সদ্য সদ্য মনিব হওয়ার আমেজ বেশ জমিয়ে উপভোগ করছেন সন্তোষী কোরি। “আমরা মেয়েরা মিলেই কৃষক সমবায় খুলব বলে ঠিক করেছিলাম। ভাবনাটা যে খাসা, সেটা আজ গাঁয়ের মরদরাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে,” সহাস্যে জানালেন তিনি।

সন্তোষী দলিত জাতির মানুষ, থাকেন ভৈরাহা পঞ্চায়েতের গুচারা জনপদে, ১,০০০ টাকার বিনিময়ে রুঞ্জ মহিলা কৃষক উৎপাদক সংগঠনের (এমএফপিও) সদস্য হয়েছেন। জানুয়ারি ২০২৪-এ তাঁর মতো আরও ২৯৯ জন আদিবাসী, দলিত এবং ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর জাতিসমূহ) মহিলা এ সদস্যপদ নিয়েছিলেন, প্রত্যেকেরই বাড়ি মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায়। রুঞ্জ এফপিও-র পাঁচ বোর্ড মেম্বারের মধ্যে সন্তোষী কোরি অন্যতম। জমায়েত-টমায়েত হলে, ভাষণের মাধ্যমে এ উদ্যোগের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ডাক পান।

“আগে আগে বিচোলিয়া [বেনিয়া] এসে জলের দরে আমাদের থেকে অড়হর ডাল কিনে নিয়ে যেত, কারণ কলাইগুলো মিলে পালিশ করা থাকত না। সে ব্যাটা না সময়মতো আসত, না টাইম মাফিক আমরা টাকাকড়ি পেতাম,” আমাদের বললেন তিনি। তিন সন্তানের মা সন্তোষী পারিবারিক দুই একর আর ইজারায় নেওয়া এক একর জমিতে অড়হর চাষ করেন, চাষবাসের পুরোটাই বৃষ্টিনির্ভর। এ মুলুকের মোটে ১১ শতাংশ মেয়ের হাতে জমিজমার মালিকানা রয়েছে, মধ্যপ্রদেশ ব্যতিক্রম নয়।

অজয়গড় ও পান্না ব্লক জুড়ে ২৮টি গ্রামের মহিলার সম্মিলিত উদ্যোগ রুঞ্জ এমএফপিও। এই সমবায়টির নাম রাখা হয়েছে রুঞ্জ নদীর নামে, এটি বাঘেইন নদীর একটি শাখা, শেষ অবধি যেটা যমুনায় গিয়ে পড়ছে। সংস্থাটির জন্ম ২০২৪এ হলেও এরই মধ্যে ৪০ লাখ টাকার মুনাফা হচ্ছে, উপরন্তু আসছে বছর সেটা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

বাঁদিকে: পান্না জেলার ভৈরাহা পঞ্চায়েত, নিজের খেতে দাঁড়িয়ে আছেন সন্তোষী কোরি। ডানদিকে: এই রুঞ্জ নদীর (যার নামে সমবায়টির নাম রাখা হয়েছে) পাড়েই অড়হর ফলান এখানকার কৃষকরা

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

বাঁদিকে: পান্না জেলার অজয়গড়ে ডাল-ঝাড়াই যন্ত্র। ভূপেন কৌন্দর (লাল জামা গায়ে) ও কাল্লু আদিবাসী (নীল জামা পরিহিত) মিলে ডাল-ঝাড়াই যন্ত্রটি চালাচ্ছেন। ডানদিকে: অমর শঙ্কর কৌন্দর ডালের দানা বাছছেন

“আমাদের গাঁয়ের প্রায় প্রতিটি পরিবারই অন্তত ২-৪ একর জমির মালিক। আমরা ভাবলাম, সক্কলেই তো জৈবিক [অর্গানিক] ফসল চাষ করছি, এবার নাহয় শুধু অড়হর ডালের উপর মনোযোগ দিই আর ডাল-ঝাড়াইয়ের একখান মিল কিনি সবাই মিলে,” সমবায় স্থাপনের ইতিবৃত্ত শোনাচ্ছিলেন সন্তোষী।

অজয়গড় অঞ্চলের অড়হর ডালের দেশব্যাপী কদর। “রুঞ্জ নদীর তীর বরাবর ধরমপুর বেল্ট, এ মাটির ডাল স্বাদে গন্ধে বিখ্যাত,” প্রদান এনজিও-র গর্জন সিং বললেন। বিন্ধ্যাচলের পাহাড় ধোওয়া পানিই এ নদীর উৎস, স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এখানকার উর্বর মাটি চাষোপযোগী। প্রদান একটি বেসরকারি সংস্থা, এখানকার কৃষকমহলের সঙ্গে তারা কাজ করে। কেবলমাত্র মেয়েদের দ্বারা পরিচালিত রুঞ্জ সমবায়টি তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল প্রদান।

নায্য মূল্য হাসিল করার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন সন্তোষীর মতো চাষিরা। তাঁর লব্জে: “আজ আমরা খেতের ফসল নিজেদের এফপিও-র হাতে তুলে দিই, সময়মতন পয়সাকড়িও পেয়ে যাই।” অড়হর সাধারণত ১০ হাজার কুইন্টালে বিকোলেও এবছর মে মাস দর পড়ে ৯,৪০০ টাকা হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও রুঞ্জ সদস্যরা মনে করেন যে তাঁদের সমবায়ের মধ্যে দিয়ে সরাসরি খেত থেকে ফসল কেনায় মোটের উপর ভালোই দর পেয়েছেন।

এ সমবায়ের সিইও তথা একমাত্র কর্মী রাকেশ রাজপুত জানাচ্ছেন যে তাঁরা কেবলমাত্র দেশজ বীজের কারবার করেন, এ সংস্থায় হাইব্রিড প্রজাতির কোনও ঠাঁই নেই। মোট ১২টি সংগ্রহ-কেন্দ্র রয়েছে তাঁর দায়িত্বে, সেখানে ওজনযন্ত্র, বস্তা ও পার্খির সাহায্যে প্রতিটি বস্তা খুঁটিয়ে দেখা হয়।

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

বাঁদিকে: অড়হর ডাল, কলাইগুলি যন্ত্র দ্বারা দ্বিখণ্ডিত করার পর। ডানদিকে: প্যাকেটজাত ডাল প্রদর্শন করছেন রুঞ্জ এমএফপিওর সিইও রাকেশ রাজপুত

PHOTO • Priti David
PHOTO • Priti David

বাঁদিকে: সন্তোষী, গুচারায় তাঁর নিজের ভিটেয়। ডানদিকে: নিজেদের খোরাকি মেটাতে বাড়ি লাগোয়া জমিতে খানিক শাকসবজি চাষ করেছেন তিনি

রুঞ্জ এফপিও-র লক্ষ্য, আগামী বছরে সদস্যসংখ্যা পাঁচগুণ বৃদ্ধি এবং অড়হর ডালের পাশাপাশি ছোলা, গবাদি পশু (বুন্দেলখন্ডি প্রজাতির ছাগল), জৈবসার এবং বীজের কারবার চালু করা — প্রদানে কর্মরত সুগন্ধা শর্মা এমনটাই জানালেন আমাদের, “আমরা চাই, ফসল যেন চাষির দরজা থেকে সরাসরি ক্রেতার দুয়ারে পৌঁছে যায়।”

ভিটের পিছনে একফালি জমিনে খানিক লাউ-টাউ ফলিয়েছেন সন্তোষী কোরি, আমাদের নিয়ে গিয়ে দেখালেন। ঘরের মোষ দুটো তাঁর স্বামী চরাতে নিয়ে গেছেন, অনতিকাল পরেই তারা ফিরে আসবে।

“আমি জিন্দেগিতে কখনও অন্য কোনও ডাল মুখে দিইনি। আমার খেতের ডাল ভাতের মতোই চটজলদি সেদ্ধ হয়ে যায়, খেতেও বড্ড মিঠে,” সগর্বে জানালেন তিনি।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Priti David

پریتی ڈیوڈ، پاری کی ایگزیکٹو ایڈیٹر ہیں۔ وہ جنگلات، آدیواسیوں اور معاش جیسے موضوعات پر لکھتی ہیں۔ پریتی، پاری کے ’ایجوکیشن‘ والے حصہ کی سربراہ بھی ہیں اور دیہی علاقوں کے مسائل کو کلاس روم اور نصاب تک پہنچانے کے لیے اسکولوں اور کالجوں کے ساتھ مل کر کام کرتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Priti David
Editor : Sarbajaya Bhattacharya

سربجیہ بھٹاچاریہ، پاری کی سینئر اسسٹنٹ ایڈیٹر ہیں۔ وہ ایک تجربہ کار بنگالی مترجم ہیں۔ وہ کولکاتا میں رہتی ہیں اور شہر کی تاریخ اور سیاحتی ادب میں دلچسپی رکھتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Sarbajaya Bhattacharya
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کے کانٹینٹ مینیجر ہیں۔ انہوں نے کولکاتا کی جادوپور یونیورسٹی سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک کثیر لسانی شاعر، ترجمہ نگار، فن کے ناقد اور سماجی کارکن ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra