নোটবই সরিয়ে কানদুটো খাড়া করে রাখলাম, খোলা ছিল হৃদয়ের খিড়কিটাও। একদল যৌনকর্মীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম দিল্লিতে, ওঁদের প্রত্যেকটা কথা, প্রত্যেকটা দীর্ঘশ্বাস তুলে রাখছিলাম কালো মলাটের ডায়েরিটায়। অতিমারি চলছিল বটে, তবে শত সাবধানতা টপকে শেষমেশ একে একে খুলে গেল মুখোশগুলো। ওঁরা খুলেছিলেন জীবনের খুঁটিনাটি বোঝাতে , আর ওঁদের বিশ্বাস অর্জন করতে খুলেছিলাম আমি – ঘামঝরা সে জবানির প্রতি আমি আদৌ সংবেদনশীল কিনা, এটা যে বোঝানো যেত না নইলে।
খসখস করে এই যে লিখে চলেছি না? এ সাঁকোও বটে, আবার দূরত্বের মাইল-ফলকও।
কথাটথা সব হয়ে গেলে এই সাক্ষাৎকারটির বন্দোবস্ত যিনি করেছিলেন, তিনি অনুরোধ করে বসলেন যে ফেরার পথে আমি যেন ওঁদের একজনকে বাড়ি ছেড়ে দিই। সেই যৌনকর্মীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে বলেছিলেন যে উনি নাকি আমার বাড়ির কাছেই থাকেন। ইংরেজিতে তাঁর নামের মানে সীমানা। একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। যে দলটির সঙ্গে আজ কথা বলেছি, ইনি কিন্তু তার মধ্যে ছিলেন না। চুক্তি পাকা করার আগে হবু খদ্দেররা যৌনকর্মীর মুখ দেখতে চায়, আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে এসব কেমন ভাবে হয় সবকিছুই খুলে বললেন তিনি। আন্তরিক ভাবে জানতে চাইলাম তাঁর কাজের ইতিবৃত্ত। হৃদয় উজাড় করে দিয়েছিলেন মানুষটি। কথায় কথায় উঠে এল প্রেমের প্রসঙ্গ। গাড়ির চাকায় তখন শামুকের গতি। বড্ডো মায়াময় ছিল চোখদুটি তাঁর। হৃদয় বোধহয় এভাবেই ভাঙে।
হাত দুটি স্টিয়ারিংয়ে তখন, লেখালেখির কোনও প্রশ্নই উঠছে না। মোবাইল খুলে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের ছবি দেখালেন, আজও সেগুলো মুছে ফেলতে পারেননি। প্রতিবেদনের পাতায় পাতায় এতকিছু গাঁথতে পারিনি – কিছু রেখা এমনও আছে যা উল্লঙ্ঘন করা পাপ। অভব্যতাও বটে। শেষে তাই ছন্দেই বাঁধলাম বিষাদের সেই গাথা...
কাজলে কাজল কাটে আলোনা দু'চোখ
বন্ধ দরোজাখানি চোখে
চোখে রাখে
কালসিটে সাদা মুখ দূর
হতবাকে।
বিদূরে ঘোলাটে ভয়
সাহসের বুকে
খসখসে ন্যাংটা সে
কাগজের সুখে।
ধ্যাবড়াবে নাকো
কালি...
বোবা সে সড়ক খালি...
উলঙ্গ রঙেদের দুনিয়া
তোমার
যতনে খুলিয়া দিও
খিড়কি দুয়ার।
অল্প বয়েসী বেওয়া
জানো কারে কয়?
মিলিটারি সজনী গো বোঝে
না প্রণয়।
গুঙা সে আশায় বাঁধে
প্রেমিক নাগর,
সহজ দুনিয়া বাঁধা
ঘুমের ভিতর,
স্বপ্ন বেচিয়া খেলো
আঁঝলা নটীর...
জিস্'ম টাকার খেলা
সোঁদা অশরীর।
জ্যান্ত কবর দিলে কেমন
সে লাগে?
ডিজিটাল মৌচাকে
নাম-কাটা দাগে।
"রুখা শুখা
আধপেটা
বাচ্চা রয়েছে
ক'টা,"
বাঁধাবুলি মুখে তোর,
হয়েছে রে ঢের...
পিরিতি গাঁজার খুরি,
নামচা রোজের।
সোনার নোলকে ডোবে
আঁশটে আদিত্য
কাজলে কাজল কেটে
চোখদুটি চাইতো।
সস্তার কোল্ড ক্রিম,
ক্লান্ত কামনা হায়
আলোনা শরীর খুঁজি
দরকচা বিছানায়।
ধুনকি ধূলায় ঢাকা...
বেবাক রজনী মাখা...
অলিগলি মেহনতে দিন
কাটে আপোসে
লজ্জা ঘনায় হেথা
মুখপোড়া পাপোশে।
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)