PHOTO • Abhijit Mohanty

কালাহাণ্ডি জেলার থুয়ামুল রামপুর ব্লকের বাফলা গ্রামের বাসিন্দা মাধব নায়েক আদ্রি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সাপ্তাহিক হাটে চলেছেন। প্রতিবার তিনি ২৫ থেকে ৩০টা মাটির পাত্র একসঙ্গে নিয়ে যান; এগুলোর এক-একটার ওজন ১-২ কিলোগ্রাম। প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে হাট অবধি পৌঁছাতে মাধবের ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে। একেই পাথুরে রাস্তা, তার উপর আবার দম নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার তাঁকে পথে থামতেও হয়। প্রতিবছর মাটির পাত্র বিক্রি করে ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা তাঁর হাতে আসে

PHOTO • Abhijit Mohanty

সোভিনী মুদুলি এবং সুন্দরী নায়েক আদ্রির হাটে চলেছেন। মাটির পাত্র তৈরি করা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। আর এই কাজে বেশিরভাগ পরিশ্রমই আসে মহিলা এবং শিশুদের তরফ থেকে। প্রথমে মাটিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দুরমুশ করা হয়। তারপর চালনিতে ঢেলে মাটি থেকে পাথর বা অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ আলাদা করে নেওয়া হয়। এরপর একটা গর্তে জল ভর্তি করে তাতে মাটি ঢেলে চুবিয়ে রাখা হয় আধা দিন ধরে, তারপরে পা দিয়ে পিষে মাটি থেকে হাওয়ার বুদবুদ বের করে দেওয়া হয়

PHOTO • Abhijit Mohanty

হরি মাঝি নিজের কাজে ব্যস্ত: পুরুষরা সাধারণত কুমোরের চাকা ঘোরানোর কাজ করেন। কুমোরের কাজ এক ধরনের শিল্প, যা এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। আদিবাসীদের বিভিন্ন প্রথা তথা আচার-অনুষ্ঠানে মৃৎপাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। মাটির পাত্র হস্তান্তরিত করাকে আবেগপ্রবণতা ও আধ্যাত্মিক সচেতনতার উৎস বলে মনে করা হয়। কিন্তু কালাহাণ্ডির কুম্ভার সম্প্রদায়ের কুমোরেরা ধীরে ধীরে তাঁদের চিরাচরিত পেশাকে ছেড়ে দিচ্ছেন। বাফলা গ্রামের গুরুনাথ মাঝি বলছেন, ‘আমরা জীবিকার জন্য খালি মাটির পাত্রের উপর নির্ভর করে থাকতে পারছি না। এতে আয় হয় না, তাই পেটের দায়ে আমরা গৃহস্থালির অন্য আর সব সামগ্রীও বেচি’

PHOTO • Abhijit Mohanty

স্থানীয়ভাবে বানানো একটি ঘূর্ণায়মান চাকার মাঝখানে কাদামাটি রাখা হয়। এরপর ঘূর্ণায়মান মাটির মাঝে চাপ দিয়ে মধ্যিখানের অংশ নিচু করে তার চারপাশে মাটির ‘দেওয়াল’ তৈরি করা হয়। এইসব কাজগুলোই হাত দিয়ে করা হয় এবং এর দ্বারা মাটিকে ইচ্ছে মতো আকার দেওয়া যায়। কাছেই একটা অর্ধেক ভাঙা মাটির পাত্রে জল রাখা থাকে। আকার প্রদানের একেবারে শেষ পর্যায়ে জল দেওয়ার সময় এক টুকরো পুরনো সুতির কাপড় ব্যবহার করা হয়

PHOTO • Abhijit Mohanty

মাংলু মাঝি (বাঁদিক থেকে প্রথম ব্যক্তি) এবং সুকবরু মাঝি ‘পিটানি’ (এক প্রকার ছোটো গোলাকৃতি কাঠের বস্তু, যা পেটানোর কাজে লাগে) দিয়ে মাটির পাত্রগুলোতে শেষবারের মতো আকার প্রদান করছেন। যেহেতু এই কাজটা একেবারে শেষ পর্যায়ে করা হয়, তাই কুমোরেরা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন থাকেন যাতে কোনও ভুলভ্রান্তির অবকাশ না থাকে

PHOTO • Abhijit Mohanty

হরি ধাংদামাঝি মাটিকে ছাঁচে ফেলে নতুন আকার দিতে বিশেষ পারদর্শী। তিনি বললেন, ‘আমি আমার দাদু আর বাবাকে মাটির জিনিস বানাতে দেখেছি। অনেক ছোটো থেকেই মাটির পাত্র বানানোর নানারকম পদ্ধতি শিখেছি। কিন্তু আমি চাই না আমার ছেলে বেঁচে থাকার জন্য এই কাজ করুক। মাটির পাত্রের চাহিদা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আজকাল আমাদের স্থানীয় উৎসবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, যাতে আমরা একটু বেশি আয় করতে পারি’। মৃৎপাত্রের চাহিদা খুব দ্রুত কমতে থাকায় কুম্ভার সম্প্রদায়ের মানুষেরা বাধ্য হয়ে অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাতের তৈরি ঘরোয়া বাসনপত্র বিক্রি করছেন। কেউ কেউ এরই পাশাপাশি কৃষিশ্রমিক হিসেবে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন, অনেকেই রাজ্যের মধ্যেই বা বাইরে অন্য কোথাও কাজের খোঁজে চলে যাচ্ছেন

PHOTO • Abhijit Mohanty

উঠোনে একটি গোলাকৃতি চুল্লি বানানো হয়। মাটির সামগ্রীকে সেখানে ২-৩ ঘণ্টা পোড়ানো হয়, যতক্ষণ না সেগুলোতে বাদামি রং ধরে। চুল্লি বানানোর আগে বাড়ির মহিলারা জ্বালানির জন্য কাঠকয়লা, খড় এবং শুকনো ঘাস জোগাড় করেন

PHOTO • Abhijit Mohanty

মাটির পাত্রগুলো বিক্রির জন্য তৈরি। সাধারণত আয়তন এবং ঋতুর উপরে এগুলোর দাম নির্ভর করে। গরমকালে এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তখন বাফলা গ্রামের কুমোরেরা এক-একটা পাত্র ৫০-৮০ টাকায় বিক্রির আশা রাখেন। কয়েক বছর আগেও কালাহাণ্ডিতে মৃৎপাত্র তৈরির কাজ যথেষ্ট লাভজনক ছিল। এখন ক্রেতা অনেক কমে গেছে। এই অঞ্চলের একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন শ্রীনিবাস দাস। তিনি বলছেন, ‘আগে মাটির পাত্রে রাখা জল পান করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। এখন কুলার এবং জলের বোতল চলে আসায় আগের অভ্যাস প্রায় উঠেই গেছে। মাটির পাত্র একটি পরিবেশবান্ধব জিনিস হলেও, এখন আর এর চাহিদা সেরকম নেই বললেই চলে’

অনুবাদ: অভিলাষ বিশ্বাস

Abhijit Mohanty

দিল্লি নিবাসী অভিজিৎ মোহান্তি উন্নয়ন ক্ষেত্রে কর্মরত আছেন। তিনি ভারত এবং ক্যামেরুনের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির সঙ্গে কাজ করেছেন।

Other stories by Abhijit Mohanty
Editor : Sharmila Joshi

শর্মিলা জোশী পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়ার (পারি) পূর্বতন প্রধান সম্পাদক। তিনি লেখালিখি, গবেষণা এবং শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত।

Other stories by শর্মিলা জোশী
Translator : Avilash Biswas

অভিলাষ বিশ্বাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র। তিনি একজন লেখক ও অনুবাদক। এছাড়াও তিনি উপন্যাস, আখ্যানতত্ত্ব, কালচারাল স্টাডিস, ইসলামিকেট বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি, লোকায়ত কথকতা, ইউরোপীয় সাহিত্যে বাস্তবতাবাদ এবং লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে বিশেষভাবে আগ্রহী।

Other stories by Avilash Biswas