ভিডিও দেখুন: বর্ষা বলে, ‘ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় গানটি গাইতে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে’

বর্ষা গড়াই মাত্র চার বছর বয়স থেকেই বাউল গানে গেয়ে চলেছে। যখন আমরা ২০১৬ সালের অগস্ট মাসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাই, তখন তার বয়স সবে সাত বছর (এবং এখন তার বয়স সাড়ে আট বছর)। সে বোলপুরের শান্তিনিকেতন অঞ্চলের নিবাসী বিখ্যাত বাউল শিল্পী বাসুদেব দাসের কাছে বাউল সংগীতে তালিম নিচ্ছে। (দেখুন: বাসুদেব বাউল: বাংলার অনন্য গীতিধারার এক রক্ষক )

বর্ষার বাড়ি কাছেই শ্যামবাটি গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর মহকুমার শ্যামবাটি গ্রামের এই খুদে নিবাসীর বাড়ি থেকে তার সংগীত গুরুর বাড়ি কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ মাত্র। শ্যামবাটির বাড়িতে সে তার পরিবারের সঙ্গে বাস করে – পরিবার বলতে তার বড় দাদা, বাবা, এবং একটি মিনি নামের একটি পোষা বিড়াল। তার মা, কৃষ্ণা, ২০১২ সালে মারা যান। তার বাবা গৌরচন্দ্র গড়াই নিজেও বাউল সংগীতের চর্চা করেন; তিনি ঢোলকের পাশাপাশি তবলা, মন্দিরা এবং দোতারা বাজান। তিনি বাসুদেব বাউলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বাউলগানের অনুষ্ঠানে এবং মেলায় সঙ্গত করেন। নিজের বাবা এবং বাসুদেব দাসের গান শুনে, বর্ষার বাউল সংগীতে আগ্রহ জন্মায়।

PHOTO • Ananya Chakroborty

বর্ষা তার তার বাবা গৌরচন্দ্র গড়াইয়ের সঙ্গে শ্যামবাটির বাড়িতে

বর্ষার কথায়, “আমার গান গাইতে, ছবি আঁকতে ভালো লাগে এবং পড়াশোনা করতেও ভালো লাগে।” পশ্চিমবঙ্গে ছোট বালিকাদের মধ্যে বাউল সংগীত অনুশীলন করার খুব একটা চল নেই - যদিও মহিলা বাউল শিল্পী আছেন, তবে পুরুষ বাউলদের তুলনায় তাঁদের সংখ্যা কম। বাসুদেব দাসের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্ষার বয়সী ছাত্রী আর দ্বিতীয় কেউ নেই।

বাউল সংগীত গূঢ় আধ্যাত্মিক দ্যোতনায় পরিপূর্ণ, এই শিল্পধারা বাংলার সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এই গান স্পষ্ট এক জীবন দর্শনের কথা বলে। বাউলরা নিজেদের অন্তরের সত্যের সন্ধানী হিসেবে দেখেন, তাঁদের মধুর সংগীতময় পবিত্র প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে গূঢ় সত্যের অনুসন্ধান করেন, এই সংগীতের মাধ্যমেই তাঁরা আধ্যাত্মিক জগতে বিচরণ করেন। বাউল সংগীত নিঃশর্ত স্বর্গীয় প্রেমের পথের কথা বলে, এবং তাঁদের গানের মধ্যে নিহিত থাকে মূলতঃ দুটো বিষয়: দেহ সাধনা (শরীরের কথা) এবং মন সাধনা (মনের কথা)। এসবই একটি শিশুর জন্য খুব গভীর এবং জটিল বিষয়, কিন্তু বর্ষা যে ইতিমধ্যেই সেই বিশ্বের সন্ধানে তার যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।

বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

Ananya Chakroborty

অনন্যা চক্রবর্তী শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও জনসংযোগে বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি এখন একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করেন।

Other stories by Ananya Chakroborty
Translator : Smita Khator

স্মিতা খাটোর পিপলস্‌ আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়া, পারি’র অনুবাদ সম্পাদক। নিজে একজন বাংলা অনুবাদক স্মিতা দীর্ঘদিন ভাষা এবং আর্কাইভ বিষয়ে কাজকর্ম করছেন। জন্মসূত্রে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, অধুনা কলকাতা-নিবাসী। নারী এবং শ্রমিক সমস্যা নিয়ে লেখালিখি করেন।

Other stories by স্মিতা খাটোর