পারি'র এই প্রতিবেদনটি পরিবেশ সংক্রান্ত সাংবাদিকতা বিভাগে ২০১৯ সালের রামনাথ গোয়েঙ্কা পুরস্কার প্রাপ্ত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি সিরিজের অংশ।
ঘরের চালাটা ঠিক গুণবন্তের উপর উল্টে পড়েনি বটে, কিন্তু তাঁর পিছু ধাওয়া করেছিল। সে ছবি ওঁর মনে গেঁথে আছে। “আমাদের জমির কিনারায় যে ছাউনিটা আছে তার টিনের চালাটা উপড়ে গিয়ে আমার দিকে উড়ে এল,” তিনি স্মরণ করেন। আমি একটা খড়ের গাদার নিচে লুকিয়ে থেকে অক্ষত দেহ নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।”
রোজ তো আর কাউকে বাড়ির ছাদ তাড়া করে না! আমবুলগা গ্রামে গুণবন্ত হুলসুলকার যে ছাদটার হাত থেকে পালাচ্ছিলেন সেটি শিলাঝড়ের সঙ্গে আসা ভয়ঙ্কর জোরালো বাতাসে উপড়ে গিয়েছিল এই এপ্রিলে।
খড়ের গাদার নিচ থেকে বেরিয়ে এসে ৩৬ বছর বয়সী গুণবন্তের নীলাঙ্গা তালুকে নিজের খেতটিকেই অচেনা ঠেকল। “ঝড় ১৮-২০ মিনিটের বেশি ছিল না। কিন্তু তাতেই গাছ উপড়ে গেছিল, মরা পাখি ছড়িয়ে পড়েছিল আর আমাদের গবাদি পশুপাখি নিদারুণভাবে আহত হয়েছিল,” শিলাঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলি দেখিয়ে তিনি বললেন।
“প্রতি ১৬ থেকে ১৮ মাসে এখানে শিলাবৃষ্টি অথবা অসময়ের বৃষ্টি হয়,” আমবুলগায় নিজেদের দুই কামরার ইট আর পাথরের বাড়ির বাইরে সিঁড়িতে বসে জানালেন তাঁর ৬০ বছর বয়সী মা ধোন্দাবাঈ। ২০০১ সালে তাঁর পরিবার ডাল (অড়হর আর মুগ) চাষ থেকে সরে আসে পারিবারিক ১১ একর জমিতে আম আর পেয়ারার ফলের বাগান তৈরি করার কাজে। “সারাবছর গাছের দেখাশোনার কাজ চালিয়ে যেতে হয়, কিন্তু এই চরম আবহাওয়ার পর্বগুলিতে কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাদের যাবতীয় পরিশ্রম আর লগ্নি তছনছ হয়ে যায়।”
এই বছর যা ঘটেছে তা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিগত এক দশক ধরেই মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার এইদিকটি শিলাঝড় সহ ভয়ানক বৃষ্টিপাত সম্বলিত চরম আবহাওয়ার শিকার হয়েছে। উদ্ধব বিরাদারের এক একরের ছোট্ট আমবাগানটি ২০১৪ সালের শিলাঝড়ে তছনছ হয়ে যায়। “আমার ১০-১২টি গাছ ছিল। ওই ঝড়ে সেগুলি সব মারা যায়। আমি আর সেগুলিকে উদ্ধার করার কোনও চেষ্টা করিনি,” তিনি বললেন।
“শিলাঝড় হয়েই চলেছে,” বললেন ৩৭ বছর বয়সী বিরাদার। “২০১৪ সালের ঝড়ের পর গাছগুলির দিকে তাকালে দুঃখ হত। আপনি গাছগুলি লাগাবেন, যত্ন করবেন আর তারপর কয়েক মুহূর্তে সেগুলি শেষ হয়ে যাবে। মনে হয় না আরও একবার তা সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিল।”
শিলাঝড়? মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলের লাতুর জেলায়? এখানে বছরের অর্ধেক সময় পারদ থাকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর। সর্বশেষ শিলাঝড়টি আছড়ে পড়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যখন তাপমাত্রা ছিল ৪১ থেকে ৪৩ ডিগ্রির মধ্যে।
কিন্তু এখানকার বেশিরভাগ কৃষকই অত্যন্ত বিরক্তি আর হতাশার সুরে বলবেন যে তাঁরা আর তাপমান, হাবামান, ও বাতাবরণ (তাপমাত্রা, আবহাওয়া ও জলবায়ুর) গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারেন না।
তাঁরা এটুকু বুঝছেন যে প্রতি বছর বর্ষার দিনের সংখ্যা কমছে আর গ্রীষ্মের দিনের সংখ্যা বাড়ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস্ -এর জলবায়ুর বিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন বিষয়ক একটি অ্যাপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখাচ্ছে যে ১৯৬০ সাল, অর্থাৎ যে বছর ধোন্দাবাঈ জন্মেছিলেন লাতুরে ৩২ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রা সম্বলিত ১৪৭টি দিন থাকত। এই বছর তা ১৮৮ দিন হয়েছে। ধোন্দাবাঈয়ের যখন ৮০ বছর হবে তখন এমন দিনের সংখ্যা হবে ২১১।
“বিশ্বাস করা কঠিন যে জুলাই মাস শেষ হতে চলল”, সুভাষ শিন্ডে বলেছিলেন, আমি যখন আমবুলগায় তাঁর ১৫ একরের চাষের জমিতে গিয়েছিলাম গতমাসে। সামান্যতম সবুজ অঙ্কুরেরও অস্তিত্বহীন জমিটিকে ঊষর, পতিত জমি বলে মনে হচ্ছিল। ৬৩-বছরের শিন্ডে নিজের সাদা কুর্তার পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছলেন। “জুনের মাঝামাঝি আমি সোয়াবিন বুনি। এবার হয়তো আমি খরিফ চাষ করবই না।”
দক্ষিণ লাতুর আর তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদের মাঝে সংযোগ রক্ষাকারী এই ১৫০ কিমি এলাকায় শিন্ডের মতো কৃষকরা প্রধানত সোয়াবিন চাষ করেন। শিন্ডের কাছ থেকে জানা গেল, ১৯৯৮ অবধি জোয়ার, অড়হর আর মুগ ছিল ওই অঞ্চলের মূল খরিফ ফসল। “এগুলির জন্য লাগাতার বৃষ্টির দরকার পড়ত। ভালো ফসলের জন্য সময়মতো বর্ষা আসা ছিল আবশ্যিক।”
শিন্ডে সহ আরও অনেকে ২০০০ সাল নাগাদ সোয়াবিন চাষ শুরু করেন কারণ, তিনি বললেন, “ওইটি আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ সহজে মানিয়ে নেয়। জলহাওয়া একটু বদলালেও সোয়াবিন একেবারে নষ্ট হয়ে যায় না। আন্তর্জাতিক বাজারেও এটি বেশ লাভজনক ছিল। মরশুমের শেষে হাতে জমা পয়সাও থাকত। তার উপর চাষের শেষে সোয়াবিনের পড়ে থাকা অংশ পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু গত ১০-১৫ বছর ধরে সোয়াবিনও আর খামখেয়ালি বর্ষার সঙ্গে পেরে উঠছে না।”
“আর এ বছর যারা ফসল বুনেছে তারা পস্তাচ্ছে,” লাতুর জেলার কালেক্টর জি শ্রীকান্ত বললেন। “কারণ প্রারম্ভিক বৃষ্টিপাতের পর চলেছে খরা।” সব ফসল মিলিয়ে মোট মাত্র ৬৪% বোনা হয়েছিল। নীলাঙ্গা তালুকে একমাত্র ৬৬% বোনা হয়েছিল। মোট আবাদ জমির ৫০%-এ যেহেতু সোয়াবিন বোনা হয়, তাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় এই ফসলটিই।
মারাঠওয়াড়ার কৃষিপ্রধান অঞ্চল লাতুর জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৭ মিলিমিটার। এ বছর ২৫শে জুন বর্ষা আসে আর তখন থেকেই শুরু হয় তার খামখেয়ালিপনা। শ্রীকান্ত আমাকে জানালেন, জুলাইয়ের শেষে ওই সময়ের মধ্যে যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা তার তুলনায় ৪৭% কম হয়েছে।
সুভাষ শিন্ডে বললেন যে ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ৪,০০০ টাকা খরচ করে এক একর জমিতে সোয়াবিন বুনলে ১০-১২ কুইন্টাল শস্য পাওয়া যেত। প্রায় দুই দশক পর সোয়াবিনের দাম দ্বিগুণ হয়ে ১,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা হলেও চাষের খরচ বেড়েছে তিন গুণ আর একর প্রতি ফলন হয়ে গেছে অর্ধেক।
রাজ্য কৃষি বিপণন বোর্ডের থেক পাওয়া তথ্য শিন্ডের বক্তব্যকেই সমর্থন করে। বোর্ডের ওয়েবসাইট বলছে ২০১০-১১ সালে ১.৯৪ লাখ হেক্টর জমিতে সোয়াবিন লাগিয়ে ৪.৩১ লাখ টন ফসল পাওয়া যেত। ২০১৬ সালে ৩.৬৭ লাখ হেক্টর জমিতে চাষ করে পাওয়া গেছে মাত্র ৩.০৮ লাখ টন। ৮৯% অধিক জমি আবাদ করে পাওয়া গেল ২৮.৫% কম ফসল।
ধোন্দাবাঈয়ের স্বামী ৬৩ বছরের মধুকর হুলসুলকর বর্তমান দশকের আর একটি বিষয় আমাদের নজরে আনলেন। “২০১২ থেকে আমাদের কীটনাশকের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। এই বছরেই ইতিমধ্যে আমাদের ৫-৭ বার কীটনাশক ছড়াতে হয়েছে,” তিনি বললেন।
ধোন্দাবাঈও কথা পাড়েন, ভূপ্রকৃতির পরিবর্তন সম্বন্ধে আরও তথ্য দেন। “আগে নিয়মিত চিল, শকুন চড়াই দেখতে পেতাম,” বললেন তিনি। বিগত দশ বছর ধরে এদের প্রায় দেখাই যায় না।”
“ভারতবর্ষে এখনও হেক্টর পিছু এক কিলোর কম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়,” বললেন লাতুরের পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক, অতুল দেউওলগাঁওকর। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জাপান তথা অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশে এর চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয় কিন্তু ওরা এর গুণমান নিয়ন্ত্রণে রাখে, আমরা রাখিনা। আমদের কীটনাশকে কর্কটরোগের কারণ থাকে, যা পাখিদের ক্ষতি করে। ওদের মেরে ফেলে”।
আবহাওয়ার লক্ষণীয় পরিবর্তনকে শিন্ডে ফলন কমে যাওয়ার জন্য দায়ি করলেন। “চার মাস ব্যাপী (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) বর্ষাকালে আমরা ৭০-৭৫ দিন বৃষ্টি পেতাম,” তিনি বললেন। “সমানে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হাল্কাভাবে পড়তেই থাকত। বিগত ১৫ বছরে বৃষ্টিপাতের দিন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। যখন বৃষ্টি হয় তখন অঝোর ধারায় পড়তেই থাকে। তারপর ২০ দিন একেবারে শুকনো। এই আবহাওয়ায় চাষ করা অসম্ভব।”
তাঁর কথার সমর্থন পাওয়া যায় ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্যে। ২০১৪ সালের বর্ষার মরশুমের চার মাসে ৪৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। পরের বছর ওই চার মাসে হল ৩১৭ মিমি। ২০১৬ সালে ওই জেলায় চার মাসে বৃষ্টি হল ১,০১০ মিমি। ২০১৭ সালে হল ৭৬০ মিমি। গতবছর লাতুরে বর্ষাকালে বৃষ্টি হল ৫৩০ মিমি আর তার মধ্যে ২৫২ মিমি হল কেবল জুনের একটা মাসেই। যে সব জেলায় ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতও হয় সেখানেও তার প্রসার ও বিস্তার থাকে অসম।
ভূগর্ভস্থ জল ও উন্নয়ন এজেন্সির প্রবীন ভূবিজ্ঞিনী চন্দ্রকান্ত ভোয়ার বুঝিয়ে বললেন -“স্বল্প সময়ের মধ্যে জোরালো বৃষ্টিপাতে ভূমিক্ষয় হয়। তার বদলে লাগাতার ঝিরঝিরে বৃষ্টি হলে ভূগর্ভস্থ জলের পুনর্নবীকরণ হয়।”
শিন্ডে আর ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভর করতে পারেন না কারণ তাঁর চারটি বোরওয়েলই বেশিরভাগ সময়ে শুকনো থাকে। “আমরা ৫০ ফুট গভীরেই জলের দেখা পেতাম। কিন্তু এখন ৫০০ ফুট গভীর বোরওয়েলও শুকনো থাকে।”
এতে আরও অন্য সমস্যা তৈরি হয়। “আমরা যদি যথেষ্ট ফসল না বুনি তাহলে পশুখাদ্য বাবদ পর্যাপ্ত জাব পাই না,”, বললেন শিন্ডে। খাদ্য পানীয়ের অভাবে চাষিরা পশুসম্পদও রক্ষা করতে পারছেন না। ২০০৯ অবধি আমার ২০টি গবাদি পশু ছিল আর এখন আছে মাত্র নয়টি।”
৯৫ বছর বয়সেও শিন্ডের মা কাবেরীবাঈ বেশ সচেতন সজাগ - তিনি বললেন, “১৯০৫ সালে লোকমান্য তিলক তুলো চাষের সূচনা করার পর থেকেই লাতুর তুলো চাষের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তিনি এখনও পা গুটিয়ে মাটিতে বসতে পারেন এবং কোনও সাহায্য ছাড়াই উঠতে পারেন। “তুলা চাষ করার মতো যথেষ্ট বৃষ্টি আমরা পেতাম। এখন তার যায়গা নিয়েছে সোয়াবিন।”
তাঁর মা যে দুই দশ আগে, অর্থাৎ এই শিলাঝড়ের চক্র শুরু হওয়ার আগেই সক্রিয়ভাবে চাষের কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন এতে শিন্ডে খুশি। “ঝড় সব তছনছ করে দিয়েছে। যাদের ফলের বাগান ছিল তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”
তুলনায় উন্নতরত এই দক্ষিণাঞ্চলে যাঁদের ফলের বাগান ছিল তাঁদের সত্যিই খুব বড়ো ক্ষতি হয়েছে। “সর্বশেষ শিলাঝড়টি আসে এই বছর এপ্রিলে,” আমাকে ফলবাগানের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললেন মধুকর হুলসুলকর। সেখানে গাছের গায়ে হলুদ চিহ্নগুলি এখনও দৃশ্যমান। “আমার ১.৫ লাখ টাকা মূল্যের ফলের লোকসান হয়। যে ৯০টি গাছ দিয়ে আমরা ২০০০ সালে শুরু করেছিলাম তার মধ্যে মাত্র ৫০টি পড়ে আছে।” এখন তিনি ফল চাষ ছেড়ে দেবেন ভাবছেন, “শিলাঝড় তো এখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।”
গত এক শতকে লাতুর ফসলের ধরনে অনেক পরিবর্তন দেখেছে। মূলত জোয়ার ( সোরঘুম ) সহ অন্যান্য দানা শস্য ও অল্প বিস্তর ভুট্টা চাষ থেকে ১৯০৫ সালে লাতুর সরে আসে তুলা চাষে।
তারপর ১৯৭০ থেকে আসে আখ এবং অল্প সময়ের জন্য সূর্যমুখী আর তারপর ২০০০ থেকে ব্যাপক মাত্রায় সোয়াবিন চাষ। আখ আর সোয়াবিন চাষের ব্যাপকতা বেশ চমকপ্রদ। ২০১৮-১৯ সালে ৬৭,০০০ হেক্টরে আখ চাষ হত (পুণের বসন্তদাদা সাগর প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য)। ১৯৮২ সালে একটি চিনিকলের জায়গায় লাতুরে এখন চিনিকলের সংখ্যা ১১। অর্থকরি ফসলের সঙ্গেই অবশ্যম্ভাবীভাবে আসে বোরওয়েল নিদারুণভাবে ভূগর্ভস্থ জল শোষণ করতে — কতগুলি যে খনন করা হয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। মিলেট জাতীয় দানাশস্য চাষে অভ্যস্ত জমিতে ১০০ বছর ধরে অর্থকরি ফসলের চাষ করলে তার প্রভাব জল, মাটি, আর্দ্রতা আর গাছপালার উপর পড়তে বাধ্য।
রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট অনুসারে লাতুরে মাত্র ০.৫৪% জমিতে জঙ্গল আছে। সারা মারাঠওয়াড়ার অবস্থা আরও খারাপ – শতকরা ০.৯%-এরও নিচে।
“এইসব ঘটনার সঙ্গে আবহাওয়াগত পরিবর্তনকে সংকীর্ণভাবে কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত করলে ভুল হবে,” বললেন অতুল দেউলগাঁওকর। “আর যথেষ্ট তথ্য দিয়ে তা প্রমাণ করাও যাবে না। তাছাড়া এই পরিবর্তন বড়ো অঞ্চল জুড়ে হয় - মানুষের তৈরি সীমানা মেনে কোনও জেলার মধ্যে নয়। মারাঠাওয়াড়ার একটি ক্ষুদ্র অংশ লাতুর এক বড়ো ধরনের কৃষি ও পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু বড়ো আঞ্চল জুড়ে নানা ঘটনার মধ্যে একটা যোগসূত্র হয়তো লক্ষ্য করা যায়। রহস্যজনকভাবে চরম আবহাওয়া ও শিলাঝড়ের সত্যিই আগমন এবং বাড়বাড়ন্ত ঘটেছে ফসলের ও জমি ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন এবং নূতন উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার শুরু হওয়ার এক দশক পর থেকে। মানুষকে আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতার জন্য সম্পূর্ণ দোষী না করা গেলেও আমরা যা দেখছি তার পিছনে মানুষের উল্লেখযোগ্য দায় তো আছেই।”
ইতিমধ্যে চরম আবহাওয়া ক্রমবর্ধমান নিদর্শন রেখে যেতে থাকার ঘটনায় মানুষ হতচকিত।
“প্রতি কৃষিচক্র কৃষকের আরও বেশি উদ্বেগের কারণ হচ্ছে”, বললেন গুণবন্ত হুলসুলকর। “কৃষক-আত্মহত্যার এটি অন্যতম কারণ। আমার বাচ্চারা সরকারি দপ্তরে কেরানিগিরি করে এর চেয়ে ভালো থাকবে।” চাষের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আবহাওয়ার কারণে বদলে গেছে।
“ক্রমেই চাষ হয়ে উঠছে সময়, শক্তি আর অর্থনাশের কারণ,” বললেন সুভাষ শিন্ডে। তাঁর সময় আলাদা ছিল। “চাষ ছিল আমাদের স্বাভাবিক পছন্দ,” গড়গড় করে বলে উঠলেন কাবেরীবাঈ।
আমি যখন ‘ নমস্তে’ বলে কাবেরীবাঈকে বিদায় জানালাম তিনি তার বদলে আমার সঙ্গে হাত মেলালেন। “গত বছর নাতী পয়সা জমিয়ে আমাকে প্লেনে চড়িয়েছে,” সগর্বে মৃদু হেসে তিনি বললেন। “এভাবেই একজন আমাকে প্লেনে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। আবহাওয়া বদলাচ্ছে, আমি ভাবলাম আমাদের অভ্যর্থনার ধরনও বদলানো উচিত।”
কভার চিত্র : (শিলাঝড়ে তছনছ হওয়া লাটুর) নিশান্ত ভদ্রেশ্বর।
পারি-র জলবায়ু বিবর্তনের উপর দেশব্যাপী রিপোর্টিং সংক্রান্ত প্রকল্পটি ইউএনডিপি সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য জলবায়ুর বিবর্তনের প্রকৃত চিত্রটি দেশের সাধারণ মানুষের স্বর এবং অভিজ্ঞতায় বিবৃত করা।
নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] – এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] – এই আইডিতে।
বাংলা অনুবাদ : চিল্কা