“নরক হ্যায় ইয়েহ [এ সাক্ষাৎ নরক]।”
কাশ্মীরা বাই এহেন বিশেষণটি প্রয়োগ করেন বুদ্ধ নালা সম্পর্কে। শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্যে দূষিত এই নালা তাঁর গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলে আর মেশে গিয়ে সাতলেজ নদীতে, সে জায়গাটাও তাঁর বাড়ি থেকে মোটে একশো মিটার দূর।
পঁয়তাল্লিশ পেরোনো কাশ্মীরা বাইয়ের স্মৃতিতে এখনও ঘুরেফিরে আসে একদা তরতরে পরিচ্ছন্ন সেই নদীটার কথা, পানীয় জলের জন্য যার ওপর দিব্যি ভরসা করে থাকতে পারতেন মানুষজন। লুধিয়ানার কুম কালান গ্রাম থেকে সফর শুরু করে এ জেলার মধ্যে দিয়েই চোদ্দো কিলোমিটার বয়ে এসে তারপর কাশ্মীরা বাইয়ের গ্রাম ওয়ালিপুর কালানের কাছে সাতলেজ [শতদ্রু] নদীতে পড়ে এই বুদ্ধ নালা।
"আসিন তো নরক বিচ বৈঠে হ্যাঁয় [নরকের মধ্যেই তো বসে আছি]। বন্যা হলেই নোংরা কালো জল ঘরে ঢুকে আসে," তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি। "বাসনে ভরে রেখে দিলেই দেখা যাবে রাতারাতি জলটা হলুদ হয়ে গেছে," আরও জানান তিনি।
![](/media/images/02a-IMG_3414-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/02b-IMG_3445-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে: লুধিয়ানার কুম কালান গ্রাম থেকে সফর শুরু করে এ জেলার মধ্যে দিয়েই চোদ্দো কিলোমিটার বয়ে এসে তারপর ওয়ালিপুর কালানের কাছে সাতলেজ নদীতে পড়ে এই বুদ্ধ নালা। ডানদিকে: 'বন্যা হলেই নোংরা কালো জল ঘরে ঢুকে আসে,' বলছেন ওয়ালিপুর কালান গ্রামের কাশ্মীরা বাই
দূষিত জলের জেরে বিপর্যস্ত মানুষজনের প্রতি রাষ্ট্রের নির্বিকার ঔদাসীন্যের প্রতিবাদে ২০২৪ সালের ২৪ অগস্ট পঞ্জাব, হরিয়ানা আর রাজস্থানের কয়েকশ মানুষ লুধিয়ানায় জমায়েত করে সোচ্চার বিক্ষোভে সামিল হন। 'কালে পানি দা মোর্চা'(জলদূষণবিরোধী জোট) নিশানি পরিচয়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠনের মধ্যে ছিলেন সাতলেজ অববাহিকা সংলগ্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত আমজনতা।
'বুদ্ধ দরিয়াকে রেহাই দিন। সাতলেজকে রেহাই দিন।'
বুদ্ধ নালার দূষণের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার ঘটনা নতুন কিছু নয়, সংস্কারের প্রকল্পগুলোও বুঝি তামাদি হতে চলল। তিন দশক ধরে কাজ চলছে, কিন্তু লাভের লাভ হয়নি কিছু। প্রথম প্রকল্প তথা নির্মল সাতলেজ নদীর জন্য কার্য পরিকল্পনা [অ্যাকশন প্ল্যান ফর ক্লিন রিভার সাতলেজ] শুরু হয়েছিল ১৯৬৬ সালে; তিনটে নর্দমা পরিশোধন প্ল্যান্ট (সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা এসটিপি) বসানো হয়েছিল জামালপুর, ভট্টিয়ান আর বাল্লোক গ্রামে।
২০২০ সালে, বুদ্ধ নালার জন্য ৬৫০ কোটি টাকার একটা সংস্কার প্রকল্প শুরু করে পঞ্জাব সরকার। পূর্বতন সরকারের ওপর পরিস্থিতির দায় চাপিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভাগওয়ান্ত মান, বুদ্ধ নালার সংস্কারের জন্য জামালপুরে রাজ্যের বৃহত্তম এসটিপি আর ৩১৫ কোটি টাকার অন্যান্য কয়েকটা প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
বাস্তবে, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের খেলাটাই কেবল জোরকদমে চলতে থাকে, কাশ্মীরা বাই সাফ জানিয়ে দেন সমস্যার সমাধানের জন্য কেউই কিছু করেননি — না সরকার, না কোনও রাজনৈতিক দল। লুধিয়ানার সমাজকর্মীরা কতবার যে এই একই উদ্বেগ নিয়ে পঞ্জাব সরকারের কাছে দরবার করেছেন তার কোনও ইয়ত্তা নেই। তবু কোটি কোটি টাকা ঢালার পরেও নালার হাল ফেরেনি, বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন মানুষ।
মানসা জেলার আহমদপুর থেকে এতটা পথ উজিয়ে প্রতিবাদে সামিল হতে এসেছেন বছর ষাটেকের মলকীত কৌর। "রাজ্যির আজেবাজে নোংরা মেশা জল, কলকারখানা থেকে মাটিতে আসা ময়লা – এসবের জন্যই তো অসুখবিসুখ লেগেই থাকে আমাদের। বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে জলের দরকার, সাফসুতরো পানিটুকু অন্তত সবার পাওয়া উচিত।"
![](/media/images/03a-IMG_23-AA-The_waters_of_the_Sutlej_run.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/03b-IMG_2966-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে: কালে পানি দা মোর্চার (জলদূষণবিরোধী জোট) বিক্ষোভ মিছিলটি সংগঠিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ২৪ অগস্ট। লুধিয়ানার মধ্যে দিয়ে বয়ে এসে ঋতুকালীন জলপ্রবাহ বুদ্ধ নালা সাতলেজ দরিয়ায় মেশে। ডানদিকে: রাজস্থানের সমাজকর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন এই বিক্ষোভে
![](/media/images/04a-IMG_2960-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/04b-IMG_2987-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে: 'নল হ্যায় লেকিন জল নহি'(কল আছে, জলের দেখা নেই) লেখা পোস্টার হাতে একজন সমাজকর্মী। ডানদিকে: মানসা জেলার আহমদপুর থেকে এতটা পথ উজিয়ে প্রতিবাদে সামিল হতে এসেছেন মলকীত কৌর (বাঁদিক থেকে চতুর্থ) । 'রাজ্যির আজেবাজে নোংরা মেশা জল, কলকারখানা থেকে মাটিতে আসা ময়লা – এসবের জন্যই তো অসুখবিসুখ লেগেই থাকে আমাদের। বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে জলের দরকার, সাফসুতরো পানিটুকু অন্তত সবার পাওয়া উচিত', বলেন তিনি
কাশ্মীরা বাই জানান ওয়ালিপুর কালানে গোটা গ্রামই ভূজলের ওপর নির্ভরশীল – মাটির ৩০০ ফুট গভীরে বোরওয়েলের নল ঢোকাতে হয় আর খুঁড়তে প্রায় ৩৫,০০০-৪০,০০০ টাকা খরচ পড়ে যায়। তাতেও পরিষ্কার জলের নিশ্চয়তা মেলেনা বলে আক্ষেপ করেন তিনি। এইসব গ্রামে স্বচ্ছল পরিবারগুলোর কাছে জল পরিস্রুত করার যন্ত্র আছে, সেগুলোকেও বারবার সাফ করতে হয় কিংবা মেরামতির প্রয়োজন পড়ে।
ওই একই গ্রামের বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের বলজিৎ কৌর হেপাটাইটিস সি রোগে তাঁর এক ছেলেকে হারিয়েছেন। "আমার দুই ছেলেই হেপাটাইটিস সি-তে ভুগত, একজন তো মারাই গেল," বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে চলেন কৌর, আশেপাশের গ্রামে যে এ অসুখে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
"আমরা গলা চড়াচ্ছি কারণ এখনও যদি জেগে না উঠি, আমাদের পরের প্রজন্ম একটা ঠিকঠাক জীবন কাটানোর মওকাটাই পাবে না," স্পষ্ট জানান ভাতিন্ডার গোনিয়ানা মান্ডির বাসিন্দা রাজবিন্দর কৌর। "এই পরিবেশ দূষণের জন্যই তো এখন ঘরে ঘরে ক্যান্সারের রুগী। সাতলেজের পানি খারাপ করছে যে কলকারখানাগুলো, সবকটায় একেবারে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া উচিত। এগুলো বন্ধ হলেই একমাত্র আমাদের বালবাচ্চা নাতি-নাতনিদের বাঁচানো যাবে," আরও বলেন তিনি।
"এহ সারি হোন্ড দি লড়াই হ্যায় [এ হল আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই]," দৃপ্তস্বরে জানান সমাজকর্মী জীবনজ্যোত কৌর, লুধিয়ানার কালে পানি দা মোর্চায় সক্রিয় অংশগ্রহণ তাঁর। বলেন,"আমাদের পরের প্রজন্মকে বাঁচানোরও লড়াই এটা।"
![](/media/images/05a-IMG_3448-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/05b-IMG_3041-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে: হেপাটাইটিস সি রোগে তাঁর এক ছেলেকে হারিয়েছেন বলজিৎ কৌর। ডানদিকে: ‘আমরা গলা চড়াচ্ছি কারণ এখনও যদি জেগে না উঠি, আমাদের পরের প্রজন্ম ঠিকঠাক জীবন কাটানোর মওকাটাই পাবে না,’ স্পষ্ট জানান ভাতিন্ডার গোনিয়ানা মান্ডির রাজবিন্দর কৌর (গোলাপি ওড়না গায়ে)
![](/media/images/06a-IMG_3031-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/06b-IMG_2986-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
বাঁদিকে: মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে প্রতিবাদী ব্যানার, তাতে লেখা: 'আও পঞ্জাব দে দরিয়াবাঁ দে জহরি কালে পরদূষণ নু রোকিয়ে'(আসুন, পঞ্জাবের নদীনালার বিষাক্ত দূষণকে রুখে দিই)। ডানদিকে: কৃষি বিশেষজ্ঞ দেবিন্দর শর্মা বিক্ষোভ জমায়েতে বলেন, ‘চল্লিশ বছর ধরে আমাদের দরিয়া দূষিত করছে শিল্পকারখানাগুলো, কারও সে নিয়ে মাথাব্যথাই নেই'
এ আন্দোলনের একেবারে প্রথম সারিতে আছেন সমাজকর্মী আমনদীপ সিং বাঁইস। আদত গন্ডগোলগুলো বুঝিয়ে দেন তিনি, "সমস্যার গোড়ার কারণটা নিয়েই তো কথা হয়নি এদ্দিন। সরকার শুধু নদী সাফ করার জন্য একের পর এক প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে। আরে বাবা, কোনও জলের উৎসগুলোয় কারখানাকে নিজের আবর্জনা ঢালতে দেওয়া হবেই বা কেন? দরিয়ায় দূষক মিশতে দেওয়াই তো উচিত না।"
লুধিয়ানা-নিবাসী এই আইনজীবী আরও বলেন, "রঞ্জন শিল্পকারখানাগুলোকে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া দরকার।"
লুধিয়ানায় প্রায় ২০০০টা তড়িৎপ্রলেপন ইউনিট আর ৩০০টা রঞ্জন ইউনিট আছে। বুদ্ধ নালায় দূষণের জন্য এই দুই ক্ষেত্রই একে অপরকে দুষে আসছে। লুধিয়ানা নিবাসী শিল্পপতি বাড়িশ জিন্দাল আমাদের জানান, "২০১৪ সালে পঞ্জাবের বিষাক্ত দ্রব্য রাখা ও বিক্রয় (পঞ্জাব পয়েজন পোজেশন অ্যান্ড সেল রুলস) আইন মোতাবেক, যে কোনও বিষাক্ত রাসায়নিকের ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের রেকর্ড রাখতে হবে প্রশাসনকে। কিন্তু এমন কোনও রেকর্ড মোটেই তাদের হাতে নেই।"
শিল্প-কারখানাগুলোকে জিরো লিকুইড ডিসচার্জ (জেডএলডি) নামক জল পরিশোধন বন্দোবস্ত নিতে হবে বলেও জানান তিনি। "পরিশুদ্ধ বা অপরিশুদ্ধ, কোনওরকম শিল্পজাত বর্জ্যই আর বুদ্ধ নালায় ফেলতে দেওয়া যাবে না," সাফ বক্তব্য তাঁর।
কৃষি বিশেষজ্ঞ দেবিন্দর শর্মা দূষণবাজ শিল্পগুলোয় আগাগোড়া ঝাঁপবন্ধের দাবি জানান। পারির সঙ্গে কথা বলতে বলতে কারণটা ব্যাখ্যা করে দেন তিনি, "চল্লিশ বছর ধরে আমাদের দরিয়া দূষিত করছে শিল্পকারখানাগুলো, কারোর সে নিয়ে মাথাব্যথাই নেই। নোংরা শিল্পগুলোকে হাতে ধরে ডেকে আনছিই বা কেন আমরা? শুধুমাত্র লগ্নির জন্য? পরিবেশ রক্ষা আর জনস্বাস্থ্যের ওপর লগ্নি করা উচিত সরকারের।"
![](/media/images/07a-IMG_7599-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/07b-IMG_3433-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
দূষিত জলের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়ালিপুর কালান গ্রামের নারাং সিং, দাভিন্দর সিং, জগজীবন সিং আর বিশাখা সিং গ্রেওয়াল (বাঁদিক থেকে ডানদিকে)
![](/media/images/08a-IMG_3410-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/08b-IMG_7588-AA-The_waters_of_the_Sutlej_r.max-1400x1120.jpg)
লুধিয়ানায় প্রায় ২০০০টা তড়িৎপ্রলেপন ইউনিট আর ৩০০টা রঞ্জন ইউনিট আছে। বুদ্ধ নালায় দূষণের জন্য এই দুই ক্ষেত্রই একে অপরকে দুষে আসছে। লুধিয়ানা জেলায় ঘৌন্সপুর গ্রামের (ডানদিকে) পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বুদ্ধ নালা
সমাজকর্মীরা বলছেন রঞ্জন শিল্পগুলোর কাছে কোনওরকম তরল নিষ্ক্রমণ না করার স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, এমনকি পরিশুদ্ধ বর্জ্য/জলও বুদ্ধ নালায় ফেলার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এনজিটি শুনানির সময় উঠে আসা একটি নথি থেকে এমন তথ্যই জানা যায়। তবে কেন এই দশ-এগারো বছর পঞ্জাবের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (পঞ্জাব পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড বা পিপিসিবি) মুখে কুলুপ এঁটেছিল সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই তুলছেন তাঁরা।
পঞ্জাবের সমাজকর্মীরা জোর গলায় বলছেন, "ত্রিপুরা যদি দূষণকারী শিল্পগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে, পঞ্জাব কেন পারবে না?"
*****
লুধিয়ানা আর নিম্নপ্রবাহের গ্রামগুলোর মধ্যে দিয়ে বইতে বইতে বুদ্ধ নালার স্বচ্ছ জল কুচকুচে কালো রং ধারণ করে। যে সাতলেজে এসে তার নিজের সফর শেষ হয়, খালি চোখে সে নদীর জলও ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। তেলতেলে সেই জল রাজস্থান পর্যন্ত বয়ে গিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত গিয়ে মেশে আরব সাগরে। বিয়াস [বিপাশা] আর সাতলেজের সঙ্গমস্থল হারিকে পত্তন বাঁধে এই দুই নদীর জলের পার্থক্যটা বেশ স্পষ্ট করেই ধরা পড়ে উপগ্রহ চিত্রে।
![](/media/images/09a-Buddha_Nullah_entring_Sutlej_2022_cred.max-1400x1120.jpg)
![](/media/images/09b-Buddha_Nullah_entring_Sutlej_2022_Trol.max-1400x1120.jpg)
সমাজকর্মীরা বলছেন সমস্যার গোড়ার কারণটা নিয়ে কোনওরকম আলোচনার নামগন্ধ নেই, এদিকে সরকার শুধু নদী সাফ করার জন্য একের পর এক প্রকল্প নিয়ে হাজির হয় অথচ কারখানাগুলোকে জলের মধ্যে আবর্জনা ঢালতেও দিব্যি অনুমতি দিয়ে দেয়।
২০২৪ সালের অগস্ট মাসে এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় (যার একটি প্রতিলিপি পারির কাছে আছে) বুদ্ধ নালায় দূষণের হালহকিকত জানিয়ে ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইবুনালকে (এনজিটি) জবাব পাঠায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড বা সিপিসিবি)। এতে উল্লেখ করা হয় যে শহরের তিনটি সাধারণ তরল বর্জ্য পরিশোধক প্ল্যান্ট (কমন এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা সিইটিপি) "পরিবেশ,অরণ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের দেওয়া পরিবেশগত ছাড়পত্রে বিধিবদ্ধ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শর্তগুলি মেনে চলে না" বলে দেখা গেছে।
সিপিসিবি এনজিটিকে এও জানায় যে তাদের তরফ থেকে পিপিসিবির কাছে ২০২৪ সালের ১২ অগস্ট একটি নির্দেশনামা পাঠানো হয়েছিল, যাতে "পরিবেশগত ক্ষতির খেসারৎ সমেত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়।" পূর্বতন একটি রিপোর্টে পিপিসিবিও স্বীকার করে নেয় যে বুদ্ধ নালার জল সেচের পক্ষে অনুপযোগী। "চাষের কাজেই যদি অনুপযোগী হয় তবে সে জল কী আর খাওয়ার যুগ্যি হতে পারে, বলুন তো?" প্রশ্ন তোলেন সমাজকর্মীরা।
একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে এই প্রতিবাদী মিছিলের সংগঠকেরা চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে বুদ্ধ নালা আটকে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন, পরে নির্ধারিত দিন পিছিয়ে এ বছরেরই ১ অক্টোবর করা হয়। এই চরম হুঁশিয়ারির পর ২৫ সেপ্টেম্বর পিপিসিবি নির্দেশ জারি করে এই মর্মে যে উক্ত তিন সিইটিপি থেকে বুদ্ধ নালায় পরিশোধিত বর্জ্য ফেলাও অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যদিও, রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্দেশমতো কোনও কাজই বাস্তবে করা হয়নি।
নদী আটকানোর বদলে সমাজকর্মীরা ১ অক্টোবর লুধিয়ানার ফিরোজপুর রোডে অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত করেন এবং ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে সরকারকে চূড়ান্ত শর্ত দেন।
"থেকে থেকেই শুধু লোক আসে আর বুদ্ধ নালা থেকে নমুনা নিয়ে যায় কিন্তু হুন্ডা কুছ নহি [কাজের কাজ কিছুই হয় না]। হয় এই দূষণ রুখতে হবে নয়তো আমাদের সাফ পানি দিতে হবে যাতে আমাদের পরের প্রজন্ম বেঁচেবর্তে থাকতে পারে," বলেন বলজিৎ কৌর, সরকারের নিষ্ফলা সমীক্ষা আর ফাঁপা প্রতিশ্রুতির পর যেন মোহভঙ্গ হয়েছে তাঁর।
অনুবাদ: রম্যাণি ব্যানার্জী