সন্ধে ছটা। গরুদের ঘরে ফেরার সময়। কিন্তু মাসাইওয়াড়িতে ছয়মাসের জন্য তারা ঘরে ফিরবে না। গরুর ঘন্টাধ্বনি নেই, হাম্বা-রব নেই, দুধ নেওয়ার ভ্যানের ভিড় নেই, টাটকা গোবরের গন্ধ নেই। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার মাণ ব্লকে ৩১৫টি পরিবারের এই গ্রাম একেবারে নিস্তব্ধ। এই গ্রামের অর্ধেক লোক এবং প্রায় সমস্ত গৃহপালিত পশু গবাদি ক্যাম্পে চলে গেছে। গ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে, মাহস্ওয়াড় শহরের কাছে, সাতারা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে এই পশু শিবির।
৪০ বছরের সংগীতা বীরকর জানুয়ারি মাস থেকে এইখানেই থাকছেন। তাঁর সঙ্গে আছে দুটো মোষ, দুটো জার্সি গরু, আর তাঁর বৃদ্ধ, অশক্ত বাবার একটা গরু আর একটা বাছুর। তাঁর স্বামী, ৪৪ বছর বয়সী নন্দু, গ্রামে থেকে গেছেন তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে। তাঁদের মেয়ে কোমল – বয়স ১৫, এই বছর দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেবে। আর ছেলের নাম বিশাল – সে এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাঁদের সব থেকে বড়ো মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবারের তিনটি ছাগল, একটা বেড়াল, আর একটা কুকুরও বাড়িতে রয়েছে।
“বাড়িতে বাচ্চারা আর ক্যাম্পে এই পশুরা – উভয়েরই দেখাশোনা করি [একইভাবে],” বলছেন সংগীতা। তিনি ধাঙ্গর নামের যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষ। “এই বছর একবারও বৃষ্টি হয়নি। আমাদের ১২ একর মতো জমি আছে, আমার স্বামী আর তার দুই ভাই চাষ করে। সাধারণত [খরিফের সময়ে] আমাদের ২০–২৫ কুইন্টাল জোয়ার-বাজরা ওঠে। কিন্তু এই বছর কিচ্ছু হয়নি। পুরো ফসল নষ্ট। বৃষ্টি নেই মানে গবাদি পশুর খাবারও নেই। রবি শস্যের ক্ষেত্রেও প্রায় কিছুই বপন করা হয়নি। কী করে গবাদি পশুদের খাওয়াব?” একটা গরুর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
![](/media/images/06-Cropped_MG_5492.max-1400x1120.jpg)
মাহস্ওয়াড়ের কাছে যে গবাদি পশু শিবির সেখানে মাণদেশের ৭০টি গ্রাম থেকে প্রায় ৮০০০ পশু রয়েছে
তাঁর জার্সি গরুগুলি তিনি বছর চারেক আগে কিনেছেন। একেকটির দাম ৬০,০০০ টাকা। একেকটি পশুর দিনে ২০ কিলো জাব আর ৫০–৬০ লিটার জল লাগে। কিন্তু ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে মাসাইওয়াড়ি সপ্তাহে একটি করে জলের ট্যাঙ্কারের ওপর নির্ভরশীল – যা একেকজনকে ৪০ লিটার জল দিতে পারছে। মাহস্ওয়াড় পৌর সংসদ বছরে চার দিন অন্তর এই গ্রামে যে জল সরবরাহ করত, তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের কুয়ো শুকিয়ে গেছে। গবাদি পশুদের জন্য আর কোনও জলই নেই। মার্চ মাস থেকে তাপমাত্রা যত বাড়বে, জলের চাহিদাও তত বাড়বে।
নন্দু বলছেন, “গ্রামে একটুও জাব আর জল ছিল না। তাই আমাদের যে একটাই ষাঁড় ছিল সেটাকে বিক্রি করে দিয়েছি। এক আঁটি চারায় ১০০টা বৃন্ত থাকে। তার দাম ২৫০০ টাকা। এক মাস চলে। আখের দাম ৫০০০ টাকা। তাতে মোটামুটি দুমাস মতো চলে। [পশুদের জন্য] জলের সন্ধান করা তো আরেকটা যুদ্ধ। এখন আমরা কিছু আখ পাচ্ছি, কিন্তু মার্চের পর আর কোনও সবুজ খাদ্য দেখা যাবে না। ২০০৬ সালে আমরা ৩০০০০ টাকা দিয়ে ষাঁড়টা কিনেছিলাম। আমরা ওকে বড়ো করেছি, দেখাশোনা করেছি...আর ১২ বছর পর, ২৫,০০০ টাকায় বিক্রি করে দিতে হয়েছে। আমার মনে হয় না আর কোনোদিন আমি আরেকটা কিনব...” নন্দু বহু কষ্টে চোখের জল আটকে রাখেন।
সাতারা জেলার মাণ আর খটাভ তালুকগুলি মাণদেশ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সাঙ্গলীর জাট, আটপাড়ি, এবং কাভাথেমহাঙ্কাল তালুক এবং সোলাপুরের সাঙ্গোলে আর মালশিরাসও এই অঞ্চলের অন্তর্গত। এটি একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। জলের প্রচণ্ড অভাব। খরা লেগেই থাকে। এর ফলে কৃষক এবং খেতমজুররা আরও বেশি করে গবাদি পশুদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। আর যখন গোটা ফলন খরার জন্য নষ্ট হয়ে যায়, আর জল আর গবাদি পশুর খাদ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে, তখন গোটা গ্রাম এই অঞ্চল ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে বাধ্য হয়।
![Quadriptych](/media/images/02abcd_AzFLliU.max-1400x1120.jpg)
ক্যাম্পে তাঁর জীর্ণ তাঁবুর পাশে বসে সঙ্গীতা বীরকর বললেন, ‘[কাজের] তালিকার কোনও শেষ নেই’
পশু ক্যাম্পে বেঁচে থাকা
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ মহারাষ্ট্রের ২৬টি জেলার ১৫১টি ব্লক খরা-কবলিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১২টি ব্লকে খরা পরিস্থিতি ভয়াবহ। মাণদেশের প্রতিটি ব্লক এই তালিকায় রয়েছে। সাতারার মাণ-দাহিওয়াড়ির নামও আছে এই তালিকায়। জল এবং স্যানিটেশান বিভাগ থেকে প্রকাশিত জলের সম্ভাব্য অভাব ২০১৮–১৯ শীর্ষক রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষে মাণ-এ ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল যা ওই অঞ্চলের গড় বৃষ্টিপাতের মাত্র ৪৮%। কিন্তু এ তো গড়ের কথা। কয়েকটি গ্রামে ৩ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র। এই রিপোর্ট আরও বলছে যে এই ব্লকের ৮১টি গ্রামে মাটির তলার জল এক মিটার এবং ৪৮টি গ্রামে ৩ মিটার নেমে গেছে।
মাহস্ওয়াড় ক্যাম্পে মানদেশের ৭০টি গ্রাম মিলিয়ে ১৬০০ মানুষ এবং ৭৭৬৯টি পশু আছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের পয়লা তারিখ থেকে এই ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে মাণ দেশি ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা। এই সংস্থাটি মাহস্ওয়াড়েই অবস্থিত এবং মাণ দেশি মহিলা সহকারী ব্যাঙ্কের সঙ্গে এমন অনেক বিষয় নিয়েই কাজ করে যা শুধু মূলধন দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যে সমস্ত গ্রামবাসীরা বর্তমান খরার কবলে পড়ছেন, তাঁদের জন্য এই ধরনের ক্যাম্পের মধ্যে এটিই প্রথম।
আমরা সকাল ৬.৩০ নাগাদ সেখানে পৌঁছে দেখি ছাউনি আর গবাদি পশুর সমুদ্র। মহিলারা ছাউনিগুলো পরিষ্কার করছেন, দুধ দুইছেন, চা বানাচ্ছেন। কিছু পরিবার ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এসেছে। সেই বাচ্চারা তখনও ঘুমোচ্ছে। এদিক ওদিক আগুন ঘিরে পুরুষদের জটলা। লাউডস্পিকারে ভক্তিগীতি বাজছে।
![](/media/images/04a-_MG_5336.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/04b-_MG_5343.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে : সংগীতার স্বামী নন্দু তাঁদের দুই সন্তান – ছেলে বিশাল আর মেয়ে কোমলের দেখাশোনা করার জন্য গ্রামে থেকে গেছেন; [ডানদিকে] নাগুয়ান্নাও নিজের বাবার দেখাশোনা করবেন বলে মাসাইওয়াড়ির বাড়িতে আছেন; ওঁর স্ত্রী বিলাসী আছেন ক্যাম্পে। “মনে হয় যেন আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে...” এই বন্দোবস্ত সম্পর্কে এমনটাই মত তাঁর
সংগীতা জানালেন, “ভোর হওয়ার আগেই এখানে আমাদের দিন শুরু হয়ে যায়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে সংগীতার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তারপর স্কুল ছেড়ে দেন তিনি। “আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, তখনও অন্ধকার থাকে। উনুনে একটু জল গরম করে [বাঁশে টাঙানো ছেঁড়া শাড়ির আড়ালে] স্নান করি। তারপর গোবর কুড়োই, গোয়াল ঝাঁট দিই, পশুদের জল দিই, খলি খেতে দিই, দুধ দুইতে শুরু করি। ততক্ষণে ভোর হয়ে যায়। একটা ট্রাক্টর এসে [সারের জন্য] গোবর নিয়ে যায়। আমরা সকালের জলখাবার বানাই। তারপর সবুজ জাব আনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। [ক্যাম্পের] ডিপোতে গিয়ে জাব ওজন করে [বড়ো পশুদের জন্য ১৫ কিলো করে, বাছুরদের জন্য ৭ কিলো করে] এখানে আনি। আমাকে [অন্তত] ৭০ কিলো আখ একবারে বয়ে আনতে হয়। তারপর সেগুলোকে ছোট ছোট করে কাটতে হয়। এই পশুদের অন্তত তিনবার জল দিতে হয়। কাজের কোনও শেষ নেই,” বাসন মাজতে মাজতে আমাদের বললেন সংগীতা।
ক্যাম্পের সংগঠকরা গবাদি পশুদের খাদ্য ও জলের ব্যবস্থা করেছেন এবং বাসিন্দাদের জন্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধের বন্দোবস্ত করেছেন তাঁরা। যেমন, প্রতিটি ‘ওয়ার্ডে’ জলের পিপে রাখা থাকে (একটি ট্যাঙ্কার প্রতি দুই বা তিন দিন অন্তর জল দিয়ে যায়), আর খাবার জলের জন্য ট্যাঙ্কও রয়েছে। পশুদের থাকার জন্য ছাউনিগুলি পশুদের মালিকরাই তৈরি করছেন কাঠের বড়ো লাঠি আর সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সবুজ জাল দিয়ে। মহিলারা এই পশু ছাউনিগুলোর পাশেই থাকেন, ত্রিপল বা শাড়ি দিয়ে বানানো জীর্ণ, নড়বড়ে তাঁবুতে।
সংগীতার গোয়ালঘরের ঠিক পাশের ঘরটিই বিলাসী বীরকরের। তিনিও ধাঙ্গর সম্প্রদায়ের। বিলাসীর সঙ্গে রয়েছে তাঁর পরিবারের দুটি মোষ, একটি জার্সি গরু, একটি খিল্লার গরু এবং দুটি বাছুর। বিলাসীর জন্ম ১৯৭২ সালে, যেটি মহারাষ্ট্রের সবথেকে ভয়াবহ খরার বছরগুলির মধ্যে একটি। হতাশ হয়ে বলছেন তিনি, “খরার বছর জন্ম, এবার সারা জীবন খরাকে নিয়েই বাঁচো।” তাঁর স্বামী নাগু এবং বৃদ্ধ শ্বশুর মাসাইওয়াড়িতেই থেকে গেছেন। বাড়িতে ছাগল আছে। তাদেরও দেখাশোনা করতে হয়। বিলাসীর মেয়ে এবং বড়ো ছেলে কলেজ পাস করে মুম্বইয়ে চাকরি করছে। বিলাসীর ছোট ছেলেও সেখানেই বি-কম পড়ছে। তাই গবাদি পশুদের নিয়ে বিলাসীকেই আসতে হয়েছে ক্যাম্পে।
![A woman carries fodder for the cattle](/media/images/05a-_MG_5071.max-1400x1120.jpg)
![A woman milks a cow](/media/images/05b-_MG_5357.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে : রঞ্জনাবাঈ বীরকর মেশিনে তাঁর পশুদের জন্য আখ পাতা কাটছেন; ডানদিকে : লীলাবাঈ বীরকর আশা করছেন যে খরার সময়েও তাঁর পোষ্যদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন
তিনি এবং ক্যাম্পে আগত অন্যান্য মহিলারা বাড়ি থেকে উনুন [কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাত্র তিনটি পাথর, আর জ্বালানি হিসেবে কাঠকুটো আর আখের পাতা] অথবা গ্যাস স্টোভ নিয়ে এসেছেন। এনেছেন বাসন। বাজার আর অন্যান্য রসদ মাহস্ওয়াড়ের সাপ্তাহিক হাট থেকে প্রতি বুধবার তাঁদের পরিজনরা কেউ দিয়ে যান। বিলাসী নিজের জন্যও রাঁধেন, বাড়ির জন্যেও। সাধারাণত বেগুন, আলু, ডালের সঙ্গে বাজরি ভাকরি (বাজরার চাপাটি)। খাবার বেঁধে কারুর হাত দিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেন। “বাড়িতে রান্না করার কেউ নেই। তাই টিফিন বাক্স থেকেই খাবার খায়। আগামী ৬–৮ মাস এভাবেই চলবে,” বললেন তিনি।
বিলাসী, সংগীতা এবং আরও অনেকেই সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকেন আর শনি-রবিবার বাড়িতে যান। যখন তাঁরা গ্রামে ফেরেন, তখন বাড়ির অন্য কেউ – স্বামী বা সন্তান বা অন্য কোনও আত্মীয় – ক্যাম্পে এসে থাকেন। একই গ্রাম থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা এই পালা করে ক্যাম্প এবং বাড়ি যাতায়াতের বন্দোবস্তে পরস্পরকে সাহায্য করেন।
শনি-রবিবার বাড়ি ফিরে মহিলারা ঘর পরিষ্কার করেন, জামা-কাপড় কাচেন, শস্য ভাঙেন, মেঝেতে গোবর লেপেন। আরও অন্যান্য কাজও থাকে। তারপর আবার ক্যাম্পে ফিরে আসে। “বাড়িতে থাকলে হয় জমিতে যেতে হত নয়তো মজুরির কাজে। এখানে তা করতে হয় না। সেটাই যা শান্তি!” বললেন বিলাসী।
গরুরা আর ডাকে না মাসাইওয়াড়িতে
বিলাসীর স্বামী, ৫২ বছরের নাগুয়ান্নার সঙ্গে আমাদের দেখা হয় মাসাইওয়াড়িতে। তিনি বলেন, “এ তো দুই আলাদা ছাদের তলায় থাকা, যেন আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে...।” বিলাসী ক্যাম্পে, তাই তাঁকে বাড়ির অনেক কাজ করতে হয়, ট্যাঙ্কার এলে জল ভরে রাখতে হয়, মাহস্ওয়াড়ে গিয়ে সংসারের রসদ কিনতে হয়, এবং বাবার দেখাশোনাও করতে হয়। “একবারও ঠিক মতো বৃষ্টি হয়নি। সাধারণত ফাল্গুন মাস পর্যন্ত জল থাকে। কিন্তু এইবার দিওয়ালির সময় থেকেই জলের তীব্র অভাব। একবার অল্প একটু বৃষ্টি হল...”
![Two women sitting under a makeshift tent](/media/images/01-_MG_5247.max-1400x1120.jpg)
সঙ্গীতা বীরকর আর বিলাসী বীরকরের পরিবারের ১০-১২ একর জমি আছে। কিন্তু, বলছেন ওঁরা, ‘ফলন হয়নি, তাই কোনও শস্য নেই’
“কোনও ফলন হয়নি, তাই শস্য নেই,” বিলাসী যোগ করলেন। এই পরিবারের ১০–১২ একর মতো জমি আছে। দুই ভাই মিলে চাষ করেন। “আজকাল জমিতে দৈনিক মজুরির কাজ পাওয়া যায় না [মহিলারা ১৫০/- টাকা ও পুরুষরা ২৫০/- টাকা পান]। সরকার কোনও কাজ শুরুই করছে না। বলুন, কী করে বাঁচব আমরা?”
