পারি'র এই প্রতিবেদনটি পরিবেশ সংক্রান্ত সাংবাদিকতা বিভাগে ২০১৯ সালের রামনাথ গোয়েঙ্কা পুরস্কার প্রাপ্ত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি সিরিজের অংশ।

ভোর ৩টেয় উঠে বাড়ির সব কাজ সেরে ৫টার মধ্যে কাজে বেরিয়ে পড়তে হয় তাঁদের। সামান্য হেঁটে তাঁরা তাঁদের সুবৃহৎ সজল কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে যান। বাড়ি থেকে বেরিয়ে লম্বা লম্বা কদমে কয়েক পা হেঁটেই সমুদ্রে পৌঁছে সোজা ঝাঁপ দেন জলে।

কখনও বা নৌকা করে কাছাকাছি কোনও দ্বীপে গিয়ে সেখানকার জলে নেমে পড়েন। এইভাবে তাঁরা ৭-১০ ঘন্টা লাগাতার জলে ডুব দেন আর প্রতিবার উঠে আসেন এক গুচ্ছ করে সামুদ্রিক শৈবাল মুঠোয় ধরে — যেন তাঁদের জীবন নির্ভর করছে এর উপর — আর তা সত্যি তো বটেই। তামিলনাড়ুর রমানাথপুরম জেলার ভারতীনগর ধীবর পল্লির মহিলাদের জীবিকা নির্ভর করে সমুদ্রের গভীর থেকে তুলে আনা সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও শৈবালের উপর।

কাজের দিনে তাঁরা পোশাক আর জালের তৈরি থলে ছাড়াও সুরক্ষা- সরঞ্জামও সঙ্গে রাখেন। নৌকাচালকরা তাঁদের নিয়ে যান সেই সব দ্বীপে যেখানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও শৈবাল পাওয়া যায়, এই মহিলারা শাড়িকে ধুতির মতো কাছা দিয়ে পরে, জালের থলে কোমরে বেঁধে শাড়ির উপর একটি টি-শার্ট পরে নেন। সুরক্ষা-সরঞ্জামের মধ্যে থাকে চোখকে রক্ষা করার জন্য চশমা, হাতের আঙুল রক্ষা করার জন্য আঙুলে পেঁচানোর কাপড়ের ফালি অথবা দস্তানা, আর সমুদ্রপৃষ্ঠের ধারালো পাথর থেকে পা জোড়াকে রক্ষা করতে রবারের চটি। সমুদ্রের কাছাকাছি বা দ্বীপগুলির দিকে - যেদিকেই যান এগুলি তাঁরা অবশ্যই ব্যবহার করেন।

সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করা এমন একটি পরম্পরাগত পেশা যা এই অঞ্চলে মায়ের থেকে মেয়েরা শিখে নিয়ে ধারাটিকে বজায় রাখেন। আবার কোনও কোনও একা, সহায়হীন মহিলার ক্ষেত্রে এটাই আয়ের একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায়।

ক্রমবর্ধমান ঊষ্ণতা, সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন এবং সামুদ্রিক সম্পদের অতিব্যবহার হেতু এই পেশা এখন রুগ্ন হতে বসেছে।

“সামুদ্রিক শৈবালের ফলন ভীষণ রকম কমে গেছে,” বললেন ৪২ বছর বয়সী পি রক্কাম্মা। আর সব শৈবাল সংগ্রহকারীদের মতো রক্কাম্মাও থিরুপ্পুল্লানি ব্লকের মায়াকুলাম গ্রামের কাছে অবস্থিত ভারতীনগরের মানুষ। “আগে আমরা যে পরিমাণ পেতাম এখন আর তা পাই না। এখন আমরা অনেক সময়ে মাসে ১০ দিনের বেশি কাজই করতে পারি না।” এমনিতেই যখন বছরে মাত্র পাঁচ মাস ঠিকমতো শৈবাল সংগ্রহের কাজ করা যায় তখন এ এক মস্ত বড়ো ক্ষতি। রক্কম্মা মনে করেন, “২০০৪ সালে ডিসেম্বর মাসের সুনামির পর ঢেউ অনেক জোরালো হয়ে গেছে আর সমুদ্রতলের উচ্চতাও বেড়ে গেছে।”

PHOTO • M. Palani Kumar

সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করা এমন একটি পরম্পরাগত পেশা যা এই অঞ্চলে মায়ের থেকে মেয়েরা শিখে নিয়ে ধারাটিকে বজায় রাখেন। এখানে, ইউ পঞ্চভরম প্রবাল প্রাচীর থেকে সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করছেন

এ মূকুপোরির মতো আট বছর বয়স থেকে সামুদ্রিক উদ্ভিদ সংগ্রহ করছেন যাঁরা তাঁদের এই পরিবর্তনে খুব ক্ষতি হচ্ছে। খুব ছোটোবেলায় মা-বাবার মৃত্যু হলে আত্মীয়-স্বজন তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন এক মদে আসক্ত ব্যক্তির সঙ্গে। আজ ৩৫ বছর বয়সেও তিন কন্যা সহ মূকুপোরি তাঁর সঙ্গেই থাকেন বটে কিন্তু রোজগার করে সংসার প্রতিপালনের কোনও ক্ষমতাই তাঁর স্বামীর আর নেই।

তাঁদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হিসাবে তিনি জানালেন যে “শৈবাল সংগ্রহ করে যে আয় হয় তা তাঁর মেয়েদের পড়াশুনা এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। তাঁর বড়ো মেয়ে বি কম পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। দ্বিতীয় জন কলেজে ভর্তির অপেক্ষায় আর কনিষ্ঠটি পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। মূকুপোরির ভয়, অবস্থার আশু “উন্নতি হওয়ার” কোনও আশা নেই।

তিনি এবং তাঁর সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহকারী সঙ্গীরা মুথুরাইয়ার সম্প্রদায়ের, যাঁরা তামিলনাড়ুতে সর্বাধিক অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত। রমানাথপুরমের মৎস্যজীবী সংঘের সভাপতি এ পালসামির মতে তামিলনাড়ুর ৯৪০ কিমি দীর্ঘ তটরেখা জুড়ে শৈবাল সংগ্রহকারী মহিলার সংখ্যা ৬০০-এর বেশি নয়। কিন্তু তাঁদের কাজের উপর নির্ভর করেন রাজ্যের তথা বাইরেরও বহু মানুষ।

“যে সামুদ্রিক শৈবাল আমরা সংগ্রহ করি তা যায় অগর প্রস্তুতকারকদের কাছে,” বললেন ৪২ বছর বয়সী পি রানীয়াম্মা। জেলি জাতীয় পদার্থ অগর তরল খাদ্যের ঘনত্ব বাড়াতে কাজে লাগে।

যে সামুদ্রিক শৈবাল এখানে সংগ্রহ করা হয় তা খাদ্য শিল্প, সার প্রস্তুত করতে এবং ঔষধ শিল্প ছাড়াও আরও অনেক কাজে লাগে। মহিলারা সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করে শুকিয়ে দিলে তা মাদুরাই জেলার বিভিন্ন কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করার জন্য পাঠানো হয়। এই অঞ্চলে প্রধানত দুই প্রজাতির শৈবাল পাওয়া যায় — মট্টাকোরাই (গ্রাসিলারিয়া) ও মারিকোজুন্থু (জেলিডিয়াম আমান্সি)। জেলিডিয়াম কখনও কখনও স্যালাডে দেওয়া হয়, তাছাড়া পুডিং এবং জ্যাম তৈরিতে লাগে। যাঁরা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ করছেন বা কোষ্টকাঠিন্যে ভুগছেন তাঁদের পক্ষে এটিকে উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়। মট্টাকোরাই (গ্রাসিলিয়ারি) কাপড় রাঙাতে এবং শিল্পক্ষেত্রে অন্যান্য প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হয়।

সামুদ্রিক শৈবাল এতরকম শিল্পে ব্যবহৃত হয় ফলে এর যথেচ্ছ ব্যবহারও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় লবণ ও সামুদ্রিক রাসায়নিক গবেষণা কেন্দ্র (মন্ডপম ক্যাম্প রমানাথপুরম) জানাচ্ছে যে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে এগুলির জোগান ক্রমশ কমে আসছে।

PHOTO • M. Palani Kumar

মারিকোজুন্তু নামের এক ধরনের ভোজ্য সামুদ্রিক শৈবাল হাতে পি রানীয়াম্মা

জোগানের অভাব থেকেই এই ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া যায়। “পাঁচ বছর আগে আমরা সাত ঘন্টায় ১০ কিলো মারিকোজুন্থু তুলতাম,” বললেন ৪৫ বছর বয়সী এস অমৃতম। আর এখন একদিনে ৩-৪ কিলোর বেশি পাই না। কয়েক বছরে উদ্ভিদগুলি আকারেও খাটো হয়ে গেছে।”

একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্পও রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের শেষেও মাদুরাইতে ৩৭টি অগর উৎপাদনকারী কেন্দ্র ছিল,” ওই অঞ্চলের একটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মালিক এ বোস জানালেন। আর বর্তমানে আছে মাত্র ৭টি — সেগুলিও উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশই ব্যবহার করতে পারে। বোস সর্বভারতীয় অগর ও আলগিনেট প্রস্তুতকারক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ছিলেন — যে সমিতি সদস্যের অভাবে বিগত দুই বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।

“আগের তুলনায় এখন আমাদের কাজের দিন কমে গেছে,” বললেন ৫৫ বছর বয়সী এম মরিয়াম্মা, যিনি চার দশক ধরে সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করছেন। “শৈবাল সংগ্রহ বন্ধ থাকে যে মরশুমে, সেইসময় অন্য কোনও বিকল্প কাজেরও সুযোগও থাকে না।”

মরিয়াম্মার জন্ম সাল ১৯৬৪তে মায়াকুলাম গ্রামে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার অধিক তাপমাত্রা সম্বলিত দিন ছিল ১৭৯টি। ২০১৯ সালে এতে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটে দিনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭১ দিন। নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌-এ এই বছর জুলাইয়ে প্রকাশিত জলবায়ু ও উষ্ণায়ন বিষয়ক একটি অনলাইন ইন্টারাক্টিভ টুল থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ২৫ বছর পর এমন দিনের সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ২৮৬ থেকে ৩২৪-এর মধ্যে। বলা বাহুল্য একই সঙ্গে সমুদ্রের তাপমাত্রাও বেড়ে চলেছে।

এইসবের প্রভাব কেবল ভারতীনগরের মৎস্যজীবীদের উপরেই পড়ে না। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্সরকারি বিশেষজ্ঞ দলের সর্বশেষ রিপোর্ট (আইপিসিসি) এমন গবেষণার অননুমোদিতভাবে উল্লেখ করেছে যেগুলিতে সমুদ্রিক শৈবাল জলবায়ুর উপর সৃষ্ট চাপ প্রশমনে সক্ষম বলে চিহ্নিত হয়েছে। রিপোর্টটি অবশ্য স্বীকার করেছে, “সামুদ্রিক শৈবালের জীবনচক্র সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।”

এই রিপোর্টর অন্যতম লেখক ছিলেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক তুহিন ঘোষ। শৈবালের জোগান কমে যাওয়ার বিষয়ে ওখানকার মৎস্যজীবী মহিলারা যা বলছেন তার সাথে অধ্যাপকের মত মিলে যাচ্ছে। “শুধু সামুদ্রিক শৈবাল নয়, আরও বহু বিষয়েই হ্রাস বা বৃদ্ধি হচ্ছে [যেমন অভিবাসন] ,” ফোনে তিনি পারি-কে জানান। “এই কথা মৎস্যচাষ , চিংড়ি চাষ এবং সমুদ্র ও তার উপকূল অঞ্চলে কাঁকড়া সংগ্রহ, মধু সংগ্রহ, অভিবাসন ( যেমন দেখা যায় সুন্দরবনে )- ইত্যাদি নানান বিষয়েই প্রযোজ্য।”

PHOTO • M. Palani Kumar

মহিলারা কখনও কখনও নিকটবর্তী দ্বীপে চলে যান সমুদ্রে নামতে

অধ্যাপক ঘোষ বললেন যে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ যা বলছেন তা সত্যি। “কিন্তু মাছের বিষয়টি ভিন্ন — কারণ তা কেবল জলবায়ুর পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল নয়। বাণিজ্যিক কারণে অতিরিক্তমাত্রায় এবং ট্রলারের সাহায্যে যথেচ্ছ মৎস্য উত্তোলনের কারণে পরম্পরাগত মৎস্যজীবীরা মাছের স্বাভাবিক গতিপথে অনেক কম মাছ পাচ্ছেন।”

ট্রলার সামুদ্রিক শৈবালের ক্ষতি না করলেও বাণিজ্যিক কারণে এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অবশ্যই সেই ক্ষতিসাধনে সক্ষম। ভারতীনগরের সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও শৈবাল সংগ্রহাকারী মহিলারা এই সমস্যায় সামান্য হলেও নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছেন। পরিবেশ কর্মী ও গবেষক যাঁরা তাঁদের মধ্যে কাজ করেন তাঁরা বলছেন যে মহিলারা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার মাধ্যমে স্থির করে জুলাই অবধি সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করে তিনমাস কাজ বন্ধ রেখে উদ্ভিদগুলিকে বেড়ে উঠতে সময় দেন। জুন থেকে মার্চ তাঁরা মাসের মধ্যে মাত্র কয়েকদিনই উদ্ভিদ সংগ্রহ করেন। সোজা কথায়, পরিবেশ বাঁচাতে তাঁরা আত্মনিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

সুচিন্তিত পদক্ষেপ হলেও এতে তাঁদের ক্ষতিও হচ্ছে। “মৎস্যজীবী মহিলাদের মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চয়তা আইনে (এমজিএনরেগা) কাজ দেওয়া হয় না,” বললেন মরিয়াম্মা। “যে সময়ে উদ্ভিদ সংগ্রহ করি সে সময়েও আমরা দিনে ১০০-১৫০ টাকার বেশি রোজগার করি না।” “সংগ্রহের মরশুমে একজন মহিলা ২৫ কিলোগ্রাম অবধি সামুদ্রিক উদ্ভিদ সংগ্রহ করলেও কী হারে তাঁরা আয় করবেন (যা ক্রমেই এখন কমছে) তা নির্ভর করে সংগৃহীত শৈবালের প্রজাতির উপর।”

আইনের পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। নৌকায় পৌঁছাতে দুই দিন অবধি প্রায় লাগে এমন বহু দূরবর্তী নল্লাথিভু, চল্লি, উপ্পুত্থাম্মির দ্বীপগুলিতে তাঁরা ১৯৮০ সাল পর্যন্ত যেতে পারতেন। এক সপ্তাহ থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহ করে তাঁরা ফিরে আসতে পারতেন। কিন্তু ওই বছরেই ২১টি দ্বীপ মান্নার উপসাগরীয় সামুদ্রিক জাতীয় উদ্যান, অর্থাৎ বনদপ্তরের অধীনে চলে আসে। বনবিভাগ তাঁদের দ্বীপে থাকার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে ও ক্রমে ওই সব অঞ্চলে তাঁদের যাওয়াও বন্ধ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনও ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। ৮,০০০-১০,০০০ টাকা অবধি জরিমানার ভয়ে তাঁরা বড়ো একটা আর ওইদিকে যান না।

PHOTO • M. Palani Kumar

সামুদ্রিক উদ্ভিদ সংগ্রহ করতে মহিলাদের ব্যবহৃত জালের থলে ব্যবহার করেন। কাজ করতে গিয়ে তাঁরা আহত ও রক্তাক্ত হন কিন্তু এক থলে উদ্ভিদ মানে পরিবারের সংস্থানের সুরাহা

ফলে আয় আরও কমে গেছে। “যখন দ্বীপগুলিতে গিয়ে থাকতে পারতাম তখন সপ্তাহে আমাদের ১,৫০০-২,০০০ টাকা আয় হত,” বললেন এস অমৃতম, যিনি ১২ বছর বয়স থেকে সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করছেন। “আমরা মাট্টাকোরাই ও মারিকোজুন্থু — দুই ধরনের উদ্ভিদই পেতাম। এখন সপ্তাহে ১,০০০ টাকা আয় করাও কঠিন হয়ে গেছে।”

শৈবাল সংগ্রহকারীরা জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত বিতর্কগুলি সম্বন্ধে অবহিত না হতে পারেন কিন্তু সে বিষয়ে ও তার প্রভাব সম্বন্ধে তাঁদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। তাঁরা জানেন যে আগামী দিনে তাঁদের জীবন জীবিকায় আরও নানা পরিবর্তন আসতে চলেছে। সমুদ্র, তাপমাত্রা, জলবায়ু ও আবহাওয়ার বিচিত্র আচরণ তাঁরা লক্ষ্য করেছেন। এইসব পরিবর্তনে (তাঁদের নিজেদের সহ) মানুষের ভূমিকা তাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এটাও বুঝতে পারছেন যে এই ফাঁসে জড়িয়ে গেছে তাঁদের আয়ের পথ। এমজিএনরেগা সম্বন্ধে মরিয়াম্মার বক্তব্য থেকে বোঝা যায় তাঁরা জানেন যে তাঁদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

দুপুর থেকে সমুদ্রের জল বাড়তে শুরু করে, ফলে তাঁদের সেদিনের মতো কাজ গুটিয়ে ফেলতে হয়। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁদের সংগ্রহ নিয়ে যে নৌকায় গিয়েছিলেন তাতে করেই ফিরে এসে সমুদ্র সৈকতে জালের থলেতে করে তা বিছিয়ে দেন।

কাজটি যথেষ্ট জটিল এবং এতে ঝুঁকিও যথেষ্ট। সমুদ্রের পরিস্থিতি ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে ওই অঞ্চলে সমুদ্রিক ঝড়ে ৪ জন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। মাত্র তিনটি মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং স্থানীয় মানুষজন মনে করেন সমুদ্র ও বাতাস দুই-ই ক্রমে শান্ত হলে তবেই সন্ধান মিলবে চতুর্থ দেহটির।

স্থানীয় মানুষের কথায় বাতাসের সহায়তা ছাড়া সমুদ্রে কোনো কাজ করাই বিপজ্জনক। জলবায়ুতে বড়ো রকমের পরিবর্তনের ফলে অনিশ্চিত আবহাওয়ার দিন বেড়েই চলেছে। তবুও মহিলারা অশান্ত সমুদ্রে পাড়ি দেন জীবিকার এই একমাত্র যে পথ খোলা আছে তাঁদের সামনে তার উদ্দেশে — তাঁরা একথা আলবাত জানেন, রূপকার্থে এবং আক্ষরিক অর্থেও, যে কোনও সময়েই তাঁরা অশান্ত সমুদ্রে ভেসে যেতে পারেন।

PHOTO • M. Palani Kumar

সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহের করতে জলে ডুব দেওয়ার জন্য সুকৌশলে নৌকা পরিচালনা - বাতাসের সহায়তা ছাড়া সমুদ্রে কোনো কাজ করাই বিপজ্জনক। জলবায়ুতে বড়ো রকমের পরিবর্তনের ফলে অনিশ্চিত আবহাওয়ার দিন বেড়েই চলেছে

PHOTO • M. Palani Kumar

ছেঁড়া দস্তানা পরিহিত এক সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রাহক – উত্তাল জল আর পাথরের সঙ্গে লড়ার লড়ঝড়ে অস্ত্র এই দস্তানা

PHOTO • M. Palani Kumar

জাল প্রস্তুত : মেয়েদের সুরক্ষা সরঞ্জামের মধ্যে থাকে, চোখকে রক্ষা করার জন্য চশমা, হাতের আঙুল রক্ষা করার জন্য আঙুলে পেঁচানোর কাপড়ের ফালি বা দস্তানা, আর সমুদ্রপৃষ্ঠের ধারালো পাথর থেকে পা জোড়াকে রক্ষা করতে রবারের চটি

PHOTO • M. Palani Kumar

এস অমৃতম প্রবল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরের দিকে পৌঁছাবার চেষ্টা চালাচ্ছেন

PHOTO • M. Palani Kumar

সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করার জাল দিয়ে তৈরি থলের মুখ আঁটছেন এম মরিয়াম্মা

PHOTO • M. Palani Kumar

সমুদ্রে ডুব দেওয়ার প্রস্তুতি

PHOTO • M. Palani Kumar

তারপর সমুদ্রপৃষ্ঠের দিকে পৌঁছনোর লক্ষ্যে ডুব

PHOTO • M. Palani Kumar

অতল সমুদ্র – গহন গভীরে মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীদের অনচ্ছ জল-জগৎ এই কর্মী মহিলাদের কর্মস্থল

PHOTO • M. Palani Kumar

দীর্ঘপত্র বিশিষ্ট মাট্টাকোরাই সংগ্রহ করে শুকিয়ে কাপড় রাঙানোর কাজে ব্যবহার হয়

PHOTO • M. Palani Kumar

সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস বেশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিয়ন্ত্রণ করে রানীয়াম্মা মারিকোজুন্থু সংগ্রহ করেন

PHOTO • M. Palani Kumar

তারপর দিনের সংগ্রহ নিয়ে সমুদ্রের উপরে এলোমেলো ঢেউয়ের মাঝে ভেসে ওঠার পালা

PHOTO • M. Palani Kumar

জোয়ার আসছে, তবু মহিলারা দুপুর অবধি পরিশ্রম করেই চলেন

PHOTO • M. Palani Kumar

এক সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহকারী কাজকর্মের পর নিজের সুরক্ষা-সরঞ্জাম পরিষ্কার করছেন

PHOTO • M. Palani Kumar

ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে তীরের দিকে ফেরা

PHOTO • M. Palani Kumar

সংগৃহীত সামুদ্রিক শৈবাল তীরের দিকে টেনে নিয়ে চলা

PHOTO • M. Palani Kumar

অন্যেরা দিনের হরিৎ-শৈবাল ভরা থলে নামিয়ে নিচ্ছেন

PHOTO • M. Palani Kumar

তীরে পৌঁছালো শৈবাল বোঝাই একটি ছোটো নৌকা; এক শৈবাল সংগ্রহকারী নোঙর টানিয়েকে নির্দেশ দিচ্ছেন

PHOTO • M. Palani Kumar

সংগৃহীত সামুদ্রিক শৈবাল নামিয়ে আনছে একটি দল

PHOTO • M. Palani Kumar

দিনের সংগ্রহ ওজন হচ্ছে

PHOTO • M. Palani Kumar

সামুদ্রিক শৈবাল শুকোনোর প্রস্তুতি

PHOTO • M. Palani Kumar

আর এক দল শুকোতে দেওয়া সামুদ্রিক শৈবালের গালিচার উপর দিয়ে সংগ্রহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন

PHOTO • M. Palani Kumar

দীর্ঘ সময় সমুদ্রে ও জলের গভীরে কাটিয়ে এবার তাঁদের ঘরে ফেরার পালা

কভার চিত্র : এ মূকুপোরি জালের থলের মুখ আঁটছেন। ৩৫ বছর বয়সী এই মহিলা আট বছর বয়স থেকে সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করছেন। (ছবি: এম পালানী কুমার/পারি)

সেন্থালির এসকে তাঁর সহৃদয় সহায়তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

পারি-র জলবায়ু বিবর্তনের উপর দেশব্যাপী রিপোর্টিং সংক্রান্ত প্রকল্পটি ইউএনডিপি সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য জলবায়ুর বিবর্তনের প্রকৃত চিত্রটি দেশের সাধারণ মানুষের স্বর এবং অভিজ্ঞতায় বিবৃত করা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] এই আইডিতে।

বাংলা অনুবাদ : চিলকা

Reporter : M. Palani Kumar

ایم پلنی کمار پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا کے اسٹاف فوٹوگرافر ہیں۔ وہ کام کرنے والی خواتین اور محروم طبقوں کی زندگیوں کو دستاویزی شکل دینے میں دلچسپی رکھتے ہیں۔ پلنی نے ۲۰۲۱ میں ’ایمپلیفائی گرانٹ‘ اور ۲۰۲۰ میں ’سمیُکت درشٹی اور فوٹو ساؤتھ ایشیا گرانٹ‘ حاصل کیا تھا۔ سال ۲۰۲۲ میں انہیں پہلے ’دیانیتا سنگھ-پاری ڈاکیومینٹری فوٹوگرافی ایوارڈ‘ سے نوازا گیا تھا۔ پلنی تمل زبان میں فلم ساز دویہ بھارتی کی ہدایت کاری میں، تمل ناڈو کے ہاتھ سے میلا ڈھونے والوں پر بنائی گئی دستاویزی فلم ’ککوس‘ (بیت الخلاء) کے سنیماٹوگرافر بھی تھے۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز M. Palani Kumar

پی سائی ناتھ ’پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا‘ کے بانی ایڈیٹر ہیں۔ وہ کئی دہائیوں تک دیہی ہندوستان کے رپورٹر رہے اور Everybody Loves a Good Drought اور The Last Heroes: Foot Soldiers of Indian Freedom کے مصنف ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز پی۔ سائی ناتھ
Series Editors : P. Sainath

پی سائی ناتھ ’پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا‘ کے بانی ایڈیٹر ہیں۔ وہ کئی دہائیوں تک دیہی ہندوستان کے رپورٹر رہے اور Everybody Loves a Good Drought اور The Last Heroes: Foot Soldiers of Indian Freedom کے مصنف ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز پی۔ سائی ناتھ
Series Editors : Sharmila Joshi

شرمیلا جوشی پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا کی سابق ایڈیٹوریل چیف ہیں، ساتھ ہی وہ ایک قلم کار، محقق اور عارضی ٹیچر بھی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز شرمیلا جوشی
Translator : Chilka

Chilka is an associate professor in History at Basanti Devi College, Kolkata, West Bengal; her area of focus is visual mass media and gender.

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Chilka