটির বিষয়ে সব না জানিয়েই বহু মহিলাকে নির্বীজকরণে উৎসাহ দেওয়া হয়। কদাচিৎ যে জটিলতা দেখা দিতে পারে সে বিষয় মহিলাদের সবকিছু বলাও হয় না, আর তাঁদের এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতও করা হয় না। নির্বীজকরণ ব্যর্থ হলে অথবা কোনও জটিলতা দেখা দিলে কী করতে হবে সে বিষয়ে মহিলাদের বেশিরভাগ সময়েই কোনও আগাম পরামর্শ দিয়ে রাখা হয় না,” বললেন পাচৌলি।

যাবতীয় আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরেও এই পুরো অবস্থার শিকার দীনেশ এবং তাঁর পরিবার অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে, এমনকি নিজের সঙ্গে পরিহাস করেও এই যন্ত্রণা সামলাবার চেষ্টা করছেন। খাবারদাবার গুছিয়ে নিজের শিক্ষকতার কাজে ফিরতে গিয়ে বেগ পাচ্ছেন দীনেশ। “একদিন আমি ফাঁকা টিফিন বাক্স নিয়েই চলে গিয়েছিলাম,” একথা বলতে গিয়ে তিনি হেসে ফেললেন।

সংসারের এই ভয়ানক দুর্গতি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট, অথচ দীনেশ জানেন যে তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। নিজেদের কংক্রিটের বাড়িতে আরও কিছু কাজ করাচ্ছেন তিনি। একদিকে টেলিভিশন চলছে, বাড়ির আরেকদিক থেকে ভেসে আসছে হামানদিস্তার আওয়াজ। আর দেবাংশের দেখাশুনা করছেন পাড়ার মহিলারা।

ভাবনার মৃত্যু অবধি ওষুধ আর যাতায়াতে এই পরিবারের খরচ হয়েছে ২৫,০০০ টাকা এবং এই সর্বানাশের সামনে দাঁড়িয়ে যেটুকু ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব তা পেতেই দীনেশ এখন বদ্ধপরিকর। ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাঠানো আবেদনপত্র জমা পড়ে আছে চিতোরগড়ের প্রধান স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে। দীনেশের কথায়, “আমার যা ছিল সবই বেরিয়ে গেছে। এসবের অর্থ হত আজ যদি ও বেঁচে থাকত।”

পারি এবং কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্টের গ্রামীণ ভারতের কিশোরী এবং তরুণীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দেশব্যাপী রিপোর্টিং প্রকল্পটি পপুলেশন ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য প্রান্তনিবাসী এই মেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের স্বর এবং যাপিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই অত্যন্ত জরুরি বিষয়টিকে ঘিরে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] এই আইডিতে

অনুবাদ: চিলকা

Anubha Bhonsle

২০১৫ সালের পারি ফেলো এবং আইসিএফজে নাইট ফেলো অনুভা ভোসলে একজন স্বতন্ত্র সাংবাদিক। তাঁর লেখা “মাদার, হোয়্যারস মাই কান্ট্রি?” বইটি একাধারে মণিপুরের সামাজিক অস্থিরতা তথা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট এর প্রভাব বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

Other stories by Anubha Bhonsle
Illustration : Labani Jangi

২০২০ সালের পারি ফেলোশিপ প্রাপক স্ব-শিক্ষিত চিত্রশিল্পী লাবনী জঙ্গীর নিবাস পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায়। তিনি বর্তমানে কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে বাঙালি শ্রমিকদের পরিযান বিষয়ে গবেষণা করছেন।

Other stories by Labani Jangi
Editor : Hutokshi Doctor
Series Editor : Sharmila Joshi

শর্মিলা জোশী পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়ার (পারি) পূর্বতন প্রধান সম্পাদক। তিনি লেখালিখি, গবেষণা এবং শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত।

Other stories by শর্মিলা জোশী
Translator : Chilka

চিলকা কলকাতার বাসন্তী দেবী কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিশেষ ক্ষেত্রটি হল গণমাধ্যম ও সামাজিক লিঙ্গ।

Other stories by Chilka