মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলায় কন্নড় নামের একটি ব্লকের এক অতি সাধারণ বাসিন্দা হলেন হীরাবাঈ ফকিরা রাঠোর।এই দরীদ্র চাষী পরিবার আজ এক অদ্ভুত সমস্যার শিকার। ২০১০ সালে যখন ব্যাঙ্কগুলিতে ট্র্যাক্টর ঋণ দেওয়ার হিড়িক ওঠে তখন গাড়ি দোকানের সেলসম্যানের কথায় ভুলে একটি ট্র্যাক্টর কিনে বসেন হীরাবাঈ। তিনি ভেবেছিলেন “...যে এই ট্র্যাক্টর নিজের জমিতে ব্যবহার করে এবং অন্যদের ভাড়া দিয়ে খানিকটা লাভের মুখ” দেখবেন। আজ পাঁচ বছর পরেও সেই ঋণের ধাক্কা তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। অথচ “ট্র্যাক্টর দোকানের সেলসম্যান বলে ছিল এই ঋণ পাওয়া যত সহজ ততই সহজ এই ঋণ মেটানো”, জানালেন হীরাবাই। ভাঙাচোরা ঘরে বসে অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেও আজো সেই হিসেব মেলাতে পারেন নি তিনি। হীরাবাঈ এবং তাঁর বনরক্ষী স্বামী আদিবাসী সমাজের বানজারা সম্প্রদায়ের মানুষ।বানজরা সম্প্রদায় ঐতিহাসিক ভাবে যাযাবর হলেও এই অঞ্চলের তাঁরা চাষবাস করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। সাড়ে তিন একর জমি চাষ করে হিরাবাঈ ও তাঁর এই খেলানো বড় সংসারের দিন গুজরান হয়।

হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাঙ্কও এই ঋণ খুব তাড়াতাড়ি মঞ্জুর করে দেয়।কিন্তু আসলে ১৫ শতাংশ সুদের হারে ৭ বছর ধরে  ৫,৭৫,০০০ টাকার দেনা শোধ করতে হীরাবাঈ কে দিতে হয়েছে প্রায় ৭,৫০,০০০ টাকা। আজ তাঁর দেউলিয়া অবস্থা। বাকী এককালীন সমঝোতার প্রায় ১,২৫,০০০ টাকা তাঁকে দিতে হয়েছে আত্মীয়দের থেকে ধার করে। ২০১০ সালের দেনা এ বছরের মার্চ মাসে তিনি শোধ দেন। আজ তিনি মনে করেন যে এটা তাঁর "জীবনের সব থেকে বড় ভুল"। "এই ঋণ আমি আমার ছেলেমেয়েদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে যেতে পারতাম না", জানান তিনি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের এই অঞ্চল খরাবিধ্বস্থ হওয়ায় চাষবাসের কাজ থমকে আছে। ফলে ট্র্যাক্টর ব্যবহার প্রায় হয়না বললেই চলে। ঋণ শোধ করতে না পেরে এই অঞ্চলে অগণিত চাষি আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনা লঘুভাবে দেখার মতো নয়। হিরাবাঈ-এর মতো আরো বহু পরিবার আজ এই একই সমস্যার সম্মুখীন। এদের মধ্যে কিছু মানুষ হয়তো কোনোদিন -ই এই ঋণ শোধ করতে পারবেন না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০০৫-২০০৬ সালের মধ্যে হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাঙ্ক এর একটি শাখা থেকে খরা বিধ্বস্ত মারাঠওয়াড়া অঞ্চলে কম করে ১০০০ জনকে এই ঋণ দেওয়া হয়।

অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্রের কর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবীদাস তুলজাপুরকর জানিয়েছেন, " আসলে প্রায়োরিটি সেক্টর লেন্ডিঙ্গ বা সামাজিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঋণ (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামগ্রিক সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে কিছু ঋণ দিয়ে থাকে। এগুলি প্রায়োরিটি সেক্টর লেন্ডিঙ্গ এর আওতায় পড়ে। যেমন কৃষিঋণ, শিক্ষাক্ষেত্রে ঋণ ইত্যাদি) এর আওতায় আসতে গেলে ব্যাংকগুলিকে একটা নির্দিষ্ট-সংখ্যক ঋণগ্রাহক দেখাতেই হয়। সেই লক্ষ্যপূরণের তাগিদেই ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণ দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায় চড়া সুদের হারে। ঋণগ্রাহকদের একাংশ কিস্তিতে বা এককালীন সমঝোতার মাধ্যমে ঋণ শোধ করতে পারলেও বেশিরভাগ অংশই এককালীন সমঝোতার টাকা জোগাড় করতে পারেননি। আবার কিছুজন এখনও একটা কিস্তিও দিয়ে উঠতে পারেননি। " ওই ব্লকে অবস্থিত হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাংকের শুধুমাত্র একটি শাখাতেই প্রায় ৪৫ জন ঋণের একটাকাও শোধ করতে পারেননি।সর্বসাকুল্যে সেই টাকার পরিমাণ প্রায় ২.৭ কোটি। বলাই বাহুল্য, সারা দেশের নিরিখে এই পরিমাণ কতটা মারাত্মক। অতিরিক্ত চড়া সুদ (১৫.৯ শতাংশ) এই সমস্যার অন্যতম কারণ।

PHOTO • P. Sainath
02-IMG_1208-PS-The Benz and the Banjara.jpg

মুম্বাইয়ের একটি ব্যাংকের কাউন্টার। ফাঁকাজায়গাটিতে কি ট্র্যাক্টর এর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ কোনো এককালে ছিল না?

সমকালীন আরেকটি ঘটনাও খুব উল্লেখযোগ্য। ঘটনাটি ঘটে পূর্বোক্ত স্থানের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে ঔরাঙ্গাবাদ শহরে।২০১০ সালে প্রায় হঠাৎ করেই এই শহরটি বিশ্ববিনিয়োগ মানচিত্রে পদার্পন করে। কারণটা ঠিক কি ছিল? জানা যায়, ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে এক দিনে প্রায় দেড়শটি মার্সিডিজ বেঞ্জ (যার দাম প্রায় ৩০-৭০ লাখের মধ্যে) বিক্রি হয়েছিল এক ধাক্কায়। এরই দৌলতে ঔরাঙ্গাবাদ বিশ্ববিনিয়োগ মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। এমনকি উইলফ্রেড আলবার, মার্সিডিজ বেঞ্জ-এর ভারত শাখার পরিচালন- অধিকর্তা এই টিয়ার ২ এবং টিয়ার ৩ (২য় এবং ৩য় শ্রেণীর শহর) শহরগুলির অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে কুর্নিশ জানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই আপাত অর্থনৈতিক “অগ্রগতির”- র পেছনে হাত ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া –র তৎকালীন চেয়ারম্যানের। এই বড়কর্তার আদেশে ‘এস বি আই ঔরাঙ্গাবাদ’ বেঞ্জ ক্রেতাদের ৭ শতাংশ সুদের হারে ঋণ দেয়, তার মানে হিসেব করে দেখা যায় যে মোট ৬৫ কোটি টাকার (১ দিনে ১৫০ টি বেঞ্জ বিক্রি হওার সামগ্রীক ব্যবসা) প্রায় দুয়ের তিন ভাগ শুধু ঋণ ই দেওয়া হয়েছিল, এবং এই ভাবেই বিশ্ববিনিয়োগ মানচিত্রে পদার্পন করেছিল ঔরাঙ্গাবাদ।

অথচ, একই পরিবহন ঋণের আওতায়, হিরাবাঈ এবং তাঁর মত আরো অনেকে সে সময়ে শতকরা ১৫.৯ টাকা সুদে ঋণশোধ করছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, বেঞ্জ ঋণের গ্রাহকরা সবাই ছিলেন এলাহাবাদের অভিজাত সম্প্রদায়ের মানুষ। কেউ শিল্পপতি তো কেউ উকিল, কেউ ডাক্তার, কেউ আবার ঔরঙ্গাবাদের একজন বর্তমান বিধায়ক।দুই ক্ষেত্রের ঋণগ্রাহকদের মধ্যেকার আর্থিক বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। একদিকে দরিদ্র বানজারারা ট্র্যাক্টর ঋণে সুদ দিচ্ছিলেন ১৫.৯ শতাংশ যা আভিজাত্যপূর্ণ মার্সিডিজ বেঞ্জের জন্য ধার্য সুদের প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্ববিনিয়োগ মানচিত্রে মার্সিডিজ বেঞ্জের বিক্রীর সংখ্যা ঔরাঙ্গাবাদ তথা ভারতকে যে কৌলীন্য দিতে পারে তা তো আর ট্র্যাক্টর পারেনা। তাই বোধহয় এই বৈষম্য। বেঞ্জ ক্রেতাদের মধ্যে দলিত বা আদিবাসীর সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। অপরদিকে ট্র্যাক্টর ঋণগ্রাহক দের মধ্যে দলিত বা আদিবাসীর সংখ্যাই বেশী।

আমরা যখন এই ট্র্যাক্টর ঋণ সংক্রান্ত ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছিলাম,তখন এক ঋণগ্রাহকের খোঁজ পাই যার নাম বসন্ত দলপত রাঠোর। ইনি ট্র্যাক্টর ঋণ এর নামে ৭.৫ লাখ টাকা শোধ দিয়েছেন। আরেকজন - নাম অমর সিং রাঠোর। ইনিও বানজারা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। ব্যাংকের কাছে তার ঋণ রয়েছে প্রায় ১১.১৪ লাখ টাকা এবং এখনো তিনি একটি কিস্তিও দিয়ে উঠতে পারেননি। ব্যাঙ্ক থেকে ঠিকানা নিয়ে খোঁজ করতে গেলে ওই এলাকার মানুষরা আমাদের ব্যাংকের লোক ভেবে বসেন। ফলতঃ, তাঁরা অস্বীকার করেন যে অমর সিং নামে সেখানে আদৌ কেউ থাকেন। অনেক চেষ্টার পর আমরা এই অমর সিং-এর বাড়ি খুঁজে বের করি। যা দেখি তাতে অনেক অঙ্ক কষলেও এই বাড়ির আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় শূন্য এবং বলাই বাহুল্য সেখানে কোনো ট্র্যাক্টর ছিল না। অনেকসময় দেখা যায় অপেক্ষাকৃত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা গরীব মানুষদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাদের নামে ঋণ নিয়েছেন। এরকম কিছুই হয়তো ঘটে থাকবে এক্ষেত্রেও। জানা গেছে শুধু কন্নড়-এই ধরনের একাউন্ট-এর সংখ্যা ৪৫ টির বেশী। বাকি ব্লক ও ব্যাঙ্কে খোঁজ নিলে এধরনের উদাহরণের অভাব হবেনা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি কি ব্যবস্থা নেয় ?

তুলজাপুরকর জানিয়েছেন, " এসব ক্ষেত্রে একাউন্ট গুলি চালুই থাকে। হিসেব করলে এই ফেরত না পাওয়া টাকার পরিমাণ কোটি ছড়িয়ে যাবে। বাইরে থেকে দেখলে পরিশোধিত ঋণের টাকার পরিমাণ আসল ঋণের দ্বিগুণ হলেও যথাযথ মূল্যায়ণ নেতিবাচক কথাই বলে।" আবার অনেক সময় ক্রেতারা দালাল এবং গাড়ি বিক্রেতাদের মাঝে পড়ে প্রতারিত হন। যেমন ব্যাঙ্ক থেকে এই ট্র্যাক্টর ঋণের খাতে যে টাকা দেওয়া হয় তা ট্রাক্টরের সাথে ট্রলি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্র কেনার জন্য। কিন্তু ক্রেতারা শুধু ট্রাক্টরটিই হাতে পান। বাকি টাকা দালাল ও বিক্রেতার পকেটস্থ হয়।

যদিও মার্সিডিজ বেঞ্জের ক্ষেত্রে দেওয়া ঋণ শোধ না করতে পারার ঘটনাও যে একদম নেই তা নয়। মার্সিডিজ বেঞ্জের ক্ষেত্রে যে ঋণ দেওয়া হয়েছিল তার সুদের হার ছিল নগণ্য। যার সুযোগ নিয়ে সেই অঞ্চলের ধনীরা এই দামি গাড়ি গুলি কেনেন। যদিও অনেক ক্ষেত্রে গাড়িগুলি কেনার পর থেকে এখনো অবধি দুই থেকে তিনবার বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকেই আবার সহজ ঋণ এবং কম দামের সুযোগ নিয়ে, পরে দাম বাড়লে, আবার এক-ই গাড়ি বিক্রি করে মোটা মুনাফা রেখেছেন।

পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখলে দেখা যায় ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্তভারতে ট্র্যাক্টর বিক্রির পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে এবং সাথে   সাথে বেড়েছে ট্র্যাক্টর উৎপাদনের সংখ্যাও। শুধুমাত্র ২০১৩ সালে ৬,১৯,০০০ টি ট্র্যাক্টর উৎপাদন হয়েছে। যা সারা বিশ্বের উৎপাদনের নিরিখে প্রায় এক তৃতীয়াংশ। অনেকেই এই ট্র্যাক্টর উৎপাদন ও তার বিক্রিকে গ্রামোন্নয়নের প্রতিফলন হিসেবে বা ভারতের গ্রামোন্নয়নের ব্যারোমিটার হিসেবে পরিগণিত করেন। অবশ্যই কিছু মানুষের আর্থিক সুসঙ্গতি এই বৃদ্ধির পেছনে মদত দিয়েছে। তবে এই আপাত উন্নয়নের পারদ বেড়ে ওঠা-র মূল কারণ হল যেনতেন প্রকারে লোণ-স্কিম বিক্রি করা; এটা না দেখে যে লোণ-গ্রাহকের শোধ করার ক্ষমতা আদৌ আছে কিনা। ঋণে- ডুবে- যাওয়া উন্নয়ন তাৎক্ষণিক সমৃদ্ধির বিজ্ঞাপন  হলেও তা আখেরে অতি বিপজ্জনক। এদেশের “আর্থসামাজিক এবং তফশিলি-ভুক্ত জাতি” পরিসংখ্যান বলে সর্বাধিক উপার্জনকারী সদস্য যার মাসিক ১০,০০০ টাকা আয়, গ্রামাঞ্চলে এরকম বাড়ীর সংখ্যা ৮ শতাংশের ও কম। আর যেসব ঘরে ট্র্যাক্টর আছে তার সংখ্যা আবার এই ৮ শতাংশের ও নিচে। তাও কিছু কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে ট্র্যাক্টর বিক্রির হার দেখে ভারতীয় গ্রামীণ অবস্থার নাড়ী বোঝা যায়! ফলে এখন ঔরাঙ্গাবাদের ডিলাররা যখন বলছেন যে সামগ্রিক ট্র্যাক্টর বিক্রির হার ৫০ শতাংশ কমেছে তখন এই অর্থনীতিবিদ – রাই আবার গেল গেল রব তুলছেন।

একথা অনস্বীকার্য যে মার্সিডিজ বেঞ্জ একটি বিলাসদ্রব্য, অন্যদিকে ট্র্যাক্টর একটি প্রয়োজনীয় যন্ত্র। কিন্তু ২০০৪-১৪ এই পরিসরে, দ্রুত গ্রামীণ বিকাশের চিহ্ন হিসেবে ঢালাও ঋণ দিয়ে ট্র্যাক্টর বিক্রির ঘটনা, আর, এক দিনে ১৫০ টি মার্সিডিজ বিক্রী করে পৃথিবীর মানচিত্রে ঔরাঙ্গাবাদের নাম বিশেষভাবে চিহ্নিত করার ঘটনা -- এ দুইই সমান অর্থহীন। মাথাপিছু  বাৎসরিক ৬৪,৩৩০ টাকা আয়ের হিসেবে মারাঠওড়া এখনো মহারাষ্ট্রের যেকোনো অঞ্চলের থেকে পিছিয়ে। মহারাষ্ট্রের বাকি জায়গার তুলনায় এই আয় ৪০ শতাংশ কম আর মুম্বাইয়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম।

ইতিমধ্যে আরও এক নতুন রকম দেউলিয়া অবস্থার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। খননকার্যে ব্যৱহৃত যন্ত্র কেনারও একটা প্রবণতা লক্ষ্যকরা গেছে এবং মহারাষ্ট্র সরকারও এই যন্ত্র ব্যবহারের পক্ষে পরোক্ষ মদত দিচ্ছে।

ঔরাঙ্গাবাদ জেলার খুলতাবাদ অঞ্চলের কন্মট্রাক্টর হাজি আকবর বেগ যিনি এই অঞ্চলে মিউনিসিপাল কাউন্সিলের প্রাক্তন সচিব ও ছিলেন, জানালেন যে, "অগণিত মানুষ প্রচুর টাকা হারিয়ে দেউলিয়া হতে চলেছে। আমারএই ছোট্ট শহরে যেখানে সর্বসাকুল্যে ১৯,০০০ বাসিন্দা, সেখানেই অন্ততঃ ৩০টি জে. সি. বি.(জে সি বাম্ফোর্ড এক্সকাভেটর বা জে সি বাম্ফোর্ড খনন যন্ত্র) আছে। বাকি রাজ্য জুড়ে আরও এরকমকত আছে কে জানে। যেহেতু, এগুলি 'জলযুক্ত শিবর অভিযান যোজনা' (জল সংরক্ষণ যোজনা)- র মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তাই প্রচুর মানুষ লোভে পড়ে ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং সংস্থা থেকে প্রচুর টাকার ঋণ নেন এবং জে. সি. বি. ক্রয় করেন যেগুলির এক একটির দাম ২৯লক্ষ টাকা। আমিই প্রথম এখানে জে. সি. বি. কিনি। কিন্তু আমি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না নিয়ে আমার আগেকার প্রচুর যন্ত্রপাতি বিক্রি করে ও পরিবারের সদস্যদের থেকে ধার করে এই টাকার জোগাড় করেছিলাম। ঋণের কিস্তিএবং উচ্চ পরিচর্যার খরচের পরও হাতে কিছু টাকা রাখতে হলে মাসে প্রায় ১ লক্ষ টাকা উপার্জন দরকার। সেটা এই সময়ে হয়তো কিছুটা সম্ভব। কিন্তু বর্ষা শুরু হলে সেটা সম্ভব না। ৩০ টা তো দূরের কথা, শহরের ৩টি জে.সি.বি.ও ভালোভাবে কাজে লাগবে না তখন। তখন কি হবে? খেতখামারীর সাথে কোনোভাবে যুক্ত না থাকা লোকেরাও পক্লেন নামে আরেকটি কোম্পানি – র এক্সকাভেটর এর জন্য টাকা ঢালছেন যা অনেকসময়ই জে.সি.বি. এর দ্বিগুণ খরচ - সাপেক্ষ।আমার ধারনা কিছু মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এ চুক্তি পাবেন। হয়তো ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন টিকে থাকতে পারবেন। বাকিরা দেউলিয়া হয়ে যাবেন।"

PHOTO • P. Sainath
03-P1040127(Crop)-PS-The Benz and the Banjara.jpg

হিরাবাঈ। ঔরাঙ্গাবাদ জেলা, মহারাষ্ট্রে অবস্থিত একজন বানজারা।

এক-ই আবস্থা কন্নড় – এর হীরাবাঈ – এর। যখন আমরা প্রথম হীরাবাঈ-এর সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম তখন তিনি আমাদের দেখে ভয়ে ভয়ে জানতে চেয়েছিলেন আমরাও কি ব্যাংকের লোক? ওনাদের কে কি আবারও টাকা দিতে হবে? আমরা আশ্বস্ত করি তিনি সব টাকাই শোধ করেছেন। বরং কিছুটা বেশিই শোধ করেছেন।

অনুবাদ- দেবস্মিতা ভৌমিক

पी. साईनाथ, पीपल्स ऑर्काइव ऑफ़ रूरल इंडिया के संस्थापक संपादक हैं. वह दशकों से ग्रामीण भारत की समस्याओं की रिपोर्टिंग करते रहे हैं और उन्होंने ‘एवरीबडी लव्स अ गुड ड्रॉट’ तथा 'द लास्ट हीरोज़: फ़ुट सोल्ज़र्स ऑफ़ इंडियन फ़्रीडम' नामक किताबें भी लिखी हैं.

की अन्य स्टोरी पी. साईनाथ
Translator : Debasmita Bhowmik