কয়েক মাস আগে, বিকেলের পড়ন্ত আলোয় ছোট্ট শক্তিভেল তার বাড়ির বাইরে মাটির উঠোনটায় বসে একটা ক্ষুদে ইঁদুরের সঙ্গে খেলছিল। পেটের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে হালকা ঠেলা মেরে, ইঁদুরটিকে দৌড় করিয়ে, ফের লেজটা ধরে পিছনে টেনে আনছিল সে। ক্ষুদে ইঁদুরটিই এক বছরের শক্তিভেলের একমাত্র খেলার সঙ্গী।

বাচ্চাটি তার মা-বাবার (আর. বনজা, ১৯ এবং আর. জনসন, ২২) সঙ্গে বাঙ্গলামেডু জনপদে, খড়ের ছাউনি দেওয়া একটি ছোট্ট মাটির বাড়িতে। “আমরা খেলনা কিনি না। মাঝেমধ্যে হয়তো সদ্য জন্মানো বাচ্চাদের জন্য ঝুমঝুমি জাতীয় জিনিস কিনি। তাছাড়া আমার মনে হয় না আমাদের গ্রামের কারও কাছে তেমন কিছু খেলনা আছে,” জানালেন বনজা, বর্তমানে সরকারি মনরেগা প্রকল্পের অধীনে কর্মরত। অন্যদিকে, জনসনের জীবিকা ইমারতি ক্ষেত্র ও ইটভাটায় কাজ অথবা তামিনাড়ুর তিরুত্তানি ব্লকের অন্তর্গত তাঁদের গ্রাম পঞ্চায়েত, চেরুক্কানুরের গ্রামে গ্রামে গাছ কাটা।

“আমরা বাড়িতে খরগোশ, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি পুষি। বাচ্চারা ওদের নিয়েই খেলে। বেশিরভাগ বাচ্চাই ইঁদুর পছন্দ করে আর ওদের পাওয়াও যায় সহজে। আমি নিজে অবশ্য খরগোশ পছন্দ করি। খুব নরম হয় তো, তবে বাচ্চা খরগোশ অত সহজে মেলে না,” জানালেন এস. সুমতি, ২৮, এই গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের শিক্ষিকা। তিনিও মনরেগা প্রকল্প তথা ইটভাটায় কাজ করেন।

রাজ্যের তিরুভাল্লুর জেলার অন্তর্গত, ৩৫টি ইরুলা আদিবাসী পরিবার মিলিয়ে তৈরি এই গ্রামে শিশুদের কাছে পোষ্য হিসেবে বাচ্চা-ইঁদুরের চাহিদা প্রচুর (দেখুন: বাঙ্গালামেডু গ্রামে যখের ধনের খোঁজে মাটি খোদাই)। এই ক্ষুদে প্রাণীগুলি কামড়ানোর বদলে অন্যান্য পোষ্যদের মতোই পরিবারের সঙ্গে দিব্যি থেকে যায়। (কোনও এক যাত্রায় আমার সঙ্গে এক মহিলার মোলাকাত হয়, যিনি নিজের পোষ্য ইঁদুরটিকে তারের তৈরি ঝুড়িতে ভরে একটি জমায়েতে এসেছিলেন)।

Baby rats are especially popular as pets among the Irula Adivasis in Bangalamedu hamlet – Dhaman, S. Amaladevi and Sakthivel (left to right) with their pets
PHOTO • Smitha Tumuluru
Baby rats are especially popular as pets among the Irula Adivasis in Bangalamedu hamlet – Dhaman, S. Amaladevi and Sakthivel (left to right) with their pets
PHOTO • Smitha Tumuluru
Baby rats are especially popular as pets among the Irula Adivasis in Bangalamedu hamlet – Dhaman, S. Amaladevi and Sakthivel (left to right) with their pets
PHOTO • Smitha Tumuluru

বাঙ্গালামেডুর ইরুলা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষুদে ইঁদুরের চাহিদা প্রচুর - ধামান, এস. অমলাদেবী এবং শক্তিভেল (বাঁদিক থেকে ডানদিক) নিজ নিজ পোষ্যদের সঙ্গে

ইরুলা জনজাতি তামিলনাড়ুর ছয়টি বিশেষভাবে দুর্বল আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলির (পিভিটিজি) মধ্যে একটি। ধানখেত থেকে ধরে আনা ইঁদুরের মাংস রান্না করে খান তাঁরা। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন খাবারের জন্য শিকারে বেরোন ইরুলারা। হাতে কাজ না থাকলে অবশ্য রোজই বেরোতে হয়। তাঁদের ভোজ্যদ্রব্যের মধ্যে অন্যতম - খরগোশ, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, শামুক, কাঁকড়া। এই সমস্তকিছুই তাঁরা বাঙ্গালামেডুর আশেপাশের ঝোপঝাড় অথবা খেত থেকে ধরে আনেন।

“আমরা প্রায় রোজই মাংস খাই,” জানাচ্ছেন ৩৫ বছরের জি. মানিগান্দান। সম্পর্কে বনজার কাকা, মানিগান্দান গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের জন্য স্কুলের পর ক্লাস চালান। তিনি মাঝেমধ্যে দু- চাকার ‘ট্যাক্সি’ও চালান এবং কাছেপিঠে নির্মাণ প্রকল্পগুলোয় ইলেকট্রিকের কাজ করেন। মানিগান্দান এবং গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদের মতে, প্রতিটি প্রাণীরই কোনও না কোনও বিশেষ ঔষধি মূল্য আছে। তাঁর কথায়, “বিড়ালের মাংস শ্বাসকষ্টের জন্য ভালো, কাঠবিড়ালির মাংস গলার জন্য ভালো আর কাঁকড়া সর্দির জন্য। এই কারণেই আমাদের অঞ্চলের মানুষদের রোগভোগ কম হয়।”

(কোনও কোনও লেখায় ইরুলাদের সাপ ধরায় পারদর্শী বলা হলেও, বাঙ্গলামেডুর সমস্ত পরিবারই এই ব্যাপারটা অস্বীকার করেন। তাঁরা জানালেন যে তাঁদের সম্প্রদায়ের কেউই সাপ ধরেন না। মানিগান্দানের মনে পড়ে, চার দশক আগে, তাঁর বাবার সময়ে কেউ কেউ সাপ ধরে বিক্রি করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথা হারিয়ে যায়। তিনি জানালেন, আজকাল এই গ্রামের বাসিন্দারা বাকিদের মতোই সাপের ব্যাপারে খুব সতর্ক।)

অনেকসময় যখন আশপাশের গ্রাম থেকে খেতের মালিকরা জমি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য তলব করেন, বাঙ্গালামেডুর বাসিন্দাদের তখন খাবারের যোগান বাবদ ইঁদুর সংগ্রহ হয়ে যায়। ইঁদুরেরা সাধারণত মাঠের ধান, রাগি (একপ্রকার ফিঙ্গার মিলেট, স্থানীয় ভাষায় কেলভারাগু নামে পরিচিত) অথবা চিনাবাদাম চুরি করে মাটির তলায় নিজেদের গর্তে লুকিয়ে রাখে।

“সাবধানে খোদাই করলে অন্তত ৬-৭ পাডি [আনুমানিক ৮-১০ কিলো] ধান পাওয়া যায় এই গর্তগুলোয়,” বুঝিয়ে বলেন মানিগান্দান। “তার মধ্যে থেকে আমরা কেবল ৩ কিলো চাল পাই। মালিকরা আমাদের বাড়িতে ধান নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। কোড়াম্বু রান্নায় আমরা ইঁদুরের মাংস ব্যবহার করি।” এটি তেঁতুলের রস দিয়ে বানানো একটি টক ঝোল যা ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়।

Once the rats are caught, K. Krishnan (left) and his cousin G. Manigandan dig through the rat tunnels to carefully extract the stored paddy
PHOTO • Smitha Tumuluru
Once the rats are caught, K. Krishnan (left) and his cousin G. Manigandan dig through the rat tunnels to carefully extract the stored paddy
PHOTO • Smitha Tumuluru

