“একশ দিন কখনই হয় না, বড়জোর বছরে পঞ্চাশ দিন। ব্যাস!”, আর. বনজা বললেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের এক সকালে বাঙ্গালামেডু গ্রামের ভেলিকাথান মারাম গাছের যৎসামান্য ছায়ায় বসেছিলেন তিনি, আরও আঠারো জন নারী ও দু-তিনজন পুরুষের সঙ্গে। তারা 'নুর নাল ভেলাই' (তামিল ভাষায় একশ দিনের কাজ বা মনরেগা প্রকল্পের অধীনে প্রাপ্ত কাজের প্রচলিত নাম) ও নিজের মজুরি সংক্রান্ত আলোচনা করছিলেন। বনজার বয়স কুড়ির আশেপাশে। পঁয়ত্রিশ পরিবারের ইরুলা বস্তির বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দার মতো, বনজাও এক দিনমজুর।

তামিলনাড়ু রাজ্যের থিরুভাল্লুর জেলার তিরুত্তানি ব্লকের চেরুক্কানুর পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত এই জনপদের পুরুষেরা মনরেগা প্রকল্পের বাইরেই কাজ খুঁজে নেন। তাঁরা চাষের জমির চারপাশে পরিখা কাটেন। আমবাগানে জল দেন। নির্মাণক্ষেত্রে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। ভারা-বাঁধা, জ্বালানি, কাগজ ও অন্যান্য প্রয়োজনে লাগে যে সাভুক্কু গাছ, তাও কাটেন। দিনপ্রতি তাঁদের মজুরি ৩০০ টাকা।

কিন্তু এই কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই, একেক ঋতুতে এইসব কাজ পাওয়া যায়। বর্ষার দিনে যখন কোনো কাজ পাওয়া যায় না তখন 'তামিলনাড়ুর বিশেষভাবে দুর্বল আদিবাসী' হিসেবে চিহ্নিত ইরুলারা কোনো আয় ছাড়াই চালিয়ে নেন, এবং কাছের জঙ্গল থেকে ফল-মূল কন্দ ইত্যাদি সংগ্রহ করে বা ছোটখাটো পশু-শিকার করে খান। (দেখুন: বাঙ্গালামেডুর মাটির তলায় নিহিত সম্পদের সন্ধানে এবং ইঁদুরের সঙ্গে অন্য পথ বেয়ে বাঙ্গালামেডুতে )।

আর মেয়েদের পক্ষে এই অনিশ্চিত কাজও জোটানো মুশকিল। কখনও তাঁরা তাঁদের বরেদের সঙ্গে পাশের ইটভাটায় কাজ করেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে মে-জুন পর্যন্ত। এই কাজও সাময়িক এবং বর-বউ মিলে পুরো সময় জুড়ে বড়জোর ৬ হাজার রোজগার করা যায়।

'Where are the jobs for women?' asked S. Sumathi; here she is standing at water absorption pits dug on a dried lake bed, and a few tree saplings planted as part of MGNREGA water conservation projects in Cherukkanur panchayat
PHOTO • Smitha Tumuluru
'Where are the jobs for women?' asked S. Sumathi; here she is standing at water absorption pits dug on a dried lake bed, and a few tree saplings planted as part of MGNREGA water conservation projects in Cherukkanur panchayat
PHOTO • Smitha Tumuluru

'মেয়েদের কাজ কোথায়?' এস. সুমতি জিজ্ঞাসা করছেন। তিনি শুকনো হ্রদে খোঁড়া জল-শোকানোর গর্তের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকটা গাছ পোঁতা হয়েছে চেরুক্কান্নুর পঞ্চায়েতের মনরেগা জল-সংরক্ষণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে

কখনও আবার মেয়েরা চিনাবাদাম তুলে দিনে ১১০-১২০ টাকা পান। বা বরেদের সঙ্গে চিনাবাদাম পরিষ্কার করে ছাড়িয়ে দিনে একত্রে ৪০০-৪৫০ টাকা মজুরি পান, কিন্তু সে কাজও দুর্লভ।

মোট কথা দিনমজুরির কাজের জন্য তাঁরা মনরেগা প্রকল্পে পাওয়া কাজের উপরেই নির্ভরশীল।

“মেয়েদের কাজ কোথায় গেল?” বনজার প্রতিবেশী আটাশ বছরের এস. সুমতি জিজ্ঞাসা করলেন, যিনি তাঁর বর, ছত্রিশ বছরের দিনমজুর, কে. শ্রীরামালুর সঙ্গে কাছেই এক খড়-ছাওয়া মাটির বাড়িতে থাকেন।

“নুর নাল ভেলাই-ই আমাদের একমাত্র কাজ”, তিনি বললেন।

মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা আইন অর্থাৎ মনরেগা বা (মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট, MGNREGA) ২০০৫, অনুযায়ী প্রতি গ্রামীণ পরিবার বছরে অন্তত ১০০ দিনের কাজ পাওয়ার অধিকারী।

মারাম গাছের (Prosopis juliflora) তলায় দলটি সকলের নাম ডেকে ডেকে আমায় বলে, ৩৫টি বাঙ্গালামেড়ু পরিবারের মধ্যে ২৫ জন মহিলার ও দুজন পুরুষের মনরেগা কাজের কার্ড আছে। “তারা আমাদের এরি ভেলাই (হ্রদের কাজ) কাজের জন্য ডাকে,” সুমতি বলেন। সেই সঙ্গে খাল ও পরিখা কাটা, শুকনো হ্রদ থেকে আগাছা তোলা, রাস্তার ধারে চারা লাগানোর কাজ ইত্যদিরও স্থানীয় নাম তিনি বলে চলেন।

কিন্তু মনরেগা প্রকল্পের কাজ আর মজুরিতেও আছে অনিশ্চয়তা। চেরুক্কানুর পঞ্চায়েতের তথ্য বলছে, কাজের গড় দিন গত তিনবছর ধরে ক্রমশ কমছে। বাঙ্গালামেড়ুর লোকেরা জানেন না কেন এমন হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা মনে করেন পঞ্চায়েতের আরও কিছু নতুন প্রকল্প চালু করাই এর কারণ। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে স্রেফ ৪৯.২২ দিন গড়ে কাজ দেওয়া গেছে প্রতি পরিবারকে, অথচ ২০১৬-১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী গড়ে পরিবার পিছু  ৯৩.৪৮ দিনের কাজ দেওয়া গেছিল।

Left: The women of Bangalamedu, an Irular colony in Cherukkanur  panchayat, discuss MGNREGA wages. Right: S Sumathi with her job card. The attendance and wage details on most of the job cards in this hamlet don't tally with the workers’ estimates
PHOTO • Smitha Tumuluru
Left: The women of Bangalamedu, an Irular colony in Cherukkanur  panchayat, discuss MGNREGA wages. Right: S Sumathi with her job card. The attendance and wage details on most of the job cards in this hamlet don't tally with the workers’ estimates
PHOTO • Smitha Tumuluru

বাঁদিকে: চেরুক্কানুর পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত বাঙ্গালামেডু জনপদের মেয়েরা মনরেগার মজুরি নিয়ে কথা বলছেন। ডানদিকে: জব কার্ড হাতে এস.সুমতি। এই কার্ডে উপস্থিতি আর মজুরির যে উল্লেখ আছে তা কর্মীদের হিসেবের সঙ্গে মিলছে না

“আগে আমরা বছরে ৮০-৯০ দিনও কাজ করেছি। এখন আর সে দিন নেই”, বনজা বললেন। স্বামী একুশ বছরের আর. জনসন আর তিন বছরের ছেলে শক্তিভেলকে নিয়ে তাঁর সংসার চলে 'নুর নাল ভেলাই' বা একশ দিনের কাজের মজুরিতেই। জনসনের অন্য কাজের মজুরি তাঁদের কেনা একটা পুরোনো মোটরবাইকের কিস্তি মেটাতেই চলে যায়।

কিন্তু ২০১৯ সালের অক্টবরের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত বনজা মাত্র ১৩ দিনের মনরেগা কাজ পেয়েছেন৷ এই মাসগুলি জনসনের মজুরিতেই চলেছে। বনজার কথায়, “সে যা আয় করল, সব সংসার চালাতেই খরচ হয়ে গেল।”

তার উপর তামিলনাড়ুর মনরেগা কাজের ন্যূনতম মজুরি ২২৯ টাকার (২০১৯-২০২০) জায়গায় বদলে জব কার্ডে ১৪০-১৭০ টাকা দেওয়ার কথা লেখা আছে। একত্রিশ বছরের এস. এস. নিত্যা, যিনি কিনা চেরুক্কানুর পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপুরম জনপদে থাকেন এবং যিনি বাঙ্গালামেডুর একশ দিনের কাজের 'পানিধালা পরুপ্পালর' বা স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক, জানালেন যে তিনি জানেন না নির্ধারিত মজুরির থেকে কম কেন দেওয়া হচ্ছে।

“ওভারস ঠিক করে একেকজন কতদিন কাজ করবে আর কত পাবে”, তিনি বলেন। 'ওভারস' হল ইঞ্জিনিয়ার, যাকে 'ওভারসার' বা 'ওভারসাম্মা' বলেও ডাকা হয়। “গর্ত খোঁড়া হলে, ওভারসই ঠিক করেন কতটা কাটা হবে, কটা গর্ত কাটা হবে এবং সেই কাজে কতটা ব্যয় হবে। যদি পরিখা কাটা হয়, তাহলেও তাই হয়।”

Left: M. Mariammal has ensured all documents are in place so as to not lose out on any benefits. Right: V. Saroja with her NREGA job card, which she got in 2017
PHOTO • Smitha Tumuluru
Left: M. Mariammal has ensured all documents are in place so as to not lose out on any benefits. Right: V. Saroja with her NREGA job card, which she got in 2017
PHOTO • Smitha Tumuluru

বাঁদিক: এম. মারিয়াম্মাল দেখাচ্ছেন তাঁর কাছে সব কাগজপত্র আছে, যাতে তিনি কোনো সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন। ডানদিক: ভি. সরোজা তাঁর ২০১৭ সালে পাওয়া মনরেগা জব কার্ডের সঙ্গে

জব কার্ডের মাধ্যমে দিনমজুরদের কাজের ও মজুরির হিসেব রাখা সহজ হয়। কাজের জায়গায় কর্মীরা এই কার্ড নিয়ে আসেন। আর স্থানীয় কর্মকর্তা রোজ হাজিরার দাগ দেন। কিন্তু বাঙ্গালামেডুর ক্ষেত্রে মজুরদের হিসেবের সঙ্গে কার্ডের হিসেব মেলে না৷

হয়ত কোনোদিন কর্মী কার্ড নিয়ে আসেননি, হয়ত কর্মকর্তা তা পূরণ করতে ভুলে গেছিলেন। কর্মকর্তার কাছে একটি রেজিস্টার খাতাও থাকে, যা নিয়মিত পূরণ করতে হয়, এবং তিরুত্তানিতে বিডিও অফিসে এক কম্পিউটার অপারেটরের কাছে তা পাঠাতে হয়, যেখানে হাজিরার তালিকা কম্পিউটারে তোলা হয়। এসব শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে মনরেগার মজুরি বণ্টন ডিজিটাল হওয়ার পর (অর্থাৎ সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা হওয়ার পর)।

ডিজিটাল পদ্ধতির আগে কর্মকর্তা জব কার্ডে মজুরির উল্লেখ করে দিয়ে নগদ হাতে হাতে দিতেন। “যখন আমরা নুর নাল ভেলাইয়ের মজুরি নগদে পেতাম, তখন বলতে পারতাম সপ্তাহে কত পেলাম। এখন তা ব্যাঙ্কে আসে। স্কুলে গিয়ে থাকলে হয়ত বলতে পারতাম কত পাচ্ছি”, তেতাল্লিশ বছর বয়সী ভি. সরোজা বললেন।

ডিজিটাল হিসেব নিকেশ, যা বিডিও অফিস থেকে আপলোড করা হয়, তা চাইলে জনসাধারণ দেখতে পারে, কিন্তু তা ইরুলা সম্প্রদায়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাঁদের অনেকেরই ফোন নেই, থাকলেও ইন্টারনেট নেই। অনলাইন জগতের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় সামান্যই। তাই বিভিন্ন ওয়েবপেজের জটিলতার রহস্যভেদ করা তাঁদের পক্ষে কঠিন।

G. Sumathi has been a PP (panidhala poruppalar, the local supervisor) in the past, with her husband K. Sriramulu;  when the lockdown eased, in May, she  used her Rs. 5,000 savings of MGNREGA wages to set up a small shop outside her house
PHOTO • Smitha Tumuluru
G. Sumathi has been a PP (panidhala poruppalar, the local supervisor) in the past, with her husband K. Sriramulu;  when the lockdown eased, in May, she  used her Rs. 5,000 savings of MGNREGA wages to set up a small shop outside her house
PHOTO • Smitha Tumuluru

বাঁদিকে: জি. সুমতি, অতীতের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক বোঝাচ্ছেন যে বেশি লোক মনরেগায় কাজ খুঁজলে কুড়ি জনের একেকটি দলের বেশি সময় অন্তর অন্তর কাজের পালা পড়ে। হয়তো সে কারণেই কাজের দিন কমে গেছে। ডানদিক: এস. সুমতি (একই ব্যক্তি নন) ও তাঁর স্বামী কে. শ্রীরামালু। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর মে মাসে মনরেগা মজুরি থেকে সঞ্চয় করা ৫০০০/- টাকা দিয়ে তিনি নিজের বাড়ির বাইরে একটি দোকান দিয়েছেন

এখন জব কার্ড আপডেট হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কিনা তা কর্মী তাঁর কর্মকর্তাকে জানালে। “যদি টাকা ঢোকার আগেই আমরা মজুরি সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে কার্ড পূরণ করি, তাহলে সেটা অনুচিত হবে,” এস. এস. নিত্যা বললেন। “এন্ট্রি দেখে মনে হবে তারা টাকা পেয়েছে, অথচ টাকা হয়তো তখনও ব্যাঙ্কে আসেনি। লোকজন এই নিয়ে অভিযোগও করেছে।”

বাঙ্গালামেডুর ইরুলাদের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চেক করাও সময়সাপেক্ষ আর তার জন্য দিনের মজুরিও হাতছাড়া হতে পারে। “আমাদের গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার দূরে কে জি কান্ডিগাই পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কে যেতে হলে আমাদের তিন কিলোমিটার হাঁটতে হবে সড়কে পৌঁছতে। তারপর সেখান থেকে শেয়ারের অটো বা বাসে এক এক খেপে দশ টাকা ভাড়া”, সুমতি বলেন৷ “টাকা না এসে থাকলে আবার যাওয়া।” কখনও হয়তো স্থানীয় মানুষের মোটরবাইকের পিছনে চড়ে যাওয়া যায়। “কিন্তু পেট্রল খরচা বাবদ তাদের ৫০ টাকা দিতে হয়”, চুয়াল্লিশ বছরের ভি. সরোজা বললেন।

সহজলভ্যতা বাড়াতে ব্যাঙ্কগুলি ‘মিনি-ব্যাঙ্ক’ খুলেছে৷ ইরুলারা মূলত কানাড়া ব্যাঙ্কের পরিষেবা নেন, আর তারা চেরুক্কানুর পঞ্চায়েতে ‘অতি ক্ষুদ্র ব্যাঙ্ক’ খুলেছে। কিন্তু সেটাও চার কিলোমিটার দূরে এবং শুধু মঙ্গলবার খোলে। এই শাখাগুলিতে জমা টাকা কত তা জানা যায় এবং দশ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা যায়। এর বেশি কিছু করতে গেলেই কে জি কান্ডিগাইয়ের প্রধান শাখায় যেতে হয়।

