পারি'র এই প্রতিবেদনটি পরিবেশ সংক্রান্ত সাংবাদিকতা বিভাগে ২০১৯ সালের রামনাথ গোয়েঙ্কা পুরস্কার প্রাপ্ত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি সিরিজের অংশ।
কীভাবে ও কেন আপনার গোটা এক একর জমির জোয়ার রাতারাতি সাফ হয়ে যায়? “দুবছরে প্রথমবার মরশুমের সময়ে এক সপ্তাহের জন্য গ্রামের বাইরে গিয়েছিলাম। সেই সময়ের মধ্যে ওরা সব গিলে নেয়,” বলেন আনন্দ সালভি। ‘ওরা’ হল গাউরের ( বস গাউরুস , কখনও কখনও ইন্ডিয়ান বাইসনও বলা হয়ে থাকে) পাল - পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গবাদি পশু। পুরুষরা কাঁধে প্রায় ৬ ফুটের বেশ খানিকটা বেশি হতে পারে এবং ওজন ৫০০ থেকে ১০০০ কিলোগ্রাম।
মহারাষ্ট্রের কোলাপুর জেলার রাধানগরী অভয়ারণ্যের মোটের ওপর শান্তশিষ্ট বাসিন্দা, এই বৃহদাকার গবাদি পশুরা হাইওয়ের ওপর বেরিয়ে আসছে আর হানা দিচ্ছে আসপাশের খেতখামারগুলোতে।
“আমার খেত কেউ পাহারা দিচ্ছিল না,” দুঃখের সঙ্গে বললেন রকশি গ্রামের সালভি। “ভাগ্য ভাল আমি আমার এক একরে ফলানো আখটা (প্রায় ৮০ টন আখ) অন্তত বাঁচাতে পেরেছি।” ১,০০০ কিলোর দৈত্যাকৃতি প্রাণীর থেকে কোনোকিছুকেই বা ‘রক্ষা’ করবেন কীভাবে? অবশ্যই বাজি ফাটিয়ে!
দুবছর আগে, সালভি প্রতি রাতে খেতেই ঘুমোতে শুরু করেন। “আমরা রোজ রাত ৮টায় আসি আর ভোর ৪টেয় বেরিয়ে যাই, সব গাওয়া (গাউরের আঞ্চলিক নাম) চলে যাওয়ার পর,” তিনি বলেন। “আর রাতে আমরা খেতে বাজি ফাটাই।” তিনি বলেন এতে তাঁর পাঁচ একর জমিতে ঢুকতে ভয় পায় বনগরু। তাঁর অন্য অনেক প্রতিবেশীও একই কাজ করেন। প্রায় দুবছর ধরে, পানহালা তালুকের রকশি গ্রামের বাসিন্দাদের শস্য ধ্বংস করছে বনগরুর পাল।
“মরশুমের সময়ে প্রতিদিন আমরা প্রায় ৫০ টাকা করে খরচ করি বাজি কিনতে,” বললেন সালভির স্ত্রী সুনীতি। চাষের খরচে একটা সম্পূর্ণ নতুন খরচ যোগ হয় এতে। “তাও ঝুঁকি রয়ে যায়,” তিনি বলেন, “চাষিরা রাতে খেতে বসে থাকেন।” সেই সময়ে অন্যান্য সাপখোপ ইত্যাদি বন্যপ্রাণীরা মাঠে ঘুরে বেরায়।
এখানকার মানুষ মনে করছেন বনগরুরা শিগগির বুঝে যাবে যে বাজিতে তাদের কোনও ক্ষতি হয় না। তাই রাধানগরী তালুকের কিছু চাষি বৈদ্যুতিক বেড়া লাগাতে শুরু করেছেন।“কিন্তু এগুলোতেও ওরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে,” বললেন সম্রাট কেরকার, রাধানগরীর বন্যপ্রাণীভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন বাইসন নেচার ক্লাবের সহপ্রতিষ্ঠাতা। “আমরা দেখেছি গাউররা আস্তে আস্তে তাদের পা বা ক্ষুর বেড়ার ওপর রেখে পরখ করে দেখে বিদ্যুতের আঘাত টের পাচ্ছে কি না। আগে, ওরা মানুষকে ভয় পেত, কিন্তু এখন আমাদের দেখে ওরা আর মোটেই সহজে পালায় না।”
“আমরা গাওয়া -দের দোষ দিই না,” বলেন সুনীতা। “এটা বন দফতরের ভুল। বনকে যদি ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা না হয়, পশুরা বেরিয়ে আসবেই।”
অভয়ারণ্য থেকে দলে দলে গাউর বেরিয়ে আসছে - জল ও খাবারের খোঁজে। অন্যান্য জিনিসের মধ্যে তারা খোঁজে কারভি পাতা ( স্ট্রোবিলানথেস ক্যালোসা ), যা শুকিয়ে যাওয়া জঙ্গলে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য জলের উত্সগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে – অভয়ারণ্যের পুকুরসহ। বনরক্ষী ও এলাকার গবেষকদের মতে, অভয়ারণ্যের তৃণভূমি কমে আসার কারণেও বনগরুরা বেরিয়ে আসছে।
সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড-এর তথ্য থেকে দেখা যায় ২০০৪ সালে রাধানগরী তালুকে বৃষ্টি হয়েছে ৩,৫১০ মিমি., ২০০৮ এ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩,৬৮৪ মিমি. ও ২০১২ তে ৩,০৭২ মিমি.। কিন্তু ২০১৮ সালে বৃষ্টির পরিমাণ ২,১২০ মিমি.- অর্থাৎ বৃষ্টি এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গেছে। বস্তুত, গোটা কোলাপুর জেলা জুড়ে গত এক দশক বা তার বেশি সময়ে ধরে বৃষ্টিপাত ভীষণ রকম ওঠানামা করেছে – মহারাষ্ট্রের অন্যান্য অনেক এলাকার মতোই।
রাজু পাতিল, ৫০ বছর বয়সী মেষপালক, এক দশক আগে প্রথমবার দেখেন ১২টি গাউরের একটি দল দেবগড়-নিপানী রাজ্য সড়কের ওপর উঠে এসেছে। তিনি তাঁর গ্রাম রাধানগরীর প্রান্তঘেঁষা অভয়ারণ্যের কথা শুনেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনওদিন গাওয়া দেখেননি।
“শুধুমাত্র গত দশকেই আমি ওদের বেরিয়ে আসতে দেখেছি,” তিনি বলেন। তারপর থেকে, দৈত্যাকার গবাদির রাস্তা পেরোনো রাধানগরী গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। গ্রামবাসীরা মোবাইল ফোনে এই পশুদের ভিডিও তুলেছেন। কোলাপুর জেলার রাধানগরী, সাহুওয়াড়ি, করভির ও পানহলা তালুকের খেতগুলোর আখ, শালু (জোয়ার), ভুট্টা ও ধান খাওয়ার জন্য ঢুকতে শুরু করেছে গাউর।
এবং সেইসঙ্গে জল পান করতে – যা জঙ্গলে ক্রমশই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।
রাধানগরী তালুকের গ্রামবাসীরা জোর দিয়ে বলেন, গত ১০-১৫ বছরেই তারা বনগরুকে জঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখেছেন। পানহলা তালুকে এটি আরও পরে শুরু হয়। রকশি গ্রামের বছর ৪২-এর যুবরাজ নিরুখের খেত জঙ্গলের কাছেই, তিনি বলেন, “আমরা গত দুইবছরেই শুধু গাওয়া দেখেছি। আগে বুনো শুয়োর আমাদের ফসলের ওপর হামলা চালাত।” জানুয়ারি থেকে ১২ টি বাইসনের একটি দল তিনবার তাঁর ০.৭৫ একরের জমিটিতে হানা দিয়েছে। “আমার অন্ততপক্ষে ৪ ক্যুইন্টাল শালু নষ্ট হয়েছে আর এখন এই বর্ষাকালে ধান চাষ করতে ভয় পাচ্ছি,” তিনি বলেন।
রাধানগরী তালুকের বাসিন্দারা তাঁদের মোবাইলে অভয়ারণ্য থেকে গাউরদের বেরিয়ে রাস্তা ও হাইওয়ে পেরোনোর ভিডিও তুলেছেন
“ঋতুচক্র সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে,” রাধানগরীর ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার প্রশান্ত তেন্ডুলকর বলেন। “আগে, মার্চ-এপ্রিলে অন্তত একবার বৃষ্টি হতই, ফলে পুকুরগুলো ভরে যেত। আমরা যদি প্রকৃতির বিপক্ষে যাই, কাকে আর দোষ দেব? ৫০-৬০ বছর আগে জঙ্গল ছিল, তারপর পশুচারণের জমি, তারপরে খেত এবং তারপর গ্রাম। এখন মানুষ এই সব জমিতে থাকতে শুরু করছে ও ধীরে ধীরে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই জঙ্গল ও গ্রামের মাঝখানের জমি দখল হচ্ছে।”
আরও ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির ‘দখলদারি’-ও হয়েছে – বক্সাইট উত্তোলন। কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বক্সাইট উত্তোলন করা হয়েছে।
“খোলামুখ বক্সাইট খনি রাধানগরীকে বছরের পর বছর ধরে বিধ্বস্ত করছে,” স্যাংচুয়ারি এশিয়া -এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বিট্টু শেহগাল বলেন। “বহু প্রতিরোধ হয়েছিল, কিন্তু ইন্ডাল (পরবর্তীতে হিন্ডালকো-এর সাথে যুক্ত হয়) -এর মতো খনি কোম্পানিগুলোর ক্ষমতার অলিন্দে যোগাযোগ অনেক বেশি, প্রতিবাদীদের তুলনায়। কোম্পানিগুলোই সরকারি দফতরের নীতি তৈরি করে। পশুচারণভূমি, জলের উত্স এই সব কিছুই খনিজ উত্তোলনের ফলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
বস্তুত, ১৯৯৮ সাল থেকে, বম্বে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট উভয়ই এই ধরনের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করেছে, একাধিকবার। সাম্প্রতিককালে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে, এই বিষয়ে রাজ্যের ‘সম্পূর্ণরূপে অবজ্ঞা’-এর ঘটনায় মহারাষ্ট্র সরকারে মুখ্য সচিবকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
২০১২ সালে কোলাপুরের শিবাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি গবেষণা দেখায় খনিজ উত্তোলনের একটি লাগাতার ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে। তাঁদের গবেষণা পত্র , স্টাডিজ্ অন দ্য ইম্প্যাক্ট অফ বক্সাইট মাইনিং অ্যাক্টিভিটিস্ অন এনভায়রনমেন্ট ইন কোলাপুর ডিস্ট্রিক্ট , দেখায় “বৈধ ও অবৈধ খনিজ উত্তোলন এই এলাকায় পরিবেশের গুরুতর ক্ষতি করতে শুরু করেছে। যদিও শুরুর দিকে খনিগুলো সীমিত কিছু বাসিন্দার চাকরির সুযোগ করে দেয় ও সরকারের আর্থিক লাভ হয়, তা খুবই ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার। কিন্তু জমির পরিবর্তিত ব্যবহার স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের যে ক্ষতি করে তা চিরস্থায়ী।”
রাধানগরী থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরও একটি অভয়ারণ্য - দাজিপুর। ১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগের আগে অবধি এই দুইটি মিলে একটিই অভয়ারণ্য ছিল, তারপর এটি ভাগ হয়ে যায়। দুটি মিলে মোট এলাকা ৩৫১.১৬ বর্গ কিলোমিটার। দাজিপুরের ল্যাটেরাইট মালভূমি, সভরাই সাদাতে একটি হ্রদ রয়েছে, যা এই এলাকার পশু ও পাখিদের খাদ্য ও জলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স। কিন্তু এই বছরের মে মাসের মধ্যে হ্রদের বেশিরভাগটাই শুকিয়ে গেছে।
এছাড়াও, “এই অঞ্চলে ব্যাপক হারে অরণ্যনিধন হয়েছে গত দশকে। এটি [জলবায়ু] চক্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে,” বলেন অমিত সৈয়দ, যিনি একজন বন্যপ্রাণী গবেষক ও ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটি-এর সভাপতি।
সভরাই সাদা একটি স্থান যেখানে বন দফতর থেকে পশুদের জন্য কৃত্রিম ‘সল্ট লিকস্’ তৈরি করেছে। সল্ট বা খনিজ লিক হল যেখান থেকে পশুরা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে। দাজিপুর ও রাধানগরীর কয়েকটি জায়গায় নুন ও কোন্দা (তুষ/ভুসি) রাখা হয়েছে।
সল্ট লিকের থেকে কম সদাশয় একটি মনুষ্যসৃষ্ট বিষয় হল আখ চাষের প্রসার। কোলাপুর জেলার কয়েকটি তালুকে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় ফলে এই এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এর প্রসার খানিক বিপজ্জনক। রাজ্য সুগার কমিশনারেট ও গেজেটিয়ারস্-এর তথ্য দেখাচ্ছে ১৯৭১-৭২ সালে কোলাপুরে ৪০,০০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়। গত বছর ২০১৮-১৯ সালে আখ চাষ হয়েছে ১৫৫,০০০ হেক্টর জমিতে – অর্থাৎ ২৮৭ শতাংশ বৃদ্ধি। (মহারাষ্ট্রে প্রতি একর জমিতে আখ চাষ করতে জল লাগে ১৮-২০ মিলিয়ন লিটার।)
এই সবকিছুরই এলাকার জমি, জল, জঙ্গল, উদ্ভিদ, প্রাণী, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর একটি অনিবার্য প্রভাব রয়েছে। এই অভয়ারণ্য বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে দক্ষিণের আধা চিরহরিৎ, দক্ষিণের আর্দ্র মিশ্র পর্ণমোচী ও দক্ষিণের চিরহরিৎ বন। এই সব পরিবর্তনের প্রভাব অভয়ারণ্য ছাড়িয়ে আরও দূরেও ছড়িয়ে পড়ে, এ অঞ্চলের অধিবাসীদের ওপর এর অত্যন্ত গভীর প্রভাব রয়েছে। মানুষের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু গাউরের পাল নয়।
মনে করা হয়, কয়েক দশক আগে রাধানগরী অভয়ারণ্যে এই অসাধারণ প্রাণীটির সংখ্যা ছিল ১,০০০ এর ওপর, মহারাষ্ট্রের বন দফতরের হিসেব অনুযায়ী এখন এখানে রয়েছে ৫০০টি। বন আধিকারিক প্রশান্ত তেন্ডুলকরের ব্যক্তিগত হিসেব বলছে ৭০০। ভারতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭২ অনুসারে, গাউর তফশিল ১ এর আওতাভুক্ত, যা তালিকাভুক্ত পশুদের সম্পূর্ণ সংরক্ষণের কথা বলে। এই পশুদের আক্রমণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের ‘রেড লিস্ট’ অর্থাৎ বিপন্ন প্রাণীর তালিকাতে রয়েছে গাউরের নাম।
গাউররা এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, কিন্তু: “ওদের [বন দফতর] কাছে তাদের এই গমন সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই,” বলেন অমিত সৈয়দ। “ওরা কোথায় যাচ্ছে? কোন করিডর ওরা ব্যবহার করছে? কী ধরনের দলে যাচ্ছে? একেকটি দলে কটি করে বনগরু আছে? ওরা যদি দলগুলোর ওপর নজরদারি চালায় তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না। এই করিডরগুলোতে জলাশয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।”
ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের তথ্য দেখায় জুন, ২০১৪ সালে কোলাপুর জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ সেই মাসের স্বাভাবিক গড়ের থেকে ৬৪ শতাংশ কম। ২০১৬ সালে ৩৯ শতাংশ কম। ২০১৮ সালে তা স্বাভাবিক গড়ের থেকে এক শতাংশ বেশি। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে সেই মাসের স্বাভাবিক গড়ের থেকে ৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। পরের বছর জুলাইয়ে ৭৬ শতাংশ কম বৃষ্টি। এবছর, ১ জুন থেকে ১০ জুলাই - এই সময়কালের মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে গড়ের থেকে ২১ শতাংশ বেশি। কিন্তু যেমন অনেকেই বলেছেন, এই বছর এপ্রিল ও মে মাসে প্রাক-বর্ষা বৃষ্টি হয়নি। “গত দশকে বৃষ্টিপাতের ধাঁচ খুব অস্থির থেকেছে,” কেরকার বলেন। এর ফলে এই বনাঞ্চলের বারোমাসব্যাপী জলের উত্সগুলো ক্রমেই কমে এসেছে।
এপ্রিল ও মে ২০১৭ সালে, প্রথমবারের জন্য রাধানগরী ও দাজিপুরের জঙ্গলে প্রথমবারের জন্য কয়েকটি পুকুর ট্যাঙ্কারের জল দিয়ে কৃত্রিমভাবে পূর্ণ করা হয়। এই ভাবে কেরকার’স বাইসন নেচার ক্লাবের পক্ষ থেকে দুইটি জঙ্গলের তিনটি পুকুরে মোট ২০,০০০ লিটার জল সরবরাহ করা হয়। ২০১৮ সালে তা বাড়িয়ে ২৪,০০০ লিটার করা হয়। (আরও অনেক জঙ্গলের পুকুর বন দফতরই রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে)।
তবে, “এই বছর, বন দফতর শুধু রাধানগরীর একটি পুকুরেই জল সরবরাহ করার অনুমতি দিয়েছে, কারণ জানা নেই,” বলেন কেরকার। এই বছর তাঁদের এনজিওটি ৫৪,০০০ লিটার জল সরবরাহ করেছে। যেকোনও ক্ষেত্রেই, “আমরা জুনে বর্ষার প্রথম দুটি বৃষ্টির পর সরবরাহ বন্ধ করে দিই,” বলেন কেরকার।
জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়া, খনিজ উত্তোলন, শস্য চাষের ধাঁচে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, খরা, সাধারণভাবে শুখা মরশুম, জলের মান খারাপ হওয়া, ভূগর্ভস্থ জলের যথেচ্ছ নিষ্কাশন – এই সব কিছুরই রাধানগরী ও যে বৃহত্তর এলাকার মধ্যে এটি অবস্থিত সেই এলাকা জঙ্গল, খেত, মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব রয়েছে।
কিন্তু শুধু প্রাকৃতিক জলবায়ুরই পরিবর্তন ঘটছে তা নয়।
গাউর ও মানুষের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের ঘটনা বিপুলাকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। “ গাওয়া আমার ২০ গুনঠা [মোটামুটিভাবে আধ একর] জমিতে চাষ করা নেপিয়ার ঘাসের পুরোটাই খেয়ে নিয়েছে”, বছর ৪০-এর দুর্দশাগ্রস্ত কৃষক মারুতি নিকম জানান। তিনি পানহালা তালুকের নিকমওয়াদি গ্রামে ছয় একর জমির মালিক। “জানুয়ারি ও এপ্রিলের মধ্যে অন্য ৩০ গুনঠা জমিতে চাষ করা ভুট্টাও ওরা সাফ করে দিয়েছে।”
“বর্ষকালে, জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণ জল থাকবে, কিন্তু ওরা যদি খাবার না পায় তাহলে ওরা আবার আমাদের খেতেখামারেই ফিরে আসবে।”
কভার চিত্র : রোহন ভাটে। তাঁর তোলা ছবি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য তাঁকে এবং স্যাংচুয়ারি এশিয়াকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ।
পারি-র জলবায়ু বিবর্তনের উপর দেশব্যাপী রিপোর্টিং সংক্রান্ত প্রকল্পটি ইউএনডিপি সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য জলবায়ুর বিবর্তনের প্রকৃত চিত্রটি দেশের সাধারণ মানুষের স্বর এবং অভিজ্ঞতায় বিবৃত করা।
নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] – এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] – এই আইডিতে।
বাংলা অনুবাদ : সানন্দা