রাজপ্রাসাদের সবচাইতে উঁচু শিখরে প্রবল পরাক্রমে ধড়ফড় করছিল প্রকাণ্ড একটা নিশান। অহংকারী ভরদুপুর। ঘুমহীন পালঙ্ক। কাঁপা কাঁপা হৃদপিণ্ড নিয়ে সেখানে শুয়েছিল আমাদের নতুন সুলতান। এক অত্যাচারী বংশের অপশাসন ছিল এই মুলুকে, তার ইন্তেকাল ঘটিয়ে ক্ষমতা ছিনিয়ে তো সে নিয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকে একের পর এক বিদ্রোহে নাজেহাল হয়ে গেছে তার সালতানাত। নিজের উপর অপার আস্থা আছে তার, বর্ম ছাড়াই বুক চিতিয়ে যুদ্ধে নেমেছে সে বারংবার। হিংস্র জন্তু জানোয়ারের বাহিনীগুলো এক এক করে শেষ হয়ে গেছে তার বাহুবলে, প্রায়। প্রায়। ভেবেছিল এরা নিতান্তই তুচ্ছ পোকামাকড়, কিন্তু শেষমেশ দমিয়ে রাখতে পারেনি তাদের। তার মগজের দৌড় বহুদূর, ওই ওই যেখানে সুদূর সূর্যে আলতো ছোপ ধরেছে গেরুয়ার, কিন্তু বিষাক্ত এই ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানি হাওয়ায় সে সূর্য এখন ফ্যাকাসে, অস্থির।

এখন দরকার বিশাল পরিমাণে "মেটারিজিয়াম অ্যানিসোপ্লিআই" মজুত করার। কীটপতঙ্গের চিরশত্রু এ এমন এক পরজীবী ছত্রাক যার দেখা সারা দুনিয়ায় মেলে। দেশের তাবড় তাবড় সব পণ্ডিতরা বিধান দিয়েছে যে এই পঙ্গপালের দলকে সস্তায় এবং পাকাপাকিভাবে এক্কেবারে ঝেড়েঝুড়ে সাফ করতে গেলে দরকার এই ছত্রাকের। ভিতর থেকে শেষ হয়ে যাবে এই মড়ক। তবে মুশকিলটা মজুত করা নিয়ে নয়, সে দ্বায়িত্ব তো নিয়েই ফেলেছে সুলতানের বেরাদর যত সব আমীর ওমরাহরা। মুশকিলটা হল পঙ্গপালের ওই ঝাঁক থেকে অল্পবয়সী কচিকাঁচাদের খুঁজে বার করা যাদের মধ্যে এই জৈব-কীটনাশকটা খুব সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

এসব ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা নেমে আসে, সুলতান বড়ই ক্লান্ত আজ। মগজে ঘুরপাক খেতে থাকা এই যে আকাশকুসুম সমস্ত চিন্তাভাবনা তার, আহা এদের যদি কোনওভাবে নিরস্ত্র করা যেত! রাজধানীর শিরায় শিরায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া এই যে কোটি কোটি পঙ্গপালের সমবেত গর্জন, শুধু এটাই যে তাকে ভাবিয়ে তুলেছে তা ঠিক নয়। আরও একটা কারণ আছে। আরও কিছু একটা হয়েছে যেটা সটান তার পাঁজরার ভিতর ঢুকে গেছে, ধমনীগুলো কুরে কুরে খাচ্ছে। এটা কি তার আত্মার কোনও অসুখ? তার অহংকারের কি কোনও রোগ হয়েছে? সে কি ভয় পেয়েছে? নাকি সে ভাবছে আজ রাতেই কিছু একটা নেমে আসবে তার সাধের রাজমহলে? সে কি তাহলে শেষমেশ টের পেয়েছে যে তার ক্ষমতা আদৌ অক্ষয় অবিনশ্বর নয়? অসহ্য! অসহ্য এই নিজেই নিজেকে ক্রমাগত জেরা করতে থাকাটা! মনটাকে একটুখানি রেহাই দিতে সুলতান এক ঝলক বাইরে তাকায় ঝরোখার ওপারে। আঁধারঘন দিগন্তে গুটিগুটি পায়ে ডুবতে থাকা সূর্যটা ঠিক যেন ইবলিশের চোখ।