At times, the wages the Irula women count on withdrawing from their accounts fall short, as it did for K. Govindammal  (left) when she constructed a house under the Pradhan Mantri Awas Yojana, and has been the experience of other women too in this small hamlet of Irulas (right)
PHOTO • Smitha Tumuluru
At times, the wages the Irula women count on withdrawing from their accounts fall short, as it did for K. Govindammal  (left) when she constructed a house under the Pradhan Mantri Awas Yojana, and has been the experience of other women too in this small hamlet of Irulas (right)
PHOTO • Smitha Tumuluru

কখনও কখনও টাকা তোলার সময় ইরুলা মহিলাদের টাকা তাঁদের নিজেদের হিসেবের চেয়ে কম দেখায়, যেমনটা কে. গোবিন্দাম্মালের (বাঁদিকে) হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নিজের একটি বাড়ি বানানোর সময়। একই অভিজ্ঞতা ইরুলার আরও অনেক মহিলার (ডানদিকে)

মিনি-ব্যাঙ্কের আদান-প্রদান আবার আধার কার্ডের বায়োমেট্রিকের উপর নির্ভরশীল। “মেশিন কখনই আমার আঙুলের ছাপ নিতে চায় না”, সুমতি বলেন, “হাত মুছে মুছে বারবার দিলেও নেয় না। তাই কান্ডিগাই ব্যাঙ্কে গিয়ে এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলি।”

ব্যাঙ্কের ফোন পরিষেবাও আছে। কিন্তু সুমতি ও অন্যরা এই পরিষেবা সম্পর্কে জানেন না। “কী করে ফোন থেকে এসব করতে হয় আমরা জানি না,” তিনি বলেন। তাও সরাসরি ব্যাঙ্কে টাকা যাওয়ার কিছু সুবিধাও আছে তাঁর মতে। “হাতে নগদ টাকা থাকলে কেমন করে খরচ হয়ে যায় বুঝতেই পারি না। এখন নুর নাল ভেলাইয়ের টাকা ব্যাঙ্কেই পড়ে থাকে।”

কখনও কখনও টাকা তোলার সময় ইরুলা মহিলারা দেখেন নিজেদের হিসেবের থেকে কম টাকা আছে। চল্লিশ বছরের কে. গোবিন্দাম্মালের এরকমই অভিজ্ঞতা হয়। কুড়ি বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে তিনি তিনজন সন্তানকে প্রাপ্তবয়স্ক করে তুলেছেন৷ এখন একা থাকেন। ২০১৮-১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে তিনি এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা পান। তাঁকে অন্য জায়গায় কাজ না করে নিজের বাড়ি তোলার কাজ করার জন্যও মনরেগা মজুরির টাকা দাবি করার অধিকার দেওয়া হয়। নিজের পঁয়ষট্টি দিনের মজুরির টাকা দিয়ে তিনি রাজমিস্ত্রিদের মজুর খরচের টাকা কিছুটা তোলার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু পনের হাজার টাকা সে বাবদ আশা করলেও তিনি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে মাত্র চোদ্দ হাজার টাকা পান। তাছাড়া বাড়ি বানানোর আসল খরচ যোজনায় প্রাপ্ত টাকা আর মনরেগার মজুরির টাকা মেলালে যা হয় তার চেয়েও বেশি। বাড়ি তৈরির জিনিসের দামও নানা সময় বেড়ে যায়। তাই গোবিন্দাম্মালের পাকা বাড়ির মেঝের কাজ অসম্পূর্ণই থাকল। “কাজ শেষ করার টাকা নেই,” তিনি বলেন।

