দক্ষিণ-পূর্ব উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট জেলা, ভারকুর্রা গ্রামে একা একা বাস করেন ভুরি কাল্লু। তাঁর ঘর, উঠোন, উনুন, সবই মাটি দিয়ে বানানো। ব্যতিক্রম বলতে ইটে গাঁথা তিন দেওয়ালের একটি ছাদহীন ন্যাড়া কাঠামো। পরে জেনেছিলাম, এটা নাকি অসমাপ্ত একখান শৌচাগার।

উনুনের উপর থেকে ঢাকাটা সরিয়ে দিলেন ভুরি – উনুন বলতে বেশ কয়েকটা মুখওয়ালা এক গর্ত। রুজিরুটির সহায় বলতে এটিই, তাই পুরোনো বস্তা থেকে কেটে নেওয়া পরতের পর পরত প্লাস্টিক চাপিয়ে রাখেন উনুনের উপর। "বিয়েশাদির মরসুম লাগলে এটার আগুনেই ছোলা আর গম ঝলসে নিই আমি। এছাড়াও বছর গেলে ১,৮০০ টাকা ভাতা দেয় সরকার থেকে। সব মিলিয়ে কোনওমতে টেনেটুনে চালিয়ে দিই।"

চাষবাস করা বা ইজারায় দেওয়ার মতো তাঁর কোনও জমিজমা আছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম। মাথা নেড়ে জানালেন: "বিঘা দুয়েক ছিল বটে, তবে সেটা বহুযুগ আগের কথা। ছেলেটার ওষুধ কিনতে সব বেচে দিয়েছিলাম।" সে ছেলে আজ প্রাপ্তবয়স্ক, কাজ করেন হরিয়ানার সোনপতে। প্রায় দশ বছর হতে চলল ভুরি তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন।

PHOTO • Radha Sarkar
PHOTO • Radha Sarkar

অসমাপ্ত সেই ন্যাড়া ছাদহীন তিন দেওয়ালের কাঠামোর ভিতর জ্বালানির কাঠ মজুত করে রাখেন ভুরি: 'আর কিছু না হোক, খানিক কাজে তো লাগছে'

কিন্তু এই ইটের দেওয়ালগুলোর রহস্যটা কী শুনি? "এগুলো তো কয়েকবছর আগে সরকার থেকে বানিয়ে দিয়েছিল। কি একটা যেন যোজনা ছিল..." মনে হয় নির্মল ভারতের অভিযানের কথা বলতে চাইছিলেন তিনি, অর্থাৎ গ্রামভারত জুড়ে শৌচাগার বানানোর যে প্রকল্পটি শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। "গাঁথতে শুরু করেছিল বটে, তবে আর শেষ করল না।" কী শেষ করল না? "শুধু এই দেওয়ালগুলোই খাড়া করে দিল। ভিতরে কোনও গর্ত-টর্ত নেই, কিসুই খোঁড়াখুঁড়ি করেনি।" অর্থাৎ মলমূত্র ত্যাগ করার কোনও জায়গাই নেই। টের পেলাম, শৌচাগারের তিন-চতুর্থাংশ জুটেছে কেবল, আসল জিনিসটাই বাদ পড়ে গেছে। "জ্বালানির কাঠকুট মজুত করে রাখি ওখানে। আর কিছু না হোক, খানিক কাজে তো লাগছে।"

প্রকৃতির ডাক পেলে কোথায় যান তিনি, সওয়াল করলাম। গ্রাম ছাড়িয়ে, আঙুল তুলে দেখালেন ভুরি। "বাইরে, ওই মাঠেঘাটে।" তাঁর মতো একজন বয়স্ক মানুষের অসুবিধা হয় না? "আলবাৎ হয়। বেজায় অসুবিধে হয়, বিশেষ করে রাতবিরেতে চোট-আঘাত পেলে কে আমায় সাহায্য করবে বলুন তো?"

ছোট্ট একখান ধাতব ফ্রেমের খাট রয়েছে বাড়ির ভিতর, ইশারায় দেখালেন ভুরি, একজনের বেশি আঁটবে না তাতে – শোওয়ার ঘর বলতে এটিই। "বর্ষা এলে হামেশাই জল জমে যায় কামরার ভিতর। বৃষ্টির পানি আর গাঁয়ের খোলা নর্দমার জল, হুহু করে ঢুকে পড়ে সব।" তখন কোথায় ঘুমোন তিনি, না জিজ্ঞেস করে পারলাম না। হেসে বললেন, "কোথায় আবার? এইখানেই, জল থইথই ঘরের মাঝে।"

অনুবাদ : জশুয়া বোধিনেত্র ( শুভঙ্কর দাস )

Radha Sarkar

Radha Sarkar is pursuing an MSc in Comparative Politics at the London School of Economics. She is interested in issues of social justice, dispossession and poverty in India.

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Radha Sarkar
Translator : Joshua Bodhinetra

جوشوا بودھی نیتر پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے ہندوستانی زبانوں کے پروگرام، پاری بھاشا کے کانٹینٹ مینیجر ہیں۔ انہوں نے کولکاتا کی جادوپور یونیورسٹی سے تقابلی ادب میں ایم فل کیا ہے۔ وہ ایک کثیر لسانی شاعر، ترجمہ نگار، فن کے ناقد اور سماجی کارکن ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Joshua Bodhinetra