“আমরা কাজ বন্ধ করে দিলে গোটা দেশের মুখ অন্ধকার হয়ে যাবে।”
বাবু লালের পরের বাক্যটি এই কথার অর্থটা পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলে, “ক্রিকেট খেলনে কো নেহি মিলেগা কিসিকো ভি [কেউ আর ক্রিকেট খেলতে পারবে না]।”
ব্যাটারদের হৃৎকম্প জাগানো, বোলারদের প্রিয়তম, লক্ষ লক্ষ দর্শকের নয়নের মণি সেই লাল-সাদা ক্রিকেট বল যে চামড়া দিয়ে তৈরি হয় তা আসে উত্তরপ্রদেশের মীরাটের এক বস্তি শোভাপুরের ট্যানারিগুলি থেকে। শহরের শুধুমাত্র এই এলাকাটিতেই চর্মকাররা ফিটকিরি-ট্যানিং পদ্ধতিতে কাঁচা চামড়া থেকে ক্রিকেট বল নির্মাণশিল্পের প্রাথমিক কাঁচামাল এই পাকা চামড়া তৈরি করেন। ‘ট্যানিং’ হল কাঁচা চামড়াকে নানা পদ্ধতির মাধ্যমে পাকা বা ‘ফিনিশ্ড’ চামড়ায় রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া।
“শুধুমাত্র ফিটকিরি ট্যানিং-এর মাধ্যমেই চামড়ার রগগুলো খুলে যায় আর চামড়ায় রং ধরানো যায়,” জানাচ্ছেন বাবু লাল। তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় সেন্ট্রাল লেদার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ষাটের দশকের গবেষণাতেও, যা সাব্যস্ত করেছিল ফিটকিরি ট্যানিং প্রক্রিয়ায় তৈরি চামড়ার বল বোলারের হাতের ঘাম বা বল চকচকে করার জন্য লাগানো থুতু/ঘামের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, এবং তাই বোলারকেও খেলা পণ্ড করার থেকে নিরস্ত রাখে।
শোভাপুরে তাঁর নিজের ট্যানারির এক কোণে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ; পায়ের তলায় ঝলমল করছে চুনকাম করা শুভ্র মেঝে। “২০০ বছর ধরে আমার পূর্বপুরুষরা এখানে চামড়া বানাচ্ছেন,” বললেন তিনি।
আমরা কথা বলতে বলতে আর এক চর্মকার ভরত ভূষণ এসে উপস্থিত হলেন। ৪৩ বছরের ভরত ১৩ বছর বয়স থেকে এই কাজে যুক্ত আছেন। “জয় ভীম!” বলে তাঁরা পরস্পরকে সম্ভাষণ করেন।
একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন ভরত। বাবু লাল একটু কিন্তু কিন্তু করে আমায় জিজ্ঞেস করেন, “গন্দ নেহি আ রহি [গন্ধ পাচ্ছেন না]?” তাঁর ইঙ্গিত হল আমাদের চারপাশে বড়ো বড়ো গর্তে ভেজানো চামড়ার তীব্র দুর্গন্ধের প্রতি। চামড়া নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের উপর নেমে আসা কুসংস্কার আর হিংস্রতার দিকে ইঙ্গিত টেনে ভরত যোগ করেন, “আসলে কিছু কিছু লোকের নাক একটু বেশিই লম্বা – তাই তারা একটু বেশি দূর থেকেই চামড়ার কাজের গন্ধ পেয়ে যায়।”
ভরতের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন বাবু লাল, “গত পাঁচ-সাত বছর ধরে আমাদের পেশার কারণে নানান সমস্যায় ভুগছি আমরা।”
ভারতের সবচেয়ে পুরনো নির্মাণশিল্পগুলির অন্যতম চামড়া শিল্প। ২০২১-২২ সালে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান জোগাচ্ছে এবং দুনিয়ার মোট চামড়ার প্রায় ১৩ শতাংশ উৎপাদন করছে এই ক্ষেত্র, জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস।
শোভাপুরের প্রায় সমস্ত ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকই জাটভ জাতিগোষ্ঠীর (উত্তরপ্রদেশে তফসিলভুক্ত জাতি) মানুষ। ভরতের অনুমান এই এলাকায় অন্তত ৩,০০০টি জাটভ পরিবার আছে এবং প্রায় “১০০টি পরিবার এই কাজের সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত।” শোভাপুর ওয়ার্ড নং. ১২-র অধীনে পড়ে যার মোট জনসংখ্যা ১৬,৯৩১, এবং এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রায় অর্ধেকই তফসিলি জাতিভুক্ত (আদমসুমারি ২০১১)।
মীরাট শহরের পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত শোভাপুর বস্তির আটটি ট্যানারির একটির মালিক হলেন বাবু লাল। “শেষ যে জিনিসটা আমরা বানাই তা হল সফেদ কা পুত্থা [শুকিয়ে সাদা করা চামড়ার পিছন দিক]। এগুলো দিয়ে চামড়ার ক্রিকেট বলের বাইরের আচ্ছাদনটি তৈরি হয়,” জানালেন ভরত। পটাশিয়াম অ্যালুনিমিয়াম সালফেট, যা স্থানীয় ভাষায় ফিটকারি নামে পরিচিত, এই চামড়ার প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয়।
দেশভাগের পরেই পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে মীরাটে সরে আসে ক্রীড়া সরঞ্জাম নির্মাণশিল্প। হাইওয়ের ওপারে আঙুল তুলে বাবু লাল দেখান সেই জায়গা যেখানে পঞ্চাশের দশকে ক্রীড়া সরঞ্জাম শিল্পের সহায়তাকল্পে একটি চামড়া ট্যানিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছিল জেলার শিল্প দপ্তর।
ভরত জানালেন, কিছু ট্যানার একত্রিত হয়ে “২১ সদস্যের শোভাপুর ট্যানারস্ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। এই সেন্টার আমরা কাজ করতে ব্যবহার করি, আর সবাই মিলে এটা চালানোর খরচ ভাগ করে নিই, কারণ ব্যক্তিগত কারখানা চালানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।”
*****
ভোরবেলা উঠে কাজের জন্য কাঁচামাল কিনতে বেরোন ভরত। ভাগের অটোয় করে পাঁচ কিলোমিটার গিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটার খুরজা জংশন এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে হাপুর যান তিনি। “প্রতি রবিবার সারা দেশ থেকে চামড়া আসে হাপুর চামড়া পৈন্থ-এ [কাঁচা চামড়ার বাজার], সেখান থেকেই চামড়া কিনি আমরা,” জানালেন তিনি।
হাপুর জেলার এই সাপ্তাহিক বাজারটি শোভাপুর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর ২০২৩ সালের মার্চে এখানে এক পিস গরুর চামড়ার দাম গুণমান অনুসারে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে।
বাবু লাল ব্যাখ্যা করলেন, চামড়ার গুণমান নির্ভর করে গবাদি পশুর খাদ্যাভ্যাস, অসুখবিসুখ এবং আরও অনেক কিছুর উপর। “রাজস্থানের চামড়ায় সাধারণত কীকর গাছের কাঁটার দাগ থাকে, আর হরিয়ানার চামড়ায় থাকে পোকার দাগ। এগুলো সব দ্বিতীয় শ্রেণির।”
২০২২-২৩-এ দেশে লাম্পি স্কিন ডিজিজ্-এর কারণে প্রায় ১.৮৪ লক্ষ গবাদি পশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়; ফলে আচমকা বেড়ে গিয়েছিল কাঁচা চামড়ার জোগানও। কিন্তু ভরত বলছেন, “আমরা ওগুলো কিনতে পারিনি কারণ [ওগুলোতে] বড়ো বড়ো দাগ থাকত, আর ক্রিকেট বল নির্মাতারা সেগুলো ব্যবহার করতে চাইত না।”
চামড়া শিল্পের শ্রমিকরা জানাচ্ছেন ২০১৭ সালের মার্চে রাজ্য সরকারের তরফে বেআইনি কসাইখানা বন্ধ করার একটি নির্দেশের জেরে তাঁরা প্রভূত সমস্যায় পড়েন। তার অল্পদিন পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্দেশ আসে পশু বাজারে হত্যার জন্য গবাদি পশু কেনাবেচা বন্ধ করার। ভরত জানাচ্ছেন, এর জেরে বর্তমানে “বাজার [আগের আয়তনের] অর্ধেকেরও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মাঝে তো রবিবারও বসে না।”
গবাদি পশু আর চামড়া পরিবহণে ভয়ের আবহ তৈরি করেছে গো-রক্ষকরা। “এমনকি নথিভুক্ত আন্তঃরাজ্য গাড়িগুলিও কাঁচামাল নিতে ভয় পায় আজকাল। এইরকমই অবস্থা দাঁড়িয়েছে এখন,” বলছেন বাবু লাল। গত ৫০ বছর ধরে মীরাট ও জলন্ধরের সবচেয়ে বড়ো ক্রিকেট সরঞ্জাম সংস্থাগুলির মুখ্য জোগানদার হওয়া সত্ত্বেও আজ তাঁদের জীবন ও জীবিকা প্রবল সংকটের মুখে। “বিপদের সময়ে আমাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। হামে আকেলে হি সম্ভালনা পড়তা হ্যায় [আমাদের একলাই সামলাতে হয় সবকিছু],” যোগ করলেন তিনি।
২০১৯ সালে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ-এর গোরক্ষক-সম্পর্কিত রিপোর্ট ‘ভারতের হিংসাত্মক গো-রক্ষণ’-এ (Violent Cow Protection in India) বলা হয়েছে যে, “২০১৫ মে থেকে ২০১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের ১২টি রাজ্যে অন্তত ৪৪ জন – যার মধ্যে ৩৬ জন মুসলিম – নিহত হয়েছেন। এই একই সময়কালে ২০টি রাজ্যে শতাধিক আলাদা আলাদা ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ২৮০ জন।”
“আমার ব্যবসা সম্পূর্ণ আইনি, রসিদ-ভিত্তিক। তাতেও ওদের সমস্যা,” বলছেন বাবু লাল।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে শোভাপুরের চর্মকারদের দিকে ধেয়ে আসে আর এক বিপর্যয় – তাঁদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় দূষণ ছড়ানোর অভিযোগে। “ওরা আরও শর্ত দিয়েছিল যে হাইওয়ে থেকে যেন ট্যানারির কাজ দেখা না যায়,” জানালেন ভরত। তিনি আরও জানাচ্ছেন, জনস্বার্থ মামলাটিতে সরকারি সহায়তায় পুনর্বাসনের কথা বলা হলেও স্থানীয় পুলিশ সে সময় সমস্ত ট্যানারিগুলিতে বন্ধ করে দেওয়ার নোটিস পাঠায়।
“সরকার হামে ব্যবস্থা বনাকে দে অগর দিক্কত হ্যায় তো। য্যায়সে দুঙ্গার মে বনায়ি হ্যায় ২০০৩-০৪ মে [সমস্যা থাকলে সরকার আমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দিক, যেমন দুঙ্গার গ্রামে ট্যানিং এর কারখানা বানিয়ে দিয়েছে ২০০৩-৪ সালে]।”
“আমাদের সমস্যা হল পৌরনিগম এখানে নর্দমা বানানোর কাজ সম্পূর্ণ করেনি,” বলছেন ভরত। এই এলাকা পৌরনিগমের অধীনে এসেছে ৩০ বছর হয়ে গেল। “বর্ষার সময় স্বাভাবিকভাবেই খোদাই করে রাখা অসমান বাস্তু জমিগুলোতে জল গিয়ে জমে।”
*****
শোভাপুরের আটটি ট্যানারি বছর বছর শতাধিক ক্রিকেট বল তৈরিতে ব্যবহার্য সাদা-করা চামড়া উৎপাদন করে। চর্ম শ্রমিকরা প্রথমে চামড়া ধুয়ে ধুলো-বালি-মাটি ইত্যাদি পরিষ্কার করেন। প্রতিটি চামড়া পরিষ্কারের জন্য ৩০০ টাকা করে পান।
“চামড়া পরিষ্কার করে আর্দ্রতা ফেরানোর পর আমরা সেগুলোকে বাছাই করি গুণমানের ভিত্তিতে, বিশেষ করে কতটা পুরু তার নিরিখে,” জানাচ্ছেন বাবু লাল। ফিটকিরি দিয়ে পুরু চামড়া ট্যানিং করতে সময় লাগে ১৫ দিন। পাতলা চামড়া ভেষজ-ট্যানিং করা হয় ২৪ দিন ধরে। “ভাগে ভাগে প্রক্রিয়াকরণ করা হয় এগুলোকে, তাই প্রতিদিনই অন্তত এক ব্যাচ করে চামড়া প্রস্তুত হয়ে যায়।”
এরপর চামড়াগুলিকে তিন দিন ধরে চুন আর সোডিয়াম সালফাইড মেশানো জলের ডোবায় ভিজিয়ে রাখা হয়, তারপর প্রতিটি টুকরোকে মাটিতে সমান করে পেতে ভোঁতা একটা লোহার টুকরো দিয়ে চেঁছে চেঁছে সব লোম পরিষ্কার করা হয় – এই প্রক্রিয়ার নাম সুতাই। “চামড়ার সুতোগুলো ভিজে ফুলে যাওয়ায় লোম সহজেই বার হয়ে আসে,” জানালেন ভরত। এরপর চামড়াগুলিকে আবার ভিজিয়ে রাখা হয় সেগুলিকে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলার জন্য।
বাবু লালের মাস্টার কারিগর হলেন ৪৪ বছরের তারাচাঁদ। রাফা বা ছোরা দিয়ে ধীরে ধীরে বহু যত্নে চামড়ার তলার দিক থেকে মাংস চেঁছে বার করেন তিনি। এরপর চামড়াগুলোকে তিন দিন শুধু জলে ভিজিয়ে রাখা হয় চুন সাফ করার জন্য, আর তারপর একটা গোটা রাত ভেজানো থাকে হাইড্রোজেন পরোক্সাইড মেশানো জলে। বাবু লাল জানালেন এটা করা হয় চামড়াগুলিকে জীবাণুমুক্ত এবং ব্লিচ করার জন্য। “এক এক করকে সারি গন্দ-গন্দগি নিকল জাতি হ্যায় [এক এক করে নোংরা-দুর্গন্ধ সব বেরিয়ে যায়]।”
“বল প্রস্তুতকারকদের হাতে যেটা পৌঁছয়, সেটা একেবারে সাফসুতরো একটা জিনিস,” বলছেন ভরত।
এক-একটি প্রক্রিয়াজাত চামড়া ক্রিকেট বল নির্মাতাদের কাছে বিকোয় ১,৭০০ টাকা মূল্যে। ছালের পশ্চাৎদেশের দিকে দেখিয়ে ভরত ব্যাখ্যা করেন, “এই অংশ থেকে ১৮-২৪টা সর্বোচ্চ মানের ক্রিকেট বল বানানো সম্ভব, কারণ এটা সবচেয়ে মজবুত জায়গা। এই বলগুলোকে বলা হয় বিলায়েতি গেন্দ [বিলিতি বল] আর এর এক-একটা ২,৫০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে বিকোয় [খুচরো বাজারে]।”
“অন্যান্য অংশগুলো এত মজবুত হয় না, আর বেশি পাতলাও হয়। তাই ওইসব জায়গা থেকে তৈরি বল দিয়ে কম ওভার খেলা যায়, এদের আকারও নষ্ট হয়ে যায় তাড়াতাড়ি,” জানালেন বাবু লাল। “একটা গোটা পুত্থা থেকে নানা গুণমানের মোট ১০০টা বল বানানো যায়। যদি প্রত্যেকটা বল ১৫০ টাকা করেও বেচা যায়, তবুও একটা গোটা চামড়া থেকে কোনও বল নির্মাতা প্রায় ১৫,০০০ টাকা লাভ করে,” চটজলদি হিসেব করে বলেন ভরত।
“কিন্তু তার থেকে আমরা কী পাই?” বাবু লালের দিকে তাকান ভরত। প্রতিটি চামড়ার টুকরোর জন্য ১৫০ টাকা করে পান তাঁরা। “কাঁচামাল আর আমার কারিগরদের সাপ্তাহিক মজুরিতে প্রায় ৭০০ টাকা যায়,” জানালেন ভরত। “আমাদেরই হাত-পায়ের শ্রমে এই বলের চামড়া প্রস্তুত হয়। কিন্তু বলের উপর বড়ো কোম্পানিদের নাম ছাড়া আর কী লেখা থাকে জানেন? ‘ফিটকিরি-ট্যানড চামড়া’। খেলোয়াড়রা এটার অর্থও জানেন বলে মনে হয় না।”
*****
“আপনারা বুঝি সত্যিই মনে করেন যে দূষণ, দুর্গন্ধ, কাজের দৃশ্য এসব আসল সমস্যা [এই শিল্পের]?”
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই অঞ্চলে দিগন্তরেখার পিছনে সূর্য ঢলে পড়ছে এখন। ট্যানারি শ্রমিকরা তড়িঘড়ি স্নান করে কাজের জামাকাপড় ছেড়ে নিচ্ছেন বাড়ি যাওয়ার আগে।
“আমি আমার চামড়ায় ‘এবি’ খোদাই করে রাখি, আমার ছেলের নামের আদ্যাক্ষর,” জানালেন ভরত। তারপর দৃঢ়স্বরে যোগ করলেন, “ওকে আমি চামড়ার কাজ করতে দেব না। আমাদের পরের প্রজন্ম লেখাপড়া শিখছে। ওরা আরও উন্নতি করবে, চামড়ার কাজ একদিন বন্ধ হবে।”
আমরা হাইওয়ের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আবারও বলে ওঠেন ভরত, “লোকে ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসে বটে, তবে আমরা চামড়ার কাজ করতে মোটেই ভালোবাসি না। [এই কাজ] আমাদের পেটের ভাত জোগায়; আর কোনও উপায় নেই, তাই আমরা এই কাজটা করি।”
প্রতিবেদক প্রবীণ কুমার এবং ভরত ভূষণের প্রতি তাঁদের মূল্যবান সময় ব্যয় করার জন্য তথা প্রতিবেদনের প্রতিটি স্তরে সাহায্য করার জন্য কৃতজ্ঞ । মৃণালিনী মুখার্জী ফাউন্ডেশন বা এমএমএফ প্রদত্ত একটি ফেলোশিপের সহায়তায় এই প্রতিবেদন রচিত হয়েছে।
অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী