“সেদিন সন্ধ্যাবেলা কেমন আচমকা ঘটে গেল ব্যাপারটা!”

“সে আর বলতে! ঝড়টা ভয়াবহ ছিল। তাই না?”

“অবশ্য, তারও তো বয়সের গাছপাথর ছিল না। পাঁচ দশক হতে চলল এই আবাসনে এসেছি, গোড়া থেকেই দেখছি গাছটা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।”

“তবে যেভাবে একপাশে কাত হয়ে হেলে পড়েছিল, সেটা বেজায় বিপজ্জনক ঠেকছিল। আর গাছতলায় আব্দুলের চায়ের ওই গুমটিটা? উটকো ঝামেলা যত। রাত্তিরে বাদুড়ের উৎপাত, আর সারাটা দিন ছেলে-ছোকরার গুলতানি। মাথাটা গরম হয়ে যেত।”

“বাপরে বাপ! যা মারাত্মক আওয়াজ হল! বলুন?”

৩৬ ঘণ্টা হতে চলল, পৌরসভা থেকে আপদকালীন সহায়তা-সহ লোকজন এসে আবাসনের দোরগোড়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়া গাছটা সরিয়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু লোকজনের কথাবার্তার শেষ নেই: কী অদ্ভুত... কী বীভৎস... কেমন আকস্মিক ব্যাপার... বাপরে কী ভয়ানক... কপাল জোরে বেঁচেছি... মাঝে মাঝে মেয়েটির মনে হয়, আদৌ কি মানুষ তার মতো করে দুনিয়াটা দেখে? সেদিন বিকেলে যে ওই গাছটার নিচেই আস্ত জলজ্যান্ত মানুষটা ছিল, সেটা কি ওরা জানে? কোনও বান্দাই কি তাঁর ইন্তেকালের সাক্ষী থাকেনি?

আব্দুল চাচার দোকানের সামনে অটো থেকে যখন সে নামছে, তখনও মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তা জলে থইথই, বেগতিক দেখে অটোওয়ালা একপা-ও এগোতে নারাজ। আব্দুল চাচা অবশ্য চিনতে পেরেই ছুটে এসে মেয়েটির হাতে একখান ছাতা তুলে দিলেন কোনও কথা না কয়েই। আলতো করে ঘাড় নেড়েছিলেন কেবল। মেয়ে বুঝতে পারে, হাসিমুখে ছাতাটা নিয়ে ঘাড় নাড়ে। একটু দূরেই তার বাসা, এক-কোমর পানি ঠেলে সেই অবধি পোঁছায়। আবহাওয়া যে গতিপ্রকৃতি বদলাচ্ছে সেটা তার ভাবনাতেই আসেনি।

ঘণ্টাখানেক বাদে, হুড়মুড়িয়ে কিছু একটা ভেঙে পড়ার বিকট শব্দে মেয়েটি ছুটে যায় জানলার কাছে। একি! নতুন কোনও জঙ্গল বুঝি ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হয়েছে বড়ো রাস্তায়। বুড়ো গাছটা যে উপড়ে পড়েছে, সেটা বুঝে উঠতে খানিক সময় লাগে তার। গাছের কোটর থেকে উঁকি মারা সাদা কবুতরের মতো চেয়ে আছে একটা তাকিয়াহ্‌ — আব্দুল চাচার সাধের ফেজটুপিটা।

প্রতিষ্ঠা পাণ্ডিয়ার কণ্ঠে মূল ইংরেজি কবিতাটি শুনুন

PHOTO • Labani Jangi

বৃদ্ধ বনস্পতি

সূর্য যখন শাখ-বিশাখের আজান বেয়ে ওঠে,
চুপটি করে কে-ই বা দেখে তারে?
ভোলবদলের পালায় যখন
কাগজি থেকে পান্না-সোনা,
শ্যাওলা থেকে কমলারঙা,
মরচে ধরা লোহায় সাজে ছোট্ট বহুরূপী...
একের পর এক খসলে পাতা
নজর রাখে কারা?

ধূসরপানা হইলে পরে ধনুকভাঙা পণ,
জিরজিরে ডাল, নড়বড়ে তাল,
সময় যখন একলা বসে ধিয়ান করে সেথা,
কিংবা যখন কাঠবেড়ালি আপসে ওঠে-নামে
জানিই নে ছাই কীসের খোঁজে
কামড়ে ধরে গুঁড়ি,
বলতে পারো, নজর রাখে কে?

একগুঁয়ে ওই গাছের বাকল কাহার চোখের তলে
কাঠপিঁপড়ের কুচকাওয়াজে ঝাঁঝরা হতে চায়?
কে-ই বা দেখে আঁধারবনে কাঁপতে থাকা গুঁড়ি?
বৃক্ষ তাহার চক্রমাঝে আঁকড়ে ধরে ঝড় —
মুসড়ে পড়া বসন্ত সে যেতেই নাহি চায় —
এ ডাল সে ডাল ব্যাঙের ছাতা
গোমড়া মুখে বাড়ে —
সোহাগ করে গন্ধ এদের নিচ্ছে বলো কারা?

শিকড় আমার, নাব্যতা তার কে-ই বা বোঝে হায়?
অন্ধ সে মূল খুঁড়েই চলে,
কোথায়? কোথায় পানি?
শেষ উমিদের বেরং আছে সেথায় আমি জানি।
আরও! আরও আঁকড়ে ধরি পানসে পিছল মাটি,
শিরায় শিরায় হারিয়ে যাওয়া আগুনখেকো রস,
এক দাবানল দুই দাবানল —
শুকনো করে ছাড়ে,
আঁকড়ে ধরার সোয়াদ জানে, কে-ই বা এমন আছে?
শেষরাতে ওই হুমড়ি খেয়ে শিকড় ছিঁড়ে পড়া —
হাততালি আর হাসির ফাঁকে সেটাই সবাই দেখে।


এই কবিতাটি ২০২৩ সালে হাওয়াকল প্রকাশনীর ‘কাউন্ট এভরি ব্রেথ’ (সম্পাদক: বিনীতা অগ্রবাল) নামের একটি জলবায়ু বিষয়ক সংকলনের অংশরূপে প্রথমবার প্রকাশিত হয়েছিল।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Pratishtha Pandya

پرتشٹھا پانڈیہ، پاری میں بطور سینئر ایڈیٹر کام کرتی ہیں، اور پاری کے تخلیقی تحریر والے شعبہ کی سربراہ ہیں۔ وہ پاری بھاشا ٹیم کی رکن ہیں اور گجراتی میں اسٹوریز کا ترجمہ اور ایڈیٹنگ کرتی ہیں۔ پرتشٹھا گجراتی اور انگریزی زبان کی شاعرہ بھی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Pratishtha Pandya
Illustration : Labani Jangi

لابنی جنگی مغربی بنگال کے ندیا ضلع سے ہیں اور سال ۲۰۲۰ سے پاری کی فیلو ہیں۔ وہ ایک ماہر پینٹر بھی ہیں، اور انہوں نے اس کی کوئی باقاعدہ تربیت نہیں حاصل کی ہے۔ وہ ’سنٹر فار اسٹڈیز اِن سوشل سائنسز‘، کولکاتا سے مزدوروں کی ہجرت کے ایشو پر پی ایچ ڈی لکھ رہی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Labani Jangi
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کے کانٹینٹ مینیجر ہیں۔ انہوں نے کولکاتا کی جادوپور یونیورسٹی سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک کثیر لسانی شاعر، ترجمہ نگار، فن کے ناقد اور سماجی کارکن ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra