‘ও থামলে, আমার জীবনও স্তব্ধ হবে’

পারির স্বেচ্ছাকর্মী সংকেত জৈন স্থির করেছেন সমগ্র ভারতবর্ষের অন্তত তিনশটি গ্রামে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রতিবেদন তৈরি করবেন এবং একই সঙ্গে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করবেন: গ্রামীণ জীবনের যে কোনও ঘটনা বা দৃশ্যকে ঘিরে একটি আলোকচিত্র তুলবেন এবং তারপর সেই আলোকচিত্রটির থেকে একটি স্কেচ তৈরি করবেন। পারির উপর এই সিরিজের এটি ষষ্ঠ প্রয়াস। স্লাইডারটি কোনও একটি দিকে টানলে আলোকচিত্রটি অথবা স্কেচটি সম্পূর্ণ দেখতে পাওয়া যাবে

১৫ বছর বয়স থেকে কৃষিকাজে রত মহাদেব খোট বলেন, “এই বলদটিই আমার জীবন।” সঙ্গের ছবিটিতে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর জেলার লক্ষ্মীওয়াড়ি গ্রামের মহাদেবের বাঁ পা আড়ষ্ঠভাবে বেরিয়ে রয়েছে। প্রায় নয় বছর আগে, খেতে কাজ করার সময় একটা বিষাক্ত কাঁটা ফুটে সংক্রমণ হয় বলে তাঁর বাঁ পা অস্ত্রোপচার করে কেটে বাদ দেওয়া হয়। বর্তমানে, তিনি তাঁর কৃত্রিম পা নিয়েই কৃষিকাজের তদারকি করেন।

তাঁর ভাইয়ের মালিকানাধীন দুই একর জমিতে তিনি চিনেবাদাম এবং অল্প কিছু জোয়ার ফলান। এই জমির একটি তাঁদের হাতকানঙ্গলে তালুকের গ্রামটি থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দূরে এবং অন্যটি ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

মহাদেব জানান, “জল সরবরাহ ব্যবস্থার অভাবে এবং আমার এই আহত পায়ের জন্য, আমাদের জমির উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তাছাড়া আমাদের এই চাষের জমিটি অনুর্বর পার্বত্য এলাকায়।” মহাদেব (বর্তমানে তাঁর বয়স ৬০এর কোঠায়) দৈনিক প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ তাঁর বলদ জোতা গাড়িতে পাড়ি দিয়ে জমির দেখাশোনা করতে যান, এবং তাঁর এই পোষ্যটির জন্য পশুখাদ্যও নিয়ে আসেন। “এই জীবটিই তো আমাকে সর্বত্র নিয়ে যায়, ও থেমে গেলে আমার জীবনও অচল হয়ে পড়বে।”

“১৯৮০ সালে, ১২ ঘন্টা কাজ করে, অপরের জমিতে এক টন আখ কেটে আমি ১০ টাকা উপার্জন করতাম,” তিনি স্মরণ করেন। আজকের দিনে সেই আয় দাঁড়াতো ২০০ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু পায়ে আঘাত লাগার ফলে সে সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়ে যায়। গত বছর তাঁর ভাইয়ের জমি থেকেও খুব সামান্য উপার্জন হয়েছে। জীবজন্তুর অত্যাচারে অধিকাংশ ফসল ধ্বংস হয়ে যায়। “শেষ পর্যন্ত, মাত্র দুই বস্তা চিনেবাদাম পেয়েছি, প্রতিবস্তায় ৩৫ কেজি করে। অবশ্য আমি এই ফসল বিক্রি করি নি, আগামী মরশুমের জন্য কিছু রেখেছি, আর কিছুটা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিতরণ করেছি।”

“আমার স্ত্রী শালাবাঈ এই জমিতে কাজ করে, এবং তারপর অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এবং ফলও বিক্রি করে,” মহাদেব বলেন। সকাল সাড়ে ৫টা থেকে শালাবাঈয়ের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের দিন শুরু হয় এবং ফল সংগ্রহের জন্য পাহাড়েও উঠতে হয়। লক্ষ্মীওয়াড়ির কাছাকাছি আল্লামা প্রভু ডোঙ্গার-এ (পাহাড়) মহাদেবের কাজ শুরু হয় সকাল ১০টা নাগাদ। শালাবাঈয়ের মজুরি এবং প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ তাঁর ৬০০ টাকা দিয়েই তাঁদের দিন গুজরান করতে হয়।

শালাবাঈ খোট, যিনি অনুমান করেন তাঁর বয়স এখন ৫০এর কোঠার শেষের দিকে, বলেন, “ওর অপারেশনের আগে আমি দিনে চার ঘন্টা করে কাজ করতাম। এখন বেঁচে থাকার তাগিদে দৈনিক ১০ ঘন্টার বেশি কাজ করি।” বছরে প্রায় ৪৫ দিন তিনি ফল বিক্রি করেন (অক্টোবর মাস থেকে শুরু করে)। “এই কাজ করার জন্য, আমাকে নারান্দে গ্রাম পর্যন্ত [তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত] যেতে হয়, এবং সকাল ৬টার মধ্যে বেরিয়ে পড়তে হয়।” এছাড়া খেত মজুর হিসেবে তিনি সাভার্ডে, আলটে এবং নারান্দে ইত্যাদি নিকটবর্তী গ্রামে কাজ করেন। “সাত ঘণ্টার কাজের জন্য, আমি ১০০ -১৫০ টাকা উপার্জন করি। একই কাজের জন্য পুরুষরা ২০০ টাকা পায়। জমির কাজে মেয়েরা অনেক বেশি পরিশ্রম করে, অথচ পুরুষরা বেশি টাকা পায়।”

তাঁদের দুই ছেলেই লক্ষ্মীওয়াড়ি ছেড়ে চলে গেছে। একজন অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। অন্য ছেলে অপর এক গ্রামে ভাগ চাষির কাজ করেন। “আমার অপারেশনের জন্য ২৭,০০০ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আমি ১২,০০০ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। আমার ছেলেরা কয়েক বছর ধরে সে ঋণ পরিশোধ করেছে। তারা এখনও আর্থিকভাবে আমাদের মাঝে মাঝে সাহায্য করে,” মহাদেব বলেন।

ছবি এবং স্কেচ: সংকেত জৈন

বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

Sanket Jain

سنکیت جین، مہاراشٹر کے کولہاپور میں مقیم صحافی ہیں۔ وہ پاری کے سال ۲۰۲۲ کے سینئر فیلو ہیں، اور اس سے پہلے ۲۰۱۹ میں پاری کے فیلو رہ چکے ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز Sanket Jain
Translator : Smita Khator

اسمِتا کھٹور، پیپلز آرکائیو آف رورل انڈیا (پاری) کے لیے ’ٹرانسلیشنز ایڈیٹر‘ کے طور پر کام کرتی ہیں۔ وہ مترجم (بنگالی) بھی ہیں، اور زبان اور آرکائیو کی دنیا میں طویل عرصے سے سرگرم ہیں۔ وہ بنیادی طور پر مغربی بنگال کے مرشد آباد ضلع سے تعلق رکھتی ہیں اور فی الحال کولکاتا میں رہتی ہیں، اور خواتین اور محنت و مزدوری سے متعلق امور پر لکھتی ہیں۔

کے ذریعہ دیگر اسٹوریز اسمیتا کھٹور