কাছেই, সংগীতার বাড়িতে, তাঁর স্বামী নন্দু বললেন, “আমি ২৫০/- টাকা দৈনিক মজুরিতে একটা ইঁটভাঁটায় কাজ করছি। কিন্তু এটা তো এক সপ্তাহের মাত্র কাজ। তারপর কোথায় কাজ পাব আমি জানি না। খেতের কোনও কাজই নেই। আমরা ফসল হারিয়েছি। বহুবার ব্যাঙ্কে যাওয়া সত্ত্বেও ফসল বিমা পাইনি। লিটার প্রতি ২০ টাকা দরে দুধ বিক্রি করে কিছু রোজগার করি। যদি গবাদি পশুদের ভালো করে খাওয়ানো যায়, তাহলে দিনে ৪–৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন আমাদের কোনও দুগ্ধবতী গাই নেই। আমার শ্বশুর একটা গরু পাঠিয়েছেন। তার থেকে ২–৩ লিটার পাচ্ছি।
তিনি আরও জানালেন যে তাঁদের ঘরে বছর দুই আগের কিছু শস্য জমানো ছিল। “এখন ফুরিয়ে গেছে। কৃষক যদি জোয়ার বিক্রি করতে চায়, তাহলে সে দাম পায় প্রতি কুইন্টালে ১২০০ [টাকা]। কিন্তু যদি বাজার থেকে জোয়ার কিনি তাহলে প্রতি কুইন্টাল ২৫০০/- টাকা দিতে হয়। বলুন, কী করে চলবে আমাদের? আমাদের কমলা রেশন কার্ড [এপিএল কার্ড, দারিদ্র্য সীমার ঊর্ধ্বে], তাই তিন লিটার কেরোসিন ছাড়া আমরা কিচ্ছু পাইনা – না শস্য, না চিনি।
মাসাইওয়াড়ি এবং অন্যান্য গ্রামে এমএনরেগা প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। রাষ্ট্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য কোনও সংগঠন বা ব্যক্তি পরিচালিত ক্যাম্প-ও এখানে নেই। ২০১৯ সালের ৯ই জানুয়ারি তারিখের একটি সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঔরঙ্গাবাদ, বীড়, জালনা, ওসমানাবাদ এবং পারভনি (খরাপ্রবণ মারাঠওয়াড়া অঞ্চলে) পাঁচটি গোশালাকে ক্যাম্প শুরু করার জন্য অর্থ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একেকটিতে ৫০০ থেকে ৩০০০ পশু রাখার ব্যবস্থা থাকবে।
![Two week cook at the camp](/media/images/03a-_MG_5404.max-1400x1120.jpg)
![Men transport milk and fodder](/media/images/_MG_5485.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে: সংগীতা বাড়িতে এবং ক্যাম্পে নানারকমের কাজ করেন [তাঁর পাশে লীলাবাঈ বীরকর]; ডানদিকে: ট্রাক আর টেম্পো করে ক্যাম্প থেকে গোবর আর দুধ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
সাঙ্গলী, সাতারা, ও সোলাপুর এই সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত নয়। কিন্তু জানুয়ারির ২৫ তারিখের আরেকটি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে খরা-কবলিত ১৫১টি ব্লকে এবং খরার মত অবস্থা হয়েছে এমন ২৬৮টি রেভিনিউ সার্কেলে এই জাতীয় ক্যাম্প তৈরি করা যাবে। বড়ো পশু পিছু ৭০ টাকা এবং বাছুর প্রতি ৩৫ টাকার ভরতুকিও দেওয়া হবে। প্রতি তিন দিন অন্তর ১৫ কিলো সবুজ খাদ্য ও ৬ কিলো শুকনো খাদ্য দেওয়া হবে। কিন্তু পরিবার পিছু পাঁচটি করে পশু ক্যাম্পে থাকতে পারবে। বাকি পশুদের নিয়ে যে কী করা হবে, সেই বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা নেই। সাঙ্গোলায় অবস্থিত ডঃ আম্বেদকর শেতি বিকাশ ভা সংশোধন সংস্থার (কৃষি বিকাশ এবং সংশোধন সংস্থা) কর্মী ললিত বাবর জানাচ্ছেন যে এখনও পর্যন্ত একটি ক্যাম্পও শুরু করা হয়নি এবং নানারকমের প্রস্তাব নিয়ে শুধু আলোচনাই হয়ে চলেছে।
মাণ দেশি ফাউন্ডেশনের শচীন মেঙ্কুদালে বলছেন, “সরকার কবে ক্যাম্প শুরু করবে আমি জানি না।” এই সংস্থার প্রধান কর্মীদের মধ্যে একজন, রবীন্দ্র বীরকর জানাচ্ছেন যে ফাউন্ডেশন পরিচালিত ক্যাম্পটি আরও ৬–৮ মাস মতো চলবে।
এই কয়েক মাসের জন্য মাসাইওয়াড়ির ৬০ বছরের বিধবা লীলাবাঈ বীরকর চাইছেন যে তাঁর পশুরা বেঁচে থাক। “খরা শুরু হয়ে গেলে পশু-ব্যবসায়ীরা সব ঘোরাফেরা করতে আরম্ভ করে। বিক্রির অপেক্ষায় বসে থাকে,” বলছেন তিনি। “যে সব পশুর দাম আসলে ৬০–৭০,০০০ টাকা, তা মাত্র ৫–৬০০০ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়। আমরা কখনও কসাইয়ের কাছে গরু বিক্রি করি না। কিন্তু সরকার যদি ক্যাম্প খোলার ব্যবস্থা না করে, তাহলে বেশিরভাগই কসাইখানায় গিয়ে পৌঁছবে।”
বাংলা অনুবাদ : সর্বজয়া ভট্টাচার্য