"খুব ধকল হয়, কিন্তু না খেটে উপায়ও তো নেই, দিন নেই রাত নেই হেঁটেই চলেছি যাতে দুটো পয়সা আসে হাতে, পরিবারটা ভেসে যাবে নয়তো..." মাছ বেচতে প্রতিদিন নেই নেই করেও ১৩০ কিমি পথ পাড়ি দেন সেন্থিল কুমারী, কোভিড লকডাউনের ফলে কেমনভাবে থমকে গেছে মাছ ধরা-বেচার দুনিয়া, আর তার ফলে জীবন কতখানি দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁর, সেটাই বুঝিয়ে বলছিলেন। "হুহু করে বেড়ে চলেছে দেনার ভার। মেয়ে যে অনলাইন ক্লাস করবে, তার জন্য একখান স্মার্টফোনও কিনে দিতে পারছি না। কেমন করে বইব এ বোঝা?" অসহায় স্বারে বললেন তিনি।

সেন্থিল কুমারী থাকেন তামিলনাডুর মায়িলাডুথুরাই জেলার বনগিরি নামক একটি জেলে অধ্যুষিত গ্রামে। প্রায় ৪০০ জন মহিলা মাছ বেচে পেট চালান এ গ্রামে, ভিন্ন ভিন্ন বয়স প্রত্যেকের। ১,১০০ জন সদস্য আছে এমন একটি মৎস্যজীবী মহিলা সমবায় সমিতির খাতায় নাম রয়েছে তাঁদের। একেকজনের মাছ বেচার ধরন একেক রকমের: কেউ কেউ ঝুড়ি-ভরা মাছ মাথায় তুলে ফেরি করেন গ্রামের অলিতে-গলিতে, কেউ অটো, ভ্যান বা বাসে চড়ে পাড়ি দেন পড়শি গ্রামে, কেউ আবার বাসে চেপে জেলা থেকে জেলান্তরের মাছ-বাজারে নিয়ে যান তাঁদের পসরা।

সেন্থিল কুমারীর মতো এঁদের বেশিরভাগই নিজের রোজগারে সংসার টানেন। এটাসেটা হরেক সমস্যা তো ছিলই, তার উপর করাল রূপে এসে হাজির হল অতিমারি। নুন-পান্তার জোগান দিতেই নাভিশ্বাস উঠে গেল, বাধ্য হলেন মহাজন বা স্বল্প ঋণ প্রকল্পের থেকে ধার নিতে। আর তারপরেই দেনা নামক মারণচক্রের ফাঁদে আটকে গেল জীবন – আসলটুকু যে শোধ দেবেন, সুদের ধাক্কায় সেটা মরীচিকা হয়েই রয়ে গেল। অমুকের থেকে টাকা ধার করে তমুকের টাকা শোধ করছেন, আর দাবানলের মতো বেড়ে চলেছে সুদের হার। "সময়মতো শোধ করতে পারছি না, এদিকে সুদটা বেড়েই চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে," জানালেন ৪৩ বছর বয়সী মাছ-বিক্রেতা অমুথা।

মহিলা মৎস্য-বিক্রেতাদের পুঁজি তথা আর্থিক চাহিদা সম্পর্কে রাজ্য প্রশাসনের নীতিগত কোনও হেলদোল নেই। পুরুষদের মধ্যে বেড়ে চলা বেকারত্বের ছাপ এসে পড়েছে নারীর উপর, দিনকে দিনকে বেড়েই চলেছে মহিলা মৎস্য-বিক্রেতার সংখ্যা। এমনকি প্রথাগতভাবে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বাইরেও এ চিত্র বিদ্যমান। এর ফলে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে মাছের দাম ও পরিবহণের খরচ, কমে এসেছে মুনাফা। এককালে যেখানে মাছ বেচে দিন গেলে মোট ২০০-৩০০ টাকা লাভ হত, আজ সেখানে ১০০ টাকার বেশি জোটে না। একেক সময় তো রীতিমতো লোকসানের মুখ দেখতে হয় তাঁদের।

হ্যাঁ, জীবনটা বড্ডো কষ্টকর, তবে দিনের পর দিন সেই একই আঁশটে ঘানি ঘুরিয়ে চলেছেন তাঁরা। দিনের আলো ফোটার আগেই গিয়ে হাজির হও বন্দরে, মাছ কেনো, আর মুখ বুজে হাজারটা অত্যাচার সয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করো যাতে সেগুলো বেচে দুটো পয়সা আসে ঘরে।

ভিডিও দেখুন: বনগিরির পরিস্থিতি: 'মাছ বেচতে বেরোতেই পারিনি'

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Nitya Rao

نتیا راؤ، برطانیہ کے ناروِچ میں واقع یونیورسٹی آف ایسٹ اینگلیا میں جینڈر اینڈ ڈیولپمنٹ کی پروفیسر ہیں۔ وہ خواتین کے حقوق، روزگار، اور تعلیم کے شعبے میں محقق، ٹیچر، اور کارکن کے طور پر تین دہائیوں سے زیادہ عرصے سے بڑے پیمانے پر کام کرتی رہی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Nitya Rao
Alessandra Silver

Alessandra Silver is an Italian-born filmmaker based in Auroville, Puducherry, who has received several awards for her film production and photo reportage in Africa.

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Alessandra Silver
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کے کانٹینٹ مینیجر ہیں۔ انہوں نے کولکاتا کی جادوپور یونیورسٹی سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک کثیر لسانی شاعر، ترجمہ نگار، فن کے ناقد اور سماجی کارکن ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra