আমি তারপায় ফুঁ দিলেই আমাদের ওয়ারলি (ভিন্ন বানান: ভারলি) মানুষের দেহে বায়ু জন্ম নেয়। এক ঘণ্টা ধরে ওদের শরীরগুলো দুলতে থাকে, ঠিক যেমন বাতাসের তালে তালে নাচতে থাকে গাছগাছালি।

বাজানোর আগে প্রথমেই সওরি দেবী ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের স্মরণ করি। সে ডাকে যিনি সাড়া দেন, তিনিই আমার বেরাদরির মানুষগুলোর উপর ভর করেন।

পুরোটাই আস্থার উপর দাঁড়িয়ে আছে। ‘মানল ত্যাচা দেভ, নাহি ত্যাচা নাহি [আস্থাবানের ঈশ্বর আছে, নাস্তিকের নেই]।’ আমার কাছে এই তারপাটাই আমার দেওতা। তাই দু’হাত জোড় করে এটাকেই পুজো করি।

নাওশ্যা, আমার প্রপিতামহ, তারপা বাজাতেন।

তাঁর ছেলে, ধাকল্যা। উনিও বাজাতেন।

ধাকল্যার ছেলে লাড়ক্যা। উনিও তারপা বাজাতেন।

এই লাড়ক্যাই আমার বাবা।

Bhiklya Dhinda’s father Ladkya taught him to play and make tarpa from dried palm toddy tree leaves, bamboo and bottle gourd. ‘It requires a chest full of air. One has to blow in the instrument and also make sure that your body has enough air to breathe,’ says Bhiklya baba
PHOTO • Siddhita Sonavane
Bhiklya Dhinda’s father Ladkya taught him to play and make tarpa from dried palm toddy tree leaves, bamboo and bottle gourd. ‘It requires a chest full of air. One has to blow in the instrument and also make sure that your body has enough air to breathe,’ says Bhiklya baba
PHOTO • Siddhita Sonavane

ভিকল্যা ধিন্দাকে তারপা বাজানোয় হাতেখড়ি দিয়েছিলেন তাঁর বাবা লাড়ক্যা ধিন্দা। শুখা তালপাতা, বাঁশ আর লাউয়ের খোল দিয়ে তারপা বানানোর কৌশলটাও তিনি শিখিয়ে গেছেন। ‘তারপা বাজাতে গেলে বুকভরা বাতাস দরকার। যন্ত্রটায় ফুঁ তো দিতেই হবে, উপরন্তু শ্বাস নেওয়ার মতো বাতাসটুকুও ধরে রাখতে হয়,’ ভিকল্যা বাবা জানালেন

সে ব্রিটিশ আমলের কথা, তখনও আমরা স্বাধীন হইনি। আমাদের ওয়ালওয়ান্ডে গাঁয়ে মোটে একখান স্কুল ছিল, তাও কেবল ‘বড়’-লোকদের [উঁচু জাতি] বাচ্চাকাচ্চার জন্য। গরিবের স্কুল বলতে কিসুই ছিল না। তখন আমার বয়স ওই ১০-১১ হবে। গরু-ছাগলের বাগালি করতাম। আমার মা-বাপ ভাবত, ‘গায়িমাগ গেলা তর রোটি মিলাই। শালেৎ গেলা তার উপাশি রাহল [পশুপালন করলে খাবারদাবার জুটবে। বিদ্যালয়ে গেলে আমায় উপোস করতে হবে]।’ সাত-সাতটি সন্তানের দেখভাল করতে হত আমার মাকে।

বাবা বলত, ‘গরুছাগল যখন চরে খায়, তোর হাতে তো কোনও কামকাজ থাকে না। তখন তারপা বাজাস না কেন? শরীরও [স্বাস্থ্য] ভালো থাকবে, আর আমোদ-আহ্লাদও হবে।’ আর বাজনার শব্দে গরুছাগলের ত্রিসীমানাতেও কোনও পোকামাকড় ঘেঁষবে না।

বনেবাদাড়ে কিংবা চারণভূমিতে গেলে তারপা বাজানো শুরু করলাম। লোকজন নালিশ ঠুকত, ‘সারাটাদিন ধিন্দার ছা শুধু কোলাহল করে — ক্যাঁও ক্যাঁও।’ একদিন বাবা আমায় ডেকে বলল, ‘যতদিন বেঁচে আছি, তোর জন্য তারপা বানিয়ে যাব। কিন্তু আমি চোখ বুজলে কে করবে শুনি?’ তাই আমি এ শিল্পে হাত পাকিয়ে ফেললাম।

তারপা বানাতে তিনটে জিনিস লাগে। মাড় [তাল] গাছের পাতা, যা দিয়ে ‘ধ্বনি’ [অনুরণনের শিঙা] সৃষ্টি হয়। দুটুকরো বম্বু [বাঁশ], একটা মেয়ের জন্য, অন্যটা মরদের। টোকা মেরে তাল ধরার জন্য মরদের সঙ্গে আরেকটা ছোট্ট অংশ লাগানো থাকে। তিন নম্বর বস্তুটি হল দুধি [লাউ], যেটা দিয়ে বাতাস-বাক্স বানানো হয়। ফুটোয় ফুঁ দিলেই মরদ আর মেয়ে দুটো একসঙ্গে জোড়া লেগে অপূর্ব শব্দ বেরিয়ে আসে।

তারপা নিছকই যন্ত্র নয়, বরং পরিবারের মতন। মেয়ে-মরদ দুজনেই আছে। আমি ফুঁ দিলেই ওরা একসঙ্গে মিলে মাতোয়ারা সুর হয়ে বেজে ওঠে। পাথরের মতো তারপাও প্রাণহীন। কিন্তু আমার নিঃশ্বাসে সে জীবন্ত হয়ে ওঠে, বেরিয়ে আসে শব্দ, সৃষ্টি হয় সুর। তারপা বাজাতে গেলে বুকভরা বাতাস দরকার। যন্ত্রটায় ফুঁ তো দিতেই হবে, উপরন্তু শ্বাস নেওয়ার মতো বাতাসটুকুও ধরে রাখতে হয়।

দেওতাদের থেকে পাওয়া বিদ্যে না থাকলে এমন যন্তর আমরা বানাতেই পারতাম না। তারপার মালিক খোদ ভগবান।

বাবা বলত, ‘গরুছাগল যখন চরে খায়, তোর হাতে তো কোনও কামকাজ থাকে না। তখন তারপা বাজাস না কেন? শরীরও [স্বাস্থ্য] ভালো থাকবে, আর আমোদ-আহ্লাদও হবে’

ভিডিওটি দেখুন: আমার তারপা-ই আমার দেওতা

*****

আমার মা-বাপ আর বেরাদরির বুড়োবুড়িরা অনেক অনেক গল্প বলত। ওসব এখন বাৎলাতে গেলে লোকে গালমন্দ করে। কিন্তু এসব কাহিনি তো আমাদের পূর্বজের মুখে শোনা।

ব্রহ্মাণ্ড বানিয়ে তো দেবদেবীরা ছুটি নিলেন। তাহলে ওয়ারলিরা এল কোত্থেকে?

কন্দরাম দেহল্যার থেকে।

কন্দরাম দেহল্যার জন্য দেবদেবীরা খানিকটা দই রেখে যায় তার মায়ের কাছে। কিন্তু কন্দরাম শুধু দই খেয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, আস্ত মোষটিকেও খেয়ে ফেলেন! কন্দরামের মা তখন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ছেলেকে দূর-দূর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।

পূর্বজদের থেকে জানতে পারি, পহেলা ওয়ারলি ইনসান কন্দরাম দেহল্যা কীভাবে এখানে এসে উঠেছিলেন।

কন্দরাম দেহল্যালহুন

পলসোন্ড্যালা পরসঙ্গ ঝালা
নটওচোন্ডিলা নটল
খরওন্ড্যালা খর ঝাল
শিণগারপাড়্যালা শিণগারল
আড়খড়কালা আড় ঝাল
কাটা খোচায় কাসটওয়াড়ি ঝাল
কসেলীলা ইয়েউন হসল
আন্ ওয়ালওন্ড্যালা ইয়েউন বসল।
গোর‍্যালা জান খর জাল
গোর‍্যালা রহলা গোন্ড্যা
চান্ড্যা আল, গম্ভীরগড়া আল।

Kandram Dehlyalahun

Palsondyala parsang jhala
Natavchondila Natala
Kharvandyala khara jhala
Shingarpadyala shingarala
Aadkhadakala aad jhala
Kata khochay Kasatwadi jhala
Kaselila yeun hasala
Aan Walwandyala yeun basala.
Goryala jaan khara jaala
Goryala rahala Gondya
Chandya aala, Gambhirgada aala

পালঘর জেলার জওহর ব্লকে অবস্থিত গ্রাম ও জনপদের নামগুলো নিয়েই অন্ত্যমিল বেঁধে বেঁধে লেখা হয়েছে এই কবিতাটি।

Left: Bhiklya Dhinda with his wife, Tai Dhinda.
PHOTO • Siddhita Sonavane
Right: He says, ' Tarpa is just like a family. There is a male and a female. When I blow some air, they unite and the sound that you get is magical. Like a stone, it is lifeless. But with my breath it comes alive and produces a sound, a musical note’
PHOTO • Siddhita Sonavane

বাঁদিকে: ভিকল্যা ধিন্দার পাশে তাঁর স্ত্রী তাই ধিন্দা। ডানদিকে: তিনি বলেন, ‘তারপা নিছকই যন্ত্র নয়, বরং পরিবারের মতন। মেয়ে-মরদ দুজনেই আছে। আমি ফুঁ দিলেই ওরা একসঙ্গে মিলে মোহময় সুর হয়ে বেজে ওঠে। ঠিক পাথরের মতোই তারপা প্রাণহীন। কিন্তু আমার নিঃশ্বাসে সে জীবন্ত হয়ে ওঠে, বেরিয়ে আসে শব্দ, সৃষ্টি হয় সুর’

ওয়ারলিদের পাশাপাশি এখানে আরও অনেক সম্প্রদায় থাকত। রাজকোলি, কোকনা, কাতকারি, ঠাকুর, মাহাড়, চাম্ভার...আমার মনে আছে, এককালে [জওহারের] মহারাজের দরবারে কাজ করতাম। উনি দরবারে বসে সব্বার সঙ্গে করভল [বন চালতা] পাতায় খাবার খেতেন। আমার কাজ ছিল এঁটো পাতা-টাতা ফেলা। সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ একই সারিতে বসে খেত। কাউকেই অন্যের চাইতে ছোটো-বড়ো মনে করা হত না। এসব আমার ওখানেই শেখা — সে কাতকারি হোক বা মুসলমান, সব্বার হাত থেকে পানি খাওয়া শুরু করি। রাজকোলিরা একদিকে ওয়ারলিদের ছোঁয়া জল খায় না, ওদিকে আমরা আবার কাতকারি, চাম্ভার বা ধোর কোলিদের ছোঁয়া পানি খেতে অস্বীকার করি। লোকে আজও এরকম করে। কিন্তু আমি কোনদিনও এসব ভেদাভেদে বিশ্বাস করিনি।

দেখুন, হিরওয়া দেও আর তারপার পুজো যে করে, সে-ই ওয়ারলি আদিবাসী।

সমস্ত পালা-পার্বণ আমরা একসঙ্গে মিলে পালন করি। গোলায় নতুন চাল উঠলে নিজের নিজের পরিবার আর পাড়া-পড়শির সঙ্গে আনাজ ভাগাভাগি করে প্রথমেই গাঁওদেবীর কাছে যাই। প্রথম গেরাসটা তাঁকে না দিয়ে নিজেরা খাই না। এসব দেখে আপনি অন্ধ্-শ্রদ্ধা [অন্ধবিশ্বাস] বলতেই পারেন, তবে এটা কিন্তু তেমন কিছু নয়। এটাই আমাদের শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, আস্থা।

নতুন ফসল নিয়ে স্থানীয় গাঁওদেবীর মন্দিরে যাই। নইলে খামোখা দেউল গড়ে তেনাকে ডেকে আনব কেন? সব্বাই মিলে প্রার্থনা করি, ‘আমাদের বাচ্চাকাচ্চা, আত্মীয়স্বজন, গরুছাগল আর মেহনত, সমস্তটাই ভালো রেখ, দুধে-ভাতে রেখ। আমাদের খেত-খামার বাগান-বাগিচা সব যেন ফুলে-ফলে ভরে ওঠে। যারা চাকরি করে, তারা যেন সফল হয়। আমাদের জিন্দেগি, আমাদের বাড়ির লোকজন, সবাই যেন সুদিন দেখে।’ আমরা আদিবাসীরা মন্দিরে গিয়ে নিজেদের দেবীর দরবারে প্রার্থনা করি, তাঁর নাম নিয়ে আর্তি জানাই।

Bhiklya baba in the orchard of dudhi (bottle gourd) in his courtyard. He ties each one of them with stings and stones to give it the required shape. ‘I grow these only for to make tarpa . If someone steals and eats it, he will surely get a kestod [furuncle] or painful throat’ he says
PHOTO • Siddhita Sonavane

ভিকল্যা বাবার পিঁদাড়ে লাউয়ের বাগান। লাউয়ের গায়ে গায়ে সুতোয় বাঁধা পাথর ঝুলিয়ে রাখেন, সেগুলি যাতে প্রয়োজন মাফিক আকার ধারণ করে। তিনি বলেন, ‘এগুলো কেবলমাত্র তারপা বানাব বলেই লাগাই। কেউ যদি চুরি করে খেতে যায়, সে ব্যাটার কেস্তোড় [ফোঁড়া] বা গলাব্যথা হবেই হবে’

তারপা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়াঘবারসের তিথি পড়লে সওরি দেবীর পুজোয় মাতি আমরা। আপনারা তাঁকে শবরী নামে চেনেন, রামকে যিনি এঁটো বনফল খেতে দিয়েছিলেন। আমাদের প্রচলিত গল্পটা অবশ্যি আলাদা। বনের মাঝে রামের জন্য পথ চেয়ে বসেছিলেন সওরি দেবী। দেখতে দেখতে একসময় রাম সেখানে এলেন, সঙ্গে সীতা। মোলাকাত হতেই সওরি দেবী বলে উঠলেন, এই যে অনন্ত অপেক্ষার শেষে রামের দেখা পেলেন তিনি, এবার আর বেঁচে থাকার কোনও অর্থই পড়ে নেই তাঁর কাছে। নিজের জীওড়া-খানি [হৃৎপিণ্ড] বার করে রামের হাতে রেখে সেই যে তিনি মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন, আর ফেরেননি।

তাঁর প্রেম ও নিষ্ঠার উদযাপনে আমরা তারপা নিয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে, বনজঙ্গলে ফিরি। সেখানে, ওই অরণ্যমাঝে নানান দেবদেবীর বাস। তাংড়া সওরি, গোহরা সওরি, পোপটা সওরি, তুম্বা সওরি ও ঘুঙ্গা সওরি — এঁরা সব্বাই সওরি দেবীর বন্ধুবান্ধব, প্রকৃতির দেওতা। ওঁরা আছেন। আজও আছেন। এককালে আমরা ওঁদের পুজোআর্চ্চা শুরু করি। আমি তারপা বাজিয়ে আনন্দ উৎসবে ভাগ নিতে ডাকি ওঁদের। যেমন কারও নাম ধরে আমরা হাঁক পাড়ি, ঠিক তেমন ভাবেই প্রত্যেক সওরির জন্য আমি আলাদা আলাদা সুর বাজাই। এঁকে ডাকার শেষে ওঁকে ডাকার সময় সুরটাও পাল্টে যায়।

*****

সালটা তখন ২০২২। নান্দুরবার, ধুলে, বরোদা, বিভিন্ন জায়গার আদিবাসীদের সঙ্গে আমি তখন একই মঞ্চে... আমি আদৌ আদিবাসী কিনা, সেটা সামনের সারির লোকজন আমায় প্রমাণ করতে বলল।

আমি বলেছিলাম, যে মানুষটা সব্বার আগে এই পৃথিবীর বুকে নেমে এসে ধূলামাটি পরখ করে দেখেছিল, সে আদিবাসী, সে-ই আমার পূর্বজ। আমি বলেছিলাম, আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে যে শব্দ নির্গত হয়, সেটাই আমাদের সংস্কৃতি। বিভিন্ন কায়দায় হাত নেড়ে যেটা সৃষ্টি হয়, তা আপনারা তসবিরে দেখতে পান। কিন্তু ছবি-টবি ওসব পরে এসেছে। নিঃশ্বাস আর সংগীত চিরন্তন। তামাম কায়ানাতের জন্মলগ্ন থেকেই নাদ আমাদের মাঝে রয়েছে।

তারপা যন্ত্রটা আদতে এক যুগলের মতো — এটা কয়েই শেষ করেছিলাম সেদিন। নারীর সহায় পুরুষ, আর পুরুষের সহায় নারী। ঠিক তেমনই ভাবেই তারপা কাজ করে। নিঃশ্বাসে মিলিত হয় মেয়ে-মরদ, সৃষ্টি হয় অপূর্ব ধ্বনি।

আমার ওই জবাব আমাকে প্রথম স্থান এনে দিয়েছিল। আমার রাজ্যের জন্য প্রথম পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছিলাম!

জোড়হাতে তারপা-কে বলতাম, ‘নমস্য দেওতা হে, আমি তোমার খিদমতগার, আমি তোমার পূজারী। তাই তোমারও উচিত আমার দেখভাল করা। আমি উড়তে চাই। আমায় উড়োজাহাজের পিঠে বসাও।’ বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনে, আমার তারপা সত্যি সত্যিই আমায় ওড়ার সুযোগ দিয়েছিল। ভিকল্যা লাড়ক্যা ধিন্দা এরোপ্লেনে চড়েছে। বহু জায়গায় গেছি। আলন্দি, জেজুরি, বারামতী, শন্যা (শনি) শিঙ্গণাপুর... দূর-দূরান্তে ঘুরেছি। এখানকার কেউই ‘গোমা’-র (গোয়া) রাজধানী পাঞ্জিমে যায়নি। কিন্তু আমি গেছি। ওখানে পাওয়া একখান শংসাপত্রও আছে আমার কাছে।

Left: The many tarpas made by Bhiklya baba.
PHOTO • Siddhita Sonavane
Right: He has won many accolades for his tarpa playing. In 2022, he received the prestigious Sangit Natak Akademi Award and was felicitated in Delhi. One wall in his two-room house is filled with his awards and certificates
PHOTO • Siddhita Sonavane

বাঁদিকে: ভিকল্যা বাবার স্বহস্তে নির্মিত হরেক আকারের তারপা। ডানদিকে: তারপা বাজিয়ে অসংখ্য খেতাব জিতেছেন এই কিংবদন্তী শিল্পী। ২০২২ সালে, দিল্লির এক সংবর্ধনা সভায় তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় মর্যাদাপূর্ণ সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার। ভিকল্যা ধিন্দার দু-কামরার বাড়ির একটি দেওয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে সারি সারি খেতাব ও শংসাপত্র

মেলা গল্প আছে বলার, তবে সচরাচর মুখ খুলি না। ৮৯ বছর বয়স হয়েছে, আমার ঝুলিতে কত যে কিস্যা আছে তার ঠিক-ঠিকানা নেই। কিন্তু কোনদিনও মুখ ফুটে বলি না ওসব। সবই আমি পাঁজরের ভিতর পুরে রেখেছি। প্রচুর রিপোর্টার আর সাংবাদিক আসেন, আমার কাহিনি লেখেন, তারপর বই-টই ছাপিয়ে গোটা দুনিয়ায় ঢাক পেটান যে তেনাদের জন্যই নাকি আমার নামডাক হয়েছে। বহু গায়ক-বাদক আসেন আমার সংগীত চুরি করতে। তাই, সব্বার সঙ্গে দেখা করি না। আপনার কিসমত ভালো যে আমার সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে।

আমি সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছি। অনুষ্ঠানটা দিল্লিতে হয়েছিল। খেতাবটা হাতে নিতেই চোখে জল চলে এসেছিল। বাবা আমায় কোনদিনও স্কুলে পাঠায়নি, ভাবত যে ওসব লেখাপড়া করলে চাকরি পেতেও পারি, আবার না-ও পেতে পারি। তবে এটুকু বলেছিল যে, ‘এই যন্তরটা আমাদের দেওতা।’ তারপা সত্যিই ভগবান। এ আমায় সবকিছু দিয়েছে। মনুষ্যত্ব শিখিয়েছে। আজ তামাম দুনিয়ার মানুষ আমার নাম জানে। পোস্টাল খামে [ডাকটিকিট] আমার তারপার ছবি ছাপা আছে। আমার নাম লিখে ফোনের বোতাম টিপুন, আমার ভিডিও দেখতে পাবেন... এর চেয়ে বেশি আর কীই বা চাইতে পারি বলুন? কুয়োর ব্যাঙ জানেই না যে ইঁদারার বাইরে কী রয়েছে। কিন্তু আমি কুয়ো থেকে মুক্তি পেয়েছি...স্বচক্ষে বাইরের বিশ্বটা দেখেছি।

আজকালকার ছেলেছোকরারা তারপার সুরে সুরে আর নাচে না। ডিজে ডেকে আনে। কিন্তু একটা কথা বলুন তো, খেতের ফসল যখন কাটি, যখন নবান্ন নিয়ে গাঁওদেবীর পায়ে চড়াতে যাই, যখন ওঁর নামগান করে আর্তি জানাই, তখন কি আমরা ডিজে বাজাই? ওই মুহূর্তগুলোয় কেবল তারপা-ই থাকে, আর কিস্যুটি নয়।

এই প্রয়াসে সহায়তার জন্য আরোহন-এর মাধুরী মুকানের প্রতি পারি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে।

সাক্ষাৎকার, অনুলিখন ও ইংরেজি অনুবাদ: মেধা কালে
আলোকচিত্র ও ভিডিও: সিদ্ধিতা সোনাভানে

প্রতিবেদনটি পারির বিপন্ন ভাষা প্রকল্পের অংশ। এ প্রকল্পের লক্ষ্য, ভারতের বিপন্ন এবং হারাতে বসা ভাষাসমূহের দস্তাবেজিকরণ।

ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের অন্তর্গত ওয়ারলি ভাষাটি গুজরাত, দমন ও দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও গোয়ার ওয়ারলি (কিংবা ভারলি) আদিবাসীদের মাঝে প্রচলিত। ইউনেস্কোর ভাষা মানচিত্রে এটি ভারতের সম্ভাব্য বিপন্ন ভাষার তালিকায় স্থান পেয়েছে।

ওয়ারলি ভাষার যে ঘরানাটি মহারাষ্ট্রে প্রচলিত, সেটাকেই নথিবদ্ধ করা আমাদের লক্ষ্য।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Bhiklya Ladkya Dhinda

পালঘর জেলার জওহর ব্লকের ওয়ালওয়ান্ডে গ্রামের ভিকল্যা লাড়ক্যা ধিন্দা একজন খেতাবপ্রাপ্ত ওয়ারলি তারপা-বাদক। তাঁর সাম্প্রতিকতম শিরোপাটি আসে ২০২২ সালে, সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারের রূপে। তাঁর বয়স ৮৯।

Other stories by Bhiklya Ladkya Dhinda
Photos and Video : Siddhita Sonavane

সিদ্ধিতা সোনাভানে একজন সাংবাদিক ও পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়ার কন্টেন্ট সম্পাদক। তিনি ২০২২ সালে মুম্বইয়ের এসএনডিটি উইমেনস্ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর হওয়ার পর সেখানেই ইংরেজি বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে যুক্ত আছেন।

Other stories by Siddhita Sonavane
Translator : Joshua Bodhinetra

জশুয়া বোধিনেত্র পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়ার (পারি) ভারতীয় ভাষাবিভাগ পারিভাষার কন্টেন্ট ম্যানেজার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে এমফিল উত্তীর্ণ জশুয়া একজন বহুভাষিক কবি তথা অনুবাদক, শিল্প সমালোচক এবং সমাজকর্মী।

Other stories by Joshua Bodhinetra