একবার ইঁদুর ধরা হয়ে গেলে, কে. কৃষ্ণন এবং তাঁর তুতো ভাই জি. মানিগান্দান সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সন্তর্পনে জমানো ধান বের করে আনেন

গাছ কাটা, খাল কাটা অথবা খেতে লাঙল চালানোর মতো কাজের জন্যেও খেতের মালিকরা ইরুলাদের তলব করে থাকেন। এই কাজের জন্য তাঁরা দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরি বাবদ পান। ইঁদুর ধরার কাজে মালিকরা ৫০ থেকে ১০০ টাকা দেন। মানিগান্দানের কথায়, “এই কাজের কোনও নির্দিষ্ট মজুরি নেই। পুরোটাই নির্ভর করে এক একজন মালিকের উপর - যে যেমন দিতে চান। কেউ কেউ তো কিছুই দিতে চান না। বলেন, ‘টাকা কেন দেব? তোমাদের ভাত-মাংস জোটেনি?’”

“কয়েক বছর আগেও ওঁরা আমাদের কেবল ইঁদুর ধরার কাজেই তলব করতেন,” জানান সুমতির স্বামী কে. শ্রীরামুলু, ৩৬, যিনি এখনও ধানের খেতে কাজ করার সময় নিয়মিত ইঁদুর শিকার করেন। “আজকাল যখন আমরা লাঙল জোতা অথবা খাল কাটার কাজে যাই, আমাদের ইঁদুরের গর্তও সাফ করতে বলেন মালিকেরা। নির্দেশ না থাকলেও, ভালাই (ইঁদুরের গর্ত) চোখে পড়লেই আমরা ইঁদুর ধরে ফেলি।”

যদিও আজকাল আর ইরুলা তরুণদের এইসব কাজ পছন্দ নয়, জানাচ্ছেন তিনি। “কেউ যদি ওদের দেখে বলে ‘তোমরা এখনও কেন সেই পুরনো পথে চলছ - আজও ইঁদুর ধরে চলেছ,’ ওরা ভীষণ লজ্জা পায়।”

অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে ইঁদুর ভক্ষণ অপ্রীতিকর শোনালে তথা গ্রহণযোগ্য না হলেও, ইরুলারা যে ধরণের ইঁদুর ভক্ষণ করেন, সেগুলি দুর্গন্ধময় নয়, বরং, হৃষ্টপুষ্ট এবং পরিষ্কার মেঠো প্রাণী। সুমতির কথায়, “ওগুলি সব স্বাস্থ্যবান ইঁদুর। ওরা ধান বাদে আর কিছুই খায় না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হলে আমরা মোটেই খেতাম না।”

মাঠে ইঁদুরের গর্ত না মিললেও, ইরুলাদের সাপ্তাহিক শামুক অথবা ইঁদুর সন্ধান জারি থাকে। দুপুরবেলা, মজুরির কাজ শেষে ফেরার পথে, তাঁরা ফসল খেতে এই জীবগুলির শিকার করেন। যে শাবলটি তাঁরা সাধারণত খেতের কাজে ব্যবহার করেন, সেটিই এই কাজে লেগে যায়। “আমরা শাক সবজি খুব একটা খাই না,” জানান মানিগান্দান। “আমাদের খাবারে মাংস থাকবেই। সেই কারণেই আমাদের রোজ শিকার করতে হয়। ভাগ্য ভালো থাকলে আমরা ১০টা ইঁদুরও পেয়ে যাই। আবার মাঝেমধ্যে মাত্র চারটে দিয়েই কাজ চালাতে হয়। সেই একই দিনে ওগুলি রান্না করি আমরা। পরেরদিনের জন্য জমিয়ে রাখি না কখনও।”

PHOTO • Smitha Tumuluru

কৃষ্ণন (উপরে) এবং অন্যান্যরা সুড়ঙ্গের মুখ সনাক্ত করে ইঁদুর শিকার করেন। নিচে বাঁদিকে: ইঁদুর ধরেন যাঁরা, তাঁরা মাঝেমধ্যে জালও ব্যবহার করেন। নিচে ডানদিকে: এস. সুমতি ও তাঁর স্বামী কে. শ্রীরামুলু - যিনি ধানখেতে কাজ করার সময় আজও নিয়মিত ইঁদুর শিকার করেন

ইঁদুর ধরার কাজটা সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় করা হয়। মাঝে মধ্যে একজন ব্যক্তি করলেও, বেশিরভাগ সময়ই এটি তিনজনে মিলে করেন। এমনই এক কাজে তলব পড়লে, মানিগান্দান ও তার ভাই কে. কৃষ্ণন দুপুরবেলা হাঁটা লাগান সাভুক্কু (কাসুয়ারিনা) জঙ্গলের পার্শ্ববর্তী ধানখেতের দিকে। কৃষ্ণন, ৪৫, হাত বাড়িয়ে খেতের ধারে গর্তগুলোর দিকে নির্দেশ করেন। “গর্তগুলো দেখতে পাচ্ছেন? এগুলোই ইঁদুরের সুড়ঙ্গগুলোর মুখ। এগুলো দেখেই আমরা ঠিক করি কেমন ভাবে ইঁদুর ধরব।” কৃষ্ণন প্রতিদিন শিকার করতে বেরোন। তাঁর কথায়, “আমরা যা পাই, তাই ঘরে আনি। ইঁদুর সবচেয়ে সহজে ধরা যায়। তাই সপ্তাহে অন্তত দু’তিনদিন আমাদের বাড়িতে ইঁদুরের মাংস রান্না হয়।”

“ইঁদুরের সুড়ঙ্গগুলির পথ জটিল, ঠিক শহরের রাস্তাঘাটের মতো আঁকাবাঁকা এবং মাটির উপরে ও তলায় বিস্তৃত,” জানান মানিগান্দান। “ওরা খুব চালাক। ওরা মাটি দিয়ে ভালাই-এর মুখ বন্ধ করে রাখে। সুড়ঙ্গগুলো খুব ভালো করে খেয়াল না করলে সহজে চোখে পড়ে না। তবে একবার চোখে পড়লেই আমরা ওগুলোর মুখ পাথর দিয়ে বন্ধ করে, আরেক দিক থেকে খোদাই শুরু করি। ইঁদুর কোনও পালাবার পথ না পেয়ে আটকে যায় আর আমরা ধরে ফেলি। মাটিটা খোদাইয়ের পক্ষে বেশি শক্ত হলে, আমরা ঘুঁটে পুড়িয়ে ধোঁয়াটা সুড়ঙ্গের মধ্যে ছেড়ে দিই। ইঁদুরগুলো দমবন্ধ হয়ে মরে যায়।”

মানিগান্দান, কৃষ্ণন এবং গ্রামের অন্যান্যরা মাঝেমধ্যে জাল ব্যবহার করেও ইঁদুর ধরেন। মানিগান্দান বলছেন, “এক এক সময়, ভালাইয়ের মুখ খুঁজে না পেলে আমরা ওই অঞ্চলটায় জাল ফেলে আসি। সুড়ঙ্গের ভিতরে ধোঁয়া ছেড়ে দিলে, ইঁদুরগুলো প্রাণ বাঁচাতে বাইরে বেরিয়ে আসে আর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জালে আটকা পড়ে।” এই কারণেই বাঙ্গালামেডুর কিছু কিছু ইরুলা পরিবার নিজেরাই নিজেদের জাল বানায় - মজবুত সুতোর শক্ত বাঁধাই। বাকিরা নিকটবর্তী বাজার থেকেই এই জাল সংগ্রহ করেন।

ওদিকে কৃষ্ণন যখন ধানের খেতে সুড়ঙ্গের মুখ খোদাই করতে ব্যস্ত, ২০ বছরের জি. সুরেশ সঙ্গ দিতে এগিয়ে আসেন। সুরেশ ও তাঁর মা-বাবা কাঠকয়লা বেচে পয়সা রোজগার করেন। কৃষ্ণনকে সুরেশ ইঁদুরের উপস্থিতি সম্মন্ধে সজাগ করে দেন। যে মুহূর্তে হতভম্ব ইঁদুরটি পালানোর চেষ্টা করে, কৃষ্ণন চট করে খালি হাতেই তাকে ধরে ফেলেন। তারপর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ইঁদুরটির দাঁত এবং শরীরের অন্যান্য হাড়গুলি বেশ শব্দ করেই ভেঙে ফেলেন। “এই কাজটা জরুরি। নাহলে ইঁদুরটা কামড়ে দিতে পারে অথবা পালিয়েও যেতে পারে,” তিনি জানান। একবার ইঁদুর ধরা হয়ে গেলে, কৃষ্ণন এবং তাঁর দলবল সুড়ঙ্গ খুঁড়ে, সাবধানে জমানো ধান বের করে আনতে তৎপর হয়ে ওঠেন।

The Irula families of Bangalamedu depend on hunting for their meals. Left: M. Radha waits to trap a rabbit. Right: G. Subramani, catapult in hand, looks for birds
PHOTO • Smitha Tumuluru
The Irula families of Bangalamedu depend on hunting for their meals. Left: M. Radha waits to trap a rabbit. Right: G. Subramani, catapult in hand, looks for birds
PHOTO • Smitha Tumuluru

বাঙ্গালামেডুর ইরুলা পরিবারগুলি খাবারের জন্য শিকারের উপরেই নির্ভরশীল। বাঁদিকে: এম. রাধা ফাঁদ পেতে ইঁদুরের অপেক্ষা করছেন। ডানদিকে: গুলতি হাতে পাখিদের সন্ধানে ব্যস্ত জি. সুব্রামানি

মাঝেমধ্যে তাঁরা সুড়ঙ্গের ভিতর ইঁদুরের বাচ্চাও খুঁজে পায়। বাঙ্গালামেডুর প্রচুর ইরুলা পরিবার পোষ্য অথবা খেলার সঙ্গী হিসেবে এদের পালন করে। মানিগান্দানের স্কুলের, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ১৫ বছরের আর. ধনলক্ষ্মীর আজও নিজের পোষ্য ইঁদুর, গীতার কথা মনে পড়ে - ১০ বছর বয়সে যাকে ও পুষেছিল। ধনলক্ষ্মী জানায়, “ইঁদুরটাকে আমি খুব ভালোবাসতাম। ও খুব ছোট্ট ছিল; ওকে নিয়ে খেলতে ভালো লাগত।”

যদিও বাঙ্গালামেডুর বাসিন্দাদের কাছে ইঁদুর-ধরা একটি দৈনন্দিন কাজ, আজকাল অনেকেই ইঁদুরের সুড়ঙ্গ থেকে সংগ্রহ করা ধান খেতে অনিচ্ছুক বোধ করছেন। “আমাদের লোকজন রেশনের চালের স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে গেছে,” জানান মানিগান্দান। “ওরা এখন ভালাইয়ের ধানের চেয়ে ওটাই বেশি পছন্দ করে। আমি এমন অনেককে দেখেছি যারা ইঁদুর ধরার পর ধানগুলো সুড়ঙ্গের ভিতরেই ফেলে রাখে অথবা মুরগিদের খাইয়ে দেয়।”

কৃষ্ণন এ ব্যাপারে সহমত যে আজকাল এই গ্রামের মানুষজন ইঁদুরের সুড়ঙ্গ থেকে জোগাড় করা ধানের চাইতে রেশনের দোকানের চাল বেশি ব্যবহার করছেন। তাঁর কথায়, “এখন ইঁদুরের গর্তগুলোয় আর আগের মতো অতখানি ধানও পাই না আমরা। আজকাল বৃষ্টি কম হওয়ায়, ধানের ফলনও অনেক কমে গিয়েছে। আর ওরা এখন খেতের মধ্যে বাড়ি-ঘরও বানাতে শুরু করেছে, তাই আগের মতো অতটা চাষবাস করছে না আর।”

তাঁর কাছে আরও জানা গেল যে রেশনের চাল দিয়েই আজকাল খাবার তৈরি হয়। “তবে ইঁদুরের গর্ত থেকে জোগাড় করা চাল দিয়ে আমরা মিষ্টি জাতীয় কিছু বানাই। ওই চালের গন্ধই আলাদা। সবার হয়তো পছন্দ হয় না, তবে আমাদের ভালো লাগে…”

Irula Adivasis relish rat meat, which they cook fresh after catching the rodents. Right: A tomato broth getting ready for the meat to be added
PHOTO • Smitha Tumuluru
Irula Adivasis relish rat meat, which they cook fresh after catching the rodents. Right: A tomato broth getting ready for the meat to be added
PHOTO • Smitha Tumuluru

ইরুলা আদিবাসীরা সদ্য ধরে আনা, টাটকা রান্না করা ইঁদুরের মাংস খেতে পছন্দ করেন। ডানদিকে: মাংস দেওয়ার আগে তৈরি হচ্ছে টমেটোর ঝোল

তবে আজও বহাল রয়েছে ইঁদুরের গর্ত থেকে সংগ্রহ করা চিনেবাদামের চাহিদা। “ইঁদুরেরা সাধারণত পাকা চিনেবাদাম লুকিয়ে রাখে গর্তে। এগুলো স্বাদে খুব মিষ্টি। চিনেবাদাম থেকে তেলও পাওয়া যায়। ধান মিলুক বা না মিলুক, (খেতের মধ্যে) চিনেবাদাম লাগানো থাকলে আমরা অবশ্যই সেখানে ইঁদুর শিকার করতে যাই,” জানালেন মানিগান্দান। তাঁর কথায় সুমতি এবং কৃষ্ণন সানন্দে সম্মতি প্রকাশ করলেন।

অনেক বছর আগের এক বৃষ্টির দিনের কথা মনে পড়ে যায় মানিগান্দানের, যেদিন তাদের ঘরে কোনও খাবার ছিল না। সেদিন তাঁর মা, বর্তমানে ৬০ বছর বয়সি জি. ইয়েল্লম্মা, বাচ্চাদের জন্য খাবার জোগাড় করার তাগিদে বাড়ি ফেরেন ইঁদুরের গর্ত থেকে সংগ্রহ করা এক আন্নাকুদাই (অ্যালুমিনিয়ামের একটা বড়ো বাসন) ভর্তি চিনাবাদাম নিয়ে।

সুমতি আজও সুড়ঙ্গগুলি থেকে ধান সংগ্রহ করেন। “ইঁদুরের গর্ত থেকে জোগাড় করা চালে মাটির গন্ধ রয়েছে। এর স্বাদ আর গন্ধেও এই মিষ্টত্ব আছে। আমার বন্ধুরা এই কিছুদিন আগেই এটা দিয়ে কোড়ুকাট্টাই [গুড় ও নারকোলের পুর দেওয়া টাটকা চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি একধরনের মিষ্টি] বানিয়েছিল।”

তাঁর কাছ থেকে আরও জানা গেল, “বাড়িতে তেমন খাবারদাবার না থাকলেও, আমরা যে কোনও সময় সহজেই ইঁদুর খুঁজে নিতে পারি। তারপর আগুনে সেঁকে, মাংসটায় সামান্য বেগুন, টমেটো আর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে কোড়াম্বু বানিয়ে ভাতের সঙ্গে খাই। যেমন স্বাদু আর তেমনি তৃপ্তিদায়ক খাবার।”

অনুবাদ: অধ্যেতা মিশ্র

Smitha Tumuluru

اسمیتا تُمولورو بنگلورو میں مقیم ایک ڈاکیومینٹری فوٹوگرافر ہیں۔ تمل ناڈو میں ترقیاتی پروجیکٹوں پر ان کے پہلے کے کام ان کی رپورٹنگ اور دیہی زندگی کی دستاویزکاری کے بارے میں بتاتے ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Smitha Tumuluru
Editor : Sharmila Joshi

شرمیلا جوشی پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا کی سابق ایڈیٹوریل چیف ہیں، ساتھ ہی وہ ایک قلم کار، محقق اور عارضی ٹیچر بھی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز شرمیلا جوشی
Translator : Adhyeta Mishra

ادھّیتا مشرا، کولکاتا کی جادھوپور یونیورسی سے تقابلی ادب میں پوسٹ گریجویشن کی پڑھائی کر رہی ہیں۔ ان کی دلچسپی صنفی مطالعہ اور صحافت میں بھی ہے۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Adhyeta Mishra