মমতা নিষাদ ক্লাস এইটের পরে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাইলেও নিরুপায়। মাওইয়া উপারহার গ্রামে কোনও উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ জেলার চাকা ব্লকে এই গ্রামের বাসিন্দারা সাধারণত মেয়েদের দূরের স্কুলে পড়তে পাঠাতেন না।
পূর্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে মমতা নিজের পড়াশোনা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিল। তাঁরা ঠিক করেন ড্রাম বাজিয়ে পদযাত্রা করে গ্রামের এদিকসেদিক যত বাড়িতে স্কুলে যাওয়ার বয়সি শিশুরা, বিশেষত মেয়েরা রয়েছে সেইসব বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা কবিতা আবৃত্তি করবে আর গান গাইবে, এবং শিক্ষকেরা বাবা-মায়েদের কাছে এই মর্মে অনুরোধ জানাবেন যে তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানকে স্কুলে পাঠান যাতে তারা ক্লাস এইটের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
এই পদক্ষেপ কার্যকরী করতে প্রাথমিকভাবে উদ্যোগী হন স্কুলের অধ্যক্ষ ঊষারাণী শ্রীবাস্তব। গ্রামসভার সদস্য গঙ্গা প্রসাদ তথা স্কুলের ছাত্র ও অন্যান্য শিক্ষকদের মতো তিনিও এই পদযাত্রা অংশগ্রহণ করেছিলেন। পদযাত্রার নেতৃত্বে ছিল মমতা। তার নিজের বাড়ির সামনেও এই পদযাত্রা দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে মমতার বাবা-মা প্রেমচন্দ্র নিষাদ এবং রামরতি দেবী আর মমতার দাদারা তার পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই পরিকল্পনায় সমর্থন দেবেন বলে সম্মত হন।
কিন্তু বেতনের ব্যবস্থা কোথা থেকে হবে এবং দূরত্বই বা পার হবে কেমন করে? মমতার শিক্ষকেরা তাকে জেলা পর্যায়ের বৃত্তি পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। নিজের প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং স্কুলের পরে সে এই পরীক্ষার জন্য খুব পরিশ্রম করত। অবশেষে মাওয়াইয়া উপারহার গ্রাম থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এলাহাবাদের কৌরিহারের মহামায়া রাজকীয় আশ্রম পদ্ধতি বালিকা ইন্টার কলেজে রাজ্যের অনুদানে পোষিত আবাসিক স্কুলের জন্য মমতা নির্বাচিত হয়। মমতা তার গ্রামের প্রথম মেয়ে যে ক্লাস নাইনে পড়ছে।
এই পদযাত্রা মাওয়াইয়া উপারহার, মাওয়াইয়া গাদরান, মাওইয়া কাছার এবং মাওইয়া টিকুরির মতো গ্রামগুলিতে একটি নিয়মিত দ্বিমাসিক অথবা মাসিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। এই চার গ্রামের শিশুরা পূর্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়। মমতা এখন এই গ্রামের অন্যান্য মেয়ে ও শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছে। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন স্কুলে উপস্থিতির হার বেড়েছে এবং মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি অভিভাবকদের মনোভাবে বদল আসতে শুরু করেছে। মমতা বাড়ি ফিরলে তাকে নতুন স্কুল এবং গ্রামের বাইরের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য পূর্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এত বছর যে পরিবর্তন অসম্ভবের সামিল ছিল, অবশেষে তা বাস্তবায়িত হল এক স্কুল ছাত্রীর নেতৃত্বে উদ্যমী পদযাত্রার দৌলতে।
অনুবাদ: তন্মনা দাস
অনুবাদ সম্পাদনা: স্মিতা খাটোর