‘গান্ধি আর নেহরু আলবাত জানতেন আইন প্রণয়ন তথা সংবিধান রচনার কাজ আম্বেদকরকে ছাড়া অসম্ভব। ওই ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই ছিল। তাছাড়া এই কাজের জন্য তিনি কারও কাছে হাত পাতেননি।’
শোভারাম গেহেরওয়ার, যাদুগর বস্তি, আজমের, রাজস্থান।

‘আমাদের বোমা বানানোর ডেরাটা ইংরেজরা ঘিরে ফেলল। জায়গাটা ছিল আজমেরের কাছে পাহাড়ের উপর একটা জঙ্গলে। খুব কাছেই একটা পাহাড়ি ঝোরা, সেখানে পিপাসা মেটাতে আসত এক বাঘ, সে বাছাধন আবার জল খেয়ে চলেও যেত। সেয়ানা বাঘ জানত পিস্তল চালিয়ে শূন্যে গুলি ছুঁড়ব আমরা, অতএব জল-টল খেয়ে সে পত্রপাঠ বিদায় নিত। বাগড়া দিলে আমরা শূন্যে গুলি না ছুঁড়ে সোজা যে ওর দিকেই তাক করব ব্যাটা নির্ঘাৎ সেটা টের পেয়েছিল।

ওই দিন কেমন করে যেন ব্রিটিশরা আমাদের গোপন আস্তানার হদিশ পেয়ে ধাওয়া করল। ইংরেজ যুগ বলে কথা, অতএব ওদের লক্ষ্য করে আমাদের দিক থেকে বোমাবাজি চলল। অবশ্য আমি এতে হাত লাগাইনি, আমি নেহাতই বাচ্চা তখন। আমার চেয়ে বয়সে বড়ো বন্ধুরা ছিল ওই দলে। এমন সময় বাঘ বাছাধন জল খেতে হাজির হলেন।

এই দফায় বাঘ কিন্তু জল খেয়েই চম্পট দিল না, বরং ব্রিটিশ পুলিশের পিছু ধাওয়া করল। সব ব্যাটা ছত্রভঙ্গ হয়ে প্রাণপণে দৌড়তে লাগল। ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে জলজ্যান্ত বাঘ। খানকতক পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। খানকতক রাস্তায় গড়াগড়ি খেল। এই হাঙ্গামার মধ্যে দুইজন পুলিশ প্রাণে মরল। আবারও যে ঘুরে আমাদের ডেরা অবধি আসবে তেমন কলজে আর পুলিশগুলোর ছিল না। আমাদের ভয়ে ব্যাটারা থরহরিকম্প। তৌবা তৌবা! আমাদের ধাওয়া করে আর কাজ নেই।’

বাঘটি অবশ্য এই জগঝম্প থেকে বহাল তবিয়তেই চম্পট দিল। অতঃপর তার আগামীর জলপান জারি রইল।

এই হলেন বর্ষীয়ান স্বাধীনতা সংগ্রামী শোভারাম গেহেরওয়ার। ২০২২-এর ১৪ এপ্রিল আজমের শহরে তাঁর বাড়িতে বসে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ৯৬ বছর পার করে আসা এই মুক্তিযোদ্ধা। আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে যে দলিত বস্তিতে তাঁর জন্ম হয়েছিল, আজও সেটাই তাঁর ঠিকানা, এই পাড়া ছেড়ে আরও আরামদায়ক আস্তানায় উঠে যাননি। তিনি চাইলে তৎক্ষণাৎ এই বন্দোবস্ত করে দিতেন এখানকার দুইবারের নির্বাচিত পৌর-প্রতিনিধি। বিংশ শতাব্দীর তিন এবং চারের দশক জুড়ে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী সংগ্রামে তাঁর অংশগ্রহণের কথা প্রসঙ্গে যাবতীয় ঘটনাবলীর যে ছবি তুলে ধরলেন তাতে চোখের সামনে ফুটে উঠল দৃশ্যপট।

Shobharam Gehervar, the last Dalit freedom fighter in Rajasthan, talking to PARI at his home in Ajmer in 2022
PHOTO • P. Sainath

রাজস্থানের অন্তিম দলিত স্বাধীনতা সংগ্রামী শোভারাম গেহেরওয়ার, ২০২২ সালে পারির সঙ্গে নিজের বাড়িতে বসে কথা বলছেন

Shobharam lives with his sister Shanti in Jadugar Basti of Ajmer town . Shanti is 21 years younger
PHOTO • Urja

আজমের শহরের যাদুগর বস্তিতে বোন শান্তির সঙ্গে থাকেন শোভারাম গেহেরওয়ার। শান্তির সঙ্গে তাঁর দাদার বয়সের ফারাক ২১ বছর

এই যে গোপন ডেরা, এটা কি কোনও আন্ডারগ্রাউন্ড বোমা ফ্যাক্টরি?

‘আরে, ধুর, সে তো জঙ্গল। ফ্যাক্টরি আবার কোথায় . . . ‘ফ্যাক্টরি মেঁ তো কেঁইচি বনতি হ্যাঁয় [ফ্যাক্টরিতে তো কাঁচি-টাঁচি তৈরি হয়]। আমরা [আন্ডারগ্রাউন্ড বিপ্লবী বাহিনী] তো ওখানে বোমা বানাতাম।’

‘একবার, আমাদের ওখানে এলেন চন্দ্রশেখর আজাদ,’ প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা বলছিলেন। সেটা সম্ভবত ১৯৩০ বা ১৯৩১-এর এক্কেবারে গোড়ার দিকের কথা। সঠিক দিনক্ষণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গেল না। শোভারামজি বলে উঠলেন, ‘দেখুন, আমাকে কিন্তু সাল-তারিখ জিগাবেন না। জানেন তো, একটা সময়ে আমার কাছে সব ছিল – যাবতীয় কাগজ, আমার সমস্ত নোটপত্তর আর দলিল। এই ঘরেই সব থাকত। ১৯৭৫ সালে এখানে বন্যা হল, আর তার জেরেই আমার সব খোয়া গেল।’

চন্দ্রশেখর আজাদ ছিলেন সেই দলের একজন যাঁদের সঙ্গে যৌথভাবে ভগৎ সিং ১৯২৮ সালে হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন পুনর্সংগঠিত করেছিলেন। ১৯৩১-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি এলাহাবাদের অ্যালফ্রেড পার্কে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাত চলাকালীন নিজের আগ্নেয়াস্ত্রের শেষ গুলিটি চালিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। প্রাণ থাকতে ব্রিটিশের কাছে ধরা দেবেন না, নিজের এই প্রতিজ্ঞার মান রেখে চন্দ্রশেখর আজীবন ‘আজাদ’ রইলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৪।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অ্যালফ্রেড পার্কের নাম বদলে চন্দ্রশেখর আজাদ পার্ক করা হয়।

৯৮ বছর বয়সি এই স্বাধীনতা সংগ্রামী গান্ধি এবং আম্বেদকরের স্বঘোষিত অনুগামী। তাঁর কথায়, ‘যে আদর্শ আমার মনে ধরেছে, তাকেই আমি মেনে চলেছি’

ভিডিওটি দেখুন: ৯৮ পার করে রাজস্থানের স্বাধীনতা সংগ্রামী। ‘গান্ধি আর আম্বেদকরের মধ্যে একজনকে বাছতে হবে কেন?’

‘আজাদ এলেন, জায়গাটা [বোমা তৈরির শিবির] ঘুরে দেখলেন’ আজমেরের বাড়িতে বসে আমাদের বলছিলেন শোভারামজি। ‘কেমন করে বোমা আরও কার্যকরী হতে পারে সেসব নিয়ে আমাদের খানিক বুদ্ধি দিলেন। তাঁর কাছ থেকে আমরা নতুন কৌশল শিখলাম। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যেখানে কাজ করছিলেন, সেই স্থানে তিনি তিলক কেটে দিলেন। তারপর আমাদের কাছে সেই বাঘের সঙ্গে মোলাকাত করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। আমরা বললাম বাঘের দেখা পেতে হলে তো ওখানেই রাত কাটাতে হবে।

‘যথারীতি বাঘ এল আর চলেও গেল, আমরা শূন্যে গুলি ছুঁড়লাম। এইটা কেন করছি জানতে চাইলেন চন্দ্রশেখরজি। আমরা বললাম আমাদের থেকে বিপদ আছে বুঝে বাঘ যাতে নিজের রাস্তা দেখে।’ এমন এক বন্দোবস্ত যাতে বাঘের তৃষ্ণা নিবৃত্তিও হয় আর এই যোদ্ধাদের নিরাপত্তাও না বিঘ্নিত হতে পারে।

‘তবে আপনাকে সেই যে অন্য আরেকদিকের কথা বলছিলাম না, যেদিন ব্রিটিশরা প্রথমবার ওখানে এসে হাজির হল, সেদিন একেবারে হুলুস্থুল আর বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত হয়েছিল।’

এই বিচিত্র খণ্ডযুদ্ধ আর আনুষঙ্গিক হাঙ্গামায় তাঁর নিজের কোনও ভূমিকা ছিল না বলে শোভারামজির দাবি। তবে হ্যাঁ, যাবতীয় ঘটনার তিনি সাক্ষী ছিলেন। আজাদ যখন শিবিরে এসেছিলেন, সেসময় শোভারামজির বয়স বড়ো জোর পাঁচ। তাঁর কথায়, ‘ছদ্মবেশে এসেছিলেন উনি। পথ দেখিয়ে জঙ্গল আর পাহাড়ের মধ্যে বোমা তৈরির ডেরা অবধি তাঁকে পৌঁছে দেওয়াটাই আমাদের কাজ ছিল। আমাদের মধ্যে দুজন ছেলে মিলে তাঁকে এবং তাঁর এক সঙ্গীকে ক্যাম্পে নিয়ে গেছিলাম।’

বেশ চতুর কৌশল কিন্তু। সরল দর্শন কাকা তাঁর ভাগ্নেদ্বয়কে নিয়ে হাওয়া খেতে বেরোনোর সাদামাটা দৃশ্য।

ফ্যাক্টরি নয়, কর্মশালাটি দেখলেন আজাদ আর আমাদের পিঠ চাপড়ে দিলেন। তারপর বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বললেন: “আপ তো শের কে বচ্চে হ্যাঁয় [তোমরা তো বাঘের বাচ্চা]। তোমরা খুব সাহসী, প্রাণের ভয় নেই।” এমনকি আমাদের পরিবারের লোকজনও বলতেন, “তোরা মরলে দুঃখ নেই। মরবি তো দেশের মুক্তির জন্যই।”

‘Don’t ask me about exact dates,’ says Shobharam. ‘I once had everything, all my documents, all my notes and records, right in this house. There was a flood here in 1975 and I lost everything'
PHOTO • Urja

শোভারাম গেহেরওয়ার বলছেন, ‘দেখুন, আমাকে কিন্তু সাল-তারিখ জিগাবেন না। জানেন তো, একটা সময়ে আমার কাছে সব ছিল – যাবতীয় কাগজ, আমার সমস্ত নোটপত্তর আর দলিল। এই ঘরেই সব থাকত। ১৯৭৫ সালে এখানে বন্যা হল, আর তার জেরেই আমার সব খোয়া গেল’

*****

‘ওই বুলেট আমাকে মারতে বা পুরোপুরি পঙ্গু করে দিতে পারেনি। আমার পায়ে লেগে গুলিটা বেরিয়ে যায়। দেখতে পাচ্ছেন?’ ডান পায়ে হাঁটুর একটু নিচেই যেখানে গুলি লেগেছিল সেই স্পষ্ট ক্ষতচিহ্ন আমাদের দেখালেন। বিঁধে যায়নি বুলেটটি পায়ে। তবে বিশাল চোট পেয়েছিলেন। বললেন, ‘আমার জ্ঞান ছিল না, সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেল আমাকে।’

সালটা ১৯৪২, তখন অবশ্য তিনি ‘অনেক বড়ো’, ১৬ ছুঁই ছুঁই, প্রত্যক্ষ সংঘাতে তখন পুরোদস্তুর সক্রিয়। আজ, ৯৬ বছর পেরিয়ে এসে শোভারাম গেহেরওয়ার নিজের কায়িক স্বাস্থ্য বজায় রেখেছেন — ছয় ফিটের ওপর লম্বা, সবল, টানটান ঋজু আর সক্রিয়। রাজস্থানের আজমের শহরে নিজের বাসায় বসে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। নয় দশক জোড়া তাঁর ঘটনাবহুল জীবনের গল্প করছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি নিজের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার কথা বলছেন আমাদের।

‘আমাদের একটা সভা ছিল, কেউ একটা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে “একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল”। যথারীতি পুলিশ এসে কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে তুলে নিয়ে যায়। ওরাও পাল্টা চড়াও হয়ে পুলিশকে পেটাতে শুরু করল। এইসব কাণ্ড ঘটছিল স্বতন্ত্রতা সেনানী ভবনে। এই নামটা অবশ্য স্বাধীনতার পর দেওয়া হয়েছিল। তখন কোনও নির্দিষ্ট নাম ছিল না বাড়িটার।

‘এই জনসভাগুলিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আম জনতাকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন বিষয়ে অবহিত করতেন। ইংরেজ সরকারের স্বরূপ তুলে ধরতেন মানুষের সামনে। রোজ আজমের শহরের বাসিন্দারা বেলা তিনটে নাগাদ জমায়েত করতেন। একটাবারের জন্যও আমরা কাউকে কোনও ডাক পাঠাতাম না, সক্কলে নিজের গরজেই আসতেন। এমনই একটা সভায় ওই জ্বালাময়ী ভাষণ দেওয়া হয়, তারপরেই গুলি চলে।

হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর পুলিশ এসে হাজির হল আমার কাছে। ওদের কাজ ওরা করছিল করছিল; কীসব যেন লেখালিখি করল। আমাকে অবশ্য গ্রেফতার করেনি। তাদের বক্তব্য: “শরীরে বুলেট লেগেছে। এতেই ওর ঢের শাস্তি হয়েছে।”

The freedom fighter shows us the spot in his leg where a bullet wounded him in 1942. Hit just below the knee, the bullet did not get lodged in his leg, but the blow was painful nonetheless
PHOTO • P. Sainath
The freedom fighter shows us the spot in his leg where a bullet wounded him in 1942. Hit just below the knee, the bullet did not get lodged in his leg, but the blow was painful nonetheless
PHOTO • P. Sainath

প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী ১৯৪২ সালে ডানপায়ে যেখানে গুলি লেগেছিল, আজও সুস্পষ্ট সেই ক্ষতস্থান আমাদের দেখালেন। হাঁটুর একটু নিচেই বুলেটটি আঘাত করলেও, বিঁধে যায়নি। যদিও বড্ড যন্ত্রণাময় ছিল এই চোট

শোভারামজির মতে এতে দয়ামায়ার কোনও ব্যাপার ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে ওদের যে স্বীকার করতে হত যে পুলিশ শোভারামের উপর গুলি চালিয়েছে। তাছাড়া তিনি নিজে তো কোনও প্ররোচনামূলক ভাষণ দেননি। কারও বিরুদ্ধে কোনওরকম হিংসাত্মক পদক্ষেপও নেননি।

‘ব্রিটিশরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তৎপর ছিল, আমি মরলেও ওরা থোড়াই কেয়ার করত। বছর বছর কত লক্ষকোটি মানুষ মরার মূল্যেই তো এসেছে দেশের স্বাধীনতা। কুরুক্ষেত্রর কথাই ধরুন, সূর্যকুণ্ড যোদ্ধাদের রক্তে ভরে গিয়েছিল। এই কথাটা সর্বদা মনে রাখবেন। ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার কাজটা আমাদের জন্য আদৌ সহজ ছিল না। রক্ত ঝরিয়েছি আমরা। এত রক্ত তো কুরুক্ষেত্রও দেখেনি। আর এ তো শুধু আজমেরের কথা নয়, সারা দেশ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। মুম্বই, কলকাতা . . .

‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি বিয়ে করব না বলে স্থির করি। কে বলতে পারে আমি এই সংগ্রামের বলি হব না? পরিবারের দেখভাল করতে গেলে আমি দেশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে পারব না।’ বর্তমানে এই বর্ষীয়ান যোদ্ধা তাঁর বোন শান্তি এবং তাঁর নাতিনাতনিদের সঙ্গেই থাকেন। ৭৫ বছর বয়সি শান্তি তাঁর দাদার থেকে বয়সে ২১ বছরের ছোট।

‘একটা কথা বলব আপনাদের?’ চকিতে প্রশ্ন করেন শান্তি। খুব শান্ত আর আশ্বস্ত স্বরে কথা বলছিলেন তিনি। ‘শুধুমাত্র আমার জন্যই এই লোকটা বেঁচে আছে। আমি আর আমার সন্তানেরা আজীবন ওর দেখাশোনা করেছি। বিশ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়, তার ক’বছর পরেই আমি বিধবা হই। মৃত্যুর সময়ে আমার স্বামীর বয়স ছিল ৪৫। সবসময় আমি শোভারামের যত্নআত্তি করেছি, তার জন্য আমার গর্বের শেষ নেই। এখন আমার নাতি আর নাতবৌয়েরাও ওর দেখাশোনা করে।

‘কিছুদিন আগে ওর বেজায় শরীর খারাপ হয়েছিল। একেবারে যায়-যায় অবস্থা। ২০২০ সালের ঘটনা। আমি আমার দু’হাতে ওকে আঁকড়ে রেখে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে গিয়েছি। দেখুন দেখি, এখন কেমন সুস্থসবল আছে।’

Shobharam with his family outside their home in Ajmer. In his nineties, the over six feet tall gentleman still stands ramrod straight
PHOTO • P. Sainath

আজমের শহরে নিজের ভিটেবাড়ির সামনে সপরিবারে শোভারাম গেহেরওয়ার। ছয় ফিটের উপর লম্বা নবতিপর এই মুক্তিযোদ্ধা আজও টানটান ঋজু হয়ে দাঁড়ান

*****

আচ্ছা, ওই গোপন আস্তানায় তৈরি বোমাগুলো দিয়ে কী হত?

‘যেখানে বোমার দরকার পড়ত, আমরা সেখানেই হাজির হতাম। ভরপুর চাহিদা ছিল। আমার তো মনে হয় বোমা সঙ্গে করে আমি মোটামুটি সারা দেশটাই চষে ফেলেছি। বোমা পাচারের কাজে ট্রেনেই যাতায়াত করতাম আমরা। তারপর স্টেশনে নেমে অন্য কোনও বাহন নিতাম। ব্রিটিশ পুলিশও আমাদের ভয়ে তটস্থ থাকত।’

বোমাগুলো দেখতে কেমন ছিল?

‘এই তো এইরকম [ছোটো ছোটো বলয়ের আকার হাতে করে দেখালেন]। সাইজে, এই ধরুন গ্রেনেডের সমান। তাছাড়া কোন দরকারে আর কতক্ষণে বোমা ফাটানো হবে তার উপরেও আকার প্রকার নির্ভর করত। কোনওটার তৎক্ষণাৎ বিস্ফোরণ করতে হবে, কোনওটা আবার চারদিন সময় নেবে। কেমন করে বোমা বসাতে হবে ইত্যাদি যাবতীয় খুঁটিনাটি নেতারা সবিস্তারে বুঝিয়ে শিখিয়ে তবেই আমাদের পাঠাতেন।

তখন আমাদের চাহিদা তুঙ্গে। কর্ণাটক গেছি। মহীশুর, বেঙ্গালুরু কতশত জায়গাতেই না গেছি। জানেন তো, এই আজমের শহর ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র। যেমনটা ছিল বেনারস [বারাণসী]। এছাড়াও ছিল গুজরাতের বরোদা এবং মধ্য প্রদেশের দামোহ। আজমেরকে ঘিরে লোকের খুব সমীহ ছিল, তাদের মতে ভারত ছাড়ো আন্দোলন বিরাট শক্তি অর্জন করেছিল এই শহর জুড়ে, আর এখানকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেখানো পথ অনুসরণ করতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।’

আচ্ছা, ওই ট্রেনযাত্রাগুলো ঠিক কেমন করে সংগঠিত হত? ধরপাকড় এড়িয়ে, পুলিশের চোখে তাঁরা ধুলোই বা দিতেন কেমন করে? ডাক ব্যবস্থার উপর ব্রিটিশ সরকারের যে নজরদারি, তাকে এড়িয়ে গোপন চিঠি এক নেতার থেকে অন্য নেতা অবধি পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা হরকরার ভূমিকা পালন করছেন বলে ইংরেজরা হামেশাই সন্দেহ করত। একথাও তারা আলবাত জানত স্বদেশী করা তরুণদের অনেকেই বোমা পাচার করে।

The nonagenarian tells PARI how he transported bombs to different parts of the country. ‘We travelled to wherever there was a demand. And there was plenty of that. Even the British police were scared of us'
PHOTO • P. Sainath
The nonagenarian tells PARI how he transported bombs to different parts of the country. ‘We travelled to wherever there was a demand. And there was plenty of that. Even the British police were scared of us'
PHOTO • P. Sainath

প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী পারিকে বলছিলেন কেমন করে বোমা সঙ্গে করে তিনি মোটামুটি সারা দেশটাই চষে ফেলেছিলেন। ‘যেখানে বোমার দরকার পড়ত, আমরা সেখানেই হাজির হতাম। ভরপুর চাহিদা ছিল। ব্রিটিশ পুলিশও আমাদের ভয়ে তটস্থ থাকত’

‘তখন ডাকে পাঠানো চিঠি খতিয়ে দেখা হত, খুলে পড়া হত। এইটাকে এড়ানোর জন্যই আমাদের নেতারা তরুণদের একটা দল গড়ে হরকরার কাজে আমাদের তালিম দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় চিঠি পোঁছানোর দায়িত্বভার দিতেন। “এই চিঠি তুমি নিয়ে গিয়ে বরোদায় ডঃ আম্বেদকরের হাতে তুলে দেবে।” অথবা অন্য আরেকজন ব্যক্তির কাছে, কোনও অন্য প্রান্তে। আমরা আমাদের অন্তর্বাসের মধ্যে উরুসন্ধিতে চিঠি চালান করে দিতাম।

‘ব্রিটিশ পুলিশ আমাদের দেখতে পেলেই দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাত। ট্রেনে চড়েছি নজর করলেই হয়তো পাকড়াও করে জানতে চাইল: “এই ব্যাটা তুই যে বললি অমুক জায়গায় যাচ্ছিস, এখন যে বড়ো অন্য জায়গায় যাওয়া হচ্ছে।” আমরাও জানতাম আর আমাদের নেতারাও জানতেন এসব হবেই। কাজেই আমরাও গন্তব্য বেনারস হলে শহরের বেশ খানিকটা আগেই নেমে পড়তাম।

‘আগেভাগেই আমাদের কাছে নির্দেশ থাকত ডাক পৌঁছাতে হবে ঠিক বেনারসেই। নেতারা সাবধান করে দিতেন: “শহর থেকে একটু দূরে চেন টেনে ট্রেন থেকে নেমে যাবে।” আমরা সেটাই করতাম।

‘তখনকার দিনে তো রেলগাড়ি বলতে বাষ্পইঞ্জিন। সটান ইঞ্জিনঘরে ঢুকে চালকের সামনে পিস্তল তাক করে হুঁশিয়ারি দিতাম, “আগে তোমাকে মারব, তারপর আমরাও মরব।” চালক বাবাজি তখন ট্রেনে জায়গা করে দিত। সিআইডি, পুলিশ, আরও সবাই মাঝেমাঝে টহলদারি করতে এসে দেখত মূল বগিতে সাধাসিধে সুবোধ মানুষজন বসে আছে।

যেমন আদেশ তেমন কাজ, নির্দিষ্ট স্থানে এসেই চেন টেনে দিতাম। তখন ট্রেন অনেকক্ষণ থামত। তারপর আঁধার ঘনালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অন্য একটা দল ঘোড়া নিয়ে হাজির হতেন। আমরা সেই ঘোড়ায় চেপে চম্পট দিতাম। ট্রেন বেনারসে ঢোকার অনেক আগেই আমরা শহরে পৌঁছে যেতাম!

Former Prime Minister Indira Gandhi being welcomed at the Swatantrata Senani Bhavan
PHOTO • P. Sainath

পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে স্বতন্ত্রতা সৈনিক ভবনে স্বাগত জানানো হচ্ছে

‘একবার আমার নামে হুলিয়া জারি হল। বিস্ফোরক পাচার করার সময় আমরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লাম। আমরা ওসব ফেলে পগারপার হলাম। বিস্ফোরকগুলো পুলিশের হাতে এল। আমরা যেসব মালপত্তর ব্যবহার করছি তার রকমসকম ওরা খুঁটিয়ে দেখল। তারপর আমাদের পেছনে পড়ে গেল। এই মর্মে সিদ্ধান্ত হল যে সত্বর আমাদের আজমের ছেড়ে পালাতে হবে। আমাকে বম্বে [তৎকালীন নাম] পাঠিয়ে দেওয়া হল।

মুম্বইয়ে আপনার লুকানোর আর থাকার ব্যবস্থা কে করল?

‘পৃথ্বীরাজ কাপুর,’ সদর্পে বলে ওঠেন তিনি। ১৯৪১ সাল, এই মহান অভিনেতা ইতিমধ্যেই খ্যাতির মধ্যগগণে বিচরণ করছেন। তিনিই নাকি ১৯৪৩ সালে গঠিত ইন্ডিয়ান পিপলস্‌ থিয়েটর আয়াসোসিয়েশন বা আইপিটিএ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন বলে শোনা যায়, যদিও হলপ করে বলা কঠিন। পৃথ্বীরাজ কাপুর-সহ মুম্বই নাট্য ও চলচ্চিত্র জগতের বহু নামী তারকা স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। অনেকেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করেছিলেন।

‘আমাকে তিনি তাঁর এক আত্মীয়, ত্রিলোক কাপুরের কাছে পাঠালেন। পরবর্তীকালে তিনি হর হর মহাদেব নামে একটি ফিল্মে অভিনয়ও করেন।’ শোভারাম অবগত ছিলেন না, কিন্তু আদতে এই ত্রিলোক হলেন পৃথ্বীরাজ কাপুরের সহোদর। তিনিও যে যুগের নামজাদা অভিনেতাদের একজন ছিলেন। ১৯৫০ সালের সর্বাধিক সফল ছায়াছবি ছিল হর হর মহাদেব।

‘পৃথ্বীরাজ আমাদের একটা গাড়ি দিলেন, ওতে চেপেই তো বম্বে ঘুরতাম। মাস দুয়েক ছিলাম এই শহরে। তারপর আমাদের ফিরতে হল। অন্যান্য অ্যাকশনে আমাদের দরকার ছিল। ইস, আপনাকে যদি সেই ওয়ারেন্টটা দেখাতে পারতাম। আমার নামেই জারি হয়েছিল। আরও বেশকিছু উঠতি ছেলেদের নামে হুলিয়া জারি হয়েছিল।

‘কিন্তু ১৯৭৫-এর বানে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেল। আমার যত কাগজপত্র নষ্ট হল, কত সার্টিফিকেট চলে গেল, এর মধ্যে কয়েকটা তো জহরলাল নেহরুর কাছ থেকে এসেছিল। আপনি তো সেসব কাগজপত্তর দেখলে পাগল হয়ে যেতেন। কিন্তু সব যে ভেসে গেল বানের জলে,’ শোভারমজির গলায় বিষাদের সুর।

*****

Shobharam Gehervar garlands the statue in Ajmer, of one of his two heroes, B. R. Ambedkar, on his birth anniversary (Ambedkar Jayanti), April 14, 2022
PHOTO • P. Sainath
Shobharam Gehervar garlands the statue in Ajmer, of one of his two heroes, B. R. Ambedkar, on his birth anniversary (Ambedkar Jayanti), April 14, 2022
PHOTO • P. Sainath

নিজের প্রিয় দুই নায়কের একজন, বি আর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০২২-এর ১৪ এপ্রিল আজমের শহরে বাবাসাহেবের মূর্তিতে মাল্যদান করছেন শোভারাম গেহেরওয়ার

‘গান্ধি আর আম্বেদকরের মধ্যে একজনকে বাছতে হবে কেন? আমি তো দুজনকেই বাছতে পারি, তাই না?’

আমরা এখন আজেমের শহরে আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছি। আজ এই মহামানবের ১৩১তম জন্মবার্ষিকী। আমরা শোভারামজিকে এখানে নিয়ে এসেছি। প্রবীণ গান্ধিবাদী এই যোদ্ধা আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন যাতে আমরা তাঁকে এই স্থানে পৌঁছে দিই, বাবাসাহেবের মূর্তিতে তিনি মাল্যদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আমরা তখন জানতে চেয়েছিলাম দুই আদর্শ দেশনেতার মধ্যে তিনি কার অনুসারী।

নিজের বাড়িতে বসে তিনি যা বলেছিলেন, সেকথাটাই আবার বললেন একটু ঘুরিয়ে। ‘দেখুন, আম্বেদকর এবং গান্ধি উভয়ের কর্মকাণ্ডই অসামান্য। দুদিকে দুটো চাকা থাকলে তবেই না গাড়ি চলবে। এতে বিরোধ কোথায়? গান্ধির আদর্শে যা কিছু আমার মূল্যবান ঠেকেছে, আমি তাকে গ্রহণ করেছি। আম্বেদকরের যে শিক্ষা আমার মননে ধরেছে, আমি তাকেও গ্রহণ করেছি।’

গান্ধি আর আম্বেদকর, উভয়েই আজমের শহরে এসেছিলেন বলে জানালেন তিনি। আম্বেদকরের বেলায়, ‘দর্শন আর মাল্যদান করার তাগিদে আমরা সব রেলস্টেশনে হাজির হলাম। সেবার তিনি ট্রেনে করে অন্য কোনও গন্তব্যে যাওয়ার পথে আজমেরের উপর দিয়ে গিয়েছিলেন।’ আজমের শহরে এই নেতাদের আগমনকালে শোভারাম নিতান্তই শিশু ছিলেন।

‘১৯৩৪ সাল, আমি তখন খুব ছোট্ট। সে বছর মহাত্মা গান্ধি এখানে এসেছিলেন। এই মুহূর্তে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি আমরা, ঠিক এখানেই এসেছিলেন তিনি। এই যাদুগর বস্তিতেই।’ তখন শোভারামের বয়স মোটে আট।

‘আম্বেদকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল যখন আমাদের নেতারা বরোদায় [অধুনা ভদোদরা] বাবাসাহেবের কাছে জরুরি কিছু চিঠিপত্র পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন আমার উপর। ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠালে তো পুলিশ খুলে পড়বে আমাদের সব চিঠিচাপাটি। সেইজন্য গুরুত্বপূর্ণ চিঠি এবং কাজগপত্র আমরা সশরীরে পৌঁছে দিয়ে আসতাম। তিনি আমার মাথা চাপড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি বুঝি আজমেরে থাক?”

Postcards from the Swatantrata Senani Sangh to Shobharam inviting him to the organisation’s various meetings and functions
PHOTO • P. Sainath
Postcards from the Swatantrata Senani Sangh to Shobharam inviting him to the organisation’s various meetings and functions
PHOTO • P. Sainath
Postcards from the Swatantrata Senani Sangh to Shobharam inviting him to the organisation’s various meetings and functions
PHOTO • P. Sainath

স্বতন্ত্রতা সেনানী সংঘ থেকে শোভারাম গেহেরওয়ারকে সংঘের সভা তথা অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে পাঠানো কয়েকটি পোস্টকার্ড

তিনি জানতেন যে শোভারাম কোলি সম্প্রদায়ের সন্তান?

‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম। কিন্তু এ নিয়ে তিনি বিশেষ কথাবার্তা বলেননি। এইসব ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। বিরাট বিদ্বান মানুষ ছিলেন তিনি। আমাকে বলেছিলেন যদি কখনও দরকার হয়, আমি যেন তাঁকে চিঠি লিখি।’

‘দলিত’ বা ‘হরিজন’ দুইয়ের কোনও তকমাতেই শোভারামজির আপত্তি নেই। তাছাড়া, ‘কোলি হলে সেটাই বলুক না। নিজের জাত লুকোতেই বা হবে কেন? হরিজন বা দলিত, যেটাই বলি না কেন, আদতে কোনও ফারাক নেই। যে নামেই ডাকা হোক পরিচিতি তো সেই তফসিলি জাতি-ই থাকবে।’

শোভারামজির মা-বাবা ছিলেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। তাঁরা মূলত রেলের প্রকল্পগুলিতে কায়িক শ্রম-নির্ভর মজুর ছিলেন।

‘সবাই একবেলা মাত্র খেয়ে থাকত। মদ আমাদের পরিবারে ঢুকত না,’ জানালেন তিনি। আমাদের মনে করিয়ে দিলেন যে তিনি সেই সমাজের মানুষ, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি [অধুনা পূর্বতন] রামনাথ কোভিন্দ যে সমাজ থেকে এসেছেন। একসময় তিনিই আমাদের অখিল ভারতীয় কোলি সমাজের সভাপতি ছিলেন।’

শোভারামের সম্প্রদায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। খুব সম্ভব সেইজন্যই তিনি বহু বিলম্বে স্কুলে ভর্তি হন। ‘হিন্দুস্তানে উঁচুজাতি, ব্রাহ্মণ, জৈন ইত্যাদিরা ইংরেজের গোলামে পরিণত হয়েছিল। চিরকাল এরাই অস্পৃশ্যতাকে জিইয়ে রেখেছে।

‘একটা কথা আমি আপনাকে হলফ করে বলতে পারি, তৎকালীন কংগ্রেস পার্টি আর আর্য সমাজ না থাকলে এখানকার নিম্নবর্গের অধিকাংশ মানুষই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যেত। ওই মান্ধাতার যুগের বস্তাপচা রীতি নিয়ে চললে আজও স্বাধীনতা আমাদের অধরাই থেকে যেত।

The Saraswati Balika Vidyalaya was started by the Koli community in response to the discrimination faced by their students in other schools. Shobharam is unhappy to find it has been shut down
PHOTO • P. Sainath

বিভিন্ন স্কুলে পাঠরত নিজেদের সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের বৈষম্যের শিকার হতে দেখে কোলি সমাজ সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। স্কুলের ঝাঁপ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যথিত শোভারাআম গেহেরওয়ার

The school, which once awed Mahatma Gandhi, now stands empty and unused
PHOTO • P. Sainath

যে বিদ্যালয় দেখে গান্ধি নিজে বিস্মিত হয়েছিলেন, আজ তা রিক্ত, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে

‘বুঝলেন তো, সেইসময় অচ্ছুতদের কেউই স্কুলে ভর্তি নিত না। বলত, আরে অমুক হল কঞ্জর, তমুক হল ডোম ইত্যাদি। শিক্ষাঙ্গনের বাইরে থাকাই আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেইজন্যেই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হতেই আমার বয়স ১১ পেরিয়ে যায়। আর্য সমাজের সদস্যরা সেইসময়ে খ্রিস্টানদের মোকাবিলা করতে উঠেপড়ে লাগে। লিংক রোডের কাছে আমাদের জাতের বহু মানুষের বসত, তাদের অনেকেই ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়ে যায়। আতান্তরে পড়ে কিছু কিছু হিন্দু গোষ্ঠী তখন আমাদের গ্রহণ করতে শুরু করে। মায় তারা আমাদের দয়ানন্দ অ্যাংলো বেদিক [ডিএভি] স্কুলে দাখিলা নিতেও উৎসাহিত করতে থাকে।

কিন্তু বৈষম্য, ভেদাভেদ ঘুচল না, অবশেষে কোলি সমাজ নিজের স্কুল পত্তন করল।

‘এই সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়েই তো তো গান্ধি এসেছিলেন। আমাদের সমাজের বরিষ্ঠ সদস্যরা যৌথভাবে এই স্কুলের পত্তন করেন। আজও চালু আছে বিদ্যালয়টি। আমাদের কাজকর্ম দেখে গান্ধি হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। “আপনারা অসাধারণ কাজ করেছেন। আপনারা আমার আশাতীত কাজ করে দেখিয়েছেন,” বলেছিলেন তিনি আমাদের।

‘কোলি সমাজের হাতে প্রতিষ্ঠা হলেও এই স্কুলে অন্যান্য জাতের পড়ুয়ারাও যোগ দিল। প্রথমদিকে যাবতীয় পড়ুয়াই ছিল তফসিলি জাতিভুক্ত। পরবর্তীকালে, আরও বহু সম্প্রদায়ের সমাগম হল। শেষ পর্যন্ত স্কুলের দখল নিল [উঁচু-জাতের] আগরওয়ালরা। অবশ্য নিবন্ধিত ছিল আমাদের নামেই। তবে পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ ওদের হাতে চলে যায়।’ আজও তিনি মাঝেসাঝে চক্কর দেন স্কুলে, চক্কর দিতেন বলা ভালো। কোভিড-১৯ অতিমারি এসে তো সব স্কুলের ঝাঁপই বন্ধ হয়ে যায়।

‘হ্যাঁ, এখনও যাই বটে, তবে এখন তো ওরাই [উচ্চবর্ণ] চালায়। ওরা এখন ওখানে একটা বিএড কলেজও চালু করেছে।

‘আমি পড়াশোনার দৌড় ক্লাস নাইন পর্যন্ত। এই নিয়ে আমার আক্ষেপের শেষ নেই। আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আইএএস অফিসার হয়েছে। আরও অনেকে অনেক নামধাম করে উঁচুতে উঠেছে। আমি অবশ্য নিজের জীবনটা সেবাকর্মেই উৎসর্গ করেছি।

Former President of India, Pranab Mukherjee, honouring Shobharam Gehervar in 2013
PHOTO • P. Sainath

পূর্বতন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ২০১৩ সালে শোভারাম গেহেরওয়ারকে সম্মান জ্ঞাপন করছেন

একদিকে স্বঘোষিত গান্ধিবাদী, অন্যদিকে ডক্টর আম্বেদকরের একনিষ্ঠ অনুসারী শোভারাম গেহেরওয়ার আমাদের বলছেন: ‘গান্ধিবাদ আর ক্রান্তিবাদ [গান্ধির আদর্শ আর বৈপ্লবিক আদর্শ], দুই পন্থাতেই আমার বিচরণ। দুইয়ের মধ্যে নিবিড় যোগ।’ প্রাথমিকভাবে গান্ধিবাদী হলেও, আদতে রাজনীতির ত্রি-ধারা জুড়েই তাঁর বহতা অবস্থান।

গান্ধির প্রতি যতই প্রীতি তথা ভক্তি থাকুক না কেন, শোভারামজি কখনই তাঁকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করেন না। বিশেষ করে যখন আম্বেদকরের নিরিখে গান্ধিকে দেখেন।

‘আম্বেদকরের অবস্থান গান্ধিকে সন্ত্রস্ত করেছিল। তফসিলি জাতির পরিচয়ধারী সব মানুষ এবার বাবাসাহেবের দিকে ধেয়ে যাবে ভেবে ভীত ছিলেন। নেহরুও সেটাই ভেবেছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল এর জেরে বৃহত্তর আন্দোলন শক্তি হারাবে। অথচ তাঁরা দুজনেই জানতেন আম্বেদকর অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর সবাই আসন্ন সংঘাতের ভয়ে ত্রস্ত ছিল।

‘গান্ধি আর নেহরু আলবাত জানতেন আইন প্রণয়ন তথা সংবিধান রচনার কাজ আম্বেদকরকে ছাড়া অসম্ভব। ওই ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই ছিল। তাছাড়া এই কাজের জন্য তিনি কারও কাছে হাত পাতেননি। বরং সবাই তাঁর কাছেই করজোড়ে প্রার্থনা করেছে যেন তিনি আমাদের আইন সংহিতার খসড়া রচনার দায়ভার গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎ ব্রহ্মা যেন, একটা দুনিয়া গড়ে ফেললেন। বুদ্ধিদীপ্ত, বিদ্বান এক মানুষ। বলিহারি মানুষ কিন্তু আমরা যত হিন্দুস্তানি, একেবারে যাচ্ছেতাই। ১৯৪৭-এর আগে-পরে কি দুর্ব্যবহারটাই না করেছি আমরা তাঁর সঙ্গে। তাঁকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বয়ান থেকেও দূরে রাখা হয়েছে। হ্যাঁ, তিনিই আমাকে অনুপ্রেরণা জোগান, আজকের দিনে দাঁড়িয়েও।

শোভারামজি আরও বলছেন, ‘বুঝলেন তো আমি দেহমনে পাক্কা কংগ্রেসি। আগমার্কা কংগ্রেসি বলতে যা বোঝায়।’ তাঁর ইঙ্গিত, পার্টির বর্তমান দিশা ঘিরে তাঁর অবস্থান বেশ কড়া। তিনি মনে করেন ভারতের বর্তমান নেতৃত্ব আদতে ‘দেশকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে’। আর তাই, ‘কংগ্রেস যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দেশের সংবিধান রক্ষার কাজে ব্রতী হয়’। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের প্রশংসা করে তিনি বললেন, ‘মানুষের কথা ভাবেন উনি। আমাদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খোঁজখবর নেন।’ প্রসঙ্গত, সমগ্র দেশের মধ্যে এই রাজ্যেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রাপ্য ভাতা অংকের নিরিখে সর্বাধিক। ২০২১ সালের মার্চ মাসে গেহলট সরকার ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০,০০০ টাকা করে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কেন্দ্র সরকার প্রদত্ত সর্বাধিক ভাতা ৩০,০০০ টাকা।

নিজেকে গান্ধিবাদী বলেই আবারও ঘোষণা করলেন শোভারামজি—তখন তিনি আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করে নেমে আসছেন।

‘দেখুন, আমার যাঁকে ভালো লাগে, আমি তাঁকেই অনুসরণ করি। যাঁদের সঙ্গে আমার আদর্শ মেলে, আমি তাঁদের দেখানো পথে চলি। আর এমন মানুষের সংখ্যা বহু। না আমি এই পন্থায় কোনও সমস্যা দেখি, আর না আমি এই মানুষদের মধ্যে সমস্যা দেখি।

*****

‘This [Swatantrata Senani] bhavan was special. There was no single owner for the place. There were many freedom fighters, and we did many things for our people,’ says Gehervar. Today, he is the only one looking after it
PHOTO • Urja

‘এই [স্বতন্ত্রতা সেনানী] ভবন খুব-ই অভিনব জায়গা ছিল। এটা কারও একার মালিকানাধীন ছিল না। অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, আমরা মানুষের স্বার্থে নানান কাজ করতাম,’ বলছেন শোভারাম গেহেরওয়ার। আজ তিনি একাই এই ভবনের দেখভাল করছেন

শোভারাম গেহেরওয়ার আমাদের নিয়ে চলেছেন স্বতন্ত্রতা সেনানী ভবনে। আজমের নিবাসী প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মিলনস্থল। শহরের কেন্দ্রে, ব্যস্ততায় সদা গমগমে বাজার এলাকায় অবস্থান এই ভবনের। রাস্তার প্রবল ভিড়ভাড় ঠেলে, ঝটিতি গলির মধ্যে ঢুকে পড়লেন যে সজ্জন বৃদ্ধ, তাঁর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমি তো রীতিমতো কুপোকাৎ। এই বয়সেও লাঠির বালাই নেই, ক্ষিপ্রগতিতে লম্বা লম্বা পায়ে আগুয়ান তিনি।

মাত্র একবারের জন্য তাঁকে অপ্রস্তুত হয়ে সামাল দিতে দেখলাম। তবে সেটা ঘটেছিল খানিক পরে, যখন আমরা তাঁর আশা আর গরবের স্কুলটি দেখতে গেলাম। গোটা গোটা অক্ষরে ‘সরস্বতী স্কুল বন্ধ পড়া হ্যাঁয়’ লেখা বিধির বিধান স্বরূপ দেওয়াল লিখন আমাদের গোচর হয়। স্কুল এবং কলেজটির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেছে। চিরতরে, জানালেন নিরাপত্তাকর্মীসহ আশপাশের মানুষজন। হয়তো শিগগির এখানে গজিয়ে উঠবে শাঁসালো কোনও নির্মাণ প্রকল্প।

স্মৃতিমেদুর আর বিষণ্ণ হয়ে উঠতে দেখলাম তাঁকে স্বতন্ত্রতা সেনানী ভবনে পা রেখে।

‘১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট, ঠিক যে মুহূর্তে লালকেল্লায় ভারতের পতাকা তোলা হচ্ছে, আমরাও ঠিক সেই লগ্নেই এখানে তেরঙ্গা উত্তোলন করেছিলাম। নববধূর সাজে সেজে উঠেছিল এই ভবন। আমরা সব স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা বয়সে তরুণ তখন। আনন্দে উত্তেজনায় সবাই টগবগ করছিলাম।

‘এই ভবন খুব-ই অভিনব জায়গা ছিল। এটা কারও একার মালিকানাধীন ছিল না। অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, আমরা মানুষের স্বার্থে নানান কাজ করতাম। মাঝেমাঝে আমরা দিল্লি যেতাম, নেহরুর সঙ্গে দেখা হত। পরবর্তীকালে ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। আজ আর কেউ-ই বেঁচে নেই।

‘কত মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন আমাদের মধ্যে। বিপ্লবী আন্দোলনের সময় এমন কতজনের সঙ্গে কাজ করেছি আমি। আবার সেবাকর্মেও যোগ দিয়ে পেয়েছি এমন অনেকের সান্নিধ্য।’ আগল ভেঙে বেরিয়ে এল কতশত নাম।

‘ডঃ সারদানন্দ বীর সিং মেহতা, রাম নারায়ণ চৌধুরী। দৈনিক নবজ্যোতি সংবাদপত্রের সম্পাদক দুর্গাপ্রসাদ চৌধুরীর দাদা ছিলেন রাম নারায়ণ। এছাড়া ছিল আজমেরের ভার্গব পরিবার। আম্বেদকরের অধীনে সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছিল যে কমিটি, মুকুট বিহারী ভার্গব ছিলেন সেই কমিটির সদস্য। এঁদের একজনও আর নেই। ছিলেন আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী গোকুলভাই ভট্ট, যাঁকে সবাই চিনত রাজস্থান কে গান্ধিজি নামে। গোকুলভাই ভট্ট স্বল্প সময়ের জন্য সিরোহি নামের দেশীয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন থাকলেও পরবর্তীকালে সমাজ সংস্কার তথা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তাগিদে ওই পদ ত্যাগ করেন।

The award presented to Shobharam Gehervar by the Chief Minister of Rajasthan on January 26, 2009, for his contribution to the freedom struggle
PHOTO • P. Sainath

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য শোভারাম গেহেরওয়ারকে ২০০৯ সালে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কার প্রদান করে সম্মান জানান

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সঙ্গে যুক্ত একটা লোকেরও যে বিন্দুমাত্র ভূমিকা ছিল না, এই ব্যাপারে শোভারামজির কোনও রাখঢাক নেই।

‘উওহ? উনহোনে তো উংলি ভি নহি কটাই’ (‘ওরা? ওদের গায়ে তো একটা আঁচড়ও পড়েনি’)।

স্বতন্ত্রতা সেনানী ভবনের ভবিষ্যৎ — আজকাল এই একটাই দুশ্চিন্তা পাক খেতে থাকে তাঁর মনে।

আমি এখন বুড়ো হয়েছি, এখন তো আর এখানে রোজ রোজ আসতে পারি না। শরীরে দিলে আমি নিয়ম করে এখানে এসে এক ঘণ্টা সময় কাটাই। যেসব মানুষজন আসেন, তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়, কেউ সমস্যা নিয়ে এলে সুরাহা করার সাধ্যমতো চেষ্টা করি।

‘এখন আর কেউ নেই আমার সঙ্গে। আজ আমি একদম একা। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অধিকাংশই মারা গেছেন। যাঁরা আছেন, তাঁরা আজ ক্ষীণবল ভগ্নস্বাস্থ্য। আমি একাই এখন এই স্বতন্ত্রতা সেনানী ভবনের দেখভাল করি। আজও আমি এই জায়গাটাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি, বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। ভবন দেখে চোখে জল আসে। আজ যে আর কেউ নেই আমার সঙ্গে।

মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে আমি চিঠি লিখে আবেদন করেছি কেউ দখল করার আগেই যেন এই ভবন অধিগ্রহণ করা হয়।

‘কোটি কোটি টাকা বাজারদর আজ এই জায়গার। শহরের এক্কেবারে কেন্দ্রে। কত লোকই না আমাকে প্রলোভন দেওয়ার ফিকির করে। বলে, “শোভারামজি, আপনি একা আর কতই বা করবেন? আমাদের হাতে এটা [এই সম্পত্তি] তুলে দিন। আপনাকে আমরা কোটি কোটি টাকা নগদ দেব।” আমি ওদের বলি আমি মরলে এই বাড়িতে ওরা যা ইচ্ছে করুক। আর আমি কী-ই বা করতে পারি বলুন? ওরা যা বলছে তা আমার পক্ষে করা সম্ভব? কত লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে এর জন্য, আমাদের স্বাধীনতার জন্য। ওই টাকা নিয়ে আমি কি করব?

‘এই কথাটাই আমি আপনার নজরে আনতে চাই। কেউ আর আমাদের কথা ভাবে না। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা আজ কে জানতে চায়? স্বাধীনতার জন্য কারা লড়েছিল আর কাদের হাত ধরে স্বাধীনতা এসেছিল সেকথা আদৌ কি কোনও পাঠ্যবই জানাবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের? কী-ই বা জানে দেশের মানুষ আমাদের কথা?’

পি সাইনাথ-এর ‘দ্য লাস্ট হিরোস, ফুটসোলজারস অফ ইন্ডিয়া’স ফ্রিডম’ বইটির বাংলা অনুবাদ Jadavpur University Press / যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা থেকে আশু প্রকাশিতব্য।

অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

ਪੀ ਸਾਈਨਾਥ People’s Archive of Rural India ਦੇ ਮੋਢੀ-ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ ਕਈ ਦਹਾਕਿਆਂ ਤੋਂ ਦਿਹਾਤੀ ਭਾਰਤ ਨੂੰ ਪਾਠਕਾਂ ਦੇ ਰੂ-ਬ-ਰੂ ਕਰਵਾ ਰਹੇ ਹਨ। Everybody Loves a Good Drought ਉਨ੍ਹਾਂ ਦੀ ਪ੍ਰਸਿੱਧ ਕਿਤਾਬ ਹੈ। ਅਮਰਤਿਆ ਸੇਨ ਨੇ ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੂੰ ਕਾਲ (famine) ਅਤੇ ਭੁੱਖਮਰੀ (hunger) ਬਾਰੇ ਸੰਸਾਰ ਦੇ ਮਹਾਂ ਮਾਹਿਰਾਂ ਵਿਚ ਸ਼ੁਮਾਰ ਕੀਤਾ ਹੈ।

Other stories by P. Sainath
Translator : Smita Khator

ਸਮਿਤਾ ਖਟੋਰ ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਦੇ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਭਾਸ਼ਾ ਦੀ ਮੁੱਖ ਅਨੁਵਾਦ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਅਨੁਵਾਦ, ਭਾਸ਼ਾ ਅਤੇ ਪੁਰਾਲੇਖ ਉਨ੍ਹਾਂ ਦਾ ਕਾਰਜ ਖੇਤਰ ਰਹੇ ਹਨ। ਉਹ ਔਰਤਾਂ ਦੇ ਮੁੱਦਿਆਂ ਅਤੇ ਮਜ਼ਦੂਰੀ 'ਤੇ ਲਿਖਦੀ ਹਨ।

Other stories by Smita Khator