"এগিয়ে এসে কীভাবে নিজের লড়াই নিজেকেই করতে হয়, সেটা তো এই আন্দোলন থেকেই শিখেছি। এ লড়াই ইজ্জত দিয়েছে আমাদের।" এখানে 'আমাদের' বলতে রাজিন্দর কৌর তাঁর মতো সেই মহিলাদের কথা বলতে চাইছেন যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রে পাশ হওয়া কৃষি-আইনের বিরুদ্ধে। পঞ্জাবের পাতিয়ালা জেলার চাষি রাজিন্দর (৪৯) হামেশাই ২২০ কিমি পাড়ি দিয়ে সিংঘুতে আসতেন, বিক্ষোভস্থল ফেটে পড়ত তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণে।

দৌন কালান গ্রাম থেকে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে এসে উঠেছিলেন তাঁর পড়শি হরজিৎ কৌরও, সিংঘু শিবিরে কাটিয়েছিলেন ২০৫ দিন। "এমন কোনও সময়ের কথা মনেই পড়ে না যখন ফসল ফলাইনি," বললেন তিনি, "কাস্তের একেকটা কোপের সঙ্গে সঙ্গে বয়সটাও বেড়েছে ধাপে ধাপে।" আজ ৩৬ বছর ধরে চাষ করছেন হরজিৎ, "তবে এমনতর একটা লড়াই দেখা, বা সেটায় যোগ দেওয়া, এমনটা এর আগে কক্ষনো হয়নি। স্বচক্ষে দেখেছি বাচ্চাকাচ্চা, বুড়োবুড়ি, মহিলা, সবাই কেমন দলে দলে এসে যোগ দিচ্ছে আন্দোলনে।"

লাখে লাখে চাষি এসে উঠেছিলেন রাজধানীর চৌকাঠে, প্রাথমিকভাবে একটাই দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার যেন বিতর্কিত আইনগুলি বাতিল করে। নভেম্বর ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২১ সালে আইনগুলো রদ হওয়া অবধি, পুরো একটা বছর সেখানে ঘাঁটি গেড়েছিলেন মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের চাষিরা। এই কৃষি-বিক্ষোভ ঐতিহাসিক তো বটেই, তাছাড়াও সাম্প্রতিক স্মৃতিতে এতবড়ো গণআন্দোলন আর একটিও হয়েছে কিনা মনে পড়ছে না।

আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন পঞ্জাবের মহিলারা। সেখানে খুঁজে পাওয়া সংহতি, সাহস ও মুক্তি আজও তাঁরা বেঁধে রেখেছেন পাঁজরে, দিনে দিনে যেন বেড়ে চলেছে সেটা। "যখন ওখানে [সংগ্রামস্থলে] ছিলাম, একটিবারও মনকেমন করেনি বাড়ির জন্য। এই যে আজ ফিরে এসেছি, বড্ডো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, মনটা সেই আন্দোলনেই পড়ে আছে," মানসা জেলার কুলদীপ কৌর (৫৮) জানালেন।

বুধলাডা তেহসিলের রালি গ্রামে বাড়ি তাঁর, আগে ঘরকন্না সামলাতে গিয়ে মেজাজটা কেমন যেন তিরিক্ষি হয়ে থাকত কুলদীপের। "বাড়িতে একের পর এক কাজ, নয়ত কোনও অতিথি এলে তাদের দেখভাল করো রে, ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকো রে। ওখানে খাঁচাভাঙা পাখি হয়ে থাকতাম," বলে উঠলেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষোভস্থলের যৌথ-রান্নাঘরে। আজীবন সেখানে রান্না করতে হলেও হাসিমুখে করবেন, জোরগলায় জানালেন সেটা। "বয়স্ক মানুষদের দেখতাম, মনে হত যেন নিজেরই মা-বাবাকে রেঁধে-বেড়ে খাওয়াচ্ছি।"

Harjeet Kaur is farming
PHOTO • Amir Malik
Kuldip Kaur mug short
PHOTO • Amir Malik
Rajinder Kaur in her house
PHOTO • Amir Malik

বাঁদিক থেকে: হরজিৎ কৌর, কুলদীপ কৌর এবং রাজিন্দর কৌর, ২০২০ সালে কেন্দ্রের পাশ করা কৃষি-আইনের বিরুদ্ধে সংগঠিত লড়াইয়ের সামনের সারিতে ছিলেন তাঁরা

শুরুতে যখন আইনগুলোর বিরুদ্ধে গলা তোলেন চাষিরা, তখন কিন্তু কোনও ইউনিয়নে যোগ দেননি কুলদীপ। তারপর যখন সংযুক্ত কিষান মোর্চা তৈরি হল, উনি তখন একটা পোস্টার এঁকে দেন মোর্চার জন্য। 'কিষান মোর্চা জিন্দাবাদ', এই স্লোগানটা লিখে সিংঘু অবধি বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা। সংগ্রামস্থলে উপস্থিত মহিলারা বারবার বারণ করেছিলেন তাঁকে আসতে, হাজারো অসুবিধা রয়েছে শিবিরগুলোয়, কিন্তু সেকথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দিয়েছিলেন কুলদীপ, এমনই তাঁর জেদ। "আসতে আমাকে হবেই, সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম।"

সিংঘুতে গিয়ে দেখলেন মহিলারা পেল্লায় সব চুলোর (কাঠের উনুন) আগুনে রুটি সেঁকছেন। "দূর থেকে হাঁক পাড়ল আমাকে দেখে, 'ওলো বোন! এসো গো, রুটি বানাতে হাত লাগাও'।" একই জিনিস ঘটে টিকরিতে, মানসা থেকে আগত একটি ট্রাক্টর-ট্রলিতে বেশ জাঁকিয়ে বসেছিলেন তিনি। "এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রুটি বানিয়েছিলাম," মনে করে বললেন কুলদীপ। টিকরি থেকে তারপর গিয়ে উঠলেন হরিয়ানা-রাজস্থান সীমান্তে শাহজাহানপুরের শিবিরে। "কয়েকজন মরদ কাজ করছিল ওখানে, আমাকে দেখে ওরাও রুটি বানাতে বলল," জানালেন তিনি। তারপর হাসতে হাসতে যোগ করলেন, "যেখানেই গেছি, লোকে শুধু রুটি বানাতেই বলেছে। কি জানি, কপালে বুঝি লেখাই আছে যে আমি রুটি বানানোয় ওস্তাদ।"

কৃষি-আন্দোলনের প্রতি কুলদীপের এই অঙ্গীকার দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তাঁর গাঁয়ের পড়শি, বন্ধুবান্ধব প্রত্যেকেই। তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য ঝুলোঝুলি করতে লাগলেন সবাই। "সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিতাম, ওরা সেগুলো দেখে বলত পরের বার সঙ্গে নিয়ে যেতে।" তাঁর এক সই তো এটাও বলেছিলেন যে আন্দোলনে যোগ না দিলে নাতি-নাতনিদের সামনে মুখ দেখাবেন কেমন করে!

টিভিতে সিরিয়াল বা সিনেমা দেখার অভ্যাস তাঁর কখনই ছিল না, তবে বিক্ষোভস্থল থেকে বাড়ি ফিরে টিভিতে সংবাদ দেখা শুরু করলেন কুলদীপ। "হয় সেখানে সশরীরে উপস্থিত থাকতাম, নতুবা ওখানকার খবর দেখতাম," জানালেন তিনি। পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা গভীরভাবে দাগ কাটে তাঁর মনে, অচিরেই উদ্বেগ কমাতে ওষুধ খাওয়া শুরু হয়। তাঁর কথায়: "মাথাটা কেমন যেন বনবন করত, ডাক্তারবাবু বললেন খবর দেখা বন্ধ করতে হবে।"

কুলদীপের ভিতর যে অতল সাহসের ভাণ্ডার লুকিয়ে ছিল, এটা কৃষি-আন্দোলনে যোগ না দিলে হয়তো টেরও পেতেন না কোনওদিন। মোটরগাড়ি বা ট্রাক্টর-ট্রলিতে চড়ার ভয় কাটিয়ে বারংবার রওনা দিয়েছিলেন দিল্লির পথে, শয়ে শয়ে কিলোমিটার পথ পেরিয়েছেন। "দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অগুনতি চাষির, আমি তো এই ভয়েই সিঁটিয়ে থাকতাম যে বেঘোরে প্রাণটা গেলে এ যুদ্ধে জয়টুকু আর দেখে যেতে পারব না," বলে উঠলেন তিনি।

Kuldip at the protest site in Shahjahanpur
PHOTO • Courtesy: Kuldip Kaur
Kuldip in a protest near home
PHOTO • Courtesy: Kuldip Kaur
Kuldip making rotis during protest march
PHOTO • Courtesy: Kuldip Kaur

বাঁদিকে ও মাঝখানে: শাহজাহানপুরের প্রতিবাদস্থলে কুলদীপ; বাড়ির কাছেই একটি আন্দোলন শিবিরে (মাঝখানে), আগের একটি সভায় দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এক যুবক, সামনের পোস্টারে সেটাই আঁকা আছে। ডানদিকে: শাহজাহানপুরের যৌথ-লঙ্গরে রুটি বানাচ্ছেন কুলদীপ

বাড়িতে ফিরেও চুপচাপ বসে থাকার পাত্রী ছিলেন না কুলদীপ, কাছেপিঠে প্রতিবাদ সভায় গিয়ে উপস্থিত হতেন। বিক্ষোভে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা এক কিশোরের কথা মনে আছে তাঁর, কুলদীপের ঠিক পাশেই সে দাঁড়িয়ে ছিল যখন দ্রুতগতিতে ছুটে আসা এক গাড়ির চাকা পিষে দিয়ে চলে যায় তাকে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতীয় এক ব্যক্তিও মারা যান, চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান তৃতীয় জন। "একচুলের জন্য রক্ষে পেয়েছিলাম আমি আর আমার বর। দুর্ঘটনায় মারা যাবার ভয় সেদিন থেকে ঘুচে গেছে। যেদিন আইনগুলো রদ হল, সেদিন মনে হচ্ছিল ও [কিশোর ছেলেটি] আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম," কান্না চেপে জানালেন কুলদীপ, এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন সাতশোরও অধিক চাষি , আজ তাঁরাও ভিড় করে আসেন তাঁর বিষাদে।

পঞ্জাবের মহিলারা মনে করেন যে কৃষি-আন্দোলনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত থেকে বিতর্কিত আইনগুলো সরকার প্রত্যাহার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁদেরকে অবহেলা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী তালিকায় গুটিকয় মহিলা রয়েছেন, তাঁদের মতে অবহেলার এর চাইতে বড়ো প্রমাণ আর হয় না।

পঞ্জাবের ২.১৪ কোটি ভোটারদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মহিলা। অথচ ১১৭টি বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে অংশগ্রহণ করা ১,৩০৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মোটে ৯৩ জন, অর্থাৎ ৭.১৩ শতাংশ মহিলা রয়েছেন।

পঞ্জাবের আদিতম রাজনৈতিক দল শিরোমণি আকালি দলের প্রার্থী-তালিকায় মোটে ৫ জন মহিলা ছিলেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের তালিকায় সংখ্যাটা ১১। উত্তরপ্রদেশের ভোটে এই দলের নির্বাচনী স্লোগান ছিল ' লড়কি হুঁ , লড় সকতি হুঁ ' (আমি মেয়ে, লড়াই আমার রক্তে), যেটা কিনা পঞ্জাবের পরিপ্রেক্ষিতে শতকোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি স্বপ্ন। মহিলা প্রার্থীর নিরিখে এক অংকের জন্য আম আদমি পার্টির কাছেও হেরে গেছে কংগ্রেস, তাদের তালিকায় মহিলার সংখ্যা ১২। ওদিকে ভারতীয় জনতা পার্টি, শিরোমণি আকালি দল (সংযুক্ত) ও পঞ্জাব লোক কংগ্রেস মিলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের যে জোট, তাদের অবস্থা তো আরোই হাস্যকর, সর্বসাকুল্যে ৯ জন (বিজেপির ৬ জন মিলিয়ে) মহিলার নাম রয়েছে প্রার্থী-তালিকায়।

*****

শীতের হিমধরা এক স্যাঁৎস্যাঁতে দিনে দেখা হয়েছিল রাজিন্দর কৌরের সঙ্গে। একখানা চেয়ার পেতে বসেছিলেন তিনি, পিছনের দেওয়াল জুড়ে মিটমিটে বাল্‌বের আবছা আলোয় প্রকট হয়ে উঠেছিল তাঁর তেজ। ডায়েরি খুলে বসলাম আমি, হৃদয়ের দোয়াত উপচে পড়ল তাঁর। কণ্ঠে ছিল নারীর নেতৃত্বে ইনকিলাবের স্বপ্ন, দুচোখের আরশি জুড়ে ছিল তারই প্রতিবিম্ব। হাঁটুর ব্যথার কাবু এই মানুষটি থেকে থেকে একটু না জিরিয়ে পারেন না বটে, তবে কৃষি-আন্দোলনের আঙার জাগিয়ে তুলেছে তাঁর জীবনের হাপর – মানুষের মাঝে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি খুঁজে পেয়েছেন আপন স্বর।

Rajinder in her farm
PHOTO • Amir Malik
Harjeet walking through the village fields
PHOTO • Amir Malik

বাঁদিকে: দৌন কালানে তাঁর বাড়ির বাগানে রাজিন্দর। ডানদিকে: গ্রাম শেষে মাঠ পেরিয়ে হেঁটে চলেছেন হরজিৎ। তাঁর কথায়: 'আইন তিনটে আমাদের সব্বাইকে এক করে দিয়েছে'

"এবার থেকে আমি নিজেই ঠিক করব [কাকে ভোট দেবো]," স্পষ্টভাবে জানালেন রাজিন্দর, "আগে আমার শ্বশুর বা বর বলে দিত কোন পার্টিকে ভোট দিতে হবে। এখন সে সাহস আর কারও নেই।" রাজিন্দরের বাবা ছিলেন শিরোমণি আকালি দলের সমর্থক, কিন্তু বিয়ের পর দৌন কালান গ্রামে এসে দেখেন যে তাঁর শ্বশুরমশাই কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছেন। "হাতের চিহ্নে [কংগ্রেসের নির্বাচনী চিহ্ন] ভোট দিলাম বটে, তবে মনে হল কেউ যেন গুলি মেরে বুকটা ফুঁড়ে দিয়েছে," রাগত স্বরে বলে উঠলেন তিনি। তবে কাকে ভোট দিতে হবে সেটা বলার জন্য আজ তাঁর স্বামী যদি মুখ খোলেন তাহলে, "এক ধমকে চুপ করিয়ে দিই ওকে।"

সিংঘু শিবিরের এক মজাদার ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল তাঁর। মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেওয়া সদ্য শেষ করেছেন, "হাঁটু দুটো একটু জিরিয়ে নিতে কাছেই একটা তাঁবুর ভিতর ঢুকেছি সবে, একটা লোক রান্নাবান্না করছিল, সে জিগায়, 'খানিক আগেই একজন মহিলা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন না? শুনলেন?' ততক্ষণে আরেটা লোক তাঁবুর ভিতর ঢুকেছে, সে এক ঝলক দেখেই চিনে ফেলল আমায়, বলে উঠল, 'আরে, ইনিই তো একটুক্ষণ আগে বক্তব্য রাখছিলেন।' লোকদুটো আমার ব্যাপারেই বলছিল কিনা!" এটা বলতে বলতে গর্বে আনন্দে ভরে উঠেছিল মুখখানি তাঁর।

পাশের বাড়ির হরজিৎ বলছিলেন, "আইন তিনটে আমাদের সব্বাইকে এক করে দিয়েছে।" তবে লড়াইয়ের ফলাফল সম্বন্ধে তিনি যথেষ্ট সাবধানী। তাঁর কথায়: "যুদ্ধ করে আইনগুলো বাতিল হয়েছে বটে, তবে আমাদের সমস্যাগুলো রয়ে গেছে এখনও। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের [এমএসপি] দাবিটা মেটার আগেই আন্দোলনের রেশ টেনে নিয়েছে [এসকেএম]। শয়তানগুলো লখিমপুর খেরিতে যে চাষিদের মেরে ফেলল, তাঁদের জন্য ন্যায়টুকুও আদায় করা হল না।"

হতাশ মুখে কুলদীপ বলে উঠলেন: "প্রতিবাদের সময় চাষিদের সংগঠনগুলো একজোট হয়েছিল ঠিকই, তবে এখন আবার সব খাওয়াখাওয়িতে মেতেছে।"

২০২২-এর বিধানসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় বাজার তখন সরগরম, এই প্রতিবেক পঞ্জাবের যে সকল মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা কেউই কোনও একটি বিশেষ দলের সমর্থনে পঞ্চমুখ নন – এমনকি সংযুক্ত কিষান মোর্চার অন্তর্ভুক্ত গুটিকয় কৃষক সংগঠন মিলে ডিসেম্বর ২০২১ সালে যে দলটি বানিয়েছে, সেই সংযুক্ত সমাজ মোর্চার (এসএসএম) বাজারও বেশ মন্দা। (এই দলের প্রার্থী-তালিকায় থাকা লোকজন নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে মহিলা ছিলেন মোটে চারজন।) ভোটের তবলায় তেহাই পড়তে না পড়তেই শহিদদের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে ফেলেছিল প্রত্যেকটি দল, অথচ আন্দোলনের ইতি ঘটেছে মাত্র মাস কয়েক আগে।

Jeevan Jyot, from Benra, Sangrur, says political parties showed no concern for the villages.
PHOTO • Amir Malik
Three-year-old Gurpyar and her father, Satpal Singh
PHOTO • Amir Malik

বাঁদিকে: সঙ্গরুর জেলার বেনরা গ্রামের জীবন জ্যোত জানালেন যে গ্রামবাসীদের ব্যাপারে কোনও দলেরই মাথাব্যথা নেই। ডানদিকে: বাবা সৎপাল সিংয়ের কোলে তিন বছরের খুদে গুরপিয়ার

"এসএসএম, এমনকি আম আদমি পার্টিরও গ্রামের ব্যাপারে কোনও মাথাব্যথা নেই," জানালেন জীবন জ্যোত, এই যুবতীটির নিবাস সাঙ্গরুর জেলার বেনরা গ্রামে। "কে বেঁচে আছে আর কে মরে গেছে, এ ব্যাপারে কোনও [রাজনৈতিক] পার্টিই খোঁজখবর রাখে না," হতাশার সুর বড়োই স্পষ্ট তাঁর গলায়।

২৩ বছর বয়সী এই ইস্কুল শিক্ষক আপাতত বাড়িতেই বাচ্চাদের পড়ান, প্রসবকালে তাঁর পড়শি পূজা মারা যাওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি রাগে দুঃখে জ্বলে উঠেছেন তিনি। "কষ্টটা কোথায় জানেন? কোনও নেতা বা গ্রামের সরপঞ্চ (প্রধান), ভদ্রতার খাতিরেও একটিবারের জন্য কেউ খোঁজ নিতে আসেনি।" পূজা তাঁর সদ্যোজাত শিশু, তিন বছর বয়সী মেয়ে গুরপিয়ার এবং দিনমজুর স্বামী সৎপাল সিংকে (৩২) ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে সংসারের হাল নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন জীবন জ্যোত।

বেনারায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখি ছোট্টো গুরপিয়ার তাঁর পায়ের কাছে বসে আছে চুপটি করে। "মনে হচ্ছে আমিই যেন ওর মা। দত্তক নিতে ইচ্ছে করছে। গাঁয়ের লোক কী বলে জানেন? আমি নাকি বাঁজা, তাই পরের মেয়েকে নিজের বলছি, তবে ওসবে আমি বিশেষ পাত্তা দিই না।"

কৃষি-আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ তাঁর মতো যুবতীদের জীবন ভরিয়ে তুলেছে আশার আলোয়। এ যুদ্ধ থেকে সে যুদ্ধে মেয়েদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায় পিতৃতন্ত্র, বললেন তিনি, আর সেই "লড়াকু আত্মারই" পুনর্জন্ম হয়েছে কৃষি-আইনের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে।

এই যে সমাজের এক প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের, সংগ্রামে সমগ্র পঞ্জাব থেকে এককাট্টা হওয়া মহিলারা আজ সেটার বিরুদ্ধেই মুখর হয়েছেন নিন্দায়। "মান্ধাতার আমল থেকেই তো হেঁশেলে বেঁধে রাখা হয় মেয়েদের," কড়া ভাষায় জানালেন হরজিৎ। জনসমাজের হাল তাঁদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন তাঁরা। ভয় একটাই, লড়াই করে পাওয়া সম্মান শেষে যেন ইতিহাসের পাতায় কেবল টিকা-টিপ্পনি হয়েই না রয়ে যায়।

এই প্রতিবেদনটি লিখতে সাহায্য করার জন্য মুশার্‌রফ ও পর্‌গতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন লেখক।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Amir Malik

ଆମିର ମଲିକ ଜଣେ ନିରପେକ୍ଷ ସାମ୍ବାଦିକ ଏବଂ ୨୦୨୨ର ପରୀ ସଦସ୍ୟ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Amir Malik
Translator : Joshua Bodhinetra

ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍ ଅଫ୍ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆ (ପରୀ) ରେ ଭାରତୀୟ ଭାଷା କାର୍ଯ୍ୟକ୍ରମ, ପରୀଭାଷାର ବିଷୟବସ୍ତୁ ପରିଚାଳକ ଜୋଶୁଆ ବୋଧିନେତ୍ର। ସେ କୋଲକାତାର ଯାଦବପୁର ବିଶ୍ୱବିଦ୍ୟାଳୟରୁ ତୁଳନାତ୍ମକ ସାହିତ୍ୟରେ ଏମଫିଲ କରିଛନ୍ତି ଏବଂ ଜଣେ ବହୁଭାଷୀ କବି, ଅନୁବାଦକ, କଳା ସମାଲୋଚକ ଏବଂ ସାମାଜିକ କର୍ମୀ ଅଟନ୍ତି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Joshua Bodhinetra