আমরা আদিবাসী। নবজাতকের নাম দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। নদীর নাম, জঙ্গলের নাম, জমিজিরেত, সপ্তাহের বার, অথবা বিশেষ কোনও দিন, কিংবা কোনও পূর্বপুরুষ — নামধাম আমরা সব্বার থেকে ধার নিয়েছি বটে, কিন্তু এই যে মর্জিমাফিক নিজের নাম দেওয়ার অধিকার, আজ এটাও খোওয়া গেছে। সংগঠিত ধর্ম ও ধর্মান্তরের ঠেলায় ক্রমে ক্রমে বদলে গেছে আমাদের নাম, বাবুরা ইচ্ছেমতন জুড়ে দিয়েছে নামের নামতা। আমাদের বাচ্চারা শহুরে হাল ফ্যাশনের ইস্কুলে গেলে সংগঠিত মজহব এসে পাল্টে দিয়েছে ওদের নাম। এভাবেই জবাই হয়েছে আমাদের ভাষা, আমাদের পরিচয়, আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস। নামকরণের পিছনে লুকিয়ে আছে এক মারাত্মক ষড়যন্ত্র। যে জমিনে নাড়ির টানে গাঁথা আছে আমাদের শিকড়, আমাদের অতীতকথা — খুঁজে ফিরি সেই অরূপরতন। সেই যে দিনখন ও বারের গায়ে লেখা ছিল আমাদের অস্তিত্ব, হন্যে হয়ে তালাশ করি সেইসব পরম সম্পদ।

জসিন্তা কেরকেট্টার কণ্ঠে মূল হিন্দি কবিতাটি শুনুন

ইংরেজি অনুবাদে কবিতাটি শুনুন প্রতিষ্ঠা পাণ্ডিয়ার কণ্ঠে

নামের নামতা

জন্মেছি সোমবারে সোমের কোঠায়,
নামটি সোমরা মোর হইল যে তাই।
ভূমিষ্ঠ হয়েছিনু মঙ্গলবারে,
মঙ্গরা বলে ওগো ডাকিও আমারে।

মঙ্গল, মঙ্গর, মঙ্গলা নামে
জানি জানি দিনখানি বুধবারে থামে,
গর্ভ ছাড়িয়াছিনু বেস্পতিবার...
বিরসা নামেই তাই ডাকিও আবার।

একলা দাঁড়ায়েছিনু সময়ের বুকে
যেভাবে হপ্তা কাটে বার গোনা সুখে —
হঠাৎই আসিলি বাবু
হাসিয়া করিলি কাবু,
নামটা বদলে দিলি? তিথি দিনখন
ভেঙেচুরে একসা গো, আমার যাপন
পলকে পাল্টে দিলি? হায় রে জমিন...
নামেই শিকড় বাঁধা, নামেই সাকিন।

আজকে রমেশ আমি, নরেশ-মহেশ,
আলবার্ট-গিলবার্ট, আলফ্রেডে শেষ।
হুই যে ভুঁইয়ের সাথে নাহি বাঁধা নাড়ি,
যাদের অতীতকথা বুঝিতে না পারি,
ইদিক-উদিক থেকে এলো কত নাম...
শিকড় ছিঁড়িয়া গেলে সবই যে হারাম।

উয়াদের* ইতিহাসে লিজেরটো** খুঁজি,
দেখেছি দুনিয়া বাবু, এইটুকু বুঝি —
সাজানো খোঁয়াড় যত
সহস্র শত শত
নামের নামতা লেখা হাঁড়িকাঠে হায়...
সোঁদর সোঁদর নামে হচ্ছি জবাই।

*উয়াদের: ওদের
**লিজেরটো: নিজেরটা

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Poem and Text : Jacinta Kerketta

জসিন্তা কেরকেট্টা ওরাওঁ আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে আগত গ্রামীণ ঝাড়খণ্ড ভিত্তিক স্বতন্ত্র লেখক এবং রিপোর্টার। জসিন্তা একজন কবি। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির নিরন্তর সংগ্রাম তথা তাঁদের প্রতি নেমে আসা অবিচার ও বৈষম্য তাঁর কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে।

Other stories by Jacinta Kerketta
Painting : Labani Jangi

২০২০ সালের পারি ফেলোশিপ প্রাপক স্ব-শিক্ষিত চিত্রশিল্পী লাবনী জঙ্গীর নিবাস পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায়। তিনি বর্তমানে কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে বাঙালি শ্রমিকদের পরিযান বিষয়ে গবেষণা করছেন।

Other stories by Labani Jangi
Editor : Pratishtha Pandya

কবি এবং অনুবাদক প্রতিষ্ঠা পান্ডিয়া গুজরাতি ও ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করেন। বর্তমানে তিনি লেখক এবং অনুবাদক হিসেবে পারি-র সঙ্গে যুক্ত।

Other stories by Pratishtha Pandya
Translator : Joshua Bodhinetra

জশুয়া বোধিনেত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে এমফিল করেছেন। বর্তমানে অনুবাদ সহায়ক হিসেবে জশুয়া পারি'র সঙ্গে কর্মরত। কবি, শিল্পলেখক, শিল্প সমালোচক তথা সমাজ কর্মী ইত্যাদি নানান ভূমিকায় তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ।

Other stories by Joshua Bodhinetra