প্রজাতন্ত্র দিবসের ইতিহাসে এ অবধি দেখা সর্ববৃহৎ উদযাপন-অনুষ্ঠানের সাক্ষী ছিলাম আমরা প্রত্যেকেই, আজ থেকে কাঁটায় কাঁটায় একবছর আগে। আর তা সংগঠিত করেছিলেন একদল অসামরিক তথা খেটে-খাওয়া নাগরিক। হাজার হাজার চাষি একজোট হয়ে নিজেরাই মনের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের কাফিলা। সংসদ তথা সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গায়ের জোরে যে তিনটি কৃষি আইন পাশ করানো হয়েছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, তার বিরুদ্ধেই দিল্লির দরবারে এসে ঘাঁটি গেঁড়েছিলেন সেই কৃষকের দল। ২৬শে জানুয়ারি ২০২১, দিল্লি সীমান্তের সিংঘু, টিকরি, গাজিপুর তথা অন্যান্য সংগ্রামস্থল থেকে শুরু হয়েছিল ট্রাক্টরের কুচকাওয়াজ , অনুরূপ দৃশ্য দেখা গিয়েছিল দেশের নানান প্রান্তে।
চাষিদের সেই কুচকাওয়াজটি আদতে প্রতীকী হলেও, তাতে সাহসিকতা ও দমের অভাব ছিল না। আম জনতা, চাষি, মজুর, সব্বাই মিলে পুনরূদ্ধার করেছিলন নিজেদের প্রজাতন্ত্র। মুষ্টিমেয় কিছু ঐক্যনাশা মানুষ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার মাধ্যমে এই অভূতপূর্ব প্যারেডটি থেকে নজর কাড়ার হাজার চেষ্টা করলেও শেষমেশ সেই প্রয়াস ব্যর্থ হয়।
নভেম্বর ২০২১, সরকার বাহাদুর বাধ্য হলেন উক্ত আইনগুলি প্রত্যাহার করতে, আর তার সঙ্গে যবনিকা পড়ে কৃষি-আন্দোলনের এই অধ্যায়ে। ততদিনে অবশ্য হাড়কাঁপানি ঠান্ডা, গ্রীষ্মের দাবদাহ এবং কোভিড-১৯ অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের হাতে শহীদ হয়েছেন ৭০০-এরও অধিক চাষি। এই ফিল্মটি সেই অন্তহীন লড়াইয়ের পাদপদ্মে অর্পিত শ্রদ্ধাজ্ঞলি।
ইতিহাসের পাতায় সর্ববৃহৎ আন্দোলন হিসেবে জ্বলজ্বল করছে ২০২১ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের এই ট্রাক্টরের কাফিলা। সংবিধান ও আপামর জনসাধারণের অধিকার রক্ষার্থে শান্তি ও শৃঙ্খলায় সজ্জিত হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন কৃষকের দল। আক্ষরিক ও অন্তর্নিহিত, এই দুটি ক্ষেত্রেই প্রজাতন্ত্র দিবসের অর্থ নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান গ্রহণ করা – মরে গেলেও এই কথাটা যেন আমরা বিস্মৃত না হই।
এই ফিল্মটি বানিয়েছেন আদিত্য কাপুর।
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)