একটি প্রকল্পের সাফল্য তার কখনই না সম্পন্ন হওয়া কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে বিবেচিত হতে পারে? অবশ্যই তা সম্ভব, যদি বিশ্বের জটিলতম গ্রামীণ জগৎ বিষয়ে সেটি একটি রক্তমাংসের চলমান আর্কাইভ হয়। গ্রামীণ ভারত সম্ভবত বিশ্বসংসারের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থান। গ্রামীণ ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়, গোষ্ঠীর ৮০ কোটির অধিক মানুষ ৭০০টিরও বেশি ভাষায় কথা বলেন, অনেকগুলি আবার হাজার হাজার বছরের প্রাচীন ভাষা। দ্য লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সূত্র থেকে জানা যায় আমাদের এই সারা দেশে ৭৮০টিরও বেশি ভাষা এবং ৮৬টি ভিন্ন ভিন্ন লিপি ব্যবহার হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে এই ৭৮০টির মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ ভাষাই ব্যবহার হয়। অর্থাৎ, বেশিরভাগ ভারতীয় ভাষাই কিন্তু গ্রামীণ ভারতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যেই বেঁচে আছে।
ভারতে সংবিধানের ৮ম সিডিউল অনুসারে, তালিকাভুক্ত ২২টি ভাষায় উন্নয়নকল্পে প্রসারের লক্ষ্যে দেশের সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অথচ, এমন রাজ্যও আছে যেখানকার সরকারি ভাষাটিই এই তালিকার ২২টি ভাষার মধ্যে স্থান পায়নি, উদাহরণস্বরূপ মেঘালয়ের গারো এবং খাসি ভাষার কথাই বলা যায়। একদিকে, ছ’টি ভারতীয় ভাষা ৫ কোটি বা তার বেশি মানুষ ব্যবহার করেন, তিনটি ভাষা ব্যবহার করেন ৮ কোটির অধিক মানুষ এবং একটি ভাষা ব্যবহার করেন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ। অন্যদিকে, অনন্য সব আদিবাসী ভাষা, হয়তো সেগুলিতে কথা বলেন মাত্র ৪০০০ মানুষ, কোনোটায় তার চেয়েও কম। পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যেই প্রায় ৪৪টি আদিবাসী ভাষার অস্তিত্ব আছে। লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে জানাচ্ছে, বিগত ৫০ বছরে প্রায় ২২০টি লুপ্ত হয়ে গেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের সায়মার ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা এখন মাত্র সাত।
একই বৈচিত্র্য ভারতের গ্রামাঞ্চলের পেশা, শিল্প, হাতের কাজ, কৃষ্টি, সাহিত্য, লোকগাথা, পরিবহণএবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতেও বিদ্যমান। ভারতবর্ষের গ্রামীণ জগৎ এক অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে চলেছে, এইসব অনন্য বৈচিত্র্যও অবলুপ্তির পথে – ফলস্বরূপ আমরা হয়ে পড়ছি দীর্ণ। আমাদের দেশে বয়ন শিল্পে যে অসংখ্য বুনন শৈলী, ধারা এবং ঘরানা বর্তমান তা, আর কোথাও দেখা যায় না। অথচ ঐতিহ্যশালী এই তন্তুবায় সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীগুলি আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। এদের অবলুপ্তিতে শেষ হয়ে যাবে পৃথিবীর এক গৌরবময় অধ্যায়। কথকতা, কিসসা ইত্যাদি বহু বিশিষ্ট পেশা আজ লুপ্তপ্রায়।
আবার এমন বেশ কয়েকটি পেশা আছে আমাদের গ্রামাঞ্চলে যার অস্ত্বিত্ব শুধুমাত্র কয়েকটি দেশেই রয়েছে। ধরা যাক খেজুর, তাল ইত্যাদি গাছ থেকে রস সংগ্রাহকরা, যাঁরা দিনে অন্তত ৫০টি গাছে চড়েন , রসের মরশুমে একই গাছে তিনবার। এই রস থেকে তাঁরা তৈরি করেন গুড় এবং আবার রস গাঁজিয়ে তৈরি করেন তাড়ি জাতীয় দেশি মদ। রসের মরশুমে রস সংগ্রাহকরা প্রতিদিন নিউ ইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর চেয়েও অনেক বেশি উচ্চতায় ওঠেন। কিন্তু এমন অনেক পেশাই ধ্বংসের মুখে। মৃৎশিল্পী , ধাতুশিল্পী এবং আরও অসংখ্য, চূড়ান্ত দক্ষতা সম্পন্ন কারিগরেরা অতি দ্রুত তাঁদের জীবন-জীবিকা হারাচ্ছেন।
গ্রামীণ ভারতকে যা কিছু চরিত্রগতভাবে বিশিষ্টতা দান করেছে, তার অধিকাংশই আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়ে যাবে। দুঃখের বিষয়, এই অবিশ্বাস্য বৈচিত্র্য পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত, উদ্বুদ্ধ করে তোলার জন্য রেকর্ড করে সংরক্ষিত করে রাখার যথাযথ কোনও প্রয়াসই করা হয়নি। গ্রামীণ ভারতের চমকপ্রদ পৃথিবীটির কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে খুব সামান্যই পৌঁছবে। খুব কমই জানা যাবে। বর্তমান নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও ক্রমাগত গ্রামীণ ভারতের সম্পর্ক ক্ষীণ হয়ে আসছে।
গ্রামীণ ভারতের সবটাই যে নির্মল, বিশুদ্ধ এমন নয় – এমন অনেককিছুই আছে যার এই মুহূর্তেই নির্মূল হওয়া প্রয়োজন। গ্রামীণ ভারতের যা কিছু কদর্য, নিষ্ঠুর, হিংস্র, করাল তা চিরতরে লুপ্ত হোক - অস্পৃশ্যতা, সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো, বন্ধুয়া শ্রম ব্যবস্থা, জাতপাত ও লিঙ্গভিত্তিক চরম শোষণ এবং বঞ্চনা, জমির দখলদারি ইত্যাদি। কিন্তু আফশোসের কথা এই যে, গ্রামীণ ভারতের যা কিছু বর্বর ও কদর্য তা আরও জাঁকিয়ে বসছে, আর অন্যদিকে শেষ হয়ে যাচ্ছে যা কিছু মহান, সুন্দর এবং বৈচিত্র্যময়। পারির আর্কাইভে এইসব সংরক্ষণ করার প্রয়াস করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতেই পারি হয়ে ওঠে প্রাসঙ্গিক।
পারি এক জীবন্ত জার্নাল, রক্তমাংসের চলমান আর্কাইভ। গ্রামীণ ভারত বিষয়ে বর্তমানকালে এবং সমসাময়িক সময়ে যা কিছু প্রতিবেদন রচিত হয়েছে তা পারি এখানে একত্রিত করবে এবং নিজেও এধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রতিবেদন রচনা করবে। এছাড়া অতীতে এই বিষয় ঘিরে বিভিন্ন সূত্র থেকে যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে, সেসবের আকর বা ডাটাবেস হিসেবেও পারি কাজ করবে। প্রতিবেদন, নিবন্ধ, ভিডিও and অডিও। পারির নিজস্ব যাবতীয় বিষয়বস্তু ক্রিয়েটিভ কমন্স -এর রীতি মেনে চলে, এবং এই সাইট বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। যে কেউ পারির আর্কাইভে নিজের ক্ষমতা এবং দক্ষতা অনুযায়ী অবদান রাখতে পারেন। আমাদের এই সাইটের জন্য লিখুন, ভিডিও তৈরি করুন, রেকর্ডিং করুন – আমাদের আদর্শ এবং নির্দেশাবলীর সঙ্গে একমত হলেই আপনি এই সাইটটির জন্য মূল্যবান সম্পদ সৃষ্টি করতে পারেন। পারির মূল বিষয়টিই হল: সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন।
গ্রন্থাগার ও যাদুঘরে যাওয়ার রেওয়াজ ক্রমশ কমে আসছে, বিশেষ করে বিগত ২০ বছরে তা বেশিমাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। তবুও যাদুঘরে যা কিছু সম্পদ থাকে, তার অনেককিছুই বাইরেও আমরা দেখতে পেতাম: মিনিয়েচার চিত্রশিল্পের নানান ঘরানা, ভাস্কর্য রীতি ইত্যাদি। এখন এইসব পরম্পরাও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে গ্রন্থাগার ও যাদুঘরে যাওয়ার আর তেমন চল নেই, থাকলেও তা নেহাত নিয়মরক্ষায় দাঁড়িয়েছে। অথচ, এমন একটা স্থান রয়েছে যেখানে ভারতবর্ষের তথা তামাম দুনিয়ার নবীনদের আনাগোনা অনেক বেশি : ইন্টারনেটের দুনিয়া। ইন্টারনেট পরিষেবা বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে কম ব্যাপ্ত হলেও তা ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। এটি পারির মতো একটি সর্বজনীন সম্পদ আকর অর্থাৎ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন ঘিরে এক জীবন্ত রক্তমাংসের জার্নাল তথা আর্কাইভ গড়ে তোলার এক আদর্শ মাধ্যম। পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়া: বৈচিত্র্যময় বহুত্ব ধরা থাকবে একটি ওয়েবসাইটের পরিসরে। বহু স্বর, বহু ভাষা এসে মিলবে এই ওয়েবসাইটে।
অর্থাৎ, অভূতপূর্ব এক উদ্যোগ যার ব্যাপ্তি এবং সম্ভাবনা অপার, যেখানে ব্যবহৃত হবে অডিও, ভিস্যুয়াল, টেক্সট ইত্যাদি অসংখ্য মাধ্যম। এমন এক মঞ্চ যেখানে আখ্যান, পেশা, কার্যকলাপ, ইতিহাস ইত্যদি যতটা সম্ভব, গ্রামীণ ভারতের অধিবাসীদের দ্বারাই কথিত হবে। বলবেন চায়ের পাতা তোলা শ্রমিক চা-বাগানে দাঁড়িয়ে; সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া মৎস্যজীবী, গান গাইতে গাইতে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত মহিলা শ্রমিকেরা; অথবা পরম্পরাগত কথকেরা। বলবেন খালাসিরা, যাঁরা সমুদ্রে বড়ো জাহাজ নামানোর জন্য ক্রেন বা মাল তোলার কর্কলিফট ব্যবহার না করে সাবেক পদ্ধতি আজও ব্যবহার করেন। অর্থাৎ এককথায়, সাধারণ মানুষ আমাদের বলবেন নিজেদের কথা, তাঁদের শ্রমের কথা, তাঁদের জীবন-জীবিকার কথা – এমন এক পৃথিবীর কথা যা আমাদের অগোচরেই রয়ে যায়।
পারির আধেয় বিষয়বস্তুগুলি কী কী?
পারি ভিডিও, ফটোগ্রাফ, অডিও এবং টেক্সট আর্কাইভের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক অনন্য সাইট। পারির আধেয় বিষয়বস্তুর মধ্যে দুইই আছে – আমরা ইতিমধ্যেই যে সম্পদ সৃষ্টি করেছি এবং যেগুলির কাজ এখনও চলছে। এইগুলিকে সংগঠিত করে ওয়েবসাইটে আপলোড করার কাজটি প্রচুর সময় এবং শ্রম দাবি করে। পারির জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ভিডিও দেশের অতি সাধারণ, দরিদ্র মানুষের জীবন এবং জীবিকার ছবি তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ, একজন মহিলা কৃষিশ্রমিক আপনাকে এখানে দেখাবেন তাঁর জীবন, কাজকর্ম, শ্রমের নানান কৌশল, পরিবার, রান্নাঘর এবং যা কিছু তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন। সাধারণত, এই ধরনের একটি ফিল্মের ক্রেডিট অংশে প্রথমেই তাঁর স্থান থাকে, আর তার ঠিক পরেই, দ্বিতীয় স্থানে থাকে তাঁর গ্রাম/ সম্প্রদায়/ গোষ্ঠী/সমাজের কথা। ফিল্মের পরিচালক তৃতীয় স্থানে। তাঁর নিজের গল্পের অধিকার যে তাঁর নিজস্ব সেই আদর্শে পারি বিশ্বাস করে। আমরা মনে করি গ্রামীণ ভারতের যেসকল মানুষের কথা আমরা বলছি এই সাইট তৈরিতে তাঁদের মতামত সর্বাগ্রে বিবেচিত হবে। এই লক্ষ্যেই আমরা যত তথ্যচিত্র তৈরি করছি, সেগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় সাবটাইটেল তৈরি করার চেষ্টাও করছি।
পারির সাইটের অডিও জোনে ,বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় আমাদের এ যাবৎ রেকর্ড করা কথোপকথন, গান, কবিতার হাজার হাজার ক্লিপ থাকবে। মহারাষ্ট্রের গ্রামগুলিতে মহিলাদের গাওয়া লোকগান নিয়ে গঠিত গ্রাইন্ডমিল সংগস প্রজেক্ট বা চাক্কি পেষাইয়ের গান প্রকল্প দিয়ে আমরা এই সাউন্ডক্লাউডের কাজ শুরু করেছি। অভূতপূর্ব কাব্য-সংগীত ঐতিহ্যের একটি আর্কাইভ হিসেবে আগামী দিনে এখানে এক লক্ষেরও বেশি গান সংরক্ষিত থাকবে।
শিক্ষার উপরও পারির আর্কাইভে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। শিক্ষা ও গবেষণার জন্য পাঠ্যবইসহ প্রয়োজনীয় বিবিধ উপকরণের জন্য আগামী দিনে অনলাইন বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমটি খুব বেশিমাত্রায় ব্যবহৃত হবে। বিশ্বের বেশ কিছু অংশে ইতিমধ্যেই এটি স্বীকৃত হয়েছে। পারি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, বাস্তবধর্মী সম্পদ গঠন করতে প্রয়াসী। যথাযথ প্রয়োগ হলে, এই মাধ্যমটির সাহায্যে 'পাঠপুস্তক' বা শিক্ষাদানের উপাদানগুলিতে সহজেই পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন সম্ভব। পারি যেহেতু একটি অলাভজনক পাবলিক সাইট, তাই ব্রডব্যান্ড যতবেশি আম জনতার নাগালের মধ্যে আসবে, তার সাহায্যে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
পারির সংগ্রহ বিভাগে, আমাদের লক্ষ্য গ্রামীণ ভারতবর্ষ বিষয়ক যাবতীয় (সম্পূর্ণ রিপোর্ট, শুধুমাত্র লিঙ্ক নয়), সরকারি (এবং বিশ্বাসযোগ্যসূত্রের বেসরকারি) রিপোর্ট আপলোড করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অসংগঠিত ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগগুলি সম্পর্কিত জাতীয় কমিশনের সমস্ত রিপোর্ট, যোজনা কমিশনের (অধুনা নীতি আয়োগ) রিপোর্ট, বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রক, রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার রিপোর্ট ইত্যাদি। নানান সূত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথির প্রয়োজনে বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করার পরিবর্তে গবেষকরা সহজেই আমাদের এই বিভাগ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন।
বিভাগসমূহ
আপনি পারির আর্কাইভে যে বিভাগগুলি দেখতে পাবেন, সেগুলিই যে চূড়ান্ত এমন নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অন্যান্য বহু বিভাগের সঙ্গে আমরা পশুপাখি এবং বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত বিভাগটি অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছি, ধীরে ধীরে স্তরে স্তরে সে কাজ হবে। অসংখ্য বিভাগের মধ্যে থেকে তিনখানি বিভাগ দেখে নেওয়া যাক:
আমাদের কাজকর্ম
এই বিভাগ আপনাকে গ্রামীণ ভারতের শ্রম জগতের জটিল পরিসরে নিয়ে যাবে। নিয়ে যাবে জমিতে কর্মরত ভূমিহীন শ্রমিক, কৃষক ও কাঠুরিয়া, ইটভাঁটার শ্রমিক এবং কামারের পৃথিবীতে। নিয়ে যাবে সেই শ্রমিকের জগতে যিনি নিজের সাইকেলে ২০০ কেজি কয়লা চাপিয়ে নিয়ে ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন দু’টো টাকা রোজগারের তাড়নায়, সেইসব নারীদের দুনিয়ায় যাঁরা দৈত্যাকার বর্জ্যের ঢিপি থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রহ করে আনেন কয়লা, সেইসব অভিবাসী শ্রমিকদের পৃথিবীতে যারা কাজের খোঁজে প্রতি বছর হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, ছ’মাসের বেশি কোথাও থাকেন না, এমনকি নিজের গ্রামের বাড়িতেও নয়।
তাঁদের কথা ছাড়াও আমরা তাঁদের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামের ছবি তুলে রাখছি, সেগুলোকে ঘিরে ফিল্মও তৈরি করছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এইসব উপাদানের অনেককিছুই হারিয়ে যাবে।
আমাদের হাতে তৈরি জিনিসপত্র
এই আর্কাইভে শিল্প, হাতের কাজ, শিল্পী এবং কারিগরদের কথা পারি তুলে ধরেছে। তুলে ধরেছে দেশের অগণিত শিল্প ঘরানা, কৌশল, পরম্পরা এবং ঐতিহ্য, এবং সেইসব থেকে সৃষ্ট শিল্পদ্রব্য ও পণ্যের কথা। এই বিভাগে আপনি দেখতে পাবেন ভারতবর্ষের 'প্রাত্যহিক যাদুঘর' – যেখানে আছে মিনিয়েচার চিত্রশিল্পের নানান ঘরানা, ভাস্কর্যের নানান গ্রামীণ ঐতিহ্য, সূক্ষ্ম বয়ন কৌশল – যার অনেককিছুই ধ্বংস হয়ে আসছে, এবং খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণরূপে অবলুপ্ত হয়ে যাবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের পদাতিক বীরেরা
ঔপনিবেশিক শাসন বিরোধী সংগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁরা এখনও বেঁচে আছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই বয়স নব্বইয়ের কোঠায়। ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় গ্রামীণ ভারতের অসংখ্য সাধারণ মানুষ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। অসহ্য যন্ত্রণা সয়ে, দীর্ঘসময় কারাগারে কাটিয়ে যাঁরা স্বাধীনতা আনলেন, তাঁদের বেশিরভাগই রয়ে গেছেন বিস্মৃতির আঁধারে। আগামী এক দশকে এঁদের আর কেউই আর হয়তো বেঁচে থাকবেন না।
যদিও আমরা আমাদের আর্কাইভের জন্য অবদানকারীদের একটি গোষ্ঠী গঠন করে তাতে ক্রমাগত নতুন সদস্য সংযোজন করে চলেছি, কিন্তু সম্পাদকীয় নীতি এবং মান নিয়ন্ত্রণ দুটোকেই অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয় পারিতে। নির্ভরযোগ্য অভিজ্ঞ অবদানকারীদের এই কাজে খুব প্রয়োজন। এঁদের অধিকাংশই সাংবাদিক এবং লেখক। কিন্তু সকলেই নন। যে কোনও ব্যক্তি যিনি পারির কাজ পছন্দ করেন, তিনি নিজেই এই কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন; আমাদের জন্য লিখতে পারেন, মোটামুটি ভদ্রস্থ মানের ভিডিও তৈরি করা যায় এমন মোবাইল ফোনের সাহায্য নিয়েও চিত্র নির্মাণ করতে পারেন – শুধুমাত্র আমাদের ওয়েবসাইটের নৈতিক আদর্শ এবং নিয়মাবলী মেনে চললেই হল। পারির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে যে একজন পেশাদার সাংবাদিক হতে হবে এমন দিব্যি কেউ দেয়নি।
স্মরণে রাখা দরকার, পারির আর্কাইভে থাকা সম্পদের একটা বড়ো অংশ এসেছে গ্রামীণ ভারতীয়দের কাছ থেকেই, সংবাদমাধ্যমের পেশাদার কর্মীদের কাছ থেকে নয়, এই কর্মীরা সেই গল্প রেকর্ড করতে সহায়তা করেছেন। এইসব গ্রামীণ মানুষদের কেউ কেউ তাঁদের নিজেদের গল্পের জন্য প্রয়োজনীয় স্যুটিং নিজেই করেছেন। এইসব গল্পগুলি বারবার বলা হবে নতুন করে - যতদিন গ্রামীণ ভারতের অস্তিত্ব আছে ততদিন।
পারির আর্কাইভ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। সাইটটি কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত। একটি অপেশাদার নেটওয়ার্ক স্বেচ্ছাশ্রম, তহবিল গঠন, প্রত্যক্ষভাবে ব্যক্তিগত আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে ট্রাস্টের কাজকে আর্থিক সহায়তা এবং সমর্থন প্রদান করে। প্রতিবেদক, পেশাদার চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র সম্পাদক, আলোকচিত্রী, তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং সাংবাদিক (টেলিভিশন, বৈদ্যুতিন এবং মুদ্রণ জগতের) প্রমুখ স্বেচ্ছাকর্মীদের নেটওয়ার্কটিই পারির সবচেয়ে বড়ো সম্পদ। এরই পাশাপাশি আছে শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, গবেষক, প্রযুক্তিবিদ এবং অন্যান্য পেশা থেকে আসা বহু মানুষের অবদান এবং দক্ষতা যার সাহায্যে পারির মতো সাইট গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
পারির জন্য স্বেচ্ছাকর্মীরা যে কাজ করছেন, তার বাইরেও এই কর্মকাণ্ডকে প্রসারিত করার জন্য আমাদের অর্থের প্রয়োজন এবং আমরা এই উদ্দেশ্যেই ক্রাউড ফান্ডিং বা জনতার অনুদানে তৈরি তহবিল গড়ে তুলতে চাই। তহবিল গড়ে তোলার আবেদনটি ‘নিজের দেশের চিত্র তুলে ধরুন’ শিরোনামে রেখেছি বটে, কিন্তু আমরা জানি গ্রামীণ ভারতের চিত্র কখনই সম্পূর্ণ তুলে ধরা সম্ভব নয়, আমাদের ওয়েবসাইটের আধেয় বিষয়বস্তুও তাই গ্রামীণ ভারতের খণ্ড খণ্ড বাস্তবকেই তুলে আনে। যত বেশি মানুষ পারির সঙ্গে যুক্ত হবেন, এই আর্কাইভে তত বেশি করে গ্রামীণ ভারতের চিত্র উঠে আসবে।
"পাগলামির মধ্যে আছে এক অপার আনন্দ, পাগলমাত্রেই তা জানে"
পারিকে সাহায্য করার কথা বিবেচনা করে দেখুন
অর্থ সাহায্য করুন
অর্থ প্রেরণের বিভিন্ন পদ্ধতির যে কোনও একটি ব্যবহার করে আপনি আমাদের অনুদান পাঠাতে পারেন। কাউন্টারমিডিয়া ট্রাস্ট-এ পাঠানো সকল আর্থিক অনুদান ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের ধারা ৮০ জি -এর অধীনে আয়করে ছাড় পাবে।
পারিতে আপনার অবদান রাখুন
যে কেউ পারির আর্কাইভে নিজের অবদান রাখতে পারেন। আমাদের এই সাইটের জন্য লিখুন, ভিডিও তৈরি করুন, রেকর্ডিং, অনুবাদ, গবেষণা, ভিডিও সম্পাদনা করুন – আমাদের আদর্শ এবং নির্দেশাবলীর সঙ্গে একমত হলেই আপনি এই সাইটির জন্য মূল্যবান সম্পদ সৃষ্টি করতে পারেন। পারির মূল বিষয়টিই হল: সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন।
পারি ও শিক্ষা জগত
পারিতে, আমরা ভবিষ্যতের পাঠ্যবইগুলি লিখছি। আর এই কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে আমাদের এই সাইটটিতে প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হওয়া অসংখ্য প্রতিবেদন, ছবি, ভিডিও এবং অডিও ইত্যাদি উপাদানের মাধ্যমে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যে এইসবের অনেকটাই বেশ কিছু সময় ধরে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা নিজেরাই সৃষ্টি করেছেন।