সুধন্য দেশপাণ্ডের কন্ঠে মূল কবিতাটি শুনুন

llustration: Labani Jangi, originally from a small town of West Bengal's Nadia district, is working towards a PhD degree on Bengali labour migration at the Centre for Studies in Social Sciences, Kolkata. She is a self-taught painter and loves to travel.
PHOTO • Labani Jangi

অলংকরণ: লাবনী জঙ্গী, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার এক মফস্বল শহরের মানুষ, বর্তমানে কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে বাঙালি শ্রমিকদের পরিযান বিষয়ে গবেষণা করছেন। স্ব-শিক্ষিত চিত্রশিল্পী লাবনী ভালোবাসেন বেড়াতে।

পঙ্গপালক

আঁকাবাঁকা সুলতানী
কানামাছি কোরাসে —
পঙ্গপালের সুখে জং ধরে আকাশে।
দ্রিমি দ্রিমি ডানা চার,
আধপেটা কাঁটাতার,
শিঙে তার নিরাকার হিংসুটে চাঁদ —
বাঁকা হাসি বেড়াজাল,
ফাঁকতালে মহাকাল,
এপিটাফে এঁটো হয় উড়কি নিষাদ।

শ্রাবন্ত আলাদিনে
সহজিয়া পাঁজরে —
জলকামানের দাগে রাত ফোটে জাগরে ।
থাকে সে হিঙল সাথে,
আঙারে,
অপেক্ষাতে,
চোখে তার গিলোটিন্ সূর্যআজান —
ধূলার মেঘলপাখি,
আলোনা কুয়াশা, নাকি
নুনে পোড়া শিশিরের কোজাগরী প্রাণ?

ন্যাংটা নীরূপকথা
শিষরঙা মেহ্ফিল —
পঙ্গপালের খিদে বৃহন্ন অনাবিল।
নিমপাতা জোড়া জোড়া
আঁজলে আতিশ পোড়া
দু’আনি ঘাঘর দানে রোজা রাখে বৃষ্টি,
পঙ্গপালের সুখে
সাহসী আহাম্মুকে
বিদ্রোহে বিলাওলে কবিতার সৃষ্টি।
ছোঁয়াচে মাটির ডানা,
রজসে বারুদ বোনা
সড়কে,
শাহিনে,
ঘেমো অট্টালিকায় —
বেহাগে হাপর টানি
লেগেছে মড়ক জানি
সালতানাতের প্রিয় আলতামিরায়।

অডিও: সুধন্য দেশপাণ্ডে, জন নাট্য মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ও পরিচালক এবং একই সঙ্গে লেফ্টওয়ার্ড বুকস্-এর একজন সম্পাদক।

বাংলা অনুবাদ - জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Pratishtha Pandya

কবি এবং অনুবাদক প্রতিষ্ঠা পান্ডিয়া গুজরাতি ও ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করেন। বর্তমানে তিনি লেখক এবং অনুবাদক হিসেবে পারি-র সঙ্গে যুক্ত।

Other stories by Pratishtha Pandya
Translator : Joshua Bodhinetra

জশুয়া বোধিনেত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে এমফিল করেছেন। বর্তমানে অনুবাদ সহায়ক হিসেবে জশুয়া পারি'র সঙ্গে কর্মরত। কবি, শিল্পলেখক, শিল্প সমালোচক তথা সমাজ কর্মী ইত্যাদি নানান ভূমিকায় তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ।

Other stories by Joshua Bodhinetra