২০১৯ সালে সরোজাও এরি ভেলাইয়ের কাজের বদলে নিজের বাড়ি বানানোর চেষ্টা করেন। বছর ঘুরে গেল, এখনও মনরেগার মজুরির টাকা এলো না। “অফিসার বলেছেন সাহায্য করবেন। দেখা যাক,” মে মাসে সরোজা বলেছিলেন। “এরি ভেলাইয়ের টাকা না এলে রাজমিস্ত্রির টাকা মেটাব কেমন করে? আমি রোজের কাজও হারিয়েছি।” তারপর থেকে তিনি মাত্র দু হাজার টাকা পেয়েছেন মনরেগার মজুরি হিসেবে, যদিও তাঁর ধারণা নিজের বাড়ির কাজ তিনি মাসখানেক করেছে এবং তাঁর চার-পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া উচিত।

Left: A. Ellamma, 23, stopped going to MGNREGA work when her child was born 2.5 years ago. Right: M. Ankamma, 25, with her two children. On her job, many entries are missing for both attendance and wages
PHOTO • Smitha Tumuluru
Left: A. Ellamma, 23, stopped going to MGNREGA work when her child was born 2.5 years ago. Right: M. Ankamma, 25, with her two children. On her job, many entries are missing for both attendance and wages
PHOTO • Smitha Tumuluru

বাঁদিকে: এ. এল্লাম্মা, বয়স তেইশ, মনরেগার কাজ বন্ধ করেছিলেন আড়াই বছর আগে যখন তাঁর বাচ্চা জন্ম নিয়েছিল৷ ডানদিকে: এম. অঙ্কাম্মা, বয়স পঁচিশ, দুই সন্তানের সঙ্গে। তাঁর জব কার্ডে হাজিরা ও মজুরির অনেক ঘর পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ

এত বাধা সত্ত্বেও মনরেগা বাঙ্গালামেডুর মহিলাদের বছরে ১৫০০০-১৮০০০ টাকা উপার্জনের পথ করে দিয়েছে। ২০২০ সালের মার্চে লকডাউন শুরু হওয়ার পর যখন বাঁচার অন্য সব পথ বন্ধ হয়ে যায়, মনরেগার কাজই পরিবারগুলিকে টিকিয়ে রেখেছে।

সুমতি তাঁর মজুরির টাকা বাড়ি সারানো, চিকিৎসার খরচ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় খাতে জমা রাখতেন। কিন্তু যখন লকডাউন শিথিল হল মে মাসে, তখন তিনি এসবের বদলে নিজের বাড়ির বাইরে, সঞ্চিত ৫০০০ টাকা দিয়ে সাবান, লঙ্কাগুঁড়ো ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান দিলেন (লকডাউনের সময় গাঁয়ে কোনো দোকান না থাকায় ইরুলারা সরকার, পঞ্চায়েতের নেতানেতৃ, এনজিও ও অন্যান্যদের দেওয়া রেশনের উপরেই ভরসা করতেন)।

“কোনো কাজ নেই, কোনো টাকা নেই”, সুমতি এপ্রিল মাসে বলেছিলেন, যখন ইটভাটা ও অন্যান্য কর্মস্থলও বন্ধ ছিল। সে মাসেরই শেষ দিকে গ্রামে মনরেগার কাজের জায়গাগুলিতে কাজ ফের শুরু হল। ফলে বাঙ্গালামেডুর আর্থিক টানাপোড়েনের ক্ষতচিহ্নও যেন কিছুটা শুকোলো।

অনুবাদ: শতাব্দী দাশ

Smitha Tumuluru

Smitha Tumuluru is a documentary photographer based in Bengaluru. Her prior work on development projects in Tamil Nadu informs her reporting and documenting of rural lives.

Other stories by Smitha Tumuluru
Translator : Satabdi Das

Satabdi Das is a gender-activist and social worker from West Bengal. A teacher by profession, and an author by passion, Satabdi regularly writes columns in Bengali news dailies and various online portals.

Other stories by Satabdi Das