নাহ্, কিষনজি মোটেই লরিটার পিছনের দরজা বা ডিকির ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছিলেন না, লরির পেছনে নিজের মূল্যবান সময় খরচা করতে তাঁর বয়েই গেছিল। আর এমনিতেও লরিটার ভিতর কিস্যু ছিল না, উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ শহরের এই যে ছোট্টো বস্তিটা, এখানকারই কোনও একটা গুদামে ততক্ষণে মালপত্র সবই খালাস হয়ে গিয়েছিল।

কিষনজির বয়স ৭৫-এর কাছাকছি, ঘরে ভাজা চিনেবাদাম আর রকমারি ভাজাভুজি রাস্তায় রাস্তায় হেঁকে ফেরি করেন নিজের ঠেলাগাড়িটিতে। আমাদের বললেন, "বেমালুম ভুলে একটা জিনিস ঘরেই ফেলে এসেছিলাম বুঝলেন? সেটা আনতেই টুক করে বাড়ি গিয়েছিলাম একবার, ফিরে এসে দেখি এই কাণ্ড, আমার ঠেলাগাড়িটার আধখানার উপর এই প্রকাণ্ড লরিটা দিব্যি চেপে বসেছে!"

ব্যাপারটা আসলে হয়েছিল কি যে ড্রাইভার বাবাজি তার জগদ্দল লরিখানি দাঁড় করাতে গিয়ে পিছোচ্ছিল, আর ঠিক ওখানেই রাখা ছিল কিষনজির প্রাণভোমরা সম ঠেলাগাড়িটা। পিছোতে গিয়ে লরিচালক হয় ঠেলাটিকে ঠাহরই করেনি কিংবা হয়তো পাত্তাই দেয়নি! আর তারপর সেই ড্রাইভার আর খালাসি যথারীতি বেপাত্তা, ইয়ারদোস্তদের খোঁজে গেছে হয়তো, অথবা মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা দেখছে কোথাও। লরির পিছনে মাল খালাস করার যে ঢাউস দরজাটা রয়েছে, সেটা জেঁকে বসেছে ঠেলাগাড়িটার উপর, কিষনজি প্রাণপণে টেনেহিঁচড়ে নিজের ঠেলাটির উদ্ধারকার্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বেচারা মানুষটি চোখে ঠিকমতো দেখতে পান না, এমনতর গেরোয় যে কেমনভাবে পড়লেন সেটাই মিটিমিটি তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলেন।

খালাসি সমেত লরির ড্রাইভার যে কোথায় উবে গেল তা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিল না আমাদের কেউই। তারা যে কোন চুলোয়, কী-ই বা তাদের নামধাম, এ ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ জানতেন না কিষনজিও। তবে তাদের বংশপরিচয় সম্বন্ধে নির্ঘাৎ টনটনে জ্ঞান ছিল বৃদ্ধের, তবেই না ড্রাইভাবের গুষ্টিকে তুলোধুনো করে বিশুদ্ধ গালাগালিতে সম্বর্ধনা জানাচ্ছিলেন! বয়েস হয়েছে বটে, কিন্তু তাতে কী? তাঁর শব্দভাণ্ডারের গরলধারা কিন্তু একবর্ণও ফিকে হয়ে যায়নি।

ঠেলাগাড়ি করে যে শতসহস্র ছোটো ছোটো বিক্রেতা প্রতিদিন হরেক জিনিস ফেরি করে বেড়ান, কিষনজি তাঁদেরই একজন। এরকম কতশত কিষনজি যে রয়েছেন আমাদের এই হতভাগ্য দেশের কোনাঘুপচিতে, তার সাকিন-হদিস আর কে-ই বা রাখে? এটুকু হলফ করে বলতে পারি যে ১৯৯৮ সালে যখন এই ফটোটি তুলেছিলাম, তখন অন্তত এই পরিসংখ্যানটি কারও কাছে ছিল না। "শরীরের যা দশা, তাতে বেশিদূর এই ঠেলা নিয়ে যেতে পারি না, তাই এই ৩-৪টে বস্তির মধ্যেই ঘুরিফিরি আর কি," বলেছিলেন বৃদ্ধ বিক্রেতা। তাঁর কথায়, "সারাদিনে ৮০টা টাকা রোজগার থাকলেই বুঝব যে দিনটা আমার খুবই পয়া ছিল।"

বিচিত্র সেই গেরোর থেকে তাঁর ঠেলাগাড়িটাকে মুক্ত করতে আমরা সবাই হাত লাগালাম। তারপর দেখলাম কেমন করে মানুষটা দিগন্তের পানে হারিয়ে যাচ্ছেন, হয়তো বা তাঁর মনে তখন ছিল সেই ৮০ টাকার পয়মন্ত দিনের অদম্য হাতছানি।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

پی سائی ناتھ ’پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا‘ کے بانی ایڈیٹر ہیں۔ وہ کئی دہائیوں تک دیہی ہندوستان کے رپورٹر رہے اور Everybody Loves a Good Drought اور The Last Heroes: Foot Soldiers of Indian Freedom کے مصنف ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز پی۔ سائی ناتھ
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کے کانٹینٹ مینیجر ہیں۔ انہوں نے کولکاتا کی جادوپور یونیورسٹی سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک کثیر لسانی شاعر، ترجمہ نگار، فن کے ناقد اور سماجی کارکن ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra