তুলুনাড়ু অঞ্চলটি আরবসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এখানকার আন্তঃমহাসাগরীয় বাণিজ্যের ইতিহাস সুপ্রাচীন। বহু শতাব্দী পার করেছে এই এলাকার ভূত (আত্মা) পুজোর প্রথা।
“ভূত পুজোয় বাজনা বাজিয়েই আমার পেট চলে,” জানালেন সৈয়দ নাসির। তিনি তুলুনাড়ুর একটি বায়েনদলের সদস্য, এই দলের প্রত্যেকেই মুসলিম সমাজের মানুষ। “পুজোআর্চায় সংগীত পরিবেশন করতে গিয়ে ঝুটঝামেলায় আজ অবধি পড়তে হয়নি।”
বিবিধ ধর্ম, সম্প্রদায় ও সমাজের মানুষকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে এই ভূত পুজো, একথা জানালেন মণিপাল অ্যাকাডেমি অফ হায়ার এডুকেশনের সহায়ক গবেষক নীতেশ আঞ্চন। তাঁর কথায়: “বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে বসত গড়ার পর ধীরে ধীরে তুলুনাড়ুর স্বতন্ত্র আচার-অনুষ্ঠানে মিলেমিশে এক হয়ে এমন নজির তৈরি হয়।”
আজ চার প্রজন্ম ধরে ভূত পুজোয় নাদস্বরম তথা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আসছে নাসিরের পরিবার। এই সাংগীতিক ঐতিহ্য নিজের বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি, কিন্তু তাঁর পরে এই উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউই থাকবে না তাঁর পরিবারে। পঞ্চাশের কোঠায় পা রাখা এই ওস্তাদ বাজনদারের কথায়, “এই ধরনের গানবাজনার প্রতি উঠতি প্রজন্মের ছিটেফোঁটাও আগ্রহ নেই। অবশ্য পরিস্থিতিও আর আগের মতো নেই, বর্তমান অবস্থাটা তো দিনকে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
“ভূত সকল হলেন তুলুনাড়ুবাসীদের দেবদেবী,” বললেন আঞ্চন। এই ভূত দেবতারা নিছকই উপাসনার পাত্র নন, তাঁরা এখানকার লোকজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশও। ভূত পরব ঘিরে এই পরিবেশনায় নারী শিল্পীদের অনুপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তবে ভূত পুজোর সময় উদযাপিত কোলা নামের একটি আচারে নারী চরিত্রের দেখা মিললেও তাদের ভূমিকায় কিন্তু পুরুষেরাই অভিনয় করেন।
তুলুনাড়ুর ভূত পুজোর বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে সদলবলে সংগীত পরিবেশনরত নাসিরের দেখা মিলবে এই তথ্যচিত্রে।
প্রচ্ছদচিত্র: গোবিন্দ রাধেশ নায়ার
প্রতিবেদনটি মৃণালিনী মুখার্জী ফাউন্ডেশন (এমএমএফ) প্রদত্ত একটি ফেলোশিপের সহায়তায় লিখিত।
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র