কোমলকে ট্রেন ধরতে হবে। বাড়ি ফিরছে সে, অসমের রঙ্গিয়া জংশনে।

সেই বাড়ি, যেখানে আর কোনওদিনও ফিরবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল সে, বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতায় ভোগা মাকে দেখতেও না।

দিল্লির জিবি রোডের যৌনপল্লিতে থাকা এবং কাজ করাও তার কাছে শ্রেয় মনে হয়েছিল সেই বাড়িতে ফেরার চেয়ে যেখানে তাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। কোমল জানাচ্ছে, যে পরিবারে তাকে ফেরানো হচ্ছে তারই সদস্য তার ১৭ বছরের তুতো দাদা, কোমলের যখন নাকি মাত্র ১০ বছর বয়স তখন একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেছিল যে দাদা। “[সেই] দাদার মুখ দেখতে চাই না। ঘেন্না করি ওকে,” বলে ওঠে কোমল। কোমলকে প্রায়ই মারধর করত সে, বাধা দিতে গেলে হুমকি দিত কোমলের মাকে মেরে ফেলবে বলে। একবার ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করেছিল, কপালে নাছোড়বান্দা দাগ রেখে গেছে সেই আঘাত।

হেকারণে মুর ঘর যাব মন নাই। মই কিমন বার কইসু হিহতক [এই জন্যেই আমি বাড়ি যেতে চাই না। ওদের আমি অনেকবার বলেওছি সেটা],” পুলিশের সঙ্গে তার কথোপকথন প্রসঙ্গে জানালো কোমল। তা সত্ত্বেও কোমলকে কোনও ব্যবস্থা ছাড়াই অসমের উদ্দেশে ৩৫ ঘণ্টার ট্রেনযাত্রায় পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে একটা সিম কার্ডও দেয়নি যাতে অন্তত সে নিরাপদে বাড়িটুকু পৌঁছলো কিনা সে খবর রাখা যায়, বাড়ি ফিরে আবারও হিংসার মুখে পড়লে কী হবে সে ভাবনা তো দূর অস্ত।

আদতে কোমলের প্রয়োজন ছিল পাচার হয়ে যাওয়া নাবালিকা ও কিশোর-কিশোরীদের বিশেষ প্রয়োজনগুলির প্রতি সংবেদনশীল সহায়তা পরিষেবা।

Komal trying to divert her mind by looking at her own reels on her Instagram profile which she created during her time in Delhi’s GB Road brothels. She enjoys the comments and likes received on the videos
PHOTO • Karan Dhiman

দিল্লির জিবি রোড যৌনপল্লিতে থাকাকালীন নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে পোস্ট করা রিলগুলো দেখে দেখে মন ভালো রাখার চেষ্টা করছে কোমল। ভিডিওগুলোতে যে মন্তব্য আর লাইকগুলো আসে তা ওকে খুশি করে

*****

কোমলের (নাম পরিবর্তিত) মনে পড়ে, এবছরের প্রথম দিকে সেই দিন ওর ৪x৬ বর্গফুটের দেশলাই খোলার মতো খুপরি ঘরটা থেকে লোহার মইখানা বেয়ে নামছিল সে, হঠাৎ জিবি রোডের সেই কোঠিবাড়িতে এসে হাজির হন দুই পুলিশ অফিসার। এই ঘরগুলো সাধারণ পথচারীর চোখে পড়বে না। শুধু ওই লোহার মইগুলোই একমাত্র ইঙ্গিত যে দিল্লির কুখ্যাত লালবাতি এলাকা শারদানন্দ মার্গ ওরফে জিবি রোডের এই ঘরগুলিতে যৌনকর্ম হয়।

পুলিশদের সে বলেছিল তার বয়স ২২। “ কম ও হবো পারেইন… ভালকে নাজানু মই [কমও হতে পারে, আমি ভালো জানি না],” মাতৃভাষা অসমিয়ায় বলে কোমল। তাকে দেখে ১৭ বছরের বেশি মনে হয় না যদিও, খুবজোর ১৮। পুলিশদের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল যে সে নাবালিকা, তাই সেদিন তাকে সেই কোঠিবাড়ি থেকে ‘উদ্ধার’ করে আনে পুলিশ।

কোঠিমালিক দিদিরা অফিসারদের বাধা দেননি, কোমলের আসল বয়স নিয়ে তাঁরাও ধন্দে ছিলেন। বলে রেখেছিলেন যে কোমল যেন সবাইকে বলে তার বয়স ২০-এর বেশি, আর কেউ জিজ্ঞেস করলে সে যেন বলে এই কাজ সে করছে “ অপনি মর্জি সে [নিজের ইচ্ছায়]”।

মনে মনে কোমলও এই কথাটা বিশ্বাস করে। তার মনে হয় সে নিজেই দিল্লি চলে এসে যৌনকর্মীর কাজ বেছে নিয়েছে স্বাধীনভাবে থাকবে বলে। কিন্তু তার এই ‘নির্বাচন’-এর পিছনে আছে একাধিক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার লম্বা সারি – নাবালিকা বয়সে ধর্ষিতা, পাচার হয়ে যাওয়া, এবং এই গোটা সময়টা জুড়ে এইসব ক্ষত সারানো, নতুন করে নতুন পথে বাঁচার জন্য কোনওরকমের কোনও সহায়তা সে পায়নি।

পুলিশকে যখন সে জানায় সে এই যৌনপল্লিতে নিজের ইচ্ছায় আছে, পুলিশ তার কথা বিশ্বাস করেনি। সে তার ফোনে তার জন্মপঞ্জির একটা ছবিও পুলিশকে দেখায়, বলে সেখান থেকে বোঝা যাবে তার বয়স ২২ বছর। কিন্তু পুলিশ তার কোনও কথা শোনে না। কোমলের ওই একখানিই পরিচয়পত্র ছিল, আর তা যথেষ্ট বলে গণ্য হয়নি। কোমলকে ‘উদ্ধার’ করে থানায় নিয়ে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে পরামর্শ দেওয়া হয়, কোমলের মনে হয়েছিল প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে। তারপর তাকে নাবালিকাদের জন্য একটি সরকারি আশ্রয়ে পাঠানো হয়, সেখানে সে ১৮ দিন ছিল। কোমলকে বলা হয়েছিল যেহেতু তাকে নাবালিকা বলে গণ্য করা হচ্ছে, তাই নিয়মমাফিক তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হবে।

শেল্টারে থাকাকালীন কোনও এক দিন কোঠি থেকে কোমলের জিনিসপত্র নিয়ে আসে পুলিশ, তার জামাকাপড়, দুটো ফোন, আর দিদিদের দেওয়া তার উপার্জনের ২০,০০০ টাকা।

কোমলের যৌনকর্মে যোগ দেওয়ার পিছনে আছে একাধিক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার লম্বা সারি – নাবালিকা বয়সে ধর্ষিতা, পাচার হয়ে যাওয়া, এবং এই গোটা সময়টা জুড়ে এইসব ক্ষত সারানো, নতুন করে নতুন পথে বাঁচার জন্য কোনওরকমের কোনও সহায়তা সে পায়নি

ভিডিও: এক আত্মীয়ের হাতে যৌন নিগ্রহের পর জীবন কীভাবে মোড় নিয়েছিল সে কথা বলছে কোমল

“প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে নাবালিকাদের যেন আবার পাচার করে না দেওয়া হয়। নাবালিকা নির্যাতিতাদের নিজের ইচ্ছার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, তারা বাড়ি ফিরে যেতে চায় নাকি শেল্টারেই থাকতে চায় সে বিষয়ে। তাকে পরিবারের হেফাজতে দেওয়ার আগে পরিবারকেও যথাযথ ভাবে বোঝাতে হবে,” জানাচ্ছেন দিল্লির মানবাধিকার আইনজীবী উৎকর্ষ সিং। তাঁর মতে, নাবালক ন্যায়বিচার আইন, ২০১৫ -এর অধীনে গঠিত স্বশাসিত সংস্থা শিশু কল্যাণ কমিটি বা সিডব্লিউসি-কেই দায়িত্ব নিতে হবে যাতে কোমলের মতো ঘটনাগুলিতে আইনের নিয়মাবলি যথাযথভাবে মানা হয়।

*****

অসমের বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন বা লোকমুখে বিটিআর-এর বাকসা জেলায় কোমলের গ্রাম। রাজ্যের পশ্চিমে এই অঞ্চল একটি স্বশাসিত এলাকা এবং প্রস্তাবিত পৃথক রাজ্য, ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে গঠিত।

কোমলের গ্রামের অনেকেই তার ধর্ষিতা হওয়ার ভিডিও দেখেছে, সেই মামাতো দাদার তোলা এবং ছড়ানো ভিডিও। “আমার মামা আমার ঘাড়েই সব দোষ চাপাত। বলত আমি ওর ছেলেকে ফাঁসিয়েছি। মায়ের চোখের সামনে আমায় নির্মমভাবে মারত, মা কাঁদত, থামতে বলত, কিন্তু শুনত না,” মনে করে কোমল। কোনও সহায়তা নেই, এই অত্যাচার কবে শেষ হবে তারও দিশা নেই – ১০ বছরের কোমল তাই প্রায়ই নিজেকে যন্ত্রণা দিত। “যে চরম যন্ত্রণা আর রাগ হত তা থেকে মুক্তি পেতে স্টেনলেস স্টিলের ব্লেড দিয়ে হাত কাটতাম। মরে যেতে ইচ্ছে করত।”

ভিডিও যারা দেখেছিল তাদের মধ্যে একজন ছিল বিকাশ ভাইয়া, মামাতো দাদার বন্ধু। একদিন সে কোমলের কাছে এল ‘সমাধান’ নিয়ে।

“ও আমায় বলল ওর সঙ্গে শিলিগুড়ি গিয়ে যৌনকাজে যোগ দিতে। [বলেছিল] অন্তত টাকা রোজগার করতে পারব আর মায়ের দেখভালও করতে পারব। বলেছিল গ্রামে থেকে রোজ ধর্ষিতা হওয়া আর চরিত্রহননের থেকে এটা অনেক ভালো,” বলে কোমল।

দিন কয়েকের মধ্যেয় ছোট্ট মেয়েটিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে পালায় বিকাশ। ১০ বছরের কোমল গিয়ে পৌঁছয় পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের খালপাড়া এলাকার যৌনপল্লিতে। ভারতীয় ফৌজদারি আইন , ১৮৬০-এর ৩৭০ ধারা অনুসারে মানব পাচারের সংজ্ঞা হল – হুমকি, গায়ের জোর, ধমকধামক, অপহরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বা প্রলোভনের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তির উপর বেশ্যাবৃত্তি, শিশুশ্রম, ক্রীতদাসবৃত্তি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে খাটানো, যৌন নির্যাতন ইত্যাদি ধরনের শোষণমূলক আচরণ চালানোর আইনবিরুদ্ধ ক্রিয়াকলাপ। ১৯৫৬ সালের অনৈতিক পাচার (প্রতিরোধ) আইনের (আইটিপিএ) পঞ্চম ধারায় যারা বেশ্যাবৃত্তিতে নামানোর জন্য অন্য ব্যক্তিদের জোগাড় করে, প্রলোভন দেখায় বা অপহরণ করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। “ব্যক্তির নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা শিশুর বিরুদ্ধে” সংঘটিত অপরাধের জন্য “সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে ১৪ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।” আইটিপিএ অনুসারে “শিশু” বলতে বোঝায় ১৬ বছর বয়স পূর্ণ হয়নি এমন যে কেউ।

কোমলের পাচারে বিকাশের সুস্পষ্ট ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও, যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোনও আইনি অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তাই এইসব আইনের অধীনে প্রাপ্য শাস্তি সে সম্ভবত কোনওদিনই পাবে না।

Komal's self harming herself was a way to cope with what was happening to her, she says
PHOTO • Karan Dhiman

কোমল জানাচ্ছে, তার সঙ্গে ঘটা অত্যাচারের সঙ্গে বোঝাপড়ার করার চেষ্টায় নিজেই নিজেকে আঘাত করত সে

শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রায় তিন বছর পর পুলিশের একটি অভিযান চলাকালীন খালপাড়া থেকে উদ্ধার হয় সে। তার মনে আছে, সিডব্লিউসি আদালতে তাকে পেশ করা হয়েছিল, এবং দিন ১৫ নাবালিকাদের জন্য একটি শেল্টারে রাখা হয়েছিল। তারপর অসমের ট্রেনে একা একা তাকে তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়েছিল – ঠিক যেমনটা হতে চলেছে এবারও, ২০২৪ সালে।

কোমলের মতো পাচার হয়ে যাওয়া শিশুদের জন্য নির্ধারিত আইনি প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়নি কোনওবারই, না ২০১৫ সালে, না ২০২৪-এ।

বাণিজ্যিক যৌন শোষণ ‘ এবং ‘ জোর করে খাটানো ‘-র উদ্দেশ্যে পাচারের অপরাধে সরকারের নির্ধারিত কর্মপ্রক্রিয়া বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) হল – তদন্তকারী অফিসারকে নির্যাতিতার বয়স নির্ধারণের জন্য জন্মপঞ্জি, স্কুলের মানপত্র, র‍্যাশন কার্ড বা এই ধরনের কোনও সরকারি নথি জোগাড় করতে হবে। যদি তেমন কিছু না পাওয়া যায়, বা তা থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব না হয়, নির্যাতিতাকে “আদালতের নির্দেশ নিয়ে বয়স নির্ধারণ পরীক্ষা”-র জন্য পাঠানো যেতে পারে। তাছাড়া, যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন বা পকসো আইন, ২০১২ -এর ৩৪ (২) ধারা অনুসারে বিশেষ আদালতকে সেই শিশুর প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করতে হবে এবং “লিখিতভাবে এই বয়স নির্ধারণের কারণ নথিভুক্ত করতে হবে।”

দিল্লিতে কোমলকে ‘উদ্ধার’ করা পুলিশ অফিসারেরা কোমলের জন্মপঞ্জিকে পাত্তাই দেননি। তাকে মেডিকো-লিগ্যাল কেসে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও নিয়ে যাওয়া হয়নি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা সিডব্লিউসি-র সামনেও পেশ করা হয়নি। তার প্রকৃত বয়স নির্ধারণের জন্য বোন-অসিফিকেশন বা হাড়ের নমুনা থেকে বয়স নির্ধারণের পরীক্ষাও করা হয়নি।

প্রশাসনিক সমস্ত কর্তৃপক্ষ যদি সহমত হয় যে নির্যাতিতাকে পুনর্বাসন বা পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত করা হবে, তদন্তকারী অফিসার বা সিডব্লিউসি-র দায়িত্ব এটা দেখা যে তার আগে যেন “যথাযথভাবে বাড়ির অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়।” প্রশাসনকে যথাযথভাবে চিহ্নিত এবং নথিবদ্ধ করতে হবে যে “নির্যাতিতাকে বাড়ি ফেরালে তার গ্রহণযোগ্যতা এবং সমাজে পুনর্প্রতিষ্ঠার সুযোগ” কতটা থাকছে।

কোনও অবস্থাতেই নির্যাতিতা যেন আবার সেই একই কাজের জায়গায় ফেরত না যায়, বা “আরও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি”-র মধ্যে না পড়ে। যে অসমে কোমলকে ধর্ষণ ও পাচার করা হয়েছে সেখানেই তাকে ফেরত পাঠানো এই সব নিয়মের লঙ্ঘন করে। বাড়ির কোনও পরীক্ষা হয়নি; কোমলের পরিবার সম্পর্কে কেউ কোনও খোঁজ নেয়নি, এমনকি যৌন পাচারের নাবালিকা ভুক্তভোগী হিসেবে তার তথাকথিত পুনর্বাসনে সাহায্য করার জন্য নিদেনপক্ষে কোনও এনজিও-কে পর্যন্ত যোগাযোগ করা হয়নি।

Komal says she enjoys creating reels on classic Hindi film songs and finds it therapeutic as well
PHOTO • Karan Dhiman

কোমল জানাচ্ছে, জনপ্রিয় হিন্দি ফিল্মের গানের সঙ্গে রিল বানাতে তার ভালো লাগে, এতে সে কিছুটা শান্তিও পায়

উপরন্তু, সরকারের উজ্জ্বলা যোজনা অনুসারে, পাচার ও যৌন শোষণের  ভুক্তভোগীদের “তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন সহায়তা তথা মৌলিক সুযোগসুবিধা/চাহিদা” মেটাতে হবে, যার মধ্যে পড়ে কাউন্সেলিং, পরামর্শ ও দিকনির্দেশ এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ। যৌন পাচারের ভুক্তভোগীদের জীবনে মানসিক সহায়তার গুরুত্ব বিপুল, মনে করেন এই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ শিশু কাউন্সেলর অ্যানি থিওডোর। “এই কাজের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া বা সমাজে পুনর্মিলিত করিয়ে দেওয়ার পরেও নির্যাতিতাদের কাউন্সেলিং চালিয়ে নিয়ে যাওয়া,” বলছেন তিনি।

দিল্লির যৌনপল্লি থেকে ‘উদ্ধারে’র পর কোমলকে দুই ঘণ্টা কাউন্সেলিং করিয়ে তড়িঘড়ি পুনর্বাসনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছিল। কাউন্সেলর অ্যানি প্রশ্ন তুলছেন, “বহু বছরের মানসিক আঘাতের মধ্যে দিয়ে যারা গেছে তারা কেমন করে দু-তিন মাসের, বা কারও কারও ক্ষেত্রে কয়েক দিনের কাউন্সেলিং-এ সুস্থ হয়ে যাবে?” তিনি আরও যোগ করছেন, সংস্থাগুলির নিজেদের কাজের সুবিধা হবে বলে নির্যাতিতাদের তড়িঘড়ি নিজেদের ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলে ফেলতে হবে, সুস্থ হয়ে যেতে হবে, এই প্রত্যাশাটাই নির্মম।

বহু বিশেষজ্ঞ মনে করেন রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি উদ্ধারপ্রাপ্ত নির্যাতিতাদের ভঙ্গুর মানসিক স্বাস্থ্যে আরও বিরূপ প্রভাব ফেলে , যার জেরে তারা আবার পাচারের শিকার হয়ে পড়ে, বা বাণিজ্যিক যৌনকর্মে ফেরত চলে যায়। “এই ক্রমাগত জেরা আর দুর্ব্যবহারে নির্যাতিতারা ভাবে তাদের জোর করে নিজেদের যন্ত্রণাটা আবার করে বাঁচতে বাধ্য করা হচ্ছে। আগে পাচারকারী, কোঠিমালিক, দালাল, এবং অন্যান্য মানুষরা নির্যাতন করছিল, এখন সরকারি সংস্থাগুলিও তা-ই করছে,” শেষ করেন অ্যানি।

*****

প্রথমবার উদ্ধার হওয়ার সময় কোমলের বয়স কিছুতেই ১৩-এর বেশি হতে পারে না। দ্বিতীয়বার হয়তো সে সত্যিই ২২ বছর বয়সি ছিল; ‘উদ্ধার’ হয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যখন তাকে দিল্লি ছাড়তে বাধ্য করা হল। ২০২৪ সালের মে মাসে অসমগামী ট্রেনে চেপে বসে সে – কিন্তু নিরাপদে পৌঁছেছিল তো? মায়ের কাছে গিয়েই থাকবে কোমল, নাকি গিয়ে পড়বে অন্য কোনও লালবাতি এলাকায়?

ভারতে যৌন এবং লিঙ্গভিত্তিক হিংসার শিকার মানুষদের সঠিক যত্ন ও সুস্থতার ক্ষেত্রে সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত যেসব বাধা আসে সে বিষয়ে সর্বভারতীয় একটি সাংবাদিকতা প্রকল্পের অংশ এই প্রতিবেদনটি। ডক্টরস্‌ উইদাউট বর্ডারস-এর ভারত অধ্যায় দ্বারা সমর্থিত একটি উদ্যোগের অঙ্গ।

ভুক্তভোগী মেয়েটি এবং তার পরিবারের সদস্যদের পরিচয় উন্মোচন না করার উদ্দেশ্যে নাম পরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Pari Saikia

ಪರಿ ಸೈಕಿಯಾ ಸ್ವತಂತ್ರ ಪತ್ರಕರ್ತರು ಮತ್ತು ಆಗ್ನೇಯ ಏಷ್ಯಾ ಮತ್ತು ಯುರೋಪ್‌ ಖಂಡದ ಮಾನವ ಕಳ್ಳಸಾಗಣೆಯ ವಿವರಗಳನ್ನು ದಾಖಲಿಸುತ್ತಾರೆ. ಅವರು 2023, 2022 ಮತ್ತು 2021ರ ಜರ್ನಲಿಸಂ ಫಂಡ್ ಯುರೋಪ್ ಫೆಲೋ ಸಹ ಹೌದು.

Other stories by Pari Saikia
Illustration : Priyanka Borar

ಕವರ್ ಇಲ್ಲಸ್ಟ್ರೇಷನ್: ಪ್ರಿಯಾಂಕಾ ಬೋರಾರ್ ಹೊಸ ಮಾಧ್ಯಮ ಕಲಾವಿದೆ. ಹೊಸ ಪ್ರಕಾರದ ಅರ್ಥ ಮತ್ತು ಅಭಿವ್ಯಕ್ತಿಯನ್ನು ಕಂಡುಹಿಡಿಯಲು ತಂತ್ರಜ್ಞಾನವನ್ನು ಪ್ರಯೋಗಿಸುತ್ತಿದ್ದಾರೆ. ಅವರು ಕಲಿಕೆ ಮತ್ತು ಆಟಕ್ಕೆ ಎಕ್ಸ್‌ಪಿರಿಯೆನ್ಸ್ ವಿನ್ಯಾಸ‌ ಮಾಡುತ್ತಾರೆ. ಸಂವಾದಾತ್ಮಕ ಮಾಧ್ಯಮ ಇವರ ಮೆಚ್ಚಿನ ಕ್ಷೇತ್ರ. ಸಾಂಪ್ರದಾಯಿಕ ಪೆನ್ ಮತ್ತು ಕಾಗದ ಇವರಿಗೆ ಹೆಚ್ಚು ಆಪ್ತವಾದ ಕಲಾ ಮಾಧ್ಯಮ.

Other stories by Priyanka Borar

ICFJ ಯ ನೈಟ್ ಫೆಲೋ ಆಗಿರುವ ಅನುಭ ಭೋಂಸ್ಲೆ ಸ್ವತಂತ್ರವಾಗಿ ಪತ್ರಿಕೋದ್ಯಮ ವೃತ್ತಿಯಲ್ಲಿ ನಿರತರಾಗಿದ್ದಾರೆ. 2015ರಲ್ಲಿ ‘ಪರಿ’ಯ ಫೆಲೋ ಆಗಿದ್ದ ಇವರು, ಮಣಿಪುರದ ಪ್ರಕ್ಷುಬ್ದ ಇತಿಹಾಸ ಮತ್ತು ಸಶಸ್ತ್ರ ಪಡೆಗಳ ವಿಶೇಷಾಧಿಕಾರ ಅಧಿನಿಯಮದ ಪರಿಣಾಮಗಳನ್ನು ಕುರಿತಂತೆ, “Mother, Where’s My Country?” ಎಂಬ ಪುಸ್ತಕವನ್ನು ರಚಿಸಿದ್ದಾರೆ.

Other stories by Anubha Bhonsle
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

Other stories by Dyuti Mukherjee