কোমর আর পিঠের যন্ত্রণাটা অসহ্য হয়ে উঠলে অবশেষে তনুজা গেলেন গ্রামের হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের কাছে। “উনি বলে দিয়েছিলেন আমার নাকি ক্যালসিয়াম আর আয়রনের প্রবলেম [ঘাটতি] আছে। পইপই করে বারণ করেছিলেন যাতে খবরদার আর মাটিতে না বসি।”
মুর্শিদাবাদের এই বিড়ি শ্রমিকের বয়স প্রায় পঞ্চাশ। সারাদিনে আট ঘণ্টা মেঝেয় বসে বিড়ি বাঁধেন। নিজেই বললেন, “সারাক্ষণ গায়ে জ্বর জ্বর ভাব। কোমর আর পিঠে বড্ড বেদ্না।” খানিক দম নিয়ে আরও বললেন, “হায় রে, নিজের জন্য যদি একটা চেয়ার টেবিল জোটাতে পারতাম…”
নভেম্বর মাসের শেষ। তনুজা বিবির হরেকনগরের বাড়ির শক্ত সিমেন্টের মেঝেয় রোদ্দুর এসে পড়েছে। ঘরে বানানো খেজুরপাতার মাদুরে বসে তিনি একের পর এক বিড়ি বেঁধে চলেছেন। ঝটিতি আঙুল চালিয়ে ক্রমাগত মুড়ছেন কেন্দু পাতা – ওদিকে কনুই দুটি আটকা পড়েছে এক জায়গায়, কাঁধ উঠে আছে নিজের স্বাভাবিক স্থান থেকে, মাথা হেলে রয়েছে একদিকে। “আঙুলগুলোয় এক ফোঁটা সার পাই না, ওগুলো আছে বলেই মনে হয় না,” খানিক ব্যঙ্গ করেই বললেন।
চারদিকে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিড়ি তৈরির সরঞ্জাম: কেন্দু পাতা, গুঁড়ো তামাকের মশলা, সুতোর বান্ডিল। আছে ছোট্টো ক্ষুরধার ছুরি আর একটা কাঁচি।
খানিক পরেই উঠবেন তনুজা। পাড়ার মুদির দোকান থেকে জিনিসপত্র আনতে হবে। তারপর আছে রান্নাবান্না, জল তোলা, ঘর আর উঠোন ঝেঁটিয়ে ধুয়ে সাফাইসহ গেরস্থালির হাজার একটা কাজ। সারাক্ষণ মাথায় পাক দিতে থাকে বিড়ির দৈনিক কোটা। ৫০০-৭০০ বিড়ি যে করেই হোক বাঁধতে হবে। নইলে মাস গেলে যে ৩০০০ টাকা আসে এই কাজ থেকে, তাতে টান পড়বে।
কাকভোরে ওঠেন তিনি, নিস্তার মেলে সেই মাঝরাতে। “পাড়ার মসজিদে প্রথম আজান দেওয়া মাত্র আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ি। ফজরের নামাজ পড়েই বিড়ির কুলো নিয়ে কাজে বসে যাই,” এক নিমেষের জন্যও বিড়ি বাঁধা না থামিয়েই কথা বলছিলেন তিনি। ঘড়ি দেখতে জানেন না তনুজা, পাঁচখানা নামাজের সময় দিয়েই তাঁর দিনক্ষণ বাঁধা। হিসেব করে বললেন মাগরিব (৪র্থ নামাজ) আর ইশা (৫ম তথা শেষ নামাজ) – এই দুইয়ের মধ্যে রাতের রান্নাবান্না খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি সেরে নেন। তারপর মাঝরাত নাগাদ ঘুমিয়ে পড়ার আগে অবধি অন্তত দুই ঘণ্টা হয় বিড়ি বাঁধেন, নইলে কেন্দু পাতা কেটে গুছিয়ে রাখেন।
“এই পাঁচ নামাজের সময়েই হাড়ভাঙা খাটনি থেকে যা একটু মুক্তি মেলে। খানিক বিশ্রাম আর শান্তি পায় শরীরটা,” বলতে বলতেই তনুজা নিজেই প্রশ্ন করেন, “লোকে বলে বিড়ি খেলে কত অসুখ করে। কে-ই বা জানে, যারা বিড়ি বাঁধে তাদের কী হয়?”
২০২০ সালের শুরুর দিকে জেলা সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যাবেন বলে মনস্থির করছিলেন, তার কিছুদিনের মধ্যেই এসে হাজির হল দেশজোড়া লকডাউন। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়ে তখনকার মতো হাসপাতাল ডাক্তার ইত্যাদি লাটে উঠল। অগত্যা ব্যথা বেদনার উপশম খুঁজতে তিনি শরণাপন্ন হলেন স্থানীয় এক হোমিওপ্যাথের। প্রসঙ্গত, বেলডাঙ্গা-১ ব্লকের এই বিড়ি শ্রমিক মহিলাদের প্রান্তিক পরিবারগুলির জন্য অসুখবিসুখে প্রথম সহায় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক এবং নন-রেজিস্টার্ড হাতুড়ে ডাক্তারেরাই। ২০২০-২১ সালের গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান বলছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে (পিএইচসি) ডাক্তারের শূন্যপদ রয়েছে ৫৭৮টি। এছাড়া গ্রামীণ অঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির মোট ঘাটতি ৫৮ শতাংশ। ফলে, রাজ্য সরকারের পরিচালনাধীন হাসপাতালে চিকিৎসা সস্তায় মিললেও, তার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অনন্ত অপেক্ষা এবং পরবর্তীতে পরীক্ষানিরীক্ষা, স্ক্যান ইত্যাদি করানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। স্বভাবতই, তনুজা বিবির মতো দিন আনি দিন খাই পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এতটা সময় ব্যয় করা অতি মহার্য্য ব্যাপার। তনুজার কথাতেই বোঝা গেল, “আমাদের থোড়াই অত সময় আছে!”
হোমিওপ্যাথের দাওয়াইয়ে যখন কাজ হল না, তনুজা তখন স্বামীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে, তাতে নিজের বিড়ি বাঁধার উপার্জন থেকে আরও ৩০০ টাকা যোগ করে অবশেষে একজন এলোপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে গেলেন। “ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করে কিছু ট্যাবলেট দিয়ে বলে দিলেন যেন বুকের এক্সরে আর স্ক্যান করিয়ে ওনাকে আবার দেখিয়ে আসি। আমি ওসব কিছুই করাইনি,” এতসব করানোর আর্থিক সামর্থ্য যে তাঁর নেই এটাই তনুজা বুঝিয়ে দিলেন।
তনুজা বিবি আদতে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২০ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের মধ্যে যে ৭০ শতাংশই মহিলা কর্মী, তাঁদেরই একজন। কর্মস্থান বলতে যা বোঝায়, তা এই কর্মীদের ক্ষেত্রে খাটে না, অতএব ঘরের পরিবেশে কাজ করে যথারীতি তাঁরা শারীরিক ব্যথা-বেদনা, পেশি ও স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হন। লেগে থাকে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ জনিত নানা অসুখসহ যক্ষ্মা বা টিউবারকুলোসিসের মতো মারণ ব্যাধি। বিড়িশিল্পের সঙ্গে যুক্ত এই মহিলাদের সকলেই প্রান্তিক পরিবারগুলি থেকে আসেন বলে শরীরে পুষ্টির লাগাতার ঘাটতির জেরে পেশার সঙ্গে যুক্ত শারীরিক সমস্যাগুলো জটিল চেহারা নেয়, স্বাভাবিকভাবেই এর ফলস্বরূপ এই মহিলাদের প্রজননসহ সার্বিক স্বাস্থ্যই ব্যাহত হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলায় ১৫-৪৯ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৭৭.৬ শতাংশ রক্তাল্পতার শিকার। বলাই বাহুল্য, এই হার ভয়াবহ রকমের বেশি। চার বছর আগের জাতীয় পরিবারক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় উঠে আসা হার শতকরা ৫৮ শতাংশের তুলনায় নতুন সমীক্ষায় রক্তাল্পতায় বৃদ্ধি হয়েছে বহুগুণ। রক্তাল্পতার শিকার যে সব মায়েরা, তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রেও রক্তাল্পতা হওয়ার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি থাকে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিকতম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (NFHS-5) বলছে সার্বিকভাবেই মুর্শিদাবাদ জেলার মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া বেড়েছে। এরই পাশাপাশি, এই জেলায় ৫ বছরের কমবয়সি শিশুদের মধ্যে শতকরা ৪০ শতাংশই অপুষ্টির জেরে দৈর্ঘ্যে খাটো (‘স্টান্টেড’), ভয়ের কথা এটাই যে চার বছর আগে, ২০১৫-১৬ সালের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে উঠে আসা পরিসংখ্যানে শিশুদের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ার যে ছবি উঠে এসেছিল, তাতে কোনই বদল হয়নি।
মাঠপাড়ার বাসিন্দা আহসান আলি এলাকায় ঘরের ছেলে বলেই পরিচিত। একটি ছোট্টো ওষুধের দোকান আছে তাঁর। পেশাগত পরিচয়ে তথাকথিত অপ্রশিক্ষিত হাতুড়ে তকমা জুটলেও ৩০ বছর বয়সি এই তরুণ কিন্তু এলাকার মানুষের এবং বিশেষ করে মহিলাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সম্যকভাবে ওয়াকিবহাল। পাড়ার মানুষজন তাঁর উপর স্বাস্থ্য বিষয়ে ভরসা করেন। তাঁর নিজের পরিবারেও মহিলা বিড়ি শ্রমিকেরা আছেন। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, যে সকল মহিলারা বিড়ি বাঁধার কাজ করেন, তাঁরা প্রায়শই ব্যথা-বেদনার হাত থেকে খানিক উপশমের জন্য ওষুধ এবং মলম নিয়ে যান। আহসানের কথায়, “২৫-২৬ বছর বয়স হতে না হতেই এই মহিলাদের শরীরে হাজারটা সমস্যা দেখা দেয়। হাড়েমজ্জায় ব্যথা, পেশির দুর্বলতা, নার্ভের যন্ত্রণা, মাথার বেদনা এগুলো তাঁদের নিত্যকার সঙ্গী।”
এইসব পরিবারের মেয়েরা স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়েই বড়ো হয়। শিশুকাল থেকেই মেয়েরা বিড়ির মশলার সংস্পর্শে আসে, মায়েদের দৈনিক বিড়ির ধার্য লক্ষ্যমাত্রা বা কোটা পুরো করতে তারাও হাতে হাতে কাজ করে মায়েদের সঙ্গে। বেলডাঙ্গার মাঝপাড়ায় নিজের জন্ম ভিটেয় ১০ বছরের বালিকা তনুজা নিজের বিড়ি শ্রমিক মাকে সাহায্য করতেন। “বিড়ির মুখ আর লেজ মুড়তাম, সুতো জড়াতাম,” তারপর সংযোজন করলেন, “আমাদের সমাজে বলে, ‘মেয়েরা বিড়ি বাঁধতে না জানলে বর জুটবে না।”
১২ বছর পেরোতে না পেরোতেই তনুজা বিবির বিয়ে হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তারপর একে একে তাঁর চার মেয়ে এবং এক ছেলে হয়। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৫ (NFHS-5) থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে আজও এই জেলার শতকরা ৫৫ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে ইউনিসেফের পর্যবেক্ষণ: অপরিণত বয়সে বিয়ে এবং সন্তানধারণ আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপুষ্টি, এইসব মিলে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বইতে থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে।
ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন বেলডাঙ্গা-১ ব্লকের অন্তর্গত মির্জাপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধীক্ষক (হেলথ সুপারভাইজার) হাসি চ্যাটার্জী: “শারীরিক এবং মানসিক মিলে মহিলাদের যে সার্বিক স্বাস্থ্য, তারই অংশ তাঁদের প্রজনন তথা যৌন স্বাস্থ্য। এরা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত, এদের পরস্পর থেকে মোটেই আলাদা করা যায় না।” তাঁর নির্ধারিত এলাকার মানুষজন যাতে স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির অধীনে প্রাপ্য পরিষেবাগুলি পান, সেটা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব এই বরিষ্ঠ স্বাস্থ্যকর্মীর উপর বর্তায়।
তনুজা বিবির মা আজীবন বিড়ি বেঁধে এসেছেন। সত্তরের কাছাকাছি বয়স এখন তাঁর। তনুজা বলছিলেন তাঁর মায়ের শরীর-স্বাস্থ্যের এখন এতটাই বেহাল দশা যে আর ঠিক করে হাঁটতেও পারেন না। “মায়ের পিঠটার একদম বারোটা বেজে গেছে। এখন তো মোটের উপর শয্যাশায়ী,” মায়ের কথা বলতে বলতে যে অসহায়তা গ্রাস করছিল তাঁকে, তা তাঁর পরের কথাগুলোতেই প্রকাশ পেল, “আমার কপালেও এই একই ভোগান্তি আছে।”
বিড়ি শিল্পে নিযুক্ত মহিলা শ্রমিকেরা প্রত্যেকেই নিম্ন আয়ের প্রান্তিক পরিবারগুলি থেকে আসেন। অন্য কোনও পেশা গ্রহণের দক্ষতা এবং সুযোগের কোনওটাই তাঁদের নেই। বিড়ি না বাঁধলে পরিবার অনাহারে থাকবে। বহু বছর আগে যখন তনুজার স্বামী অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই ছিলেন, তখন বিড়ি বেঁধেই তনুজা ছয় সদস্যের পরিবারের মুখে দুইবেলা দুটো ভাত তুলে দিয়েছেন। তখন সদ্য প্রসূতি তনুজা তাঁর চতুর্থ সন্তানকে কাঁথায় জড়িয়ে কোলে নিয়ে শীতের হিমের মধ্যে বসে বসে কেমন করে বিড়ি বেঁধেছেন, সেসব কথা পারিকে বলছিলেন। পরিবারের এই নিদারুণ পরিস্থিতির জেরে সদ্যজাত শিশুরাও তামাকের ঝাঁঝ আর মশলার সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে পারে না।
“একসময় আমি দিনে ১০০০-১২০০ বিড়ি বাঁধতাম। এখন আর পারি না,” জানালেন তনুজা। আজকাল তাঁর দুর্বল শরীর আর এতটা ধকল সইতে পারে না। দিনে ৫০০-৭০০ বিড়িই বাঁধেন আজকাল, মাসে টেনেটুনে অন্তত ৩০০০ টাকা যাতে আসে, তার জন্য দিনরাত প্রাণপাত মেহনত করে চলেন তিনি।
দেবকুণ্ড এসএআরএম গার্লস হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন পারির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানালেন বেলডাঙ্গা-১ ব্লকে তাঁদের মাদ্রাসায় পড়তে আসা শতকরা ৮০ শতাংশ পড়ুয়া মেয়েরাই এইসব প্রান্তিক পরিবারের সন্তান - মায়েদের বিড়ি বাঁধার দৈনিক কোটা পুরো করতে তারাও সহায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। মুর্শিদা আরও জানালেন, প্রায়শই দেখা যায় মাদ্রাসায় নিয়মিত যে ভাত-ডাল-সবজিটুকু মিড ডে মিলে দেওয়া হয়, সেটাই অসংখ্য কিশোরী ছাত্রীদের দিনের সর্বপ্রথম আহার। “বহু বাড়িতেই [পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক] পুরুষ সদস্যের অনুপস্থিতিতে সকালবেলায় আর আলাদা করে হাঁড়িই চড়ে না,” সংযোজন মুর্শিদার।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিসংখ্যানের নিরিখে আদতে গ্রামীণ – জেলার শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ ২,১৬৬টি গ্রামে বাস করেন। শতকরা ৬৬ শতাংশ সাক্ষরতার হার নিয়ে মুর্শিদাবাদ রাজ্যের গড় ৭৬ শতাংশের চেয়ে অনেকখানি নিচে অবস্থান করছে (তথ্যসূত্র: জনগণনা ২০১১)। জাতীয় মহিলা কমিশনের একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে বিড়ি শিল্প মহিলা শ্রমিক নিবিড় হওয়ার মূল দুটি কারণ - তাঁরা বাড়ির মধ্যে থেকেই কাজ করেন, এবং বিড়ি বাঁধার জন্য যে সাবলীল, দক্ষ আঙুল দরকার, তা মহিলাদের রয়েছে।
*****
একটা মিনিটও নষ্ট করার জো নেই, শাহীনূর বিবি কথা বলতে বলতেই পেঁয়াজ, কাঁচা লংকা কুচিয়ে, এবার ঘুগনির মশলা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বেলডাঙ্গার হরেকনগর এলাকার এই পূর্বতন বিড়ি শ্রমিক এখন বিকেল হলেই বাড়ির ঠিক বাইরে বসে সান্ধ্যকালীন জনপ্রিয় জলখাবার ঘুগনি বিক্রি করেন – আপাতত এই কাজ করেই খানিক আয়ের পথ দেখছেন তিনি।
“বিড়ি বাঁধলে রোগ-ব্যাধি হওয়াটা তো মজুরের নিয়তি,” বলছিলেন মোটামুটি ৪৫ ছুঁইছুঁই শাহীনূর। মাস কয়েক আগে, টানা বসে বিড়ি বাঁধার কাজ করার জেরে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। বেলডাঙ্গা গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে তিনি ডাক্তার দেখিয়ে আসেন। একটি বেসরকারি পরীক্ষাগার থেকে বুকের এক্সরেটিও করান ডাক্তারের উপদেশ মেনে। ইতিমধ্যেই তাঁর স্বামী খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে, শাহীনূরের নিজের রোগভোগের চিকিৎসার ব্যাপারটা আর এগোয়নি। “আমার দুই বৌমা এখন আর আমাকে [বিড়ি] বাঁধতে দেয় না। পুরোপুরি ওরাই এখন বিড়ি বাঁধে। কিন্তু ওই [আয়] দিয়ে তো আর সংসার চলে না,” এইজন্যেই যে তিনি ঘুগনি বিক্রির কাজটা শুরু করতে বাধ্য হয়েছেন, সেটা তাঁর কথা থেকে বোঝা গেল।
বেলডাঙ্গা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্র, বা বিপিএিচসি হাসপাতালে কর্মরত ডঃ সোলমান মণ্ডল জানালেন প্রতিমাসেই নিয়মিত ২০-২৫ জন যক্ষ্মা রোগী তাঁদের প্রতিষ্ঠানে আসেন। “বিড়ি বাঁধার কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের টিবির মতো রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকেই, সর্বদাই তাঁরা তামাকের ক্ষতিকর মশলার সংস্পর্শে থাকতে বাধ্য হন। এর প্রভাবে বার বার সর্দিকাশি এবং নানান সংক্রমণের জেরে তাঁদের ফুসফুস লাগাতার দুর্বল হতে থাকে,” পারির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বেলডাঙ্গা-১ ব্লকের স্বাস্থ্যবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লক মেডিক্যাল অফিসার (বিএমও) ডঃ মণ্ডল বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করলেন।
বিপিএিচসি হাসপাতাল থেকে এগোলে খানিক দূরত্বে, বেলডাঙ্গার দর্জিপাড়া মহল্লায় সায়রা বেওয়া লাগাতার সর্দিকাশি সহ নানান উপসর্গে জেরবার হয়ে আছেন। এসব সমস্যা বাদেও এই ৬০ বছর বয়সি প্রৌঢ়া মধুমেহ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে ভুগছেন গত ১৫ বছর ধরে। প্রায় পাঁচ দশক হল তিনি বিড়ি বাঁধছেন, স্বভাবতই হাতের আঙুল এবং নখে তামাকের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম গুঁড়ো রয়ে যায়, দৃষ্টিগোচর না হলেও মশলার কণা থাকেই।
“এই মিহি গুঁড়ো মশলা খুবই পরিচিত একটা অ্যালার্জেন। বিড়ির মশলার সূক্ষ্ম কণিকা এবং তীব্র ঝাঁঝ বিড়ি বাঁধার সময়ে কারিগরদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে,” জানালেন ডঃ সোলমান মণ্ডল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৫ (NFHS-5) থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের প্রকোপ দ্বিগুণ – প্রতি ১,০০,০০০ জন পিছু ৪,৩৮৬ জন মহিলা এই রোগে আক্রান্ত।
ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ডঃ মণ্ডল এই কথাটাও স্পষ্ট করে জানালেন যে, “বিড়িতে ব্যবহৃত তামাকের গুঁড়ো মশলার অবিরাম সংস্পর্শে যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। তবে এখনও অবধি আমাদের এখানে টিবি রোগের ক্ষেত্রে পেশাভিত্তিক পরীক্ষা কিংবা স্ক্রিনিংয়ের কোনও বন্দোবস্ত নেই।” মুর্শিদাবাদ জেলা, যা কিনা বিপুল সংখ্যায় বিড়িশ্রমিক অধ্যুষিত তথা বিড়ি শিল্পের কেন্দ্র বা হাব বলে পরিচিত, সেখানে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য যক্ষ্মার মতো মারণ রোগের নির্ণয় তথা প্রতিরোধের লক্ষ্যে নিয়মিত স্বাস্থ্যশিবিরের বন্দোবস্ত না থাকাটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটা বড়ো খামতির দিকে ইঙ্গিত করে। দর্জিপাড়ার সায়রা বেওয়ার মতো বরিষ্ঠ বিড়ি শ্রমিক আজ এতদিন ধরে নানান সংক্রমণে ভুগছেন, তিনি একথাও জানালেন যে প্রায়শই কাশির সঙ্গে রক্ত উঠছে – এই উপসর্গ টিবির মতো রোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক। “বেলডাঙ্গা গ্রামীণ হাসপাতালে দেখিয়েছি তো। ওরা দেখলো পরীক্ষা করে, তারপর কিছু ট্যাবলেটও দিয়েছে,” জানালেন প্রৌঢ়া এই মানুষটি। জানা গেল, হাসপাতাল থেকে তাঁর কফ পরীক্ষা করতে বলে দিয়েছে, এবং তিনি যাতে আর বিড়ির মশলা না ঘাঁটাঘাঁটি করেন, সেকথাও হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে। অবশ্য তাঁকে কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি।
সত্যি কথা বলতে, জেলার কোথাওই বিড়ি শ্রমিকদের কাজের সময়ে মাস্ক বা গ্লাভসের মতো সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারির প্রতিবেদক দেখেননি। এই শ্রমিকদের কাজ সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র, সামাজিক সুরক্ষা বাবদ প্রাপ্য, নির্ধারিত ন্যায্য মজুরি, শ্রমিক কল্যাণের বন্দোবস্ত, নিরাপত্তা তথা স্বাস্থ্যপরিষেবার কোনও বিধান নেই। বিড়ি কোম্পানিগুলি সরাসরি এই শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ না করে, মহাজনদের মাঝখানে রেখে কর্মীদের প্রতি যাবতীয় দায়দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়। আর ওদিকে, শ্রমিকদের থেকে তৈরি বিড়ি নিয়ে এবং কাঁচামালের জোগান দিয়ে নামমাত্র মজুরি ধরিয়েই মহাজনরা খালাস পেয়ে যান। এই শ্রমিকদের ব্যাপারে তাঁদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই।
মুর্শিদাবাদের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশই মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত, আর এই মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের প্রায় সকলেই মুসলমান। বেলডাঙ্গার বিড়ি শ্রমিকদের অধিকার এবং দাবি নিয়ে বিগত তিন দশক ধরে কাজ করছেন সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (সিআইটিইউ) এর বেলডাঙ্গা ব্লক সেক্রেটারি রফিকুল হাসান। তিনি বললেন, “বিড়ি শিল্প চিরকালই সমাজের সবচেয়ে সস্তা এবং দুর্বলতম শ্রমিকদের শোষণ করেই মুনাফা করেছে আর ফুলেফেঁপে উঠেছে। সারা দেশ জুড়েই দেখতে পাবেন বিড়ি শিল্প দরিদ্রতম তথা প্রান্তিক আদিবাসী এবং মুসলমান মহিলা আর কিশোরী মেয়েদের শ্রমের জোরেই চলছে।”
অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে বিড়ি শ্রমিকরাই দুর্বলতম – এই কথাটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রম দপ্তর নিজের ওয়েবসাইটে স্বীকার করলেও, বিড়ি শ্রমিকরা শ্রম দপ্তরের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ২৬৭.৪৪ টাকা পান না। এই ব্লকের মহিলা বিড়ি শ্রমিকরা ১০০০ বিড়ি বেঁধে মাত্র ১৫০ টাকা মজুরি পান। এই মজুরি ২০১৯ সালের কোড অন ওয়েজেস (Code on Wages) দ্বারা ন্যূনতম মজুরি বাবদ ধার্য করা ১৭৮ টাকার থেকেও অনেকটা কম।
“এই কথাটা কে না জানে বলুন তো যে একই কাজ করে মেয়েদের থেকে ছেলেরা অনেক বেশি মজুরি পায়! সব্বার জানা আছে এটা,” সিআইটিইউ-স্বীকৃত মুর্শিদাবাদ জেলা বিড়ি মজদুর এবং প্যাকার্স ইউনিয়নের সঙ্গে কর্মরত অধিকার কর্মী সায়দা বেওয়া বললেন। তাঁর বক্তব্য, মহাজনেরা নিজেরাই বিড়ি শ্রমিকদের খারাপ মানের কাঁচামাল সরবরাহ করে, আর তারপর তৈরি বিড়ি জমা নেওয়ার সময় কাজ ভালো হয়নি, এই অজুহাতে কিছু বিড়ি বাতিল করে দেয়। “অথচ বাতিল করে দেওয়া ছাঁট বিড়িগুলো নিজেরা দিব্যি রেখে দিলেও তার জন্য একটি টাকাও দেয় না,” এই অন্যায় প্রক্রিয়ার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৫৫ বছর বয়সি ইউনিয়ন কর্মী আরও বললেন, “প্রতিবাদ করলে ‘না পোষালে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে না’ বলে আবার আমাদেরই উল্টে মহাজন হুমকি দেয়।” সায়দা বেওয়া জানালেন যে সরকারের কাছে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট যোজনা তাঁরা দীর্ঘকাল থেকেই দাবি করে আসছেন।
নামমাত্র মজুরি এবং কোনওরকম সুরক্ষা কবচ ছাড়া তনুজার মতো দৈনিক আয় নির্ভর বিড়ি শ্রমিকদের জীবন আর্থিক অনিশ্চয়তায় জর্জরিত থেকে যায় চিরকাল। তনুজা এবং রফিকুল তাঁদের তৃতীয় মেয়ের বিবাহের জন্য যে টাকা ধার করেছিলেন, আজও তার মধ্যে ৩৫,০০০ টাকা শোধ দিয়ে উঠতে পারেননি। “ধার করে চলা আর তা শোধ করার চক্করেই আমাদের সারাটা জীবন কেটে যায়,” মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে বারবার ঋণ নেওয়া আর পরিশোধ করার কথা প্রসঙ্গে অসহায় স্বরে বললেন তনুজা।
বিয়ের পর নব দম্পতি তনুজা আর রফিকুল থাকতেন রফিকুলের পৈতৃক ভিটেয়। সন্তানাদি হওয়ার পর তাঁরা টাকাপয়সা ধার করে এক চিলতে জায়গা কিনে একটা চালাঘর বেঁধে উঠে আসেন। “তখন আমাদের কম বয়স ছিল, ভেবেছিলাম দুইজনে খুব মেহনত করে ধারদেনা সব শোধ করে ফেলব। তা আর হল কোথায়! আজ এটা তো কাল সেটা – হাজারটা কারণে ধার করেই গেলাম। আজও আর ঘরটা পুরো করতে পারলাম না।” প্রধান মন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ঘর পাওয়ার যোগ্য হলেও, এই ভূমিহীন দম্পতি আজও তা পাননি।
রফিকুল বর্তমানে পঞ্চায়েতের অধীনে ডেঙ্গু নির্মূল প্রকল্পে চুক্তিনির্ভর সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করেন। মাস গেলে যে ৫,০০০ টাকা তাঁর পাওয়ার কথা তা সময় মতো আসে না। “এই অনিশ্চয়তার চোটে আমার উপর খুব চাপ পড়ে যায়। একবার তো টানা ছয়মাস এক পয়সাও পায়নি,” তনুজা বিবি জানালেন, সেই সময় পাড়ার মুদির দোকানে তাঁদের ১৫,০০০ টাকা বাকি পড়ে গিয়েছিল।
বিড়ি শ্রমিকদের জীবনে না আছে মাতৃত্বকালীন ছুটি আর না আছে অসুখের খাতে কোনও ছুটি; গর্ভাবস্থা এবং সন্তানের জন্ম সবকিছুর সঙ্গেই সমান্তরালে চলতে থাকে অবিরাম বিড়ি বাঁধার কাজ। জননী সুরক্ষা যোজনা, আইসিডিএস বা সুসংহত শিশু বিকাশ যোজনা এবং বিনামূল্যে প্রদত্ত মিড-ডে মিল ইত্যাদি প্রকল্প কিশোরী তথা তরুণীদের জন্য খানিকটা সুরাহা করেছে। “কিন্তু এইসকল বয়স্ক শ্রমজীবী মহিলাদের স্বাস্থ্যের দিকটিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনাই হয়নি,” বললেন উষা (আর্বান স্যোশাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট, USHA) কর্মী সাবিনা ইয়াসমিন। বেলডাঙ্গা পৌরসভার ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটির দায়িত্বপ্রাপ্ত এই স্বাস্থ্যকর্মী পারিকে আরও জানালেন, “মেনোপজের সময়ে এই মহিলাদের শারীরিক সমস্যাগুলি আরও জটিল আকার ধারণ করে। মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য সবচাইতে বেশি জরুরি দুটি জিনিস ক্যালসিয়াম আর আয়রনের চরম ঘাটতির দরুণ রক্তাল্পতা আর হাড়ের নানান রোগ শরীরে দানা বাঁধতে থাকে।” সাবিনা আফশোস করছিলেন, যেহেতু স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে তাঁদের কাজ প্রসূতি এবং শিশুর যত্নের মধ্যেই সীমিত, তাই এই বয়স্ক মহিলাদের জন্য তাঁরা তেমন কিছুই করে উঠতে পারেন না।
রাষ্ট্র এবং শিল্পক্ষেত্র, উভয়ের কাছেই ব্রাত্য মহিলা বিড়ি শ্রমিকরা কোথাওই আর আশার আলো দেখছেন না। এই জমাট আঁধার যে তনুজা বিবির মতো মহিলাদের জীবনে কতখানি হতাশার জন্ম দিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠল যখন এই প্রতিবেদক জানতে চাইলেন কর্মক্ষেত্রে কোনও সুযোগসুবিধা তাঁরা পান কি না। একরাশ বিরক্তি গলায় তনুজা বিবি বললেন, “আজ অবধি কোনও বাবুর [কোম্পানির ঠিকাদার] টিকিই দেখতে পেলাম না।”
“বহুদিন আগে একবার বিডিও অফিস থেকে বলল বিড়ির মেয়েদের নাকি ডাক্তার পরীক্ষা করবে। গেছিলাম আমরা সবাই। দেখেশুনে আমাদের এই বড়ো বড়ো ট্যাবলেট দিলো। যত্তসব অকাজের জিনিস,” এই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তনুজা জানালেন তারপর আর কেউই এসে খোঁজখবর নেয়নি। ওগুলো আদৌ মানুষের ট্যাবলেট ছিল কি না সেটা নিয়ে তনুজার ধন্দ কাটেনি। “আমার তো মনে হয় ওগুলো গরুর ট্যবলেট ছিল।”
পারি
এবং কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্টের গ্রামীণ ভারতের কিশোরী এবং তরুণীদের স্বাস্থ্য
সম্পর্কিত দেশব্যাপী রিপোর্টিং প্রকল্পটি পপুলেশন ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের
অংশ যার লক্ষ্য প্রান্তবাসী এই মেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের স্বর এবং যাপিত
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই অত্যন্ত জরুরি বিষয়টিকে ঘিরে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।
নিবন্ধটি
পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে
[email protected]
–
এই ইমেল
আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন
[email protected]
–
এই আইডিতে।