কোভিড-১৯ ধরা পড়ার ৮ দিন পর যেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল সেই হাসপাতালেই মারা গেলেন রামলিঙ্গ সানাপ। অথচ হত্যাকারী কিন্তু ভাইরাস নয়।
মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে ৪০ বছরের রামলিঙ্গ হাসপাতাল থেকে তাঁর স্ত্রী রাজুবাইকে ফোন করেছিলেন। "যখন জানতে পারল যে ওর চিকিৎসায় কতটা খরচা হচ্ছে, তারপর থেকে মামা হাউহাউ করে কেঁদেই যাচ্ছিল। মানুষটা ঠিক বুঝতে পেরেছিল, হাসপাতালের বিল মেটাতে দুই একরের একফালি ওই খেতটাও এবার বেচে দিতে হবে," দুঃখ করছিলেন তাঁর ২৩ বছরের ভাগ্নে রবি মোরালে।
মহারাষ্ট্রের বীড শহরে রয়েছে দীপ হাসপাতাল, সেখানেই মে মাসের ১৩ তারিখ থেকে ভর্তি ছিলেন রামলিঙ্গ। চিকিৎসা বাবদ ১.৬ লাখ টাকা শুষে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজুবাইয়ের ভাই প্রমোদ মোরালে জানালেন আমাকে, "আমরা কোনওমতে দুটো কিস্তিতে সেটা শোধ করেছিলাম বটে, কিন্তু ওরা আরও দু'লাখ টাকা দাবি করছিল, এবং এই কথাটা ওরা রোগীর পরিবারকে না জানিয়ে সোজা রোগীকে গিয়ে বলে। এভাবে অসুস্থ একটা মানুষের ঘাড়ে এমন বোঝা চাপানোর কোনও মানে হয় বলুন তো?"
তাঁর পরিবার সারা বছরে যা রোজগার করত তার দুগুণ টাকা চাইছিল হাসপাতাল, রামলিঙ্গ এটা আর সহ্য করতে পারেননি শেষটায়। ২১শে মে, তখন ভোররাত, কোভিড ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে করিডোরে এসে গলায় দড়ি দিয়েছিলেন রামলিঙ্গ।
তিনি স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন ২০ তারিখ রাতে, তখন রাজুবাই (৩৫) অনেক করে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন স্বামীকে। বলেছিলেন যে হয় মোটরসাইকেলটা বিক্রি করে টাকাটা জোগাড় করবেন, নয়তো পশ্চিম মহারাষ্ট্রের যে চিনির কারখানাটায় তাঁরা দুজনে কাজ করেন, সেখান থেকে টাকা ধার করবেন। অনেক পিড়িপিড়ি করেছিলেন রাজুবাই, বলেছিলেন যে তাঁর সুস্থ হয়ে ফেরাটাই সবচাইতে মূল্যবান। তবে পাহাড়প্রমাণ এই টাকা কেমনভাবে শোধ করবেন, বা আদৌ সেটা শোধ করতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে ধন্দ কাটেনি রামলিঙ্গের।
রামলিঙ্গ ও রাজুবাই থাকতেন বীড জেলার কাইজ তালুকে, তাঁদের তিন সন্তানের সবচেয়ে ছোটোটির বয়স মোটে ৮, বড়োটির ১৬। এই দম্পতি প্রত্যেক বছর পশ্চিম মহারাষ্ট্রের আখের খেতে কাজ করতে যেতেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল অবধি মাথার ঘাম ধুলোয় মিশিয়ে মোটামুটি ওই হাজার ষাটেক টাকা রোজগার হত। ৬টা মাস তাঁদের তিন সন্তানের দেখভাল করতেন রাজুবাইয়ের বিপত্নীক বাবা।
বীড শহর থেকে ৫০ কিমি দূরে টান্ডালাচিওয়াড়ি জনপদ, সেখানেই থাকতেন সানাপ পরিবার। এপ্রিলের শেষে বাড়ি ফিরে নিজেদের একচিলতে জমিটায় জোয়ার, বাজরা আর সোয়াবিন চাষ করতেন দুজনে মিলে। এছাড়াও সপ্তাহে দিন তিনেক বড়ো বড়ো খামারগুলোয় ট্রাক্টর চালিয়ে দৈনিক ৩০০ টাকা আয় করতেন রামলিঙ্গ।
যে পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, স্বাভাবিকভাবেই অসুস্থ হলে তাঁদের গন্তব্য হয় সরকারি হাসপাতাল। সেটাই করেছিলেন রামলিঙ্গ, গিয়েছিলেন বীডের অসামরিক হাসপাতালে। "কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম যে একটাও বেড ফাঁকা নেই, তাই বাধ্য হলাম একটা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে," জানালেন রবি।
করোনাভাইসের প্রকোপে গ্রামীণ ভারতের জনসাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশাটা দিনকে দিন প্রকট হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে বীড জেলার কথা, এখানকার ২৬ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে মোটে দুটি সরকারি হাসপাতাল।
সরকারি এই হাসপাতালগুলি ভিড়ে উপচে পড়েছে করোনার কারণে, তাই মানুষজন বাধ্য হচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালগুলির শরণাপন্ন হতে, যদিও সেখানকার খরচ মেটানো তাঁদের নাগালের বাইরে।
তাই বহু মানুষের জন্য অসুখ করার মানে আজীবন দেনার ভারে জর্জরিত হয়ে থাকা।
২০২১ সালের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিউ গবেষণাকেন্দ্রের প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে: "কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে ভারতবর্ষে গরিব মানুষের (যাঁদের মোট আয় দৈনিক ২ ডলারের থেকেও কম) পরিসংখ্যানে ৭.৫ কোটি সংযোজিত হয়েছে।" এছাড়াও মধ্যবিত্তের পরিসংখ্যান আগে যা ছিল তার থেকে ৩.২ কোটি কমে গেছে ২০২০ সালে। এই রিপোর্টটি বলছে যে বিশ্বজুড়ে দারিদ্রের যা মোট বৃদ্ধি, তার ৬০ শতাংশই রয়েছে ভারতের ঝুলিতে।
মহারাষ্ট্রের মারাঠওয়াড়া অঞ্চলের এই যে পাশাপাশি দুটি জেলা – বীড এবং ওসমানাবাদ – অতিমারির প্রকোপ এখানে সবচাইতে বেশি প্রকট। করোনাভাইরাসের আগমনের পূর্বেই জলবায়ুর চরিত্রে বদল, জলাভাব, কৃষি সংকট ইত্যাদি নানান কারণে এই জেলাগুলি ধুঁকছিল। ২০২১-এর ২০শে জুন অবধি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বীডের ৯১,৬০০ জন এবং মারা গেছেন ২,৪৫০ জন, পাশের জেলা ওসমানাবাদে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬১,০০০ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১,৫০০ জন মানুষ।
খাতায় কলমে অবশ্য গরিব মানুষের সত্যিই কোনও দুঃখ কষ্ট নেই।
কোভিড রোগীরা যাতে সর্বস্বান্ত না হয়ে যান সেইজন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলি চিকিৎসা বাবদ কতটা টাকা নিতে পারে সেটার মূল্য স্থির করে দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। জেনারেল বেডের জন্য দৈনিক ৪,০০০ টাকা, ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের জন্য দৈনিক ৭,৫০০ টাকা এবং সেটি ভেন্টিলেটর সহ হলে দৈনিক ৯,০০০ টাকা – এর চেয়ে বেশি টাকা হাসপাতালগুলি চাইতে পারবে না, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
উপরন্তু চিকিৎসার খরচ (২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত) সামলানোর জন্য রয়েছে মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে জন আরোগ্য যোজনা (এমজেপিজেএওয়াই) নামক একটি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প – এটি এ রাজ্যের মহতী একটি যোজনা। বীড তথা ওসমানাবাদের মতো কৃষি সংকটের সম্মুখীন আরও যে ১৪টি জেলা রয়েছে সেখানকার সেই সকল পরিবার এই যোজনার আওতায় পড়ছে যাদের বাৎসরিক উপার্জন ১ লাখের চেয়ে কম। এমজেপিজেএওয়াই'র অধীনে তালিকাভুক্ত ৪৪৭টি হাসপাতালে সেই সকল চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার বিনেপয়সায় করা হয় যেগুলি এই যোজনার আওতায় পড়ে।
অথচ ৪৮ বছরের বিনোদ গঙ্গওয়ানে যখন এপ্রিল মাসে ওসমানাবাদের চিরায়ু হাসপাতালে যান, ওখানকার কর্তৃপক্ষ তাঁকে এমজেপিজেএওয়াই'র আওতায় ভর্তি করতে রাজি হয়নি। "সেটা ছিল এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ। ওসমানাবাদের চারিদিক কোভিডে ছেয়ে গেছে। কোত্থাও কোনও বেড পাওয়া যাচ্ছিল না," জানালেন তাঁর দাদা সুরেশ গঙ্গওয়ানে (৫০)। তিনিই বিনোদকে এই বেসরকারি হাসপাতালটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। "চিরায়ু হাসপাতালের এক ডাক্তারবাবু তো মুখের উপরেই বলে দিলেন 'ওসব যোজনা ফোজনা এখানে হবে না, বেড লাগবে কিনা সেটা বলুন'। ভয়ে তো আমাদের হাত-পা পেটের ভিতর সেঁধিয়ে গেছিল তখন, তাই ঘাবড়ে গিয়ে আমরা বলে ফেললাম চিকিৎসা শুরু করে দিতে।"
ওসমানাবাদের জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত সুরেশ পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে তাঁকে মিথ্যা কথা বলা হয়েছিল। ওই হাসপাতালটি যে এমজেপিজেএওয়াই'র অন্তর্ভুক্ত নয় এ কথাটা আপাদমস্তক মিথ্যে। "আমি সরাসরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এটা গিয়ে বলাতে ওরা উল্টো আমায় রীতিমতো শাসাতে শুরু করল। বলছিল 'যোজনাটা বড়ো, নাকি আপনার ভাইয়ের জীবনটা?' সঙ্গে এটাও জানিয়ে দিল যে দিনের দিন বিল না মেটালে ওরা চিকিৎসা বন্ধ করে দেবে।"
ওসমানাবাদ শহরের একপ্রান্তে চার একরের একটি জমি রয়েছে গঙ্গওয়ানে পরিবারের। বিনোদ চিরায়ুতে ছিলেন ২০ দিন, এই কদিনের বেড-ভাড়া, ওষুধপত্র এবং পরীক্ষারনিরীক্ষা বাবদ ৩.৫ লাখ টাকার বিল মেটান তাঁর পরিবারের লোকজন। তা সত্ত্বেও হাসপাতাল আরও বাড়তি ২ লাখ টাকা চাওয়াতে বেঁকে বসেন সুরেশ। তাঁর সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিশাল তর্কাতর্কি হয়। "আমি সাফ বলে দিয়েছিলাম যে দাদার মৃতদেহ নিয়েই যাব না," বললেন তিনি। বিনোদের মৃতদেহ একটা গোটা দিন ওই হাসপাতালেই পড়ে থাকে, তবে শেষমেশ নিজেদের অনায্য দাবিদাওয়া থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
ওদিকে চিরায়ুর মালিক ডাঃ বিরেন্দ্র গাওলি বলছেন যে বিনোদকে ওই স্বাস্থ্য বীমার আওতায় ভর্তি করা হয়নি কারণ সুরেশ নাকি তাঁর আধার কার্ড জমা দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। তবে এটাও যে ডাঁহা মিথ্যে কথা সেটা জানালেন সুরেশ: "এমজেপিজেএওয়াই নিয়ে যখনই কিছু বলতে গেছি ওরা সেসব কানেই তোলেনি।"
ডাঃ গাওলি স্বীকার করলেন যে চিরায়ুর চিকিৎসা ব্যবস্থা এমন কিছু আহামরি নয়: "কিন্তু কোভিডের সংক্রমণ হুহু করে বাড়তে থাকায় প্রশাসন থেকে আমাদের অনুরোধ করে যে আমরা যেন কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের ফিরিয়ে না দিই। আমাকে মৌখিক রূপে জানানো হয় যে কোভিড রোগীদের যত্ন নেওয়াটা আমাদের দ্বায়িত্ব, তার সঙ্গে এটাও বলা হয় যে কোনও রোগী যদি খুব বেশি মুমূর্ষু হয়ে পড়েন, তাহলে আমরা যেন তাঁকে অন্য কোনও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করে দিই।"
চিরায়ুতে ভর্তি হওয়ার ১২-১৫ দিন পর বিনোদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ডাঃ গাওলি জানালেন যে তখন তিনি বিনোদের পরিবারকে বলেছিলেন অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে। "তাঁরা তো রাজিই হলেন না। পেশেন্টকে বাঁচানোর জন্য যা যা করা আমাদের সাধ্যে ছিল আমরা তা সবই করেছিলাম বিশ্বাস করুন, কিন্তু ২৫শে এপ্রিল তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তার পরদিনই তিনি মারা যান।"
এ ঘটনার উল্টোপিঠটা তুলে ধরলেন সুরেশ, বিনোদকে স্থানান্তরিত করার অর্থ ছিল ওসমানাবাদে আরও একটি এমন হাসপাতাল খুঁজে বার করা যেখানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া সারা সপ্তাহ জুড়ে হাজার একটা ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়েছিল তাঁদের পরিবার। তার ক'দিন আগেই কোভিডের কারণে প্রাণ হারিয়েছিলেন বিনোদ এবং সুরেশের ৭৫ বছরের বাবা বিট্ঠল গঙ্গওয়ানে। এটা ওঁরা বিনোদকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেননি। "ও তো এমনিতেই দিনরাত আতঙ্কে অস্থির হয়ে থাকত," বলছিলেন বিনোদের স্ত্রী সুবর্ণা, "মৃত্যুভয় আঁকড়ে ধরেছিল মানুষটাকে, ওয়ার্ডে অন্য কোনও রোগী মারা গেলে ওর ঘুম উড়ে যেত।"
বিনোদের মেয়ে কল্যাণী বয়স ১৫ বছর, সে জানালো, "বাবার খুব মন খারাপ করছিল দাদুর জন্য, বারবার দেখতে চাইত, আমরা নানান বাহানায় ভুলিয়ে রাখতাম। বাবা চলে যাওয়ার দু'দিন আগে আমরা ঠাম্মাকে [লীলাবতী, বিনোদের মা] হাসপাতালে নিয়ে যাই বাবার কাছে।"
হিন্দুধর্মে বিধবাদের কপালে টিপ পরা নিষিদ্ধ, তাও ছেলে যাতে কিছু সন্দেহ না করে তাই সধবার বেশেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন লীলাবতী। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধানে নিজের স্বামী এবং ছেলেকে হারিয়ে পায়ের তলা থেকে যেন মাটি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
যে আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার, সেটা যে কবে কাটবে তা বলা অসম্ভব। দুঃখে ভেঙে পড়েছিলেন সুবর্ণা। গৃহস্থালির দায়িত্ব সামলানো, ৪০ বছর বয়সী সুবর্ণা বললেন, "গয়নাগাঁটি আমার যা যা ছিল সব বন্ধকে রাখা আছে। তিল তিল করে যেটুকু টাকা জমিয়েছিলাম সবটাই চলে গেল। মেয়ের আমার স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে। কিন্তু কেমন করে মেটাব ওর এই ইচ্ছা? হাসপাতাল থেকে যদি ওই যোজনার সুযোগ সুবিধাগুলো দিত আমাদের, তাহলে অন্তত আজ আমার মেয়েটার ভবিষ্যৎটা এভাবে অনিশ্চিত হয়ে যেত না।"
পয়লা এপ্রিল থেকে ১২ই মে'র মধ্যে ওসমানাবাদের সবকটা বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোটে ৮২ জন কোভিড রোগী এমজেপিজেএওয়াই যোজনার সুযোগ সুবিধাগুলো পেয়েছেন। জানালেন এই যোজনার জেলা সমন্বয়কারী (কো-অর্ডিনেটর) বিজয় ভুটেকর। ওদিকে বীডের সমন্বয়কারী অশোক গায়কোয়াড় বললেন যে তাঁর জেলায় ১৭ই এপ্রিল থেকে ২৭শে মে'র মধ্যে এই সংখ্যাটা ১৭৯। দুটিকে যোগ করলেও যেটা দাঁড়াবে সেটা এই কদিনে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সব মিলিয়ে মোট যতজন ভর্তি হয়েছেন তার একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র।
বীডের অম্বেযোগাই শহরে রয়েছে মানবলোক নামক একটি গ্রামীণ উন্নয়ন সমিতি। সেটির সচিব অনিকেত লোহিয়া আমাদের বললেন যে জনস্বাস্থ্য কাঠামোকে আরও উন্নত করে তুলতে না পারলে মানুষজন এভাবেই বেসরকারি হাসপাতালগুলির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবেন: "পর্যাপ্ত সংখ্যায় স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবজনিত কারণে আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ উপকেন্দ্রগুলির আজ অত্যন্ত বেহাল অবস্থা। ফলত ভদ্রস্থ পরিষেবা পাচ্ছেন না কেউই।"
মার্চ ২০২০তে কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ৮১৩টি অভিযোগ এসে পৌঁছেছে মুম্বইয়ের এমজেপিজেএওয়াই'য়ের দফতরে – এর সিংহভাগটাই বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে। এ অবধি ১৮৬টি অভিযোগের শুনানি হয়েছে এবং হাসপাতালগুলি মোট ১৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে রোগীদের
"এমনকি নামজাদা সরকারি হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডাক্তার কিংবা নার্স নেই, তাই রোগীদের যতটা যত্ন নেওয়া উচিত ততটা সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলত যাঁদের সেরকম আর্থিক সঙ্গতি নেই তাঁরাও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর তাঁদের বিন্দুমাত্রও ভরসা নেই," জানালেন লোহিয়া।
ঠিক এই জন্যেই মে মাসে যখন বিট্ঠল ফাড়কের শরীরে এক এক করে কোভিডের উপসর্গগুলি ফুটে ওঠে তখন কাছাকাছি কোনও সরকারি হাসপাতালে বেড খোঁজার চেষ্টাটুকুও করেননি তিনি। কারণ তার দুদিন আগেই একটি সরকারি হাসপাতালে কোভিডের ফলে নিউমোনিয়া হয়ে যাওয়ায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর ছোটো ভাই।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে এই উপসর্গগুলি টের পান লক্ষ্মণ। তারপর তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায় বিট্ঠল তাঁকে বাড়ি থেকে ২৫ কিমি দূরে অম্বেযোগাইতে স্থিত স্বামী রমানন্দ তীর্থ গ্রামীণ মেডিক্যাল কলেজে (এসআরটিআরএমসিএ) নিয়ে যান। পারলি-নিবাসী লক্ষ্মণ মোটে দুই দিন ওই হাসপাতালটিতে ছিলেন।
সরকারি হাসপাতালে ভাইয়ের এ হেন মর্মান্তিক মৃত্যুতে ভীত বিট্ঠল যখন দেখেন যে তাঁর নিজেরও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তখন তিনি তড়িঘড়ি একটি বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। লক্ষ্মণের স্ত্রী রাগিনী (২৮) বললেন, "ওই হাসপাতালটায় [এসআরটিআরএমসিএ] প্রতিদিনই অক্সিজেন কম পড়ে যায়, ফলত সারাক্ষণ ছোটাছুটি করতে হয়। বারবার না চিল্লালে ডাক্তার বা অন্যান্য কর্মীরা পাত্তাই দেন না। একসঙ্গে এতজন রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ওঁরা। লোকজন তো এই ভাইরাসের ভয়েই সিঁটিয়ে আছে, এভাবে একটুকুও না পাত্তা দিলে হয় বলুন? তাই তো বিট্ঠল টাকাপয়সার কথা [বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যা আবশ্যক] একটিবারের জন্যও ভাবেনি।"
বিট্ঠল সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এই স্বস্তি ছিল নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী।
হাসপাতাল থেকে তাঁর হাতে ৪১,০০০ টাকার রশিদ ধরিয়ে দেয়। ওষুধপত্রের জন্য ততদিনে ৫৬,০০০ টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন তিনি – যে টাকাটার মুখ দেখতে বিট্ঠল এবং লক্ষ্মণকে ২৮০ দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। একটুখানি রেহাইয়ের জন্য হাতেপায়ে ধরেছিলেন তিনি, তবে কোনও লাভ হয়নি তাতে। "বিল মেটানোর তাগিদে আমরা বাধ্য হই টাকাপয়সা ধার করতে," বললেন রাগিনী।
অটোরিক্সা চালিয়ে পেট চালাতেন পারলি-নিবাসী বিট্ঠল এবং লক্ষ্মণ। "অটোটা দিনেরবেলায় চালাত লক্ষ্মণ, আর রাত্তিরবেলায় বিট্ঠল। বেশিরভাগ দিনই ৩০০-৩৫০ টাকার বেশি জুটত না। তারপর ২০২০র মার্চে শুরু হল লকডাউন, তারপর থেকে তো খুদকুঁড়োটাও জোটে না একেক দিন। আজকাল আর কেই বা অটো ভাড়া করে বলুন? আমরা যে কেমনভাবে বেঁচে আছি সেটা ভগবানও জানে না," নিজেদের দুর্দশার কাহিনি শোনাচ্ছিলেন রাগিনী।
স্নাতকোত্তর পাশ করা রাগিনী গৃহস্থালির দায়দায়িত্ব সামলান। ৭ বছরের মেয়ে কার্তিকী এবং কোলের শিশু মুকুন্দরাজকে যে তিনি কীভাবে মানুষ করবেন সেই ব্যাপারে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তাঁর। কাতর কণ্ঠে তিনি বললেন, "লক্ষ্মণকে ছাড়া একা একা কীভাবে মানুষ করব এদের আমি? মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ভেবে ভেবে। হাতে একটা ফুটোকড়িও নেই আর। এমনকি শ্রাদ্ধের জন্যও হাত পাততে হয়েছিল আমাকে।"
এক-কামরার ছোট্ট একটি বাড়ি, মা-বাবার সঙ্গে এখানেই দুই ভাইয়ের একান্নবর্তী অপরিসর সংসার। বাইরে একটি গাছের ছায়ায় রাখা আছে একটি অটোরিক্সা – সে রুজিরুটিই বলুন বা দেনার ভারে ডুবে যাওয়ার থেকে বাঁচার রাস্তা, দুই ভাইয়ের একমাত্র সম্বল এই যন্ত্রটিই। কিন্তু এ দেনা যে অত সহজে মেটার নয়। একে তো দেশের অর্থনীতির বেসামাল অবস্থা, তার উপর পারলির এই যে অন্ধকারাচ্ছন্ন গলিঘুঁজি, এর মধ্যে জীবনের রাস্তা খোঁজার জন্য একজন ড্রাইভার কম পড়ে গেছে আজ।
বেসরকারি হাসপাতালগুলি যে ছিনেজোঁকের মতো টাকাপয়সা শুষে নিচ্ছে, সেটার থেকে বাঁচার রাস্তা খুঁজছেন ওসমানাবাদের জেলাশাসক কৌস্তুভ দিবেগাঁওকর। পয়লা এপ্রিল থেকে ৬ই মে – এই সময়ের মাঝে ৪৮৬ জন কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ওসমানাবাদের সহ্যাদ্রি হাসপাতালে, অথচ এঁদের মধ্যে কেবলমাত্র ১৯ জন এমজেপিজেএওয়াই'র সুযোগ সুবিধাগুলি পেয়েছেন, মে মাসের ৯ তারিখে দিবেগাঁওকরের পাঠানো একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।
এই ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন সহ্যাদ্রি হাসপাতালের মালিক (ডিরেক্টর) ডাঃ দিগ্গজ দাপকে-দেশমুখ। আমাকে শুধু এটুকু বললেন যে জেলাশাসকের ওই বিজ্ঞপ্তিটি হাতে পাওয়ার পর তাঁর উকিলেরা এটা নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন।
এমজেপিজেএওয়াই যোজনাটিকে বাস্তবায়িত করার দ্বায়িত্বে রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সমাজ, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দিবেগাঁওকর একটি চিঠির দ্বারা তাঁদের অনুরোধ করেন শেংড়ে হাসপাতাল এবং গবেষণাকেন্দ্রকে এমজেপিজেএওয়াই'র তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য। এই হাসপাতালটি ওসমানাবাদ নগর হতে ১০০ কিমি দূরে উমার্গায় অবস্থিত। এই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে একাধিক রোগীর অভিযোগ নথিবদ্ধ করা ছিল জেলাশাসকের ওই চিঠিটায়।
এই অভিযোগগুলির মধ্যে ছিল একটি কিম্ভুতকিমাকার তথ্যও, শেংড়ে হাসপাতালে নাকি একাধিক রোগীকে বাধ্য করা হচ্ছে ধমনীবাহিত রক্তে গ্যাসের মাত্রা পরীক্ষা করাতে। এটি একটা ফেরেববাজি বই আর কিছু নয়। ভেন্টিলেটর-সহ বেড না দেওয়া সত্ত্বেও একজন রোগীকে সেটার জন্য বিল মেটাতে হয়েছে, এমনটাও জানা যাচ্ছে এই অভিযোগের তালিকা থেকে।
জেলাশাসকের এ হেন পদক্ষেপের ফলে হাসপাতালটি এমজেপিজেএওয়াই'এর তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। অথচ হাসপাতালটির মালিক ডাঃ আর. ডি. শেংড়ে বলছেন যে তিনি নাকি কোভিডের দ্বিতীয় প্রকোপের সময় বয়সজনিত অসুবিধার কারণে নিজেই ওই তালিকাটির থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ভাজা মাছটি যেন উল্টে খেতে জানেন না এমন একটি হাবভাব করে তিনি জানালেন, "আমার তো ডায়াবেটিসও আছে।" তাঁর হাসপাতালের বিরুদ্ধে যে অসংখ্য অভিযোগগুলি রয়েছে, সেগুলি এককথায় উড়িয়েই দিতে চান তিনি।
বেসরকারি হাসপাতালগুলির মালিকবৃন্দ বলছেন যে এমজেপিজেএওয়াই যোজনাটি নাকি অর্থনৈতিকভাবে অবান্তর। "যে যে যোজনাগুলি চালু রয়েছে সেগুলিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে রূপায়িত করা উচিত। রাজ্য সরকার এই যোজনাটি শুরু করার [২০১২ সালে] পর থেকে আজ নয় বছর কেটে গেছে, অথচ আর্থিক অনুদানের মাত্রা রয়ে গেছে সেই আগেকার মতোই। ২০১২ থেকে কতটা মুদ্রাস্ফিতি ঘটেছে সেটা একবার ভাবুন তো! এই যোজনার খাতে হাসপাতাল যে টাকাটা হাতে পায় তার দুগুণেরও বেশি খরচা পড়ে যায় চিকিৎসার জন্যে," জানালেন নান্দেডে কর্মরত প্লাসটিক সার্জেন ডাঃ সঞ্জয় কদম। সদ্য গঠিত হাসপাতাল উন্নয়ন সমিতির একজন সদস্য তিনি। এই সমিতিটির একমাত্র কাজ এ রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রতিনিধিত্ব করা।
এমজেপিজেএওয়াই'র আওতায় থাকা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই যোজনায় তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলিকে মোট বেডসংখ্যার ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত রাখতে হয়। "হাসপাতালগুলির কোনও এক্তিয়ার নেই ২৫ শতাংশের বেশি রোগীদেরকে এই যোজনার সুযোগ সুবিধা দেওয়ার," বললেন ডাঃ কদম।
এমজেপিজেএওয়াই'র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (চিফ এক্জেকিউটিভ অফিসার) ডাঃ সুধাকর শিন্ডে আমাদের জানালেন, "একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীরা চরম অব্যবস্থা এবং বেআইনি কার্যকলাপের শিকার হয়েছেন। তাই আরও তৎপরতার সঙ্গে ব্যাপারটাকে খতিয়ে দেখছি আমরা।"
২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ৮১৩টি অভিযোগ এসে পৌঁছেছে মুম্বইয়ের এমজেপিজেএওয়াই'য়ের দফতরে – এর সিংহভাগটাই বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে। এখন অবধি ১৮৬টি অভিযোগের শুনানি হয়েছে এবং হাসপাতালগুলি মোট ১৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে রোগীদের।
মানবলোকের সচিব লোহিয়া আমাদের জানালেন যে প্রভাবশালী লোকজনের সহায়তা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলি নির্লজ্জভাবে বেআইনি কার্যকলাপে লিপ্তও হত না কিংবা রোগীর পরিবারকে এভাবে সর্বস্বান্তও করতে পারত না। "এই জন্যেই তো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষজন এদের বিরুদ্ধে কখনই কিছু করে উঠতে পারেন না।"
তবে যেদিন ভোররাতে রামলিঙ্গ সানাপ গলায় দড়ি দিয়েছিলেন, সেদিন কিন্তু তাঁর পরিবারের লোকজন আর চুপটি করে বসে থাকতে পারেননি, গনগনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের সামনে একটাই লক্ষ্য ছিল, দীপ হাসপাতালকে যেন তার পাপের ফল ভোগ করতে হয়। তাঁরা সদলবলে সেখানে পৌঁছে দেখলেন যে কোথাও কোনও ডাক্তারের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। রবি বললেন, "ওখানকার কর্মীরা আমাদের বলল যে মামার দেহটা নাকি ওরা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।"
তাঁর পরিবারের লোকজন সোজা পুলিশ প্রধানের কাছে গিয়ে হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন, কারণ ওভাবে টাকা না চাইলে রামলিঙ্গ আত্মহত্যা করতেন না কখনই। উপরন্তু তিনি যখন গলায় দড়ি দেন তখন ওই ওয়ার্ডের ত্রিসীমানাতেও হাসপাতালের কর্মীরা কেউ ছিলেন না, এটা চরম একটা গাফিলতি বই আর কিছু নয়।
অথচ সংবাদমাধ্যমকে দীপ হাসপাতাল এমন একটি বিবৃতি দেয় যেখানে বলা হয়েছে রামলিঙ্গ নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি অন্ধকার কোনায় গিয়ে গলায় দড়ি দিয়েছিলেন যেটি ছিল ওয়ার্ড সহকারীদের দৃষ্টির বাইরে। তার সঙ্গে ওই বিবৃতিটিতে এটাও লেখা রয়েছে যে: "এই যে বলা হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে বারবার টাকার জন্য তাগদা দিত, সেটি সর্বৈব মিথ্যা। তাঁদের থেকে মাত্র ১০,০০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। রামলিঙ্গের আত্মহত্যায় আমরা দুঃখিত। তবে তাঁর মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে পারাটা আমাদের সাধ্যে বাইরে ছিল।"
"হ্যাঁ, এটা ঠিক যে হাসপাতাল থেকে লিখিত যে বিল আমরা পেয়েছি সেটা ১০,০০০ টাকারই ছিল। কিন্তু হাতে হাতে ওরা আমাদের থেকে ১.৬ লাখ টাকা আদায় করেছে," প্রমোদ মোরালে জানালেন আমাদের।
রামলিঙ্গের মন-মেজাজ বেশ ভালোই ছিল, বললেন রাজুবাই। "আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন দুই আগে মানুষটা আমায় ফোন করেছিল জানেন? ডিম, পাঁঠার মাংস, কী কী খেয়েছে সব বলেছিল আমায়। বাচ্চাকাচ্চাদের খবরও নিচ্ছিল।" এর ঠিক পরপরই তাঁকে টাকার জন্য তাগদা দেয় হাসপাতাল থেকে। আতঙ্কে দুশ্চিন্তায় মাথা কাজ করছিল না তাঁর, শেষবারের মতো যখন স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন তখন এই কথাটাও জানিয়েছিলেন তিনি।
প্রমোদের কথায়, "পুলিশের বাবুরা বলল বটে যে তদন্ত করবে, কিন্তু কই? এখনও অবধি তো হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি, তার মানে কি গরিব মানুষের ঠিকঠাক চিকিৎসা পাওয়ার কোনও অধিকার নেই?